ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে বাড়ছে তামাকা চাষ, কোম্পানির প্রণোদনায় উৎসাহিত হচ্ছেন চাষীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, গাংনী:

তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে সরকারিবেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা মুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও মেহেরপুরের গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না তামাকের উৎপাদন বিপণন। বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী প্রচারণা প্রণোদনার কারণে চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। সবুজের আড়ালে প্রতিটি পাতায় পাতায় নিকোটিন নিয়ে বেড়ে উঠছে একেকটি তামাকের চারা। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপর্ণ, জমির উর্বরতা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা।

এদিকে চোখের সামনে তামাক চাষ হলেও তা রোধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি বিভাগ এমনি অভিযোগ সাধারণ চষিদের। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে তামাক চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষকেরা। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে তামাকের চারা। আবার কোথাও কোথাও তামাক পাতা স্যাঁকার জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে চুল্লী। এসব চুল্লীতে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ঝুট কাপড় পোড়ানো হয়। ফলে বাজে পোড়া গন্ধে বাতাস ষিত হয়। গেল বছরের তুলনায় এবার বেশি তামাক চাষ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চাষিরা। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির লোকজন বিভিন্ন ধরণের প্রনোদনা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে সার, কিটনাশক, পলিথিন নগদ টাকা। চাষিরা তামাক বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করে থাকেন। মোটা অংকের টাকার লোভে চাষিরা তামাক কোম্পানীর কথায় তামাক চাষ করছেন।

কুঞ্জনগরের তামাক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এবার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তামাক চাষে লাভ বেশি। এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় / হাজার টাকা এবং তামাক ভালো হলে মণ তামাক পাওয়া যায়। সব বাদ দিয়ে ভালো পরিমাণে লাভ হয়। তামাক চাষে যা যা লাগে সবই কোম্পানীর লোকজন দেয়। ফলে তামাক চাষ অত্যন্ত সহজ।

কৃষক দাউদ হোসেন জানান, এক কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়েছে সব খরচ ওনাদের। উৎপাদিত তামাক বাজার ল্য ধরে যা দাম হবে ওনাদের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে তারা তামাক নিয়ে যাবে। অভিন্ন ভাষায় একই কথা জানালেন শিমুলতলার চাষি মনিরুল ইসলাম সেকেন্দার আলী। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে না।

মেহেরপুর ক্যাবের সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, তামাক চাষ শুধু ক্ষতিকরই না অত্যন্ত অলাভ জনক। তামাক চাষের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ হিসেবে করলেই তার প্রমান মিলে। তাছাড়া তামাকের উচ্ছিষ্ট অংশ হৃদপিন্ডে ঢুকে ক্যান্সারসহ মরণ ব্যাধি হতে পারে। তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এমকে রেজা বলেন, তামাক নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যারা তামাকের পরিচর্যা করে তারাও নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। মপায়ীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে হাপানি ফুসফুসে প্রদাহ ক্যান্সারের মতো রারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তারা।

গাংনী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, এবার অঞ্চলে এক হাজার ৫৯৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। আমরা বিভিন্নভাবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। আমরা তামাকের বদলে অন্য ফসল চাষ করার জন্য তাদেরকে বলছি। তবুও কিছু কিছু তামাক কোম্পানি কৃষকদের প্রভাবিত করছে। তবে অনেকেই তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। আগামীতে তামাকের আবাদ অনেকটা কমে যাবে বলেও আশাবাদী এই কর্মকর্তা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে বাড়ছে তামাকা চাষ, কোম্পানির প্রণোদনায় উৎসাহিত হচ্ছেন চাষীরা

আপলোড টাইম : ০৪:০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩

প্রতিবেদক, গাংনী:

তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে সরকারিবেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা মুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও মেহেরপুরের গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না তামাকের উৎপাদন বিপণন। বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী প্রচারণা প্রণোদনার কারণে চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। সবুজের আড়ালে প্রতিটি পাতায় পাতায় নিকোটিন নিয়ে বেড়ে উঠছে একেকটি তামাকের চারা। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপর্ণ, জমির উর্বরতা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা।

এদিকে চোখের সামনে তামাক চাষ হলেও তা রোধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি বিভাগ এমনি অভিযোগ সাধারণ চষিদের। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে তামাক চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষকেরা। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে তামাকের চারা। আবার কোথাও কোথাও তামাক পাতা স্যাঁকার জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে চুল্লী। এসব চুল্লীতে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ঝুট কাপড় পোড়ানো হয়। ফলে বাজে পোড়া গন্ধে বাতাস ষিত হয়। গেল বছরের তুলনায় এবার বেশি তামাক চাষ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চাষিরা। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির লোকজন বিভিন্ন ধরণের প্রনোদনা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে সার, কিটনাশক, পলিথিন নগদ টাকা। চাষিরা তামাক বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করে থাকেন। মোটা অংকের টাকার লোভে চাষিরা তামাক কোম্পানীর কথায় তামাক চাষ করছেন।

কুঞ্জনগরের তামাক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এবার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তামাক চাষে লাভ বেশি। এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় / হাজার টাকা এবং তামাক ভালো হলে মণ তামাক পাওয়া যায়। সব বাদ দিয়ে ভালো পরিমাণে লাভ হয়। তামাক চাষে যা যা লাগে সবই কোম্পানীর লোকজন দেয়। ফলে তামাক চাষ অত্যন্ত সহজ।

কৃষক দাউদ হোসেন জানান, এক কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়েছে সব খরচ ওনাদের। উৎপাদিত তামাক বাজার ল্য ধরে যা দাম হবে ওনাদের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে তারা তামাক নিয়ে যাবে। অভিন্ন ভাষায় একই কথা জানালেন শিমুলতলার চাষি মনিরুল ইসলাম সেকেন্দার আলী। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে না।

মেহেরপুর ক্যাবের সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, তামাক চাষ শুধু ক্ষতিকরই না অত্যন্ত অলাভ জনক। তামাক চাষের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ হিসেবে করলেই তার প্রমান মিলে। তাছাড়া তামাকের উচ্ছিষ্ট অংশ হৃদপিন্ডে ঢুকে ক্যান্সারসহ মরণ ব্যাধি হতে পারে। তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এমকে রেজা বলেন, তামাক নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যারা তামাকের পরিচর্যা করে তারাও নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। মপায়ীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে হাপানি ফুসফুসে প্রদাহ ক্যান্সারের মতো রারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তারা।

গাংনী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, এবার অঞ্চলে এক হাজার ৫৯৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। আমরা বিভিন্নভাবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। আমরা তামাকের বদলে অন্য ফসল চাষ করার জন্য তাদেরকে বলছি। তবুও কিছু কিছু তামাক কোম্পানি কৃষকদের প্রভাবিত করছে। তবে অনেকেই তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। আগামীতে তামাকের আবাদ অনেকটা কমে যাবে বলেও আশাবাদী এই কর্মকর্তা।