ইপেপার । আজ শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীর মাইলমারী পদ্মবিলে মাটি কাটার মহোৎসব!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২২:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
  • / ৩৮ বার পড়া হয়েছে

Exif_JPEG_420

সমীকরণ প্রতিবেদক:
মেহেরপুরের গাংনীতে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান বাচ্চু, মৃত কাদের বক্সের ছেলে বাবলু এবং মৃত ইউনুস আলীর ছেলে হোসেন ও মৃত নূর হকের ছেলে জামরুলসহ বেশ কয়েকজনের দুটি গ্রুপে মাইলমারী পদ্মবিল থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গোরস্তানের রাস্তা তৈরি, জনগণের খাদ খন্দক ভর্তি ও পাট জাগের জন্য পদ্মবিল খননের নামে নির্বিঘ্নে সকাল ৬টা থেকে মধ্যরাত অবধি ব্যাপক হারে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। পদ্মবিল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের পর তা পরিবহনের জন্য পাকা সড়ক ব্যবহার করায় মাটি বোঝাই যন্ত্রদানব ট্রাক্টর চলাচল করার কারণে রাস্তায় মাটি পড়ে তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধুলোবালিতে সড়কগুলো নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষকে। ধুলোবালি উড়ে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল।

এদিকে মাইলমারী গ্রামে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি প্রি-ক্যাডেট ও দুটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সকল সড়ক দিয়ে কোমলমতি শিশুরা তাদের বিদ্যালয়ে যাওয়া ও ফেরা নিয়ে শঙ্কিত তাদের অভিভাবকগণ।

সরেজমিনে মাইলমারী পদ্মবিলে মাটি উত্তোলনের জায়গায় যাওয়া হলে সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান বাচ্চু ও তাদের সহযোগীদের তাস খেলা অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রথম দিকে তারা লেবার বলে পরিচয় দিলেও পরে সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করতে কিছু অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, কিছু কিছু সাংবাদিক আসছেন তাদের কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করা হচ্ছে। তবে কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরে গোরস্তানের রাস্তা তৈরি করবেন এমন কথা শোনা গেলেও তার কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে মাটি বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতি ট্রাক্টর প্রতি মাটি ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সাংবাদিক কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মাটি উত্তোলনের স্থানে আসার পূর্বেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। বাচ্চু মেম্বার ও তাদের সহযোগীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও অনেকে বলেন, ‘মেম্বারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও মাটি বিক্রি লাভজনক হওয়ায় বাপ-ছেলে মিলে মাটি বিক্রিতে নেমেছে। মাইলমারী পদ্মবিল থেকে শুরু করে হিন্দা, হিজলবাড়ীয়া, কুলবাড়িয়া, নওপাড়া ও লক্ষ্মীনারায়ণপুর যাওয়াসহ গ্রামের প্রতিটি সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের বিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলামকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতুকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। গতকালই গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম ও গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম মাইলমারী পদ্মবিলে অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বে মাটি ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়।

এমতবস্থায় প্রাথমিকভাবে ভেকু ও একটি মাটিবাহী গাড়ি জব্দ করা হয়েছে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের জিম্মায় রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে মাটি না উত্তোলনের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা সহকারী কমিশনার জানিয়েছেন। আবারও যেন কেউ অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন না করতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কারণা করেছে এলাকাবাসী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীর মাইলমারী পদ্মবিলে মাটি কাটার মহোৎসব!

আপলোড টাইম : ০৮:২২:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদক:
মেহেরপুরের গাংনীতে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান বাচ্চু, মৃত কাদের বক্সের ছেলে বাবলু এবং মৃত ইউনুস আলীর ছেলে হোসেন ও মৃত নূর হকের ছেলে জামরুলসহ বেশ কয়েকজনের দুটি গ্রুপে মাইলমারী পদ্মবিল থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গোরস্তানের রাস্তা তৈরি, জনগণের খাদ খন্দক ভর্তি ও পাট জাগের জন্য পদ্মবিল খননের নামে নির্বিঘ্নে সকাল ৬টা থেকে মধ্যরাত অবধি ব্যাপক হারে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। পদ্মবিল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের পর তা পরিবহনের জন্য পাকা সড়ক ব্যবহার করায় মাটি বোঝাই যন্ত্রদানব ট্রাক্টর চলাচল করার কারণে রাস্তায় মাটি পড়ে তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধুলোবালিতে সড়কগুলো নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষকে। ধুলোবালি উড়ে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল।

এদিকে মাইলমারী গ্রামে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি প্রি-ক্যাডেট ও দুটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সকল সড়ক দিয়ে কোমলমতি শিশুরা তাদের বিদ্যালয়ে যাওয়া ও ফেরা নিয়ে শঙ্কিত তাদের অভিভাবকগণ।

সরেজমিনে মাইলমারী পদ্মবিলে মাটি উত্তোলনের জায়গায় যাওয়া হলে সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান বাচ্চু ও তাদের সহযোগীদের তাস খেলা অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রথম দিকে তারা লেবার বলে পরিচয় দিলেও পরে সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করতে কিছু অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, কিছু কিছু সাংবাদিক আসছেন তাদের কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করা হচ্ছে। তবে কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরে গোরস্তানের রাস্তা তৈরি করবেন এমন কথা শোনা গেলেও তার কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে মাটি বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতি ট্রাক্টর প্রতি মাটি ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সাংবাদিক কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মাটি উত্তোলনের স্থানে আসার পূর্বেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। বাচ্চু মেম্বার ও তাদের সহযোগীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও অনেকে বলেন, ‘মেম্বারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও মাটি বিক্রি লাভজনক হওয়ায় বাপ-ছেলে মিলে মাটি বিক্রিতে নেমেছে। মাইলমারী পদ্মবিল থেকে শুরু করে হিন্দা, হিজলবাড়ীয়া, কুলবাড়িয়া, নওপাড়া ও লক্ষ্মীনারায়ণপুর যাওয়াসহ গ্রামের প্রতিটি সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের বিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলামকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতুকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। গতকালই গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম ও গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম মাইলমারী পদ্মবিলে অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বে মাটি ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়।

এমতবস্থায় প্রাথমিকভাবে ভেকু ও একটি মাটিবাহী গাড়ি জব্দ করা হয়েছে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের জিম্মায় রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে মাটি না উত্তোলনের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা সহকারী কমিশনার জানিয়েছেন। আবারও যেন কেউ অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন না করতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কারণা করেছে এলাকাবাসী।