ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হরিণাকুণ্ডুতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নকরণে কোনো ভূমিকা রাখেনি ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডুতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী সেবার নামে চলছে প্রতারণা ও ঠাকবাজী। অপচিকিৎসা ও দায়সারা চিকিৎসা দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। হরিণাকুণ্ডুতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, লাইসেন্স ও যন্ত্রপাতি ছাড়ায় চলছে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল। এসব ক্লিনিকের নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, পরীক্ষার উপকরণ, সার্বক্ষণিক ডাক্তার ও নার্স। শুধু রোগীদের সেবার নামে চলছে প্রতারণা ও টাকা হাতিয়ে নেবার কৌশল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলাতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার নামে অসহায় রোগীদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। হরিণাকুণ্ডুতে এই রকম একটি লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল হচ্ছে নিউ রেসিডো (প্রা.) হাসপাতাল। বর্তমানে এই ক্লিনিকটির বেহাল দশার মধ্যেও রোগী দেখা হচ্ছে, চলছে অপারেশন। সরকারি বিধিমতে একটি ক্লিনিকে কমপক্ষে তিনজন এমবিবিএস চিকিৎসক, ছয়জন নার্স ও দুইজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকার কথা। প্রতিটি শয্যার জন্য থাকতে হয় ৮০ বর্গফুট জায়গা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটার, এর সঙ্গে আরও দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (টেক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর) ও বিআইএন (বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর), সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তবে শয্যা সংখ্যা বেশি হলে আনুপাতিক হারে জনবল থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো মিল নেই নিউ রেসিডো (প্রা.) হাসপাতালে। নেই কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং নারকোটিকসের লাইসেন্স। নারকোটিকসের লাইসেন্স ব্যতীত প্রাইভেট হাসপাতালের সরকারি অনুমোদন সম্ভব নয়। তারপরও এই প্রতিষ্ঠান সবকিছুর তোয়াক্কা না করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে মানুষ মারার ব্যবসা।
এছাড়াও নিউ রেসিডো (প্রা.) হাসপাতালের মালিক জনৈক কুশুম নিজেই ডাক্তার সেজে বিভিন্ন অপারেশন করে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি এর সঙ্গে একইভাবে শিখা প্রাইভেট হাসপাতাল নামে আরও একটি প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে। এই হাসপাতালের মালিক কুশুমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কোনো ডাক্তার এবং নার্স উপস্থিত নেই কেন, উত্তরে তিনি বলেন, হরিণাকুণ্ডুতে সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে হাসপাতাল চালানো সম্ভব নয়। তাছাড়া ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের ক্লার্কদের ম্যানেজ করে চালাতে হয় ক্লিনিক।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি পত্রিকায় ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার, হাসপাতাল গুলো চলে কীভাবে’ শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হলে সিভিল সার্জন হরিণাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের টিএইচও জামিনুর রশিদকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। টিএইচও জামিনুর রশিদ স্মারক নম্বর উঃ স্বাঃ কর্ম/হরিনা/ঝিনাই/২০২০/৩০৩ তারিখ ২২-০৪-২০২২ এর মাধ্যমে সিভিল সার্জন ঝিনাইদহকে জানান নিউ রেসিডো (প্রা.) হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনকালে কোনো ডাক্তারের উপস্থিত পাওয়া যায়নি। কথিত আছে লাখ টাকার বিনিময়ে এই তদন্ত রিপোর্ট ধামাচাপা দেওয়া হয়। তৎকালীন সিভিল সার্জন সেলিনা বেগমের কাছে এই রিপোর্ট পৌছানের আগেই গায়েব হয়ে গেছে।
সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নিউ রেসিডো (প্রা.) বেসরকারি হাসপাতালসহ আল-হেরা ক্লিনিক, জনসেবা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জনতা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শিখা প্রাইভেট হাসপাতাল চলছে। সরকারি অনুমোদন বাদে কীভাবে এই ৫টি বেসরকারি হাসপাতাল সকলের সামনে চলেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অনুমোদনহীন প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জেলা সিভিল সার্জনের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যারা লাইসেন্স নবায়ন করেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

হরিণাকুণ্ডুতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার

আপলোড টাইম : ১১:১৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:
অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নকরণে কোনো ভূমিকা রাখেনি ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডুতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী সেবার নামে চলছে প্রতারণা ও ঠাকবাজী। অপচিকিৎসা ও দায়সারা চিকিৎসা দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। হরিণাকুণ্ডুতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, লাইসেন্স ও যন্ত্রপাতি ছাড়ায় চলছে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল। এসব ক্লিনিকের নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, পরীক্ষার উপকরণ, সার্বক্ষণিক ডাক্তার ও নার্স। শুধু রোগীদের সেবার নামে চলছে প্রতারণা ও টাকা হাতিয়ে নেবার কৌশল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলাতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার নামে অসহায় রোগীদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। হরিণাকুণ্ডুতে এই রকম একটি লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল হচ্ছে নিউ রেসিডো (প্রা.) হাসপাতাল। বর্তমানে এই ক্লিনিকটির বেহাল দশার মধ্যেও রোগী দেখা হচ্ছে, চলছে অপারেশন। সরকারি বিধিমতে একটি ক্লিনিকে কমপক্ষে তিনজন এমবিবিএস চিকিৎসক, ছয়জন নার্স ও দুইজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকার কথা। প্রতিটি শয্যার জন্য থাকতে হয় ৮০ বর্গফুট জায়গা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটার, এর সঙ্গে আরও দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (টেক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর) ও বিআইএন (বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর), সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তবে শয্যা সংখ্যা বেশি হলে আনুপাতিক হারে জনবল থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো মিল নেই নিউ রেসিডো (প্রা.) হাসপাতালে। নেই কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং নারকোটিকসের লাইসেন্স। নারকোটিকসের লাইসেন্স ব্যতীত প্রাইভেট হাসপাতালের সরকারি অনুমোদন সম্ভব নয়। তারপরও এই প্রতিষ্ঠান সবকিছুর তোয়াক্কা না করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে মানুষ মারার ব্যবসা।
এছাড়াও নিউ রেসিডো (প্রা.) হাসপাতালের মালিক জনৈক কুশুম নিজেই ডাক্তার সেজে বিভিন্ন অপারেশন করে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি এর সঙ্গে একইভাবে শিখা প্রাইভেট হাসপাতাল নামে আরও একটি প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে। এই হাসপাতালের মালিক কুশুমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কোনো ডাক্তার এবং নার্স উপস্থিত নেই কেন, উত্তরে তিনি বলেন, হরিণাকুণ্ডুতে সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে হাসপাতাল চালানো সম্ভব নয়। তাছাড়া ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের ক্লার্কদের ম্যানেজ করে চালাতে হয় ক্লিনিক।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি পত্রিকায় ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার, হাসপাতাল গুলো চলে কীভাবে’ শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হলে সিভিল সার্জন হরিণাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের টিএইচও জামিনুর রশিদকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। টিএইচও জামিনুর রশিদ স্মারক নম্বর উঃ স্বাঃ কর্ম/হরিনা/ঝিনাই/২০২০/৩০৩ তারিখ ২২-০৪-২০২২ এর মাধ্যমে সিভিল সার্জন ঝিনাইদহকে জানান নিউ রেসিডো (প্রা.) হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনকালে কোনো ডাক্তারের উপস্থিত পাওয়া যায়নি। কথিত আছে লাখ টাকার বিনিময়ে এই তদন্ত রিপোর্ট ধামাচাপা দেওয়া হয়। তৎকালীন সিভিল সার্জন সেলিনা বেগমের কাছে এই রিপোর্ট পৌছানের আগেই গায়েব হয়ে গেছে।
সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নিউ রেসিডো (প্রা.) বেসরকারি হাসপাতালসহ আল-হেরা ক্লিনিক, জনসেবা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জনতা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শিখা প্রাইভেট হাসপাতাল চলছে। সরকারি অনুমোদন বাদে কীভাবে এই ৫টি বেসরকারি হাসপাতাল সকলের সামনে চলেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অনুমোদনহীন প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জেলা সিভিল সার্জনের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যারা লাইসেন্স নবায়ন করেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।