ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটিতে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের পাথর, বালি ও রড। এছাড়াও পাথর ও বালির মিশ্রণেও রয়েছে অনিয়ম। এসব অনিয়মের কারণে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলেও ছায়াশক্তির বলে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে সঠিকভাবে ও সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মীরা।
জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় স্থানীয় যুবসমাজকে খেলামুখি করতে ও জনগণের দাবির মুখে সরকার সাহারবাটি ফুটবল মাঠে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় মোট পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যয়ে এ নির্মাণকাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এস অ্যান্ড এমটি জয়েন্ট ভেন্সার (জেভি)। যা বাস্তবায়নে রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আর এর স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কাজ শুরুর প্রথম থেকেই নিম্নমানের রড পাথর ও বালি ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনে যান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। তিনি কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পান। এসময় তিনি কাজ বন্ধ রাখাসহ নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন।

কয়েকদিন পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবারও কাজ শুরু করে ওই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই। সাদা পাথরের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কালো পাথর, যা অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও যে সমস্ত সাদা পাথর স্তূপ রাখা হয়েছে, তা ব্যবহারে অযোগ্য। ২.৫ এফএম বালি ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও লোকাল বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার সেটাও করা হচ্ছে না সঠিক পরিমাপে। স্থানীয় লোকজন একাধিকবার অভিযোগ করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোনো কর্ণপাত করছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লোকাল বালির সঙ্গে সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। ফান্না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও বাঁশের তৈরি ঝুড়ি ব্যবহার করায় পাথর বালি ও সিমেন্টের পরিমাপ আনুপাতিকহারে সঠিক হচ্ছে না। তাছাড়া রডের ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের। এর পরিমাপও সঠিক নয়। বালি ওয়াশ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ব্যবহৃত হচ্ছে ধুলা মিশ্রিত বালি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কয়েকজন জানান, কাজ শুরুর প্রথম দিকে যে রড, বালি ও পাথর আনা হয়েছিল, তা নিম্নমানের হওয়ায় এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন নির্মাণকাজ দেখতে এসে তা সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেন। এরই মধ্যে ওই পাথর বাদ দিয়ে কালো পাথর দিয়ে কাজ শুরু করতে বলায় নতুন করে কালো পাথর আনা হয়েছে। কিন্তু কালো পাথর ব্যবহারের নির্দেশনা নেই। তবে ব্যবহারের অযোগ্য মৃত পাথরগুলো সরানো হয়নি।


শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের কনসালটেন্ট সাদ্দাম হোসেন বালি ওয়াশ করা হয়েছে বলে দাবি করে জানান, সব নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে, দ্রুত নিম্নমানের পাথর সরিয়ে নেওয়া হবে। তাছাড়া সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের নির্দেশে কালো পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বালি পাথর ও সিমেন্টের আনুপাতিক হার সঠিক না হওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনি খাতুন জানান, স্টেডিয়াম নির্মাণে কোনো দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। বন্ধ কাজ পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন জানান, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরুর কারণে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পাথর ও বালি পরিবর্তন করার পর কাজ শুরু করাতে বলা হয়েছে। তবে যেহেতু রড গেঁথে তার কাজ শুরু করা হয়েছে, সেটি পরিবর্তণ সহজ নয় এবং পরে উন্নতমানের রড ব্যবহারের শর্ত দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদক:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটিতে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের পাথর, বালি ও রড। এছাড়াও পাথর ও বালির মিশ্রণেও রয়েছে অনিয়ম। এসব অনিয়মের কারণে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলেও ছায়াশক্তির বলে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে সঠিকভাবে ও সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মীরা।
জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় স্থানীয় যুবসমাজকে খেলামুখি করতে ও জনগণের দাবির মুখে সরকার সাহারবাটি ফুটবল মাঠে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় মোট পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যয়ে এ নির্মাণকাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এস অ্যান্ড এমটি জয়েন্ট ভেন্সার (জেভি)। যা বাস্তবায়নে রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আর এর স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কাজ শুরুর প্রথম থেকেই নিম্নমানের রড পাথর ও বালি ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনে যান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। তিনি কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পান। এসময় তিনি কাজ বন্ধ রাখাসহ নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন।

কয়েকদিন পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবারও কাজ শুরু করে ওই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই। সাদা পাথরের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কালো পাথর, যা অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও যে সমস্ত সাদা পাথর স্তূপ রাখা হয়েছে, তা ব্যবহারে অযোগ্য। ২.৫ এফএম বালি ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও লোকাল বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার সেটাও করা হচ্ছে না সঠিক পরিমাপে। স্থানীয় লোকজন একাধিকবার অভিযোগ করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোনো কর্ণপাত করছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লোকাল বালির সঙ্গে সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। ফান্না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও বাঁশের তৈরি ঝুড়ি ব্যবহার করায় পাথর বালি ও সিমেন্টের পরিমাপ আনুপাতিকহারে সঠিক হচ্ছে না। তাছাড়া রডের ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের। এর পরিমাপও সঠিক নয়। বালি ওয়াশ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ব্যবহৃত হচ্ছে ধুলা মিশ্রিত বালি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কয়েকজন জানান, কাজ শুরুর প্রথম দিকে যে রড, বালি ও পাথর আনা হয়েছিল, তা নিম্নমানের হওয়ায় এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন নির্মাণকাজ দেখতে এসে তা সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেন। এরই মধ্যে ওই পাথর বাদ দিয়ে কালো পাথর দিয়ে কাজ শুরু করতে বলায় নতুন করে কালো পাথর আনা হয়েছে। কিন্তু কালো পাথর ব্যবহারের নির্দেশনা নেই। তবে ব্যবহারের অযোগ্য মৃত পাথরগুলো সরানো হয়নি।


শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের কনসালটেন্ট সাদ্দাম হোসেন বালি ওয়াশ করা হয়েছে বলে দাবি করে জানান, সব নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে, দ্রুত নিম্নমানের পাথর সরিয়ে নেওয়া হবে। তাছাড়া সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের নির্দেশে কালো পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বালি পাথর ও সিমেন্টের আনুপাতিক হার সঠিক না হওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনি খাতুন জানান, স্টেডিয়াম নির্মাণে কোনো দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। বন্ধ কাজ পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন জানান, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরুর কারণে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পাথর ও বালি পরিবর্তন করার পর কাজ শুরু করাতে বলা হয়েছে। তবে যেহেতু রড গেঁথে তার কাজ শুরু করা হয়েছে, সেটি পরিবর্তণ সহজ নয় এবং পরে উন্নতমানের রড ব্যবহারের শর্ত দেওয়া হয়েছে।