ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল চাষীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫২:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: আজ মহান বিজয় দিবস। দিবসটিকে উপলক্ষে করে স্বপ্নের বীজ বুনছেন জেলার ফুল চাষীরা। কারণ তাদের চাষকৃত ফুল দিয়েই দেশব্যাপী জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানো হবে। ফলে বিজয় দিবস আসলেই বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা। তাই বিজয়ের এই মোক্ষম দিনটিকে কাজে লাগিয়ে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত ঝিনাইদহের ফুল চাষীরা। ফুল চাষীরা ইতঃমধ্যে তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। খেত থেকে ফুল তুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছেন। বিজয় দিবসে ৭০ থেকে এক’শ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট রয়েছে ব্যবসায়ী ও ফুল চাষীদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে ফুল বিপণন কেন্দ্রে হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুল কেনাবেচায় ব্যস্ত ব্যবসায়ী ও ফুল চাষীরা। গাড়িতে করে ফুল আনতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা দরে। আর গ্রামে গাঁদা-চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা রঙের ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে গেছে চারপাশ। রঙ-বেরঙের ফুলে মাঠগুলো সেজেছে অপরূপ সাজে। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। চাষীরা ফুলের কড়ি ধরে রাখতে এবং ভালো ফলন পেতে বাগানে পরিচর্যা করছেন শক্ত হাতে। গ্রামের নারীরাও গাঁদা ফুল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যে মতে, মহান বিজয় দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই দাম ভালো পাওয়ার আশা করছেন চাষীরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে ঝিনাইদহের ফুল। দাম ভালো পেলে গত বছরের মতো এবারও চাষীরা লাভের মুখ দেখবেন। গাঁদা ফুলের ঝুপা কয়েক দিন আগেও ছিল ৫০-৬০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়বে। জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে ঝিনাইদহে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় গাঁদা ফুল। বিজয় দিবসকে ঘিরে লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছেন জেলার প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ফুল চাষী। এবারে শুধু বিজয় দিবসকে সামনে রেখে অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করেন কৃষকরা।

গান্না এলাকার ফুল চাষী মো. মারুফ হোসেন জানান, গত বছর ফুল চাষ করে তারা অনেক লাভবান হয়েছেন। এ বছর ফুলের বাজার অনেক কম। তবে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ভালো বাজার পাবেন বলে আশা করছেন। কিছু বিশেষ দিনে ফুলের বাজার বাড়ে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় লাভের পরিমাণ কম হবে। গত বছর যেখানে গাঁদা ফুল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ঝুপা বিক্রি করেছেন, সেখানে বর্তমান বাজার চলছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ঝুপা। এছাড়ও চন্দ্র্রমল্লিকা বিক্রি করা হচ্ছে ১ থেকে দেড় টাকা করে। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ করেই পরিবহন ধর্মঘট, সম্মেলন, অবরোধের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় সঠিক সময়ে ফুলগুলো বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তারপরও কিছুটা লাভ হবে বলে মনে করেন তিনি।

গান্না বাজার ফুল বিপণন কেন্দ্র্রের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, গত বছর ফুলের বাজার ভালো দেখে এ বছর নতুন করে অনেকেই ফুল চাষ করেছেন। এতে করে ফুলের উৎপাদন বেড়েছে, সেই তুলনায় ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের বাজার একটু কম।

ঝিনাইদহ জেলা ফুলচাষী সমিতির সভাপতি জামির হোসেন বলেন, ‘ঝিনাইদহ জেলায় বিভিন্ন ফুল বিপণন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত সিজনে ১৬ ডিসেম্বর ১৫০ কোটি টাকার টার্গেট ছিল। সেখানে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এ বছর শুধু ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ৭০ থেকে ১০০ কোটি টাকার টার্গেট রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জারবারা ও গোলাপ ফুল বেশি বিক্রি হয়। বর্তমানে বাসন্তী কালারের গাঁদা ফুল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, লাল গাঁদা এক ঝুপা ১৩০ টাকা বিক্রয় হচ্ছে। চন্দ্রমল্লিকা ১ টাকা ৮০ পয়সা, জারবারা ৬-৭ টাকা, গোলাপ ৪-৫ টাকা করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, বিভিন্ন ফসলের পাশাপশি এখানে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগে সব থেকে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয়ে থাকে ঝিনাইদহে। কৃষকদের ফুল বিক্রয়ের জন্য সরকারিভাবে জেলাতে বিশেষ বিশেষ স্থানে ফুল বিপণন কেন্দ্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রি করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রথম সিজনে জেলার ৬ উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা অনুযায়ী যে ফুল লাগবে, সেখানে ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন চাষীরা। তবে পুরো সিজনে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ফুলের যে চাহিদা আসছে, সেগুলো যদি পূরণ করা হয় তাহলে বিক্রি ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও ফলন ভালো পেতে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল চাষীরা

আপলোড টাইম : ০৮:৫২:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: আজ মহান বিজয় দিবস। দিবসটিকে উপলক্ষে করে স্বপ্নের বীজ বুনছেন জেলার ফুল চাষীরা। কারণ তাদের চাষকৃত ফুল দিয়েই দেশব্যাপী জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানো হবে। ফলে বিজয় দিবস আসলেই বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা। তাই বিজয়ের এই মোক্ষম দিনটিকে কাজে লাগিয়ে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত ঝিনাইদহের ফুল চাষীরা। ফুল চাষীরা ইতঃমধ্যে তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। খেত থেকে ফুল তুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছেন। বিজয় দিবসে ৭০ থেকে এক’শ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট রয়েছে ব্যবসায়ী ও ফুল চাষীদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে ফুল বিপণন কেন্দ্রে হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুল কেনাবেচায় ব্যস্ত ব্যবসায়ী ও ফুল চাষীরা। গাড়িতে করে ফুল আনতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা দরে। আর গ্রামে গাঁদা-চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা রঙের ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে গেছে চারপাশ। রঙ-বেরঙের ফুলে মাঠগুলো সেজেছে অপরূপ সাজে। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। চাষীরা ফুলের কড়ি ধরে রাখতে এবং ভালো ফলন পেতে বাগানে পরিচর্যা করছেন শক্ত হাতে। গ্রামের নারীরাও গাঁদা ফুল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যে মতে, মহান বিজয় দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই দাম ভালো পাওয়ার আশা করছেন চাষীরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে ঝিনাইদহের ফুল। দাম ভালো পেলে গত বছরের মতো এবারও চাষীরা লাভের মুখ দেখবেন। গাঁদা ফুলের ঝুপা কয়েক দিন আগেও ছিল ৫০-৬০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়বে। জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে ঝিনাইদহে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় গাঁদা ফুল। বিজয় দিবসকে ঘিরে লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছেন জেলার প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ফুল চাষী। এবারে শুধু বিজয় দিবসকে সামনে রেখে অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করেন কৃষকরা।

গান্না এলাকার ফুল চাষী মো. মারুফ হোসেন জানান, গত বছর ফুল চাষ করে তারা অনেক লাভবান হয়েছেন। এ বছর ফুলের বাজার অনেক কম। তবে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ভালো বাজার পাবেন বলে আশা করছেন। কিছু বিশেষ দিনে ফুলের বাজার বাড়ে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় লাভের পরিমাণ কম হবে। গত বছর যেখানে গাঁদা ফুল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ঝুপা বিক্রি করেছেন, সেখানে বর্তমান বাজার চলছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ঝুপা। এছাড়ও চন্দ্র্রমল্লিকা বিক্রি করা হচ্ছে ১ থেকে দেড় টাকা করে। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ করেই পরিবহন ধর্মঘট, সম্মেলন, অবরোধের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় সঠিক সময়ে ফুলগুলো বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তারপরও কিছুটা লাভ হবে বলে মনে করেন তিনি।

গান্না বাজার ফুল বিপণন কেন্দ্র্রের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, গত বছর ফুলের বাজার ভালো দেখে এ বছর নতুন করে অনেকেই ফুল চাষ করেছেন। এতে করে ফুলের উৎপাদন বেড়েছে, সেই তুলনায় ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের বাজার একটু কম।

ঝিনাইদহ জেলা ফুলচাষী সমিতির সভাপতি জামির হোসেন বলেন, ‘ঝিনাইদহ জেলায় বিভিন্ন ফুল বিপণন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত সিজনে ১৬ ডিসেম্বর ১৫০ কোটি টাকার টার্গেট ছিল। সেখানে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এ বছর শুধু ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ৭০ থেকে ১০০ কোটি টাকার টার্গেট রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জারবারা ও গোলাপ ফুল বেশি বিক্রি হয়। বর্তমানে বাসন্তী কালারের গাঁদা ফুল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, লাল গাঁদা এক ঝুপা ১৩০ টাকা বিক্রয় হচ্ছে। চন্দ্রমল্লিকা ১ টাকা ৮০ পয়সা, জারবারা ৬-৭ টাকা, গোলাপ ৪-৫ টাকা করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, বিভিন্ন ফসলের পাশাপশি এখানে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগে সব থেকে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয়ে থাকে ঝিনাইদহে। কৃষকদের ফুল বিক্রয়ের জন্য সরকারিভাবে জেলাতে বিশেষ বিশেষ স্থানে ফুল বিপণন কেন্দ্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রি করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রথম সিজনে জেলার ৬ উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা অনুযায়ী যে ফুল লাগবে, সেখানে ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন চাষীরা। তবে পুরো সিজনে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ফুলের যে চাহিদা আসছে, সেগুলো যদি পূরণ করা হয় তাহলে বিক্রি ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও ফলন ভালো পেতে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’