ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়কগুলো যেন এক মৃত্যুফাঁদ, নীরব প্রশাসন!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫৬:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
লাটাহাম্বার চালক মনিরুল ইসলাম ঝিনাইদহ শহরের আবুল কালাম পেট্রোল পাম্পে তেল ভরছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি অবৈধ যানবাহন নিয়ে কীভাবে শহরে ঢুকলেন? তিনি হেসে জানালেন ‘আমরা মাসিক দিই। ঝিনাইদহের খাজুরা এলাকায় আমাদের অফিস আছে। সেখান থেকে ওরা প্রতিমাসে টাকা নিয়ে আসে’। মনিরুলের মতো শত শত অবৈধ যানবাহনের চালক প্রতিদিন বিধি-নিষেধ অমান্য করে অবৈধ যান নিয়ে ঝিনাইদহের সড়ক ও মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন আজীবনের মতো।
সারা জেলায় এ ধরনের অবৈধ যানবাহনের সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা সম্ভব না হলেও ঝিনাইদহ বিআরটি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ যানবাহন ঝিনাইদহের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে। রাস্তায় অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে পরিবহন সেক্টরে নেমে এসেছে অশনিসংকেত। সড়কগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। সড়কে এখন শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ অবৈধ যানবাহনের দখলে চলে গেছে। অবৈধ যানের চালকরা ট্রাফিক আইন ও সংকেত না মানার করণে বৈধ যান চালকদের নানমুখী বিপদ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এদিকে অবৈধ নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটিতে মালামালা টানার কারণে ট্রাক ও বাসের আয়-রোজগার কমে এসেছে। বাসের পরিবর্তে যাত্রীরা এখন অটোভ্যান, অটো রিকশা, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার ও লেগুনাতে যাতায়াত করছে।
ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় মোট ৩০৬টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ বাস মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণে ১৭৮টি, কালীগঞ্জে ৯৮টি ও মহেশপুরে ৩০টি যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। এছাড়া ট্রাক ও মিনি ট্রাকের সংখ্যা জেলায় ১ হাজার ৫ শ থেকে ২ হাজার। মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলের বিষয়ে ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস পরিচালনা কমিটির সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু বলেন, ‘আমরা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বারবার অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছি। মহামান্য হাইকোর্টও রায় দিয়েছে জাতীয় মহাসড়কে এসব অবৈধ গাড়ি চলবে না। কিন্তু কেন যে বন্ধ হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। এসব অবৈধ গাড়ির কারণে মানুষের জীবন বিপণ্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বা যাত্রীরাও এ থেকে পরিত্রাণ চায়’। তিনি বলেন, বাস মালিকরা প্রতি বছর সরকারকে মোটা অংকের কর দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কথা ভাবা হচ্ছে না। বরং আগের চেয়ে সড়ক মহাসড়কে আরও বেশি অবৈধ যান চলাচল করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পরিবহন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
ঝিনাইদহ ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দাউদ হোসেন বলেন, এখন ট্রাকের পরিবর্তে রাস্তায় লাটাহাম্বার নামে একটি অদ্ভুত যানবাহন চলে। ফলে ট্রাকে মালামাল পরিবহন কমে এসেছে। তিনি বলেন, ট্রাকের যন্ত্রাংশ ও নানা খাতে বিআরটিএ’র ফি বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই ট্রাক মালিকরা দিশেহারা, তার ওপর সড়কে অবৈধ লেগুনা, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক, অটো ভ্যান, আলমসাধু, লাটাহাম্বার ও করিমন গাড়ি চলার কারণে মালিক শ্রমিক সবাই পথে বসছে।
ঝিনাইদহ বিআরটিএ’র কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, জেলায় এখন বৈধ যানবাহনের চেয়ে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেশি। এই সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার হবে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তারপরও চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না।’
ঝিনাইদহ হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত সড়ক-মহাসড়কে অভিযান চালানো হচ্ছে। আলমসাধু, ভটভটি ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন আটক করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের সচেতনও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সেক্টরের সঙ্গে সবাই একসঙ্গে কাজ না করলে পুলিশের পক্ষে একা অবৈধ যানবাহন বন্ধ করা সম্ভব নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সড়কগুলো যেন এক মৃত্যুফাঁদ, নীরব প্রশাসন!

আপলোড টাইম : ০৭:৫৬:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
লাটাহাম্বার চালক মনিরুল ইসলাম ঝিনাইদহ শহরের আবুল কালাম পেট্রোল পাম্পে তেল ভরছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি অবৈধ যানবাহন নিয়ে কীভাবে শহরে ঢুকলেন? তিনি হেসে জানালেন ‘আমরা মাসিক দিই। ঝিনাইদহের খাজুরা এলাকায় আমাদের অফিস আছে। সেখান থেকে ওরা প্রতিমাসে টাকা নিয়ে আসে’। মনিরুলের মতো শত শত অবৈধ যানবাহনের চালক প্রতিদিন বিধি-নিষেধ অমান্য করে অবৈধ যান নিয়ে ঝিনাইদহের সড়ক ও মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন আজীবনের মতো।
সারা জেলায় এ ধরনের অবৈধ যানবাহনের সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা সম্ভব না হলেও ঝিনাইদহ বিআরটি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ যানবাহন ঝিনাইদহের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে। রাস্তায় অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে পরিবহন সেক্টরে নেমে এসেছে অশনিসংকেত। সড়কগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। সড়কে এখন শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ অবৈধ যানবাহনের দখলে চলে গেছে। অবৈধ যানের চালকরা ট্রাফিক আইন ও সংকেত না মানার করণে বৈধ যান চালকদের নানমুখী বিপদ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এদিকে অবৈধ নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটিতে মালামালা টানার কারণে ট্রাক ও বাসের আয়-রোজগার কমে এসেছে। বাসের পরিবর্তে যাত্রীরা এখন অটোভ্যান, অটো রিকশা, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার ও লেগুনাতে যাতায়াত করছে।
ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় মোট ৩০৬টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ বাস মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণে ১৭৮টি, কালীগঞ্জে ৯৮টি ও মহেশপুরে ৩০টি যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। এছাড়া ট্রাক ও মিনি ট্রাকের সংখ্যা জেলায় ১ হাজার ৫ শ থেকে ২ হাজার। মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলের বিষয়ে ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস পরিচালনা কমিটির সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু বলেন, ‘আমরা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বারবার অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছি। মহামান্য হাইকোর্টও রায় দিয়েছে জাতীয় মহাসড়কে এসব অবৈধ গাড়ি চলবে না। কিন্তু কেন যে বন্ধ হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। এসব অবৈধ গাড়ির কারণে মানুষের জীবন বিপণ্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বা যাত্রীরাও এ থেকে পরিত্রাণ চায়’। তিনি বলেন, বাস মালিকরা প্রতি বছর সরকারকে মোটা অংকের কর দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কথা ভাবা হচ্ছে না। বরং আগের চেয়ে সড়ক মহাসড়কে আরও বেশি অবৈধ যান চলাচল করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পরিবহন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
ঝিনাইদহ ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দাউদ হোসেন বলেন, এখন ট্রাকের পরিবর্তে রাস্তায় লাটাহাম্বার নামে একটি অদ্ভুত যানবাহন চলে। ফলে ট্রাকে মালামাল পরিবহন কমে এসেছে। তিনি বলেন, ট্রাকের যন্ত্রাংশ ও নানা খাতে বিআরটিএ’র ফি বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই ট্রাক মালিকরা দিশেহারা, তার ওপর সড়কে অবৈধ লেগুনা, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক, অটো ভ্যান, আলমসাধু, লাটাহাম্বার ও করিমন গাড়ি চলার কারণে মালিক শ্রমিক সবাই পথে বসছে।
ঝিনাইদহ বিআরটিএ’র কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, জেলায় এখন বৈধ যানবাহনের চেয়ে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেশি। এই সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার হবে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তারপরও চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না।’
ঝিনাইদহ হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত সড়ক-মহাসড়কে অভিযান চালানো হচ্ছে। আলমসাধু, ভটভটি ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন আটক করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের সচেতনও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সেক্টরের সঙ্গে সবাই একসঙ্গে কাজ না করলে পুলিশের পক্ষে একা অবৈধ যানবাহন বন্ধ করা সম্ভব নয়।