ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুজিবনগরে ৯ ভাটায় ১৭ লাখ টাকা জরিমানা, আয়ান ব্রিকস উচ্ছেদ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৯:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, মুজিবনগর:
মেহেরপুরে ধীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় ৯টি ইটভাটায় ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আয়ান ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার আংশিক উচ্ছেদ করে ভাটা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিফুর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিফুর রহমান জানান, মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটাতে অভিযান পরিচালনাকালে ভাটাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, অবাধে কাঠ পোড়ানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকট স্থানে এবং ফসলি জমি ধ্বংস করে ইটভাটা তৈরি করার অপরাধে মুজিবনগর উপজেলার ৯টি ইটভাটার কাছ থেকে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এসময় মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ বাজারে অবস্থিত আয়ান বিক্সকের আংশিক উচ্ছেদ করে ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আদালত ইটভাটার মাটি পড়ে সরকারি রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকি বিষয়টিকে দণ্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেই সাথে জেলায় অধিকাংশ ইটভাটা লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন এবং ফসলি জমি ধ্বংস করে স্থাপন হওয়ার বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদণ্ড ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন। তিনি জানান, এই অভিযান পর্যায়ক্রমে জেলার সব উপজেলায় চলবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (কুষ্টিয়া) আতাউর রহমান জানান, মেহেরপুর জেলায় ৯৩টি ইটভাটার মধ্যে ১টি মাত্র ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে। অবৈধ এই সমস্ত ইটভাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে তালিকা দিয়েও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই অভিযান শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইটভাটা মালিকের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলকে টাকা দিয়ে তারা এতদিন এভাবেই ভাটা পরিচালনা করে আসছিল। এ কারণে তারা এতদিন বৈধ কাগজপত্র ছাড়ায় বছরের পর বছর কাঠ পুড়িয়ে এবং ফসলি জমি ধ্বংস করে ইটভাটাগুলো চালাচ্ছিল। তাদের অভিযোগ, যারা এতদিন মাসোহারা নিয়ে কিছু হবে না বলে অভয় দিয়ে আসছিল, আজ তাদের কারণেই তাদের ইটভাটা ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ল।

উল্লেখ্য, মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ গত ৭ জানুয়ারি অবৈধ ইটভাটা বন্ধসহ ইটভাটার মাটি পড়ে সরকারি রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকি বিষয়টিকে দণ্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেই সাথে জেলায় ১০৩টি ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশ লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন হওয়া বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদন্ড ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করে স্ব-প্রণোদিত আদেশ জারি করে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলপূর্বক ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়াকে এবং উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে পিবিআইকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তা দ্বারা সুষ্ঠু তদন্ত ও অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মুজিবনগরে ৯ ভাটায় ১৭ লাখ টাকা জরিমানা, আয়ান ব্রিকস উচ্ছেদ

আপলোড টাইম : ১০:৪৯:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

প্রতিবেদক, মুজিবনগর:
মেহেরপুরে ধীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় ৯টি ইটভাটায় ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আয়ান ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার আংশিক উচ্ছেদ করে ভাটা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিফুর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিফুর রহমান জানান, মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটাতে অভিযান পরিচালনাকালে ভাটাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, অবাধে কাঠ পোড়ানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকট স্থানে এবং ফসলি জমি ধ্বংস করে ইটভাটা তৈরি করার অপরাধে মুজিবনগর উপজেলার ৯টি ইটভাটার কাছ থেকে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এসময় মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ বাজারে অবস্থিত আয়ান বিক্সকের আংশিক উচ্ছেদ করে ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আদালত ইটভাটার মাটি পড়ে সরকারি রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকি বিষয়টিকে দণ্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেই সাথে জেলায় অধিকাংশ ইটভাটা লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন এবং ফসলি জমি ধ্বংস করে স্থাপন হওয়ার বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদণ্ড ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন। তিনি জানান, এই অভিযান পর্যায়ক্রমে জেলার সব উপজেলায় চলবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (কুষ্টিয়া) আতাউর রহমান জানান, মেহেরপুর জেলায় ৯৩টি ইটভাটার মধ্যে ১টি মাত্র ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে। অবৈধ এই সমস্ত ইটভাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে তালিকা দিয়েও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই অভিযান শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইটভাটা মালিকের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলকে টাকা দিয়ে তারা এতদিন এভাবেই ভাটা পরিচালনা করে আসছিল। এ কারণে তারা এতদিন বৈধ কাগজপত্র ছাড়ায় বছরের পর বছর কাঠ পুড়িয়ে এবং ফসলি জমি ধ্বংস করে ইটভাটাগুলো চালাচ্ছিল। তাদের অভিযোগ, যারা এতদিন মাসোহারা নিয়ে কিছু হবে না বলে অভয় দিয়ে আসছিল, আজ তাদের কারণেই তাদের ইটভাটা ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ল।

উল্লেখ্য, মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ গত ৭ জানুয়ারি অবৈধ ইটভাটা বন্ধসহ ইটভাটার মাটি পড়ে সরকারি রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকি বিষয়টিকে দণ্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেই সাথে জেলায় ১০৩টি ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশ লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন হওয়া বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদন্ড ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করে স্ব-প্রণোদিত আদেশ জারি করে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলপূর্বক ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়াকে এবং উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে পিবিআইকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তা দ্বারা সুষ্ঠু তদন্ত ও অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।