ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহ জেলাব্যাপী চোরের উপদ্রব, অতিষ্ঠ মানুষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ শহরের উপ-শহরপাড়ার কলেজ ছাত্র হারুন অর রশিদ পড়ার টেবিলের ওপর মোবাইল ও মানিব্যাগ রেখে কিছু সময়ের জন্য পাশের রুমে যান। মুহূর্তের মধ্যে তার মোবাইল ও মানিব্যাগ উধাও হয়ে যায়। ছাত্রাবাসের বাইরে বেরিয়ে তিনি জানতে পারেন মহল্লার একাধিক বাড়িতে চোরেরা হানা দিয়েছে। একই পাড়ার সুমন ব্যানার স্ত্রী হেনা বেগম জানান, তিনি বাড়িতে ঢুকে দেখেন এক অপরিচিত মহিলা তার ঘরে ঢুকে আলমারি ও ড্রয়ার তছনছ করছে। গৃহবধূ মিনারা আসিফ জানান, তার ঘরের জানালা দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের পেছন ভেঙে চোরেরা জিনিসপত্র নিয়ে গেছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের নাইমুল হকের মেয়ে সুমাইয়া চোরকোল গ্রামে মায়ের সঙ্গে ধর্মসভা শুনে এসে রাত ১২টার দিকে ঘরে শুয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে তার গলায় থাকা সোনার চেইনটি চোরে ছিড়ে নিয়ে চম্পট দেয়। দরিদ্র ঘরের মেয়ে সুমাইয়াকে তার পিতা খুব কষ্ট করে আটআনা ওজনের সোনার চেইনটি বানিয়ে দিয়েছিলেন। একই গ্রামের নাজমুস সাকিব জানান, তিনি ঘরে শুয়েছিলেন। মধ্যরাতে একটি অপরচিত হাত জানালা দিয়ে তার মোবাইল নিতে উদ্যোত হলে তিনি চিৎকার করে উঠেন। এভাবে সারা জেলায় চোরের উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ঘরে ঘরে চুরি হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানে চুরি হচ্ছে।
ঝিনাইদহের বিভিন্ন শহর থেকে মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। সংসারে অভাব অনটন ও ব্যবসায়িক আর্থিক মন্দার মধ্যে জেলাব্যাপী এই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মানুষ। চোর ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ নেই। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি গ্রামে দুর্র্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলার ঘোড়ামাারা গ্রামে একই চক্র ডাকাতি সংঘটিত করে। ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ধুলোজোড়া গ্রামের রঙ্গু শেখের ছেলে শফিকুল ইসলাম, কান্দাকুল গ্রামের রমজান শেখের ছেল সুমন শেখ, মালিখালী গ্রামের রঙ্গু মোল্লার ছেলে মতজেল মোল্লা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল জলিল, সদর উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আখিরন নেছা শিউলী ও মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের আলমগীর হোসেনের মেয়ে মেরিনা খাতুন বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করে।
ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুল নামে এক ডাকাত সদস্য স্বীকার করেন, তারা ডাকাতি মামলার হাজিরা দিতে ঝিনাইদহে এসে পবহাটি ও ঘোড়ামারা গ্রামে ডাকাতির কাজে অংশ নেয়। এদিকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি মহেশপুর উপজেলার বোয়ালিয়া নামক স্থানে দিন-দুপুরে রাস্তায় দড়ি বেধে ছিনতাই করা হয়। ঘটনার দিন ভারতগামী বাংলাদেশি যুবক রাসেল আহম্মেদ শাওনের প্রাইভেটকারটি থামিয়ে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল, হাতঘড়ি ও স্ত্রীর স্বর্ণের চুড়ি এবং কানের দুল নিয়ে যায়।
সাধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সাধুহাটি গ্রামের ধর্মতলা পাড়ার খুশিদের একটি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়া উত্তরনারায়ণপুর স্কুলপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আজিজুলের নামাজে জানাজা চলা মুহূর্তে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ১২০ বস্তা চাল চুরি হয়েছে। এভাবে প্রায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছোটখাট চুরির ঘটনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সচেতন মহল মনে করছেন, আর্থিক মন্দা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন গ্রামে ও পাড়া-মহল্লায় পালাক্রমে পাহারা বসিয়ে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিলে চুরির ঘটনা কমে আসতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, ‘চোরের উপদ্রব রুখতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া বিশাল জেলায় চুরি ঠেকাতে শুধু পুলিশের অভিযান বা টহল দিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় এলাকাবাসী ও কমিউনিটি পুলিশের সম্পৃক্ততা দরকার। যে কারণে পুলিশের পাশাপাশি এলাকাবাসীদের জোটবদ্ধ হয়ে পাহারা দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে পাড়া-মহল্লায় সভা-সমাবেশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহ জেলাব্যাপী চোরের উপদ্রব, অতিষ্ঠ মানুষ

আপলোড টাইম : ১১:৩৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ শহরের উপ-শহরপাড়ার কলেজ ছাত্র হারুন অর রশিদ পড়ার টেবিলের ওপর মোবাইল ও মানিব্যাগ রেখে কিছু সময়ের জন্য পাশের রুমে যান। মুহূর্তের মধ্যে তার মোবাইল ও মানিব্যাগ উধাও হয়ে যায়। ছাত্রাবাসের বাইরে বেরিয়ে তিনি জানতে পারেন মহল্লার একাধিক বাড়িতে চোরেরা হানা দিয়েছে। একই পাড়ার সুমন ব্যানার স্ত্রী হেনা বেগম জানান, তিনি বাড়িতে ঢুকে দেখেন এক অপরিচিত মহিলা তার ঘরে ঢুকে আলমারি ও ড্রয়ার তছনছ করছে। গৃহবধূ মিনারা আসিফ জানান, তার ঘরের জানালা দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের পেছন ভেঙে চোরেরা জিনিসপত্র নিয়ে গেছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের নাইমুল হকের মেয়ে সুমাইয়া চোরকোল গ্রামে মায়ের সঙ্গে ধর্মসভা শুনে এসে রাত ১২টার দিকে ঘরে শুয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে তার গলায় থাকা সোনার চেইনটি চোরে ছিড়ে নিয়ে চম্পট দেয়। দরিদ্র ঘরের মেয়ে সুমাইয়াকে তার পিতা খুব কষ্ট করে আটআনা ওজনের সোনার চেইনটি বানিয়ে দিয়েছিলেন। একই গ্রামের নাজমুস সাকিব জানান, তিনি ঘরে শুয়েছিলেন। মধ্যরাতে একটি অপরচিত হাত জানালা দিয়ে তার মোবাইল নিতে উদ্যোত হলে তিনি চিৎকার করে উঠেন। এভাবে সারা জেলায় চোরের উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ঘরে ঘরে চুরি হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানে চুরি হচ্ছে।
ঝিনাইদহের বিভিন্ন শহর থেকে মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। সংসারে অভাব অনটন ও ব্যবসায়িক আর্থিক মন্দার মধ্যে জেলাব্যাপী এই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মানুষ। চোর ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ নেই। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি গ্রামে দুর্র্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলার ঘোড়ামাারা গ্রামে একই চক্র ডাকাতি সংঘটিত করে। ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ধুলোজোড়া গ্রামের রঙ্গু শেখের ছেলে শফিকুল ইসলাম, কান্দাকুল গ্রামের রমজান শেখের ছেল সুমন শেখ, মালিখালী গ্রামের রঙ্গু মোল্লার ছেলে মতজেল মোল্লা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল জলিল, সদর উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আখিরন নেছা শিউলী ও মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের আলমগীর হোসেনের মেয়ে মেরিনা খাতুন বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করে।
ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুল নামে এক ডাকাত সদস্য স্বীকার করেন, তারা ডাকাতি মামলার হাজিরা দিতে ঝিনাইদহে এসে পবহাটি ও ঘোড়ামারা গ্রামে ডাকাতির কাজে অংশ নেয়। এদিকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি মহেশপুর উপজেলার বোয়ালিয়া নামক স্থানে দিন-দুপুরে রাস্তায় দড়ি বেধে ছিনতাই করা হয়। ঘটনার দিন ভারতগামী বাংলাদেশি যুবক রাসেল আহম্মেদ শাওনের প্রাইভেটকারটি থামিয়ে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল, হাতঘড়ি ও স্ত্রীর স্বর্ণের চুড়ি এবং কানের দুল নিয়ে যায়।
সাধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সাধুহাটি গ্রামের ধর্মতলা পাড়ার খুশিদের একটি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়া উত্তরনারায়ণপুর স্কুলপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আজিজুলের নামাজে জানাজা চলা মুহূর্তে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ১২০ বস্তা চাল চুরি হয়েছে। এভাবে প্রায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছোটখাট চুরির ঘটনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সচেতন মহল মনে করছেন, আর্থিক মন্দা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন গ্রামে ও পাড়া-মহল্লায় পালাক্রমে পাহারা বসিয়ে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিলে চুরির ঘটনা কমে আসতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, ‘চোরের উপদ্রব রুখতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া বিশাল জেলায় চুরি ঠেকাতে শুধু পুলিশের অভিযান বা টহল দিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় এলাকাবাসী ও কমিউনিটি পুলিশের সম্পৃক্ততা দরকার। যে কারণে পুলিশের পাশাপাশি এলাকাবাসীদের জোটবদ্ধ হয়ে পাহারা দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে পাড়া-মহল্লায় সভা-সমাবেশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।