ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে দিনব্যাপী গ্রামীণ খেলাধুলা অনুষ্ঠিত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৯:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
তেল মেখে কলাগাছে ওঠার চেষ্টা করছে কয়েকজন বয়স্ক ও কিশোর। কেউবা আবার দেঁৗড়াচ্ছে চটের বস্তা পরে। আবার একদল বাঁচ্চা ডিগবাজি দিয়ে অতিক্রম করছে গন্তব্য। কেউবা চোখ বেঁধে হাস ধরার চেষ্টা করছেন। এমন সব ইভেন্ট নিয়ে ব্যতিক্রমী ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতা দেখতে ভিড় করেছিল হাজারো কৌতুহলী মানুষ। গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি থেকে খেলার উদ্বোধন করেন।
আয়োজকরা জানান, হারিয়ে যাওয়া গ্রাম্য খেলাধুলাকে নতুন করে পরিচিত করতে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয়রা স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণের পাশাপাশি হাততালি, হৈ—হুল্লোড়ে উৎসাহ দিয়েছেন প্রতিযোগীদের। তাছাড়া সমাজের অসঙ্গতী ও বাল্যবিয়ের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক জান মোহাম্মদ মিণ্টুর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, গাংনী প্রেসক্লাবের সভাপতি তৌহিদ উদ দৌলা রেজা, গাংনী প্রেসক্লাবের জ্যোষ্ঠ সাংবাদিক মজনুর রহমান আকাশ ও ষোলটাকার ছয় নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবব্দুল কুদ্দুস।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত খেলাগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় ছিল— প্লেট মার্বেল উত্তোলন, ইটপায়ে হাঁটা, ঘরে বাইরে, চেয়ারে বসা, গুপ্তধন অনুসন্ধান, অংক দেঁৗড়, বন্ধ চোখে হাঁস ধরা, ডিগবাজী, বস্তার ওপরে বসে বস্তায় টানাদৌড়, বালিতে ঝুলিয়ে বল নিক্ষেপ, গামলার ভেতরে বেলুন ফোঁটানো, পিঠে হাড়ি ভাঙ্গা, স্বামীর পেটে স্ত্রীর বল নিক্ষেপ, স্বামী—স্ত্রী দড়ি টানাটানি, হাঁড়ি ভাঙ্গা, ধীরগতির মোটরসাইকেল প্রতিযোগিতা, মেরুদন্ড শক্তির পরীক্ষা, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা, বালিশ লড়াই, সাবান মাখা প্রতিযোগিতা ও অন্ধভাবে পথচলা।
খেলা দেখতে আসা দর্শনার্থী গাংনী মাইওয়ান শো—রুমের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম জানান, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। ২০ বছর আগে গ্রামের ছেলে—মেয়েরা ডাংগুলি, বউ তোলা, ঘুড়ি ওড়ানো, হাড়ের গুটি খেলা, কলাগাছে ওঠা, রশি টানাটানিসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় মত্ত থাকত সারাবেলা। সেই হারানো খেলাগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। এ খেলার আয়োজন করায় নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ খেলাধুলার পরিচিতি পাচ্ছে।
অস্টেলিয়া থেকে নানা বাড়িতে বেড়াতে আসা ও অংক দৌড়ে প্রথম হওয়া জিসান বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলার গল্প শুনেছেন। এবার দেশে এসে খেলা দেখা ও অংশ নিয়ে প্রথম হওয়ায় আমি অনেক বেশ আনন্দিত। দিনটি আমার জীবনের স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ চেয়ার খেলায় অংশ নেয়া গাংনী মহিলা কলেজের ছাত্রী শ্রাবন্তী জানান, বর্তমান আধুনিক যুগে সব ছেলে মেয়েরা মোবাইল গেমে আসক্ত। এতে অনেকেই বিপদগামী হচ্ছেন। গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন ও প্রচলন থাকলে অনেকেই এসব খারাপ পথ থেকে সরে আসবে।
আয়োজক কমিটির সভাপতি জান মোহাম্মদ মিন্টু জানান, গ্রামীন খেলাধুলাকে ধরে রাখার জন্য প্রতি বছর এ আয়োজন করা হয়। কোভিড এর কারনে দুই বছর বন্ধ থাকলেও আবার শুরু করা হয়েছে। গত ১১ বছরে ধরে এই খেলাধুলার আয়োজন করে আসেছেন চেংগাড়া গ্রামের লোকজন। দূর দূরান্ত থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষজন এখানে খেলা উপভোগ করতে আসেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানান, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলো আজ বিলপ্তির পথে, গ্রামীণ এসব খেলার অস্তিত্ব খুজেঁ পাওয়াই কঠিন। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া গ্রাম বাংলার খেলাধুলা আজ রুপকথার ন্যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শতাধিক গ্রামীণ খেলাধুলার প্রচলন ছিলো। কালের বির্বতনে তা হারিয়ে যাচ্ছে। এ আয়োজনটি প্রশংশনীয়। প্রতিবছর এমন আয়োজন রাখার অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে দিনব্যাপী গ্রামীণ খেলাধুলা অনুষ্ঠিত

আপলোড টাইম : ০৪:৩৯:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
তেল মেখে কলাগাছে ওঠার চেষ্টা করছে কয়েকজন বয়স্ক ও কিশোর। কেউবা আবার দেঁৗড়াচ্ছে চটের বস্তা পরে। আবার একদল বাঁচ্চা ডিগবাজি দিয়ে অতিক্রম করছে গন্তব্য। কেউবা চোখ বেঁধে হাস ধরার চেষ্টা করছেন। এমন সব ইভেন্ট নিয়ে ব্যতিক্রমী ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতা দেখতে ভিড় করেছিল হাজারো কৌতুহলী মানুষ। গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি থেকে খেলার উদ্বোধন করেন।
আয়োজকরা জানান, হারিয়ে যাওয়া গ্রাম্য খেলাধুলাকে নতুন করে পরিচিত করতে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয়রা স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণের পাশাপাশি হাততালি, হৈ—হুল্লোড়ে উৎসাহ দিয়েছেন প্রতিযোগীদের। তাছাড়া সমাজের অসঙ্গতী ও বাল্যবিয়ের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক জান মোহাম্মদ মিণ্টুর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, গাংনী প্রেসক্লাবের সভাপতি তৌহিদ উদ দৌলা রেজা, গাংনী প্রেসক্লাবের জ্যোষ্ঠ সাংবাদিক মজনুর রহমান আকাশ ও ষোলটাকার ছয় নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবব্দুল কুদ্দুস।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত খেলাগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় ছিল— প্লেট মার্বেল উত্তোলন, ইটপায়ে হাঁটা, ঘরে বাইরে, চেয়ারে বসা, গুপ্তধন অনুসন্ধান, অংক দেঁৗড়, বন্ধ চোখে হাঁস ধরা, ডিগবাজী, বস্তার ওপরে বসে বস্তায় টানাদৌড়, বালিতে ঝুলিয়ে বল নিক্ষেপ, গামলার ভেতরে বেলুন ফোঁটানো, পিঠে হাড়ি ভাঙ্গা, স্বামীর পেটে স্ত্রীর বল নিক্ষেপ, স্বামী—স্ত্রী দড়ি টানাটানি, হাঁড়ি ভাঙ্গা, ধীরগতির মোটরসাইকেল প্রতিযোগিতা, মেরুদন্ড শক্তির পরীক্ষা, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা, বালিশ লড়াই, সাবান মাখা প্রতিযোগিতা ও অন্ধভাবে পথচলা।
খেলা দেখতে আসা দর্শনার্থী গাংনী মাইওয়ান শো—রুমের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম জানান, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। ২০ বছর আগে গ্রামের ছেলে—মেয়েরা ডাংগুলি, বউ তোলা, ঘুড়ি ওড়ানো, হাড়ের গুটি খেলা, কলাগাছে ওঠা, রশি টানাটানিসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় মত্ত থাকত সারাবেলা। সেই হারানো খেলাগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। এ খেলার আয়োজন করায় নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ খেলাধুলার পরিচিতি পাচ্ছে।
অস্টেলিয়া থেকে নানা বাড়িতে বেড়াতে আসা ও অংক দৌড়ে প্রথম হওয়া জিসান বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলার গল্প শুনেছেন। এবার দেশে এসে খেলা দেখা ও অংশ নিয়ে প্রথম হওয়ায় আমি অনেক বেশ আনন্দিত। দিনটি আমার জীবনের স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ চেয়ার খেলায় অংশ নেয়া গাংনী মহিলা কলেজের ছাত্রী শ্রাবন্তী জানান, বর্তমান আধুনিক যুগে সব ছেলে মেয়েরা মোবাইল গেমে আসক্ত। এতে অনেকেই বিপদগামী হচ্ছেন। গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন ও প্রচলন থাকলে অনেকেই এসব খারাপ পথ থেকে সরে আসবে।
আয়োজক কমিটির সভাপতি জান মোহাম্মদ মিন্টু জানান, গ্রামীন খেলাধুলাকে ধরে রাখার জন্য প্রতি বছর এ আয়োজন করা হয়। কোভিড এর কারনে দুই বছর বন্ধ থাকলেও আবার শুরু করা হয়েছে। গত ১১ বছরে ধরে এই খেলাধুলার আয়োজন করে আসেছেন চেংগাড়া গ্রামের লোকজন। দূর দূরান্ত থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষজন এখানে খেলা উপভোগ করতে আসেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানান, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলো আজ বিলপ্তির পথে, গ্রামীণ এসব খেলার অস্তিত্ব খুজেঁ পাওয়াই কঠিন। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া গ্রাম বাংলার খেলাধুলা আজ রুপকথার ন্যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শতাধিক গ্রামীণ খেলাধুলার প্রচলন ছিলো। কালের বির্বতনে তা হারিয়ে যাচ্ছে। এ আয়োজনটি প্রশংশনীয়। প্রতিবছর এমন আয়োজন রাখার অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা।