ইপেপার । আজ শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে খালের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:২০:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালিচরণপুর ইউনিয়নের ভগবাননগর গ্রামে রাতের আঁধারে খালের মাটি কেটে ইটভাটাই বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এই মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। প্রতি রাতে দুটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলে। ৩০টি ট্রাক্টরের মাধ্যমে মাটি নেওয়া হয় ইটভাটায়।

মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত রনি নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘খাল খননের জন্য চেয়ারম্যান অনুমতি নিয়ে এসেছেন। তার নির্দেশে আমরা কাজ করছি। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত কাজ করছি। এ কাজ দেখা-শোনা করার জন্য চেয়ারম্যান সাবেক ও বর্তমান মেম্বার শামসুল, মনিরুল, নজির, জাহাঙ্গীর, সাত্তার, ইহাকান ও মোদাচ্ছের হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’

ভগবাননগর গ্রামের কোটন বিশ্বাস জানান, পূর্বপাড়ার লোকজন এখানে পাট জাগ দেয়। চেয়ারম্যান ওপর মহল থেকে নাকি খাল কাটার অনুমতি নিয়ে এসেছেন। খালটি কেটে একটু গভীর করে পাড় বেধে দেবে যাতে মানুষ পাট জাগ দিতে পারে। এখন এই খালটি কাটছে অনেক গভীর করে। আর পাড়ে অল্প কিছু মাটি দিচ্ছে। বাকি মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ওই গ্রামের কৃষকেরা বলেন, খালটি যেভাবে খনন করা হচ্ছে, তাতে এখানে আমরা কেউ পাট জাগ দিতে পারবো না। শুধু তাই নয়, পাড় না বেধে খালের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। গ্রামবাসী বিষয়টি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনি থানার ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। থানার ওসি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। পুলিশ আসার খবর পেয়ে খাল খনন কাজ বন্ধ করে মাটি কাটার গাড়িগুলো বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখে। পুলিশ চলে গেলে আবারও মাটি কাটার কাজ শুরু হয়।

এ বিষয়ে ইউপি আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘খালটি খনন কাজ আমাদের জাগাঙ্গীর চেয়ারম্যান করছেন। খালের মাটি খনন করে পাড় বাধা হচ্ছে। বাকি মাটি ভাটায় বিক্রি হচ্ছে কিনা তা বলতে পারবো না।’

কালিচরণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউনিয়নের তিন গ্রামের পাট চাষিদের পাট জাগ দেওয়ার জন্য কোনো জলকার নেই। খালটি খনন করে পাট জাগ দেওয়ার উপযোগী করতে স্থানীয়রা বেশ কিছুদিন ধরে দাবি করে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে মাটি কাটার মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ওখানকার মাটি চুরি করে বিক্রি করছে কিনা আমার জানা নেই। মাটি ভাটায় দিতে বলেছি, এ কথা যারা বলছে তারা অসত্য কথা বলছে না। এ সববের মধ্যে আমি থাকি না। আমি কোনো অনুমতি নেয়নি।’

তিনি আরও বলেন,  গ্রামের কৃষকেরা একটি আবেদন করেছেন। যার ফলে এ কাজের একটা মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু মাটি যদি কেউ বিক্রি করে থাকে, তাহলে সে চোর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, ‘খাল খননের কোনো অনুমতি আমি দেইনি। তবে খাল খনন করে কে বা কারা মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছে, বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন।’

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান বলেন, বিভিন্নস্থানে তো খাল খননের কাজ চলছে। তবে ভগবাননগর এলাকায় অনুমতি দেওয়া আছে কিনা তা দেখে বলতে হবে। তিনি আরও বলেন, খাল খনন করে মাটি ভাটায় বিক্রি করার কোনো নিয়ম নেই। এটা যদি করে থাকে, তারা অপরাধ করছে। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে খালের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি!

আপলোড টাইম : ০৩:২০:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালিচরণপুর ইউনিয়নের ভগবাননগর গ্রামে রাতের আঁধারে খালের মাটি কেটে ইটভাটাই বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এই মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। প্রতি রাতে দুটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলে। ৩০টি ট্রাক্টরের মাধ্যমে মাটি নেওয়া হয় ইটভাটায়।

মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত রনি নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘খাল খননের জন্য চেয়ারম্যান অনুমতি নিয়ে এসেছেন। তার নির্দেশে আমরা কাজ করছি। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত কাজ করছি। এ কাজ দেখা-শোনা করার জন্য চেয়ারম্যান সাবেক ও বর্তমান মেম্বার শামসুল, মনিরুল, নজির, জাহাঙ্গীর, সাত্তার, ইহাকান ও মোদাচ্ছের হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’

ভগবাননগর গ্রামের কোটন বিশ্বাস জানান, পূর্বপাড়ার লোকজন এখানে পাট জাগ দেয়। চেয়ারম্যান ওপর মহল থেকে নাকি খাল কাটার অনুমতি নিয়ে এসেছেন। খালটি কেটে একটু গভীর করে পাড় বেধে দেবে যাতে মানুষ পাট জাগ দিতে পারে। এখন এই খালটি কাটছে অনেক গভীর করে। আর পাড়ে অল্প কিছু মাটি দিচ্ছে। বাকি মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ওই গ্রামের কৃষকেরা বলেন, খালটি যেভাবে খনন করা হচ্ছে, তাতে এখানে আমরা কেউ পাট জাগ দিতে পারবো না। শুধু তাই নয়, পাড় না বেধে খালের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। গ্রামবাসী বিষয়টি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনি থানার ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। থানার ওসি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। পুলিশ আসার খবর পেয়ে খাল খনন কাজ বন্ধ করে মাটি কাটার গাড়িগুলো বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখে। পুলিশ চলে গেলে আবারও মাটি কাটার কাজ শুরু হয়।

এ বিষয়ে ইউপি আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘খালটি খনন কাজ আমাদের জাগাঙ্গীর চেয়ারম্যান করছেন। খালের মাটি খনন করে পাড় বাধা হচ্ছে। বাকি মাটি ভাটায় বিক্রি হচ্ছে কিনা তা বলতে পারবো না।’

কালিচরণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউনিয়নের তিন গ্রামের পাট চাষিদের পাট জাগ দেওয়ার জন্য কোনো জলকার নেই। খালটি খনন করে পাট জাগ দেওয়ার উপযোগী করতে স্থানীয়রা বেশ কিছুদিন ধরে দাবি করে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে মাটি কাটার মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ওখানকার মাটি চুরি করে বিক্রি করছে কিনা আমার জানা নেই। মাটি ভাটায় দিতে বলেছি, এ কথা যারা বলছে তারা অসত্য কথা বলছে না। এ সববের মধ্যে আমি থাকি না। আমি কোনো অনুমতি নেয়নি।’

তিনি আরও বলেন,  গ্রামের কৃষকেরা একটি আবেদন করেছেন। যার ফলে এ কাজের একটা মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু মাটি যদি কেউ বিক্রি করে থাকে, তাহলে সে চোর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, ‘খাল খননের কোনো অনুমতি আমি দেইনি। তবে খাল খনন করে কে বা কারা মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছে, বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন।’

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান বলেন, বিভিন্নস্থানে তো খাল খননের কাজ চলছে। তবে ভগবাননগর এলাকায় অনুমতি দেওয়া আছে কিনা তা দেখে বলতে হবে। তিনি আরও বলেন, খাল খনন করে মাটি ভাটায় বিক্রি করার কোনো নিয়ম নেই। এটা যদি করে থাকে, তারা অপরাধ করছে। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান।