ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে দিনভর আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন, দেখা নেই সূর্যের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে এ অঞ্চল কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ার পর তীব্র শীতে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, রাজমিস্ত্রীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষর চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ঘন কুয়াশার কারণে সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন বাজার মোড়, সড়ক এলাকার রোডঘাটগুলোতে ধীরগতিতে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। দিনের বেলাতেও অনেকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। গত দুদিন শীতের দাপটে জনজীবনে দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়ার অবস্থা এখানকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলোর।

চুয়াডাঙ্গা:
কুয়াশাচ্ছন্ন চুয়াডাঙ্গায় দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশা আর উত্তর থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় এ জেলার জনজীবনে দূর্ভোগ নেমে এসেছে। গত সোমবার রাত থেকে থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা। ঘন কুয়াশায় গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন এ জেলার মানুষ সূর্যের দেখা পায়নি। গত সোমবার রাত থেকে কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেলেও গতকাল ভোরে ঘন কুয়াশার সেই আস্তরণ আরও বেড়ে যায়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে কুয়াশা। এর সঙ্গে বয়ে চলা উত্তরের হিমেল হাওয়া কাঁটা দিয়েছে জেলাবাসীর শরীরে। তবে ঘন কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি ঢাকা পড়লেও জীবিকার তাগিদে সাত সকালেই বের হন শ্রমজীবী মানুষেরা। ঘন কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে বিঘ্নিত হয়েছে যানবাহন চলাচল। গতকাল সকাল ৯টায় এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিন সকাল থেকে শহরে মানুষের চলাচল কম দেখা গেছে। আবার বিকেল গড়াতেয় ফাঁকা হতে শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। পৌর শহরের স্কুলমোড় এলাকার রিকশাচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত কয়দিন ধওে যে ঠান্ডা পড়ছে তাতে রিকশা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আজ (গতকাল) সারাদিন ঘন কুয়াশায় সূর্যেও দেখা পাইনি।’
সিঅ্যান্ডবিপাড়ার বাসিন্দা শাওন জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত বেশ কুয়াশা ছিল। পরে কুয়াশাভাব কিছুটা কমলেও দুপুর ১টার পর থেকে আবারও কুয়াশা দেখা যায়। আর ভোর থেকেই সূর্যেও দেখা মেলেনি। চারপাশ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় সকাল থেকেই এই মহাসড়ক দিয়ে যানবাহনগুলো ধীরে চলাচল করছে। বাজারগুলোতেও ভিড় আনেক কম।

জেলার দামুড়হুদা উপজেলার একাধিক সবজি ব্যবসায়ী জানান, ‘সকাল থেকেই রোদ নেই। বৃষ্টি পড়বে পড়বে ভাব আর চারপাশে কুয়াশা। অল্প কয়েকজন ক্রেতা হাটে এসেছেন। সকাল সকাল বাজার করে চলে গেছেন।’

স্থানীয় কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ভোড়ে দৃষ্টি ফোঁটা মতো কুয়াশা পড়েছে। এ সময় বৃষ্টি আর কুয়াশা বেশি হলে শস্যে আসা ফুল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনা আছে। ধানের জন্য বিজতলা করেছি। ভোড়ে এসে বড় লাঠি দিয়ে ধানের চারার ওপর জমে থাকা কুয়াশা ফেলে দিতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম হাসান বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। এদিনে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘনকুয়াশা ও উত্তর থেকে আসা হিমেল বাতাসের কারণে এ জেলায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।’

মেহেরপুর:
নিম্ন আয়ের মানুষেরা জানান, তীব্র কুয়াশা আর শীতের কারণে মানুষ ঘরের বাইরে কম বের হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ও অফিসগামী মানুষ ছাড়া বাইরে তেমন লোকজনের আনাগোনা নেই। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামের আলাল হোসেন বলেন, দিনের অধিকাংশ সময়েই তীব্র ঠান্ডা আর শীত অব্যাহত থাকার কারণে, জরুরি প্রয়োজন আর অফিসগামীরা ছাড়া রাস্তায় কেউ বের হচ্ছে না। মাইলমারী গ্রামের পাখিভ্যান চালক হাশেম আলী জানান, দিনের অনেকটা সময় যাত্রী অভাবে বসে থাকতে হচ্ছে। পাখিভ্যান নিয়ে তেমন আয় করতে না পারায় ভোগান্তিতে আছি।

গাংনী শহরের এক ভ্যান চালক জানান, ঠান্ডা আর শীতে লোকজন শহরে আসবে কি? নিজেই কাহিল হয়ে পড়েছি। লোকজন না থাকায় সারাদিনে ভাড়া হয়নি। সন্ধ্যার দিকে শহরে যানবাহন ও জনচলাচলও নেই। অনেকেই শীতের কাপড় পেঁচিয়ে চায়ের দোকানগুলোতে ঝুপি মেরে বসে আছে। তীব্র ঠান্ডা ও শীত অব্যাহত থাকায় অনেককেই খড়কুটো জ্বালিয়ে তাতে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। চায়ের দোকানগুলোতে আগের থেকে লোকজনের সমাগম কম রয়েছে। বয়স্ক লোকজনের উপস্থিতি একেবারেই নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র মতে, আরও কয়েকদিন আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন ও ঘোলাটে থাকতে পারে। এমন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সড়কে চলাচলকারী সকলকে সতর্কতার সহিত যানচলাচলের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে দিনভর আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন, দেখা নেই সূর্যের

আপলোড টাইম : ১০:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে এ অঞ্চল কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ার পর তীব্র শীতে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, রাজমিস্ত্রীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষর চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ঘন কুয়াশার কারণে সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন বাজার মোড়, সড়ক এলাকার রোডঘাটগুলোতে ধীরগতিতে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। দিনের বেলাতেও অনেকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। গত দুদিন শীতের দাপটে জনজীবনে দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়ার অবস্থা এখানকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলোর।

চুয়াডাঙ্গা:
কুয়াশাচ্ছন্ন চুয়াডাঙ্গায় দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশা আর উত্তর থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় এ জেলার জনজীবনে দূর্ভোগ নেমে এসেছে। গত সোমবার রাত থেকে থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা। ঘন কুয়াশায় গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন এ জেলার মানুষ সূর্যের দেখা পায়নি। গত সোমবার রাত থেকে কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেলেও গতকাল ভোরে ঘন কুয়াশার সেই আস্তরণ আরও বেড়ে যায়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে কুয়াশা। এর সঙ্গে বয়ে চলা উত্তরের হিমেল হাওয়া কাঁটা দিয়েছে জেলাবাসীর শরীরে। তবে ঘন কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি ঢাকা পড়লেও জীবিকার তাগিদে সাত সকালেই বের হন শ্রমজীবী মানুষেরা। ঘন কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে বিঘ্নিত হয়েছে যানবাহন চলাচল। গতকাল সকাল ৯টায় এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিন সকাল থেকে শহরে মানুষের চলাচল কম দেখা গেছে। আবার বিকেল গড়াতেয় ফাঁকা হতে শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। পৌর শহরের স্কুলমোড় এলাকার রিকশাচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত কয়দিন ধওে যে ঠান্ডা পড়ছে তাতে রিকশা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আজ (গতকাল) সারাদিন ঘন কুয়াশায় সূর্যেও দেখা পাইনি।’
সিঅ্যান্ডবিপাড়ার বাসিন্দা শাওন জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত বেশ কুয়াশা ছিল। পরে কুয়াশাভাব কিছুটা কমলেও দুপুর ১টার পর থেকে আবারও কুয়াশা দেখা যায়। আর ভোর থেকেই সূর্যেও দেখা মেলেনি। চারপাশ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় সকাল থেকেই এই মহাসড়ক দিয়ে যানবাহনগুলো ধীরে চলাচল করছে। বাজারগুলোতেও ভিড় আনেক কম।

জেলার দামুড়হুদা উপজেলার একাধিক সবজি ব্যবসায়ী জানান, ‘সকাল থেকেই রোদ নেই। বৃষ্টি পড়বে পড়বে ভাব আর চারপাশে কুয়াশা। অল্প কয়েকজন ক্রেতা হাটে এসেছেন। সকাল সকাল বাজার করে চলে গেছেন।’

স্থানীয় কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ভোড়ে দৃষ্টি ফোঁটা মতো কুয়াশা পড়েছে। এ সময় বৃষ্টি আর কুয়াশা বেশি হলে শস্যে আসা ফুল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনা আছে। ধানের জন্য বিজতলা করেছি। ভোড়ে এসে বড় লাঠি দিয়ে ধানের চারার ওপর জমে থাকা কুয়াশা ফেলে দিতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম হাসান বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। এদিনে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘনকুয়াশা ও উত্তর থেকে আসা হিমেল বাতাসের কারণে এ জেলায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।’

মেহেরপুর:
নিম্ন আয়ের মানুষেরা জানান, তীব্র কুয়াশা আর শীতের কারণে মানুষ ঘরের বাইরে কম বের হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ও অফিসগামী মানুষ ছাড়া বাইরে তেমন লোকজনের আনাগোনা নেই। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামের আলাল হোসেন বলেন, দিনের অধিকাংশ সময়েই তীব্র ঠান্ডা আর শীত অব্যাহত থাকার কারণে, জরুরি প্রয়োজন আর অফিসগামীরা ছাড়া রাস্তায় কেউ বের হচ্ছে না। মাইলমারী গ্রামের পাখিভ্যান চালক হাশেম আলী জানান, দিনের অনেকটা সময় যাত্রী অভাবে বসে থাকতে হচ্ছে। পাখিভ্যান নিয়ে তেমন আয় করতে না পারায় ভোগান্তিতে আছি।

গাংনী শহরের এক ভ্যান চালক জানান, ঠান্ডা আর শীতে লোকজন শহরে আসবে কি? নিজেই কাহিল হয়ে পড়েছি। লোকজন না থাকায় সারাদিনে ভাড়া হয়নি। সন্ধ্যার দিকে শহরে যানবাহন ও জনচলাচলও নেই। অনেকেই শীতের কাপড় পেঁচিয়ে চায়ের দোকানগুলোতে ঝুপি মেরে বসে আছে। তীব্র ঠান্ডা ও শীত অব্যাহত থাকায় অনেককেই খড়কুটো জ্বালিয়ে তাতে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। চায়ের দোকানগুলোতে আগের থেকে লোকজনের সমাগম কম রয়েছে। বয়স্ক লোকজনের উপস্থিতি একেবারেই নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র মতে, আরও কয়েকদিন আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন ও ঘোলাটে থাকতে পারে। এমন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সড়কে চলাচলকারী সকলকে সতর্কতার সহিত যানচলাচলের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।