ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাতারাতি ট্রেড খুলে প্রকল্পের টাকা হরিলুটের অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
  • / ৪১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

শিক্ষক নেই, নেই শিক্ষার্থীও। অথচ রাতারাতি ট্রেড খুলে ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ (ঝঊঝওচ) এর আওতায় কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। তালাবদ্ধ ঘরে কোটি টাকার ওপরে মূল্যবান যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম রসুলপুর আলিম মাদ্রাসা। ঝিনাইদহ পৌরসভার ভুটিয়ারগাতী গ্রামে মাদ্রাসাটি অবস্থিত। এই মাদ্রাসায় খাতা-কলমে জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক ট্রেডে ১৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও নেই শিক্ষক। ফুড প্রসেসিং নামে ওই মাদ্রাসায় আরও একটি ট্রেড রয়েছে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক দাবি করেন, তাঁরা ট্রেডের জন্য কোনো আবেদনই করেননি। অথচ প্রকল্প কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য ট্রেড তুলে জেলায় প্রায় ১২ কোটি টাকা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের না জানিয়ে গভীর রাতে ঢাকা থেকে এসব মালামাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (ঝঊঝওচ) প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়। তকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য প্রস্তাব করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতি রসুলপুর মাদ্রাসা, শৈলকুপার কাতলাগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের চাচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কোটচাঁদপুর শেখ মোজাফফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহেশপুরের খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো বিদ্যালয়ে এই প্রকল্প সঠিকভাবে চলছে না। যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য নেই দক্ষ ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট ও শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন না করলেও প্রকল্পের কর্তা ব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একেকটি ট্রেডের বিপরীতে প্রায় দেড় কোটি সমমূল্যের ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছেন। অথচ আজও সংশ্লিষ্ট ট্রেডে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই সব স্কুলে ট্রেডের শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষকরা পাঠদান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঝিনাইদহ পৌর এলকার ভুটিয়ারগাতী রসুলপুর আলিম মাদ্রাসায় জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক ট্রেডে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিস অমি নামের একজনকে ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর বাড়ি নাটোরের লালপুরে। অধিদপ্তরের জটিলতার কারণে এখনো এমপিও হয়নি মিস অমির। তাই তিনি নাটোরে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। ভুটিয়ারগাতী রসুলপুর আলিম মাদ্রাসার ফুড প্রসেসিং ট্রেডে এখনো কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাই ২০২২ সালে সরবরাহকৃত কোটি টাকার ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি মাদ্রসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধভাবে রাখা রয়েছে। পড়ে থেকেই নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতিগুলো।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা ট্রেডের জন্য কোনো আবেদন করিনি। প্রকল্পের আওতায় ব্যবহারিক যে যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে, তা যত্ন সহকারে রাখা হয়েছে।’ এদিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখনো কোনো ট্রেডেই ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দিতে পারেনি। শৈলকুপার কাতলাগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের চাচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কোটচাঁদপুরের শেখ মোজাফ্ফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর ও মহেশপুরের খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রত্যেক ট্রেডেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার চেয়ার ও স্ক্যানার মেশিন দেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে আমি অধিদপ্তরের পরিচালককে জানিয়েছি। বারবার তাগাদা দেওয়ার কারণে তিনি এখন আর আমার ফোন রিসিভ করেন না।’ শেখ মোজাফ্ফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সকল যন্ত্রপাতি ইনটেক অবস্থায় দেওয়া হয়। আমরা সেইভাবেই গ্রহণ করেছি।’

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। প্রকল্পের অর্থ খরচ দেখাতে তড়িঘড়ি করে ট্রেড খুলে যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়। ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ থেকে যা দিয়েছে, তাই নিয়েই অনেক প্রধান শিক্ষক সন্তষ্ট বলে জানান তিনি। এসব বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের আওতায় সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি কী পর্যায়ে আছে, তার খোঁজ নিবেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাতারাতি ট্রেড খুলে প্রকল্পের টাকা হরিলুটের অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৮:০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:

শিক্ষক নেই, নেই শিক্ষার্থীও। অথচ রাতারাতি ট্রেড খুলে ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ (ঝঊঝওচ) এর আওতায় কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। তালাবদ্ধ ঘরে কোটি টাকার ওপরে মূল্যবান যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম রসুলপুর আলিম মাদ্রাসা। ঝিনাইদহ পৌরসভার ভুটিয়ারগাতী গ্রামে মাদ্রাসাটি অবস্থিত। এই মাদ্রাসায় খাতা-কলমে জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক ট্রেডে ১৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও নেই শিক্ষক। ফুড প্রসেসিং নামে ওই মাদ্রাসায় আরও একটি ট্রেড রয়েছে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক দাবি করেন, তাঁরা ট্রেডের জন্য কোনো আবেদনই করেননি। অথচ প্রকল্প কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য ট্রেড তুলে জেলায় প্রায় ১২ কোটি টাকা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের না জানিয়ে গভীর রাতে ঢাকা থেকে এসব মালামাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (ঝঊঝওচ) প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়। তকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য প্রস্তাব করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতি রসুলপুর মাদ্রাসা, শৈলকুপার কাতলাগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের চাচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কোটচাঁদপুর শেখ মোজাফফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহেশপুরের খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো বিদ্যালয়ে এই প্রকল্প সঠিকভাবে চলছে না। যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য নেই দক্ষ ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট ও শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন না করলেও প্রকল্পের কর্তা ব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একেকটি ট্রেডের বিপরীতে প্রায় দেড় কোটি সমমূল্যের ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছেন। অথচ আজও সংশ্লিষ্ট ট্রেডে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই সব স্কুলে ট্রেডের শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষকরা পাঠদান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঝিনাইদহ পৌর এলকার ভুটিয়ারগাতী রসুলপুর আলিম মাদ্রাসায় জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক ট্রেডে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিস অমি নামের একজনকে ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর বাড়ি নাটোরের লালপুরে। অধিদপ্তরের জটিলতার কারণে এখনো এমপিও হয়নি মিস অমির। তাই তিনি নাটোরে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। ভুটিয়ারগাতী রসুলপুর আলিম মাদ্রাসার ফুড প্রসেসিং ট্রেডে এখনো কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাই ২০২২ সালে সরবরাহকৃত কোটি টাকার ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি মাদ্রসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধভাবে রাখা রয়েছে। পড়ে থেকেই নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতিগুলো।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা ট্রেডের জন্য কোনো আবেদন করিনি। প্রকল্পের আওতায় ব্যবহারিক যে যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে, তা যত্ন সহকারে রাখা হয়েছে।’ এদিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখনো কোনো ট্রেডেই ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দিতে পারেনি। শৈলকুপার কাতলাগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের চাচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কোটচাঁদপুরের শেখ মোজাফ্ফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর ও মহেশপুরের খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রত্যেক ট্রেডেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার চেয়ার ও স্ক্যানার মেশিন দেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে আমি অধিদপ্তরের পরিচালককে জানিয়েছি। বারবার তাগাদা দেওয়ার কারণে তিনি এখন আর আমার ফোন রিসিভ করেন না।’ শেখ মোজাফ্ফর হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সকল যন্ত্রপাতি ইনটেক অবস্থায় দেওয়া হয়। আমরা সেইভাবেই গ্রহণ করেছি।’

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। প্রকল্পের অর্থ খরচ দেখাতে তড়িঘড়ি করে ট্রেড খুলে যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়। ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ থেকে যা দিয়েছে, তাই নিয়েই অনেক প্রধান শিক্ষক সন্তষ্ট বলে জানান তিনি। এসব বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের আওতায় সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি কী পর্যায়ে আছে, তার খোঁজ নিবেন তিনি।