ইপেপার । আজ শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাছ কুটে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:২২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
প্রাচীরের কোল ঘেঁষে সারি সারি দোকান। ধরালো বটি নিয়ে বসে আছেন নারীরা। পাশে রাখা আছে ছাই আর ‘স’ মিলের কাঠের গুড়া। ক্রেতারা বাজার থেকে মাছ কিনে এনে তাদের কাছে দাঁড়াচ্ছেন। হাতে থাকা ব্যাগভর্তি মাছ তুলে দিচ্ছেন ওই নারীদের হাতে। মাছগুলো সযত্নে কুটে আবার ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন। মাছ কুটে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের দেওয়া হচ্ছে পারিশ্রমিক। এমন দৃশ্য দেখা যায় ঝিনাইদহ শহরের উপশহরপাড়া সংলগ্ন কাঁচা বাজারে।
এই বাজারে ৬ জন নারী প্রতিদিন মাছ কুটে জীবিকা নির্বাহ করেন। আয়ও তাদের ভালো। জানা গেছে, উপশহরপাড়ার মুনজুরা খাতুন আগে বাসা-বাড়িতে কাজ করতেন। প্রতি মাসে তার যে আয় হতো, তা দিয়ে দুই সন্তান নিয়ে শহরে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে তার। বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি একটি ধারালো বটি কিনে উপশহরপাড়ার কাঁচা বাজারে বসে পড়েন। প্রায় তিন বছর তিনি এই পেশায় নিয়োজিত। এখন তার সংসার বেশ ভালোই চলছে। মুনজুরা খাতুন খাতুনের মতো বাজারে মাছ কুটছেন আছিয়া খাতুন, বেদানা খাতুন, চলন্তিকা, ববিতা খাতুন ও রিজিয়া।
চলন্তিকা খাতুন জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছ কুটলে তার আয় হয় ৩০০ টাকা। কোনো কোনো দিন ৫০০ টাকাও আয় হয়। শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকার কারণে মাছের চাহিদা বেশি থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা বাজার থেকে বেশি বেশি মাছ কুটে বাড়ি নিয়ে যান বলে চলন্তিকা জানান। রিজিয়া খাতুন জানান, ছোট বড় সবার কাছে মাছ খুবই প্রিয়। অনেকেই ছোট বড় মাছ কিনতে চায়, কিন্তু বাড়িতে কুটতে ঝামেলা হয়। এ জন্য মাছ কিনে বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি নিতে চায় না। বেদানা খাতুন জানান, ছোট মাছ প্রতি কেজি তারা ৫০ টাকা করে কুটে থাকেন। এছাড়া বড় মাছ কুটে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি পারিশ্রমিক নেন।
মেহেদী হাসান নামে এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি মানুষের সংসারে দৈনন্দিন কিছু না কিছু কাজ থাকে। বাসায় স্ত্রী ও কাজের বুয়ারা এখন আর মাছ কুটতে চান না। বিশেষ করে বর্তমান জামানার মেয়েরা মাছ কুটার মতো কাজ করতেই চান না। ফলে গৃহকর্তারা বাধ্য হয়ে বাজার থেকে মাছ কুটে নিয়ে যান। এতে সংসারে শান্তিও বজায় থাকে। কৃষি কর্মকর্তা মিলন ঘোষ জানান, এমনিতেই সারাদিন তাদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাসায় কাজের লোকের সমস্যা রয়েছে। মেয়েরা রান্নাবান্নার আর ঘর গৃহস্থালির মতো জরুরি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই সময় বাঁচাতে তিনি বাজার থেকে মাছ কিনে কুটে নিয়ে যান। এতে করে বাড়তি কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
গৃহবধূ মিনারা আসিফ জানান, এখন তো টাকা দিয়েও কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। তাই সময় বাঁচাতে বাজার থেকে কেনা মাছগুলো কুটে নিয়ে যান। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম মধু জানান, নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মাছ কুটেও যে সংসার চালানো যায়, এটা একটা নতুন আইডিয়া। তিনি বলেন, নানা পেশায় এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে। আগে স্ত্রী ও মা চাচিরা বাড়িতে মাছ কুটতেন। এখন সেটা বাণিজ্যি করণ হয়েছে। আগামীতে হয়তো মেশিনের মাধ্যমে মাছ কুটার প্রযুক্তি আবিষ্কার হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মাছ কুটে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা

আপলোড টাইম : ০৩:২২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:
প্রাচীরের কোল ঘেঁষে সারি সারি দোকান। ধরালো বটি নিয়ে বসে আছেন নারীরা। পাশে রাখা আছে ছাই আর ‘স’ মিলের কাঠের গুড়া। ক্রেতারা বাজার থেকে মাছ কিনে এনে তাদের কাছে দাঁড়াচ্ছেন। হাতে থাকা ব্যাগভর্তি মাছ তুলে দিচ্ছেন ওই নারীদের হাতে। মাছগুলো সযত্নে কুটে আবার ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন। মাছ কুটে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের দেওয়া হচ্ছে পারিশ্রমিক। এমন দৃশ্য দেখা যায় ঝিনাইদহ শহরের উপশহরপাড়া সংলগ্ন কাঁচা বাজারে।
এই বাজারে ৬ জন নারী প্রতিদিন মাছ কুটে জীবিকা নির্বাহ করেন। আয়ও তাদের ভালো। জানা গেছে, উপশহরপাড়ার মুনজুরা খাতুন আগে বাসা-বাড়িতে কাজ করতেন। প্রতি মাসে তার যে আয় হতো, তা দিয়ে দুই সন্তান নিয়ে শহরে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে তার। বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি একটি ধারালো বটি কিনে উপশহরপাড়ার কাঁচা বাজারে বসে পড়েন। প্রায় তিন বছর তিনি এই পেশায় নিয়োজিত। এখন তার সংসার বেশ ভালোই চলছে। মুনজুরা খাতুন খাতুনের মতো বাজারে মাছ কুটছেন আছিয়া খাতুন, বেদানা খাতুন, চলন্তিকা, ববিতা খাতুন ও রিজিয়া।
চলন্তিকা খাতুন জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছ কুটলে তার আয় হয় ৩০০ টাকা। কোনো কোনো দিন ৫০০ টাকাও আয় হয়। শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকার কারণে মাছের চাহিদা বেশি থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা বাজার থেকে বেশি বেশি মাছ কুটে বাড়ি নিয়ে যান বলে চলন্তিকা জানান। রিজিয়া খাতুন জানান, ছোট বড় সবার কাছে মাছ খুবই প্রিয়। অনেকেই ছোট বড় মাছ কিনতে চায়, কিন্তু বাড়িতে কুটতে ঝামেলা হয়। এ জন্য মাছ কিনে বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি নিতে চায় না। বেদানা খাতুন জানান, ছোট মাছ প্রতি কেজি তারা ৫০ টাকা করে কুটে থাকেন। এছাড়া বড় মাছ কুটে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি পারিশ্রমিক নেন।
মেহেদী হাসান নামে এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি মানুষের সংসারে দৈনন্দিন কিছু না কিছু কাজ থাকে। বাসায় স্ত্রী ও কাজের বুয়ারা এখন আর মাছ কুটতে চান না। বিশেষ করে বর্তমান জামানার মেয়েরা মাছ কুটার মতো কাজ করতেই চান না। ফলে গৃহকর্তারা বাধ্য হয়ে বাজার থেকে মাছ কুটে নিয়ে যান। এতে সংসারে শান্তিও বজায় থাকে। কৃষি কর্মকর্তা মিলন ঘোষ জানান, এমনিতেই সারাদিন তাদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাসায় কাজের লোকের সমস্যা রয়েছে। মেয়েরা রান্নাবান্নার আর ঘর গৃহস্থালির মতো জরুরি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই সময় বাঁচাতে তিনি বাজার থেকে মাছ কিনে কুটে নিয়ে যান। এতে করে বাড়তি কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
গৃহবধূ মিনারা আসিফ জানান, এখন তো টাকা দিয়েও কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। তাই সময় বাঁচাতে বাজার থেকে কেনা মাছগুলো কুটে নিয়ে যান। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম মধু জানান, নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মাছ কুটেও যে সংসার চালানো যায়, এটা একটা নতুন আইডিয়া। তিনি বলেন, নানা পেশায় এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে। আগে স্ত্রী ও মা চাচিরা বাড়িতে মাছ কুটতেন। এখন সেটা বাণিজ্যি করণ হয়েছে। আগামীতে হয়তো মেশিনের মাধ্যমে মাছ কুটার প্রযুক্তি আবিষ্কার হবে।