ইপেপার । আজ শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মা বক পাখি হত্যা, অনাহারে চার ছানার মৃত্যু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুন ২০২৩
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
মা বক পাখিকে এয়ারগান দিয়ে হত্যা করেছে শিকারী সুমন। এদিকে, বকের বাসায় থাকা চারটি ছোট ছানার মৃত্যু হয়েছে অনাহারে। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে। গ্রামবাসী শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘ফতেপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মিজানুর রহমান মাস্টারের ছেলে সুমন গত কয়েকমাস ধরে এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করছে। তার লোভাতুর দৃষ্টি পড়ে কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের ঘন একটি বাঁশ বাগানে। ওই বাঁশ বাগানে শতাধিক বক পাখির বাসা ছিল। প্রতিটি বাসায় রয়েছে বকের ছান। গত ৪ জুন এয়ারগান দিয়ে সুমন ১০ থেকে ১২টি বক হত্যা করে। এরপর থেকে ওই বাঁশবাগানে অনাহারে বেশ কয়েকটি বকের ছানার মৃত্যু হয়।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের ফকির চাঁদ মন্ডল, উরফান আলী ও আতেহার মন্ডলের বাঁশঝাড় থেকে বেশ কয়েকটি মা বককে এয়ারগান দিয়ে হত্যা করে সুমন। মা বকগুলোকে হত্যা করার পর খাবার না পেয়ে অনাহারে বাঁচ্চাগুলো মৃতবরণ করে। এমন অমানবিক ঘটনা নিয়ে এলাকার তোলপাড় শুরু হলেও পাখি শিকারী সুমন এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

সরেজমিনে দেখা গছে, নিরাপদ স্থান হওয়ায় ফতেপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপর গ্রামে ফকির চাঁদ মন্ডলের বাড়ির পাশে একটি ঘন বাঁশ বাগানে দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে শতাধিক বক পাখি বাসা বেঁধে বাঁচ্চা ফুটিয়ে থাকে। এখনো ওই বাঁশ বাগানে বহু বাসা রয়েছে। প্রতিবেশীরা নিষেধ করা সত্ত্বেও পাখি শিকারী সুমন মা বকগুলোকে নির্বিচারে হত্যা করে।

পাখি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের লক্ষ্যে এয়ারগান ব্যবহার ও বহন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা চলবে। রাষ্ট্রপতির আদেশের কথা উল্লেখ করে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দেশের জীববৈচিত্র, পাখি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর ৪৯ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এয়ারগান ব্যবহার বা বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে ২০০৫ সালে দেশে সকল প্রকার পাখি শিকার নিষিদ্ধ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারী করে। ১৯৭৪ সালে বন্য প্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দন্ডের বিধান রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জেল অথবা এক লাখ টাকার দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও আর্থিক জরিমানা দ্বিগুনের বিধান রয়েছে।

সরকারের এই আইন ষোষণার পর থেকে দেশের কোথাও পাখি শিকার করতে দেখা না গেলেও মহেশপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের সুমন সরকার একের পর এক পাখি শিকার করে যাচ্ছে। তার এই ভোজন বিলাসিতার শিকার হচ্ছে বাসায় থাকা বাচ্চা পাখিগুলো। এদিকে বন বিভাগের লোকজনের ঘটনাস্থলে যাওয়ার খবর শুনে সুমন তার এয়ারগান লুকিয়ে ফেলে বলে গ্রামবাসি জানায়।
এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহেশপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মা বক পাখি শিকারের সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত সুমনের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি আর পাখি শিকার করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মা বক পাখি হত্যা, অনাহারে চার ছানার মৃত্যু

আপলোড টাইম : ০৮:২৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুন ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:
মা বক পাখিকে এয়ারগান দিয়ে হত্যা করেছে শিকারী সুমন। এদিকে, বকের বাসায় থাকা চারটি ছোট ছানার মৃত্যু হয়েছে অনাহারে। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে। গ্রামবাসী শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘ফতেপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মিজানুর রহমান মাস্টারের ছেলে সুমন গত কয়েকমাস ধরে এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করছে। তার লোভাতুর দৃষ্টি পড়ে কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের ঘন একটি বাঁশ বাগানে। ওই বাঁশ বাগানে শতাধিক বক পাখির বাসা ছিল। প্রতিটি বাসায় রয়েছে বকের ছান। গত ৪ জুন এয়ারগান দিয়ে সুমন ১০ থেকে ১২টি বক হত্যা করে। এরপর থেকে ওই বাঁশবাগানে অনাহারে বেশ কয়েকটি বকের ছানার মৃত্যু হয়।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের ফকির চাঁদ মন্ডল, উরফান আলী ও আতেহার মন্ডলের বাঁশঝাড় থেকে বেশ কয়েকটি মা বককে এয়ারগান দিয়ে হত্যা করে সুমন। মা বকগুলোকে হত্যা করার পর খাবার না পেয়ে অনাহারে বাঁচ্চাগুলো মৃতবরণ করে। এমন অমানবিক ঘটনা নিয়ে এলাকার তোলপাড় শুরু হলেও পাখি শিকারী সুমন এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

সরেজমিনে দেখা গছে, নিরাপদ স্থান হওয়ায় ফতেপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপর গ্রামে ফকির চাঁদ মন্ডলের বাড়ির পাশে একটি ঘন বাঁশ বাগানে দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে শতাধিক বক পাখি বাসা বেঁধে বাঁচ্চা ফুটিয়ে থাকে। এখনো ওই বাঁশ বাগানে বহু বাসা রয়েছে। প্রতিবেশীরা নিষেধ করা সত্ত্বেও পাখি শিকারী সুমন মা বকগুলোকে নির্বিচারে হত্যা করে।

পাখি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের লক্ষ্যে এয়ারগান ব্যবহার ও বহন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা চলবে। রাষ্ট্রপতির আদেশের কথা উল্লেখ করে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দেশের জীববৈচিত্র, পাখি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর ৪৯ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এয়ারগান ব্যবহার বা বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে ২০০৫ সালে দেশে সকল প্রকার পাখি শিকার নিষিদ্ধ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারী করে। ১৯৭৪ সালে বন্য প্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দন্ডের বিধান রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জেল অথবা এক লাখ টাকার দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও আর্থিক জরিমানা দ্বিগুনের বিধান রয়েছে।

সরকারের এই আইন ষোষণার পর থেকে দেশের কোথাও পাখি শিকার করতে দেখা না গেলেও মহেশপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের সুমন সরকার একের পর এক পাখি শিকার করে যাচ্ছে। তার এই ভোজন বিলাসিতার শিকার হচ্ছে বাসায় থাকা বাচ্চা পাখিগুলো। এদিকে বন বিভাগের লোকজনের ঘটনাস্থলে যাওয়ার খবর শুনে সুমন তার এয়ারগান লুকিয়ে ফেলে বলে গ্রামবাসি জানায়।
এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহেশপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মা বক পাখি শিকারের সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত সুমনের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি আর পাখি শিকার করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন।