ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিআরটিএ’র সেবার মূল্য বৃদ্ধি, যানবাহন মালিকরা দিশেহারা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
স্কুল শিক্ষক আনিছুর রহমান এসেছিলেন শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং (লার্নার) লাইসেন্স করতে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অফিসে এসে দেখেন শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি হয়ে ৫২৫ টাকার স্থলে হয়েছে ৭৭৯ টাকা। বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫৪ টাকা। ট্রাকের মালিক মিজানুর রহমান মালিকানা বদলির জন্য এসে দেখেন ১০ হাজার ২৩৫ টাকার বদলি ফি বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৮৫ টাকায়। বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ হাজার ১৫০ টাকা।
স্কুল শিক্ষক আনিছ বা ট্রাক মালিক মিজান নয়, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ দেশের সব জেলায় এমন শত শত মানুষের কাঁধে চেপে বসেছে বিআরটিএর ফি’র বোঝা। সকল ধরণের ফি বৃদ্ধির কারণে বিআরটিএ অফিসে এসে মানুষ হা-হুতাশ করছেন। তবে বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, ফি বৃদ্ধির কারণে রাজস্ব আয়ে কোনো ঘাটতি হবে না। যানবাহন মালিকদের আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয়টি মাথায় রেখেই বিশেষজ্ঞ কমিটি এই ফি নির্ধারণ করেছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিএ জনসাধারণকে ৫৩ ধরণের সেবা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে ৫১টি সেবার মূল্য বা ফি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ব্যক্তিগত যানবাহন মালিকদের যেমন ব্যয় বাড়বে, তেমনি ভাড়ায় চালিত যানবাহনের খরচও বাড়বে। এমনিতেই গ্যাস, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে ব্যায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যায়ের বোঝা চাপলো যানবাহনেও। ফলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইদহের পরিবহন মালিকরা বলছেন, সরকার সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ফলে বাস ও ট্রাক ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। ট্রাকের পরিবর্তে মানুষ নছিমন, করিমন ও আলমসাধু গাড়ির দিকে ঝুকছে। বাসে না চড়ে যাত্রীরা ইজিবাইকে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। শহরে ইজিবাইক, অটোরিক্সা ও থ্রি-হুইলার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ ধরণের অবৈধ যানবাহন। ফলে বাস ও ট্রাক ভাড়ায় ভাটা পড়েছে। এর মধ্যে বিআরটিএ’র ফি যানবাহন মালিকদের কাছে গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার ও মেহেরপুরে অনলাইনে বিআরটিএ’র কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা জানান, আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ছিল ২ হাজার ৫৪২ টাকা, বর্তনামে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৭ টাকায়। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ছিল এক হাজার ৬৭৯ টাকা। হয়েছে দুই হাজার ৭৭২ টাকা। ফিটনেস ছিল ১৬০৫ টাকা, হয়েছে ২৬৯৭ টাকা। মোটরসাইকেল মালিকানা ফি ছিল ২ হাজার ৯৬৪ টাকা, বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৮০ টাকা। ১০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল ৮ হাজার ৮২৯ টাকা, তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ হাজার ৪৪১ টাকা। ১০১ থেকে ১৫০ সিসি পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল ১০ হাজার ১৫২। বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৯৬ টাকায়। শুধু মোটরসাইকেল ও অসমর্থ ব্যক্তির উপযোগী মোটরযানের নিবন্ধন ফি তেমন বাড়েনি।
ঝিনাইদহ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক আতিয়ার রহমান জানান, সরকার প্রদত্ত ফি কেবল বিআরটিএ আদায় করে। মূল্য ঠিক করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, যানবাহন মালিকদের আর্থিক বিষয়টি বিবেচনা করেই বিশেষজ্ঞ কমিটি এই ফি বা সেবার মূল্য নির্ধারণ করেছেন। আশা করা যায় ফি বৃদ্ধির কারণে কোনো সমস্যা হবে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, গণপরিবহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও উপকরণের দাম বেড়েছে। যানবাহন সংক্রান্ত ৫১টি সেবার মূল্য (ফি) বাড়িয়েছে সরকারও।
এদিকে, বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে সারা দেশে নতুন করে মোটরযানের নিবন্ধন হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার। চালকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৮৪ হাজার। ফিটনেস সনদ নবায়ন করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার যানবাহনের। এ সময় ২ লাখ ৫ হাজার যানবাহন চলাচলের অনুমতি (রুট পারমিট) দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিআরটিএ গত অর্থবছরে বিভিন্ন কর ও ফি বাবদ মানুষের কাছ থেকে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বিআরটিএ’র সেবার মূল্য বৃদ্ধি, যানবাহন মালিকরা দিশেহারা

আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:
স্কুল শিক্ষক আনিছুর রহমান এসেছিলেন শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং (লার্নার) লাইসেন্স করতে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অফিসে এসে দেখেন শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি হয়ে ৫২৫ টাকার স্থলে হয়েছে ৭৭৯ টাকা। বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫৪ টাকা। ট্রাকের মালিক মিজানুর রহমান মালিকানা বদলির জন্য এসে দেখেন ১০ হাজার ২৩৫ টাকার বদলি ফি বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৮৫ টাকায়। বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ হাজার ১৫০ টাকা।
স্কুল শিক্ষক আনিছ বা ট্রাক মালিক মিজান নয়, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ দেশের সব জেলায় এমন শত শত মানুষের কাঁধে চেপে বসেছে বিআরটিএর ফি’র বোঝা। সকল ধরণের ফি বৃদ্ধির কারণে বিআরটিএ অফিসে এসে মানুষ হা-হুতাশ করছেন। তবে বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, ফি বৃদ্ধির কারণে রাজস্ব আয়ে কোনো ঘাটতি হবে না। যানবাহন মালিকদের আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয়টি মাথায় রেখেই বিশেষজ্ঞ কমিটি এই ফি নির্ধারণ করেছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিএ জনসাধারণকে ৫৩ ধরণের সেবা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে ৫১টি সেবার মূল্য বা ফি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ব্যক্তিগত যানবাহন মালিকদের যেমন ব্যয় বাড়বে, তেমনি ভাড়ায় চালিত যানবাহনের খরচও বাড়বে। এমনিতেই গ্যাস, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে ব্যায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যায়ের বোঝা চাপলো যানবাহনেও। ফলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইদহের পরিবহন মালিকরা বলছেন, সরকার সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ফলে বাস ও ট্রাক ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। ট্রাকের পরিবর্তে মানুষ নছিমন, করিমন ও আলমসাধু গাড়ির দিকে ঝুকছে। বাসে না চড়ে যাত্রীরা ইজিবাইকে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। শহরে ইজিবাইক, অটোরিক্সা ও থ্রি-হুইলার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ ধরণের অবৈধ যানবাহন। ফলে বাস ও ট্রাক ভাড়ায় ভাটা পড়েছে। এর মধ্যে বিআরটিএ’র ফি যানবাহন মালিকদের কাছে গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার ও মেহেরপুরে অনলাইনে বিআরটিএ’র কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা জানান, আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ছিল ২ হাজার ৫৪২ টাকা, বর্তনামে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৭ টাকায়। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ছিল এক হাজার ৬৭৯ টাকা। হয়েছে দুই হাজার ৭৭২ টাকা। ফিটনেস ছিল ১৬০৫ টাকা, হয়েছে ২৬৯৭ টাকা। মোটরসাইকেল মালিকানা ফি ছিল ২ হাজার ৯৬৪ টাকা, বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৮০ টাকা। ১০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল ৮ হাজার ৮২৯ টাকা, তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ হাজার ৪৪১ টাকা। ১০১ থেকে ১৫০ সিসি পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল ১০ হাজার ১৫২। বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৯৬ টাকায়। শুধু মোটরসাইকেল ও অসমর্থ ব্যক্তির উপযোগী মোটরযানের নিবন্ধন ফি তেমন বাড়েনি।
ঝিনাইদহ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক আতিয়ার রহমান জানান, সরকার প্রদত্ত ফি কেবল বিআরটিএ আদায় করে। মূল্য ঠিক করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, যানবাহন মালিকদের আর্থিক বিষয়টি বিবেচনা করেই বিশেষজ্ঞ কমিটি এই ফি বা সেবার মূল্য নির্ধারণ করেছেন। আশা করা যায় ফি বৃদ্ধির কারণে কোনো সমস্যা হবে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, গণপরিবহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও উপকরণের দাম বেড়েছে। যানবাহন সংক্রান্ত ৫১টি সেবার মূল্য (ফি) বাড়িয়েছে সরকারও।
এদিকে, বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে সারা দেশে নতুন করে মোটরযানের নিবন্ধন হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার। চালকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৮৪ হাজার। ফিটনেস সনদ নবায়ন করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার যানবাহনের। এ সময় ২ লাখ ৫ হাজার যানবাহন চলাচলের অনুমতি (রুট পারমিট) দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিআরটিএ গত অর্থবছরে বিভিন্ন কর ও ফি বাবদ মানুষের কাছ থেকে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে।