ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে বাজারের সঙ্গে সরকারি মূল্যে ধান-চাল বিক্রয়ে তারতম্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩২:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ধান চাল কেনার এই ভরা মৌসুমে ঝিনাইদহের সরকারি খাদ্যগুদামগুলো এখন জনমানবহীন। সর্বত্র যেন সুনসান নীরবতা। গোডাউন এলাকায় নেই কৃষক ও চালকল ব্যসায়ীদের পদাচারণা। এমন চিত্র নিয়ে হতাশায় দিন পার করছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ৬ হাজার ৭০৩ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুই মাস পার হলেও ছয় উপজেলায় এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরা সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মৌসুমের শুরুতে ঝিনাইদহে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ধানের দাম কমে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মনে দাঁড়িয়েছে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ধানের দাম ১ হাজার ১২০ টাকা প্রতি মণ।

এদিকে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় আমন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ২২৯ মেট্রিক টন। গতকাল পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন চাল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৩৯৭ মেট্রিক টন, কালীগঞ্জে ২৫০ মেট্রিক টন, কোটচাঁদপুরে ৫৪ মেট্রিক টন ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১০৩ মেট্রিক টন চাল কেনা সম্ভব হয়েছে। চাল সরবরাহে সাড়া দেয়নি শৈলকুপা ও মহেশপুর উপজেলায় মিলাররা।

ঝিনাইদহ খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহে মোট চাল কলের সংখ্যা ২৪০টি। এর মধ্যে মাত্র ৮০ জন মিল মালিক চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছেন। বাকি ১৬০ জন মিলার চাল সরবরাহে আগ্রহ দেখায়নি। চাল সরবরাহ করেছেন এমন একাধিক মিল মালিকরা জানিয়েছেন, তারা প্রতি কেজিতে আড়াই টাকা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করেছেন।

ঝিনাইদহ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ধান চালের দাম সরকারিভাবে বৃদ্ধি না করলে এই সংগ্রহ অভিযান সফল হবে না। কারণ এক মণ মোটা ধানে ২৬ কেজি চাল হয়। মোটা ধান মণ প্রতি কিনতে হয়েছে ১ হাজার ১৮০ টাকায়। এবার এক মণ ধান মাড়াই করতে খরচ হচ্ছে ১৩০ টাকা। সব খরচ দিয়ে প্রতি কেজি মোটা চালের উৎপাদন ব্যয় পড়ে যাচ্ছে ৪৪ টাকা ৫১ পয়সা। সেখানে সরকারিভাবে প্রতি কেজি চালের দাম দেয়া হচ্ছে ৪২ টাকা করে। এতে চাল ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, মিলাররা ট্রাক প্রতি ৫০ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে এবার চাল সরবরাহ করেছেন। তাও অনেকেই সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসান আলী জানান, গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে ধান চাল কেনার মৌসুম শুরু হয়। যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে ধান চাল কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১১ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন চাল কেনা হলেও ধান সংগ্রহ হয়নি। বাজারের সঙ্গে সরকারি মূল্যের মিল না থাকায় কৃষক ও মিলাররা সাড়া দিচ্ছেন না। তারপরও জেলা খাদ্যগুদামগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে বাজারের সঙ্গে সরকারি মূল্যে ধান-চাল বিক্রয়ে তারতম্য

আপলোড টাইম : ১১:৩২:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:

ধান চাল কেনার এই ভরা মৌসুমে ঝিনাইদহের সরকারি খাদ্যগুদামগুলো এখন জনমানবহীন। সর্বত্র যেন সুনসান নীরবতা। গোডাউন এলাকায় নেই কৃষক ও চালকল ব্যসায়ীদের পদাচারণা। এমন চিত্র নিয়ে হতাশায় দিন পার করছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ৬ হাজার ৭০৩ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুই মাস পার হলেও ছয় উপজেলায় এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরা সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মৌসুমের শুরুতে ঝিনাইদহে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ধানের দাম কমে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মনে দাঁড়িয়েছে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ধানের দাম ১ হাজার ১২০ টাকা প্রতি মণ।

এদিকে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় আমন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ২২৯ মেট্রিক টন। গতকাল পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন চাল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৩৯৭ মেট্রিক টন, কালীগঞ্জে ২৫০ মেট্রিক টন, কোটচাঁদপুরে ৫৪ মেট্রিক টন ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১০৩ মেট্রিক টন চাল কেনা সম্ভব হয়েছে। চাল সরবরাহে সাড়া দেয়নি শৈলকুপা ও মহেশপুর উপজেলায় মিলাররা।

ঝিনাইদহ খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহে মোট চাল কলের সংখ্যা ২৪০টি। এর মধ্যে মাত্র ৮০ জন মিল মালিক চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছেন। বাকি ১৬০ জন মিলার চাল সরবরাহে আগ্রহ দেখায়নি। চাল সরবরাহ করেছেন এমন একাধিক মিল মালিকরা জানিয়েছেন, তারা প্রতি কেজিতে আড়াই টাকা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করেছেন।

ঝিনাইদহ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ধান চালের দাম সরকারিভাবে বৃদ্ধি না করলে এই সংগ্রহ অভিযান সফল হবে না। কারণ এক মণ মোটা ধানে ২৬ কেজি চাল হয়। মোটা ধান মণ প্রতি কিনতে হয়েছে ১ হাজার ১৮০ টাকায়। এবার এক মণ ধান মাড়াই করতে খরচ হচ্ছে ১৩০ টাকা। সব খরচ দিয়ে প্রতি কেজি মোটা চালের উৎপাদন ব্যয় পড়ে যাচ্ছে ৪৪ টাকা ৫১ পয়সা। সেখানে সরকারিভাবে প্রতি কেজি চালের দাম দেয়া হচ্ছে ৪২ টাকা করে। এতে চাল ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, মিলাররা ট্রাক প্রতি ৫০ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে এবার চাল সরবরাহ করেছেন। তাও অনেকেই সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসান আলী জানান, গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে ধান চাল কেনার মৌসুম শুরু হয়। যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে ধান চাল কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১১ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন চাল কেনা হলেও ধান সংগ্রহ হয়নি। বাজারের সঙ্গে সরকারি মূল্যের মিল না থাকায় কৃষক ও মিলাররা সাড়া দিচ্ছেন না। তারপরও জেলা খাদ্যগুদামগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে।