ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, দিশাহারা অভিভাবকেরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৩:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

মিঠু শেখ একজন দিনমজুর। সারাদিন কাজকর্ম করে যে টাকা তিনি আয় করেন, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। এই অল্প আয় থেকেই ব্যয় করেন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেলের লেখাপড়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘দেশে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যে হারে শিক্ষাসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তাতে করে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এক বছর আগে যে খাতা ৭০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন সেই খাতা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। এভাবে শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো আর সম্ভব হবে না।’

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে যখন অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন বই, খাতা, কলমসহ অন্যান্য সামগ্রীর যে মূল্য ছিল, তা এখন অনেক বেড়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমরা, পিতার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ জোগানো আর সম্ভব হচ্ছে না। কাউকে কিছু বলতেও পারছি না, আবার পড়া-লেখা ছেড়ে দিতেও পারছি না।’

দিনমজুর মিঠু শেখ বা শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদের মতো হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন। রং পেন্সিল থেকে শুরু করে, বই, খাতা, কলম, ব্যবহারিক খাতা, ক্লিপ বোর্ড, জ্যামিতি বক্সসহ সকল পণ্যের দাম বাড়েছে। এর পরেও ছাত্র সংগঠনগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে। আগে রাজপথে ‘বই খাতা-কলমের দাম কমাতে হবে কমিয়ে নাও’ এমন স্লোগান তুলে প্রতিবাদ জানানো হতো। এখন ছাত্র রাজনীতির নামে লেজুড়বৃত্তি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

যেখানে আগে একটি শিক্ষার্থীর পেছনে একজন অভিভাবক মাসে দুই হাজার টাকা ব্যয় করতেন, বর্তমানে সেখানে শিক্ষায় ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়ার কারণে সেই অভিভাবককে মাসে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে সংসারে। ঝিনাইদহের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, স্টেশনারি ব্যবসায়ী ও লাইব্রেরি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির এ চিত্র উঠে এসেছে।

তারা বলেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃয় হয় বসুন্ধরা ফ্রেস ও গুডলাক কোম্পানির পণ্য। কাগজ ব্যবসায়ী রাজিব হোসন জানান, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বাজারে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি শুরু হয়। অক্টোবরের আগে ডিমাই ২১/৩৪ সাইজের কাগজের দাম ছিল ২২০ টাকা। এখন সেই কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৪১০ টাকায়। ডিমাই ২২/৩৫ সাইজের কাগজের দাম ছিল ৩২০ টাকা। এখন বিক্রি ৫১০ টাকা। ২০০ পাতার খাতা ৪২০ টাকা ডজন ছিল। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। পত্রিকার জন্য নিউজপ্রিন্ট এক রিম কাগজের দাম ছিল ৬৫০ টাকা এখন ১৪০০ টাকা। ছাপাখানার জন্য ২৩/৩৬/৫৫ কাগজ ছিল ১ হাজার ২২০ টাকা রিম, এখন সেই কাগজ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। স্টেশনারি ও কম্পিউটার আইটেমর মালামালও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৪০% বৃদ্ধি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কাগজ কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাগজের বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই বরং পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যবহারিক খাতার দাম।

ঝিনাইদহ শিক্ষা মেলার মালিক আব্দুস সবুর জানান, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে কাগজের বাজা ঊর্ধ্বমুখী। তাই কাগজের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে কোম্পানিগুলো খাতার দাম প্রতিনিয়ত বাড়িয়েই চলেছে। তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হয় ম্যাক্স মারশাল জ্যামিতি বক্স। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নাগালের মধ্যে থাকলেও এখন সেই জ্যামিতি বক্সের মূল্য এক লাফে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রানা হামিদ জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি করছে বলে আমি মনে করি। এই প্রক্রিয়ায় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাকে আমরা ঘৃণা করি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, দিশাহারা অভিভাবকেরা

আপলোড টাইম : ১১:৩৩:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:

মিঠু শেখ একজন দিনমজুর। সারাদিন কাজকর্ম করে যে টাকা তিনি আয় করেন, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। এই অল্প আয় থেকেই ব্যয় করেন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেলের লেখাপড়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘দেশে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যে হারে শিক্ষাসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তাতে করে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এক বছর আগে যে খাতা ৭০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন সেই খাতা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। এভাবে শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো আর সম্ভব হবে না।’

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে যখন অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন বই, খাতা, কলমসহ অন্যান্য সামগ্রীর যে মূল্য ছিল, তা এখন অনেক বেড়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমরা, পিতার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ জোগানো আর সম্ভব হচ্ছে না। কাউকে কিছু বলতেও পারছি না, আবার পড়া-লেখা ছেড়ে দিতেও পারছি না।’

দিনমজুর মিঠু শেখ বা শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদের মতো হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন। রং পেন্সিল থেকে শুরু করে, বই, খাতা, কলম, ব্যবহারিক খাতা, ক্লিপ বোর্ড, জ্যামিতি বক্সসহ সকল পণ্যের দাম বাড়েছে। এর পরেও ছাত্র সংগঠনগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে। আগে রাজপথে ‘বই খাতা-কলমের দাম কমাতে হবে কমিয়ে নাও’ এমন স্লোগান তুলে প্রতিবাদ জানানো হতো। এখন ছাত্র রাজনীতির নামে লেজুড়বৃত্তি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

যেখানে আগে একটি শিক্ষার্থীর পেছনে একজন অভিভাবক মাসে দুই হাজার টাকা ব্যয় করতেন, বর্তমানে সেখানে শিক্ষায় ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়ার কারণে সেই অভিভাবককে মাসে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে সংসারে। ঝিনাইদহের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, স্টেশনারি ব্যবসায়ী ও লাইব্রেরি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির এ চিত্র উঠে এসেছে।

তারা বলেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃয় হয় বসুন্ধরা ফ্রেস ও গুডলাক কোম্পানির পণ্য। কাগজ ব্যবসায়ী রাজিব হোসন জানান, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বাজারে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি শুরু হয়। অক্টোবরের আগে ডিমাই ২১/৩৪ সাইজের কাগজের দাম ছিল ২২০ টাকা। এখন সেই কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৪১০ টাকায়। ডিমাই ২২/৩৫ সাইজের কাগজের দাম ছিল ৩২০ টাকা। এখন বিক্রি ৫১০ টাকা। ২০০ পাতার খাতা ৪২০ টাকা ডজন ছিল। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। পত্রিকার জন্য নিউজপ্রিন্ট এক রিম কাগজের দাম ছিল ৬৫০ টাকা এখন ১৪০০ টাকা। ছাপাখানার জন্য ২৩/৩৬/৫৫ কাগজ ছিল ১ হাজার ২২০ টাকা রিম, এখন সেই কাগজ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। স্টেশনারি ও কম্পিউটার আইটেমর মালামালও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৪০% বৃদ্ধি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কাগজ কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাগজের বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই বরং পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যবহারিক খাতার দাম।

ঝিনাইদহ শিক্ষা মেলার মালিক আব্দুস সবুর জানান, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে কাগজের বাজা ঊর্ধ্বমুখী। তাই কাগজের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে কোম্পানিগুলো খাতার দাম প্রতিনিয়ত বাড়িয়েই চলেছে। তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হয় ম্যাক্স মারশাল জ্যামিতি বক্স। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নাগালের মধ্যে থাকলেও এখন সেই জ্যামিতি বক্সের মূল্য এক লাফে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রানা হামিদ জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি করছে বলে আমি মনে করি। এই প্রক্রিয়ায় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাকে আমরা ঘৃণা করি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।