ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডাকুয়া নদীর অস্তিত্ব এখন শুধু মানচিত্রে!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

প্রথমে দেখলে মনে হবে একটি পুকুর। কিন্তু না, এটি শৈলকুপার এক সময়ের খরস্রোত ডাকুয়া নদী ও খাল। এই নদী ও খাল এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। নদীর বুকে দখলদাররা চাষাবাদ করছে বিভিন্ন ফসল। করছেন দোকানপাট ও পাকা স্থাপনা তৈরি। আবার কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ ভরাট করে অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শুধু মানচিত্রেই ঠাই হয়েছে এ নদী ও খালটি।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নদী ও খাল রক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও বাস্তবে এ নদী ও খাল রক্ষায় কোনো গুরুত্বারোপ করেনি সংশ্লিষ্টরা। যে নদীকে কেন্দ্র করে এক সময় সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে ওঠে ওই এলাকায়, সেই নদীই এখন মৃত। এমন অবস্থায় ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ডাকুয়া নদী ও পাশ্ববর্তী খাল পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যদিকে নদী ও খাল রক্ষার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বনি আমিন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে ডাকুয়া নদী ও খাল উত্তর মির্জাপুর থেকে বৃত্তিপাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকলেও এখন এর কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। সিএস রেকর্ডে ডাকুয়া নদীর শাখা-প্রশাখা সরকারি খাল হিসেবে থাকলেও বর্তমানে খালের জায়গা প্লট আকারে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে খালটি।

সূত্র জানায়, ডাকুয়ার বিস্তৃতি এতটাই বড় ও চওড়া ছিল যা নদী হিসেবে থাকলেও বাস্তবে এর শাখা-প্রশাখা ব্যক্তি নামে নামে রেকর্ড করে দিয়েছে সরকারের অসাধু কর্মকর্তারাই। ডাকুয়ার বেশ কয়েকটি শাখা-প্রশাখা ছিল যা নদীর মতোই প্রবাহমান ও ভরা যৌবন ছিল। এই নদী ও খালকে ঘিরে কৃষি, চাষাবাদ হতো মাঠের পর মাঠ। স্বাধীনতার আগে এই খালকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহসহ যাবতীয় কাজ করত। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর নানা সময় ও আরএস জরিপে উত্তর মির্জাপুর অংশে খালের ৮১ ও ৫৬৮ নম্বর দাগ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে। সেটেলমেন্ট ও ভূমি অফিসের দুর্নীতিগ্রস্থ অসাধু কর্মকর্তারা এসব সরকারি খালের জায়গা বিলীন করে দিয়েছে।

ডাকুয়া নদী ও খালের বর্তমান কিছু অংশের রেকর্ডমূলে মালিক বাবলু জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার বাপ-দাদাদের আমল থেকে এই জমি আমরা ভোগদখল করছি। এটা সরকারি খাল বা নদীর জায়গা নয়।’

স্থানীয় বাসিন্দা শামীম বিন সাত্তার জানান, পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছি এখানে ডাকুয়া নামে বড় নদী ছিল। এখন সবকিছুর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। ইচ্ছামতো দখলদাররা নদী দখল করে নিয়েছে। সরকারি খালের আরএস রেকর্ড বাতিলসহ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ডাকুয়া খাল ও নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিস বরাবর বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছি না।

কাঁচেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন জোয়ার্দার বলেন, ডাকুয়া নদী ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে এর কোনো অস্তিত্ব  নেই। দখলদারদের কাছ থেকে ডাকুয়া নদী ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।

শৈলকুপার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বনি আমিন বলেন, সরকারি খাল ও নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি এসব জায়গা উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ডাকুয়া নদীর অস্তিত্ব এখন শুধু মানচিত্রে!

আপলোড টাইম : ০৪:৩৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:

প্রথমে দেখলে মনে হবে একটি পুকুর। কিন্তু না, এটি শৈলকুপার এক সময়ের খরস্রোত ডাকুয়া নদী ও খাল। এই নদী ও খাল এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। নদীর বুকে দখলদাররা চাষাবাদ করছে বিভিন্ন ফসল। করছেন দোকানপাট ও পাকা স্থাপনা তৈরি। আবার কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ ভরাট করে অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শুধু মানচিত্রেই ঠাই হয়েছে এ নদী ও খালটি।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নদী ও খাল রক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও বাস্তবে এ নদী ও খাল রক্ষায় কোনো গুরুত্বারোপ করেনি সংশ্লিষ্টরা। যে নদীকে কেন্দ্র করে এক সময় সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে ওঠে ওই এলাকায়, সেই নদীই এখন মৃত। এমন অবস্থায় ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ডাকুয়া নদী ও পাশ্ববর্তী খাল পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যদিকে নদী ও খাল রক্ষার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বনি আমিন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে ডাকুয়া নদী ও খাল উত্তর মির্জাপুর থেকে বৃত্তিপাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকলেও এখন এর কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। সিএস রেকর্ডে ডাকুয়া নদীর শাখা-প্রশাখা সরকারি খাল হিসেবে থাকলেও বর্তমানে খালের জায়গা প্লট আকারে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে খালটি।

সূত্র জানায়, ডাকুয়ার বিস্তৃতি এতটাই বড় ও চওড়া ছিল যা নদী হিসেবে থাকলেও বাস্তবে এর শাখা-প্রশাখা ব্যক্তি নামে নামে রেকর্ড করে দিয়েছে সরকারের অসাধু কর্মকর্তারাই। ডাকুয়ার বেশ কয়েকটি শাখা-প্রশাখা ছিল যা নদীর মতোই প্রবাহমান ও ভরা যৌবন ছিল। এই নদী ও খালকে ঘিরে কৃষি, চাষাবাদ হতো মাঠের পর মাঠ। স্বাধীনতার আগে এই খালকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহসহ যাবতীয় কাজ করত। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর নানা সময় ও আরএস জরিপে উত্তর মির্জাপুর অংশে খালের ৮১ ও ৫৬৮ নম্বর দাগ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে। সেটেলমেন্ট ও ভূমি অফিসের দুর্নীতিগ্রস্থ অসাধু কর্মকর্তারা এসব সরকারি খালের জায়গা বিলীন করে দিয়েছে।

ডাকুয়া নদী ও খালের বর্তমান কিছু অংশের রেকর্ডমূলে মালিক বাবলু জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার বাপ-দাদাদের আমল থেকে এই জমি আমরা ভোগদখল করছি। এটা সরকারি খাল বা নদীর জায়গা নয়।’

স্থানীয় বাসিন্দা শামীম বিন সাত্তার জানান, পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছি এখানে ডাকুয়া নামে বড় নদী ছিল। এখন সবকিছুর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। ইচ্ছামতো দখলদাররা নদী দখল করে নিয়েছে। সরকারি খালের আরএস রেকর্ড বাতিলসহ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ডাকুয়া খাল ও নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিস বরাবর বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছি না।

কাঁচেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন জোয়ার্দার বলেন, ডাকুয়া নদী ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে এর কোনো অস্তিত্ব  নেই। দখলদারদের কাছ থেকে ডাকুয়া নদী ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।

শৈলকুপার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বনি আমিন বলেন, সরকারি খাল ও নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি এসব জায়গা উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।