ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে শিক্ষকের বেত্রাঘাতে পঙ্গুত্বের পথে ছাত্রী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৩১:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেত্রাঘাতে সুরাইয়া খাতুন নামের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী এখন পঙ্গুপ্রায়। শিক্ষকের আঘাতে তার মেরুদণ্ডের শিরায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেলের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্ববাবধানে চিকিৎসা চলছে সুরাইয়ার। তবে আর্থিক অনটনের কারণে চিকিৎসার খরচ মেটাতে অক্ষম হচ্ছে সুরাইয়ার পরিবার। অভিযোগ রয়েছে- বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উল্টো চাপ প্রয়োগ করছেন সুরাইয়ার পরিবারকে।

সুরাইয়া মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শালদহ গ্রামের দিনমজুর হাফিজুল ইসলামের মেয়ে। একই গ্রামের এসএআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বর্তমানে সুরাইয়া কোমরে বেল্ট বেঁধে কোনরকম চলাফেরা করে। তবে বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়েই সময় কাটতে হয় তাকে। বন্ধ হয়েছে তার লেখাপড়াও।

সুরাইয়ার পরিবারের অভিযোগ, মাস পাঁচেক আগে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলাম সুরাইয়াকে বেধড়ক বেত্রাঘাত করে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক তার ঘাড় ঠেসে ধরে পিঠের ওপরে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ব্যথায় শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সেদিন ব্যথা নিয়ে বাড়িতে শুয়ে থাকলেও পরদিন অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা সুরাইয়াকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেয়। কিন্তু কোনো উপসম না হওয়ায় গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুরাইয়াকে রাজশাহী অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।

পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় ও নিকট আত্মীয়দের সহায়তায় সুরাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম. আহম্মদ আলী সুরাইয়ার আঘাতের স্থানের কয়েকটি পরীক্ষা করান। পরীক্ষায় উঠে আসে মেরুদন্ডের প্রধান শিরায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। যার চিকিৎসা ব্যয়বহুল। সুরাইয়ার পরিবার আরও জানায়, ঘটনার রাতে সুরাইয়ার মা অভিযুক্ত শিক্ষক হামিদুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে তার মেয়েকে মারধরের বিষয়ে জানতে চান। প্রথমে শিক্ষক মারধরের কথা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় সুরাইয়ার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে সুরাইয়ার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।

সুরাইয়ার মা লেকজান খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা কোন শিক্ষকের কাজ হতে পারে না। অমানবিক নির্যাতনে আজ সে পঙ্গু হতে চলছে। চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। প্রথম দিকে শিক্ষক বলেছিলেন সব খরচ বহন করবেন। এখন তিনি বিভিন্ন নেতা ধরে আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন।’

এদিকে সরেজমিনে বিষয়টি নিয়ে তথ্যানুসন্ধানে গেলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ছাত্রীকে বেত্রাঘাতের বিষয়টি স্বীকার করে সহকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, দুষ্টামির কারণে বাঁশের চিকন কুঞ্চি দিয়ে দুটি আঘাত করেছিলাম। লাঠিপেটার বিষয়টি সত্য নয়। এদিকে সুরাইয়ার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় আর শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন মহলের দরবারে ঘুরছেন তার পিতা।

সুরাইয়ার পিতা হাফিজুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে হবে চিকিৎসক এমটি তাকে জানিয়েছেন। চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগছে। যা কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চলছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষক যেভাবে বেত্রাঘাতে করেছেন, তা ছাত্রীকে শাসনের মধ্যে পড়ে না। এটি অবশ্যই নির্যাতন। লাঠিপেটাকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দিকে যেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে এসএআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘সুরাইয়ার চিকিৎসার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি।’ একই কথা জানান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু। তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি আমি নিরসনের চেষ্টা করছি।’ এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনী খাতুন বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে শিক্ষকের বেত্রাঘাতে পঙ্গুত্বের পথে ছাত্রী

আপলোড টাইম : ০১:৩১:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেত্রাঘাতে সুরাইয়া খাতুন নামের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী এখন পঙ্গুপ্রায়। শিক্ষকের আঘাতে তার মেরুদণ্ডের শিরায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেলের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্ববাবধানে চিকিৎসা চলছে সুরাইয়ার। তবে আর্থিক অনটনের কারণে চিকিৎসার খরচ মেটাতে অক্ষম হচ্ছে সুরাইয়ার পরিবার। অভিযোগ রয়েছে- বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উল্টো চাপ প্রয়োগ করছেন সুরাইয়ার পরিবারকে।

সুরাইয়া মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শালদহ গ্রামের দিনমজুর হাফিজুল ইসলামের মেয়ে। একই গ্রামের এসএআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বর্তমানে সুরাইয়া কোমরে বেল্ট বেঁধে কোনরকম চলাফেরা করে। তবে বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়েই সময় কাটতে হয় তাকে। বন্ধ হয়েছে তার লেখাপড়াও।

সুরাইয়ার পরিবারের অভিযোগ, মাস পাঁচেক আগে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলাম সুরাইয়াকে বেধড়ক বেত্রাঘাত করে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক তার ঘাড় ঠেসে ধরে পিঠের ওপরে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ব্যথায় শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সেদিন ব্যথা নিয়ে বাড়িতে শুয়ে থাকলেও পরদিন অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা সুরাইয়াকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেয়। কিন্তু কোনো উপসম না হওয়ায় গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুরাইয়াকে রাজশাহী অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।

পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় ও নিকট আত্মীয়দের সহায়তায় সুরাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম. আহম্মদ আলী সুরাইয়ার আঘাতের স্থানের কয়েকটি পরীক্ষা করান। পরীক্ষায় উঠে আসে মেরুদন্ডের প্রধান শিরায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। যার চিকিৎসা ব্যয়বহুল। সুরাইয়ার পরিবার আরও জানায়, ঘটনার রাতে সুরাইয়ার মা অভিযুক্ত শিক্ষক হামিদুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে তার মেয়েকে মারধরের বিষয়ে জানতে চান। প্রথমে শিক্ষক মারধরের কথা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় সুরাইয়ার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে সুরাইয়ার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।

সুরাইয়ার মা লেকজান খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা কোন শিক্ষকের কাজ হতে পারে না। অমানবিক নির্যাতনে আজ সে পঙ্গু হতে চলছে। চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। প্রথম দিকে শিক্ষক বলেছিলেন সব খরচ বহন করবেন। এখন তিনি বিভিন্ন নেতা ধরে আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন।’

এদিকে সরেজমিনে বিষয়টি নিয়ে তথ্যানুসন্ধানে গেলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ছাত্রীকে বেত্রাঘাতের বিষয়টি স্বীকার করে সহকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, দুষ্টামির কারণে বাঁশের চিকন কুঞ্চি দিয়ে দুটি আঘাত করেছিলাম। লাঠিপেটার বিষয়টি সত্য নয়। এদিকে সুরাইয়ার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় আর শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন মহলের দরবারে ঘুরছেন তার পিতা।

সুরাইয়ার পিতা হাফিজুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে হবে চিকিৎসক এমটি তাকে জানিয়েছেন। চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগছে। যা কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চলছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষক যেভাবে বেত্রাঘাতে করেছেন, তা ছাত্রীকে শাসনের মধ্যে পড়ে না। এটি অবশ্যই নির্যাতন। লাঠিপেটাকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দিকে যেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে এসএআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘সুরাইয়ার চিকিৎসার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি।’ একই কথা জানান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু। তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি আমি নিরসনের চেষ্টা করছি।’ এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনী খাতুন বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।