ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সম্প্রসারণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫১:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক: পৃথিবীতে ৩০০টি ছাগলের জাত রয়েছে। এর মধ্যে মাংসের স্বাদ ও চামড়ার গুণগত মানের জন্য বিশ্বের সেরাদের মধ্যে ৫টি ছাগলের জাতকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ব্লাক বেঙ্গল ছাগল। কিন্তু অধিক মাংস উৎপাদন ও অধিক মুনাফার আশায় খামারীরা অন্য জাতের ছাগল পালনে আগ্রহী। এতে করে মেহেরপুরসহ সারাদেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল আজ বিলুপ্তির পথে।

জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে দেশীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্ল্যাগ বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়ন সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু করা হয়। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল প্রাণিসম্পদ এবং বিএলআরআই। কিন্তু প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিএলআরআই-এর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্নীতি খামখেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মেহেরপুরে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সম্প্রসারণের পরিবর্তে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অথচ এই ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নত জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্প (বিএলআরআই) তত্ত্বাবধানে থাকা ৩০ জন প্রকল্প খামারীদের মাঝে নেই ব্লাক বেঙ্গল ছাগল। প্রতি উপজেলায় ১০ জন সিজিএফ, ২ জন বাককিপারের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বরাদ্দকৃত প্রণোদনা পাননি বলে অভিযোগ খামারীদের। প্রকল্পে ছাগলের ঘর, দুধ ও ওষুধ বাবদ প্রতিটি সিজিএফ খামারীদের ৫৮ হাজার ৮ শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৩ বছরেও মাত্র ৬ জন খামারীকে ছাগলের ঘর দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে চারটি ছাগলের ঘরের কাজ শেষ করা হয়েছে। বাককিপার খামারীদের জন্য ৩৮ হাজার ৮ শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মেহেরপুর সদর উপজেলার একজন খামারী মাত্র ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। অন্যদের নামমাত্র খাবার দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রকল্পের ওজন মাপার স্কেল, ভ্যাকসিন ও ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ বিষয়টি জানতেই পারেননি। মুজিবনগরের বাককিপার খামারী সুকেন মণ্ডল বলেন, ‘প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তারা ছাগলের খাবারের বস্তা, প্লাস্টিকের মাচা, আর কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে ছবি তুলে নিয়ে চলে যায়, এরপরে আর কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই সরকারের দেওয়া পাঠা দুটি বিক্রি করে দিয়েছি।’ আশরাফপুর গ্রামের খামারী জাহিদ বলেন, ‘সরকারিভাবে আমাকে ২টা পাঠা দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না আমার বাড়ি থেকে এসে পাঠা নিয়ে গেছে। পরে শুনলাম পাঁঠা নিয়ে যাওয়ার এমন কোনো নিয়ম নেই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মেলা হলেও পুরস্কার দেয়া হয় না ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের খামারীদের। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের খুশি করতে দেয়া হয় অন্য জাতের ছাগল পালনকারী খামারীদের পুরস্কার।

এবিষয়ে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) মোস্তাফিজুর রহমান মুন্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, ‘প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি।’ সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, দেশ আধুনিক হয়েছে, সবাই চায় ছাগল থেকে অতিরিক্ত মাংস উৎপাদন করতে। তাই ব্ল্যাক বেঙ্গল পালনে অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে সরকারের দেওয়া পাঠা গেল কোথায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পিডি শরিফুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আগেই সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন প্রকল্প নিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট না করে পজিটিভ রিপোর্ট করেন। মাঠে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তি তাহলে পজিটিভ রিপোর্ট কীভাবে করব এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন যাতে মানুষ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে। ১৯৪টি উপজেলায় ৪৭ কোটি টাকা বাজেট রয়েছে। তাহলে প্রথম পর্যায়ে সরকারি এই ৪৭ কোটি টাকার কী ফলাফল পাওয়া গেল এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ উপকৃত হয়েছে। ছাগল পালনের ঘর বানিয়ে দেয় হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের যে উদ্দেশ্য ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালনকে সম্প্রসারিত করা এটার অগ্রগতি কতটুকু হলো এ প্রশ্নটিই তিনি এড়িয়ে যান। বিএলআরআই এর ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্পের পিডি সাদিক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চাইলে, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজি হননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুরে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সম্প্রসারণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

আপলোড টাইম : ১০:৫১:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদক: পৃথিবীতে ৩০০টি ছাগলের জাত রয়েছে। এর মধ্যে মাংসের স্বাদ ও চামড়ার গুণগত মানের জন্য বিশ্বের সেরাদের মধ্যে ৫টি ছাগলের জাতকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ব্লাক বেঙ্গল ছাগল। কিন্তু অধিক মাংস উৎপাদন ও অধিক মুনাফার আশায় খামারীরা অন্য জাতের ছাগল পালনে আগ্রহী। এতে করে মেহেরপুরসহ সারাদেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল আজ বিলুপ্তির পথে।

জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে দেশীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্ল্যাগ বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়ন সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু করা হয়। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল প্রাণিসম্পদ এবং বিএলআরআই। কিন্তু প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিএলআরআই-এর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্নীতি খামখেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মেহেরপুরে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সম্প্রসারণের পরিবর্তে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অথচ এই ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নত জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্প (বিএলআরআই) তত্ত্বাবধানে থাকা ৩০ জন প্রকল্প খামারীদের মাঝে নেই ব্লাক বেঙ্গল ছাগল। প্রতি উপজেলায় ১০ জন সিজিএফ, ২ জন বাককিপারের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বরাদ্দকৃত প্রণোদনা পাননি বলে অভিযোগ খামারীদের। প্রকল্পে ছাগলের ঘর, দুধ ও ওষুধ বাবদ প্রতিটি সিজিএফ খামারীদের ৫৮ হাজার ৮ শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৩ বছরেও মাত্র ৬ জন খামারীকে ছাগলের ঘর দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে চারটি ছাগলের ঘরের কাজ শেষ করা হয়েছে। বাককিপার খামারীদের জন্য ৩৮ হাজার ৮ শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মেহেরপুর সদর উপজেলার একজন খামারী মাত্র ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। অন্যদের নামমাত্র খাবার দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রকল্পের ওজন মাপার স্কেল, ভ্যাকসিন ও ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ বিষয়টি জানতেই পারেননি। মুজিবনগরের বাককিপার খামারী সুকেন মণ্ডল বলেন, ‘প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তারা ছাগলের খাবারের বস্তা, প্লাস্টিকের মাচা, আর কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে ছবি তুলে নিয়ে চলে যায়, এরপরে আর কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই সরকারের দেওয়া পাঠা দুটি বিক্রি করে দিয়েছি।’ আশরাফপুর গ্রামের খামারী জাহিদ বলেন, ‘সরকারিভাবে আমাকে ২টা পাঠা দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না আমার বাড়ি থেকে এসে পাঠা নিয়ে গেছে। পরে শুনলাম পাঁঠা নিয়ে যাওয়ার এমন কোনো নিয়ম নেই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মেলা হলেও পুরস্কার দেয়া হয় না ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের খামারীদের। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের খুশি করতে দেয়া হয় অন্য জাতের ছাগল পালনকারী খামারীদের পুরস্কার।

এবিষয়ে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) মোস্তাফিজুর রহমান মুন্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, ‘প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি।’ সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, দেশ আধুনিক হয়েছে, সবাই চায় ছাগল থেকে অতিরিক্ত মাংস উৎপাদন করতে। তাই ব্ল্যাক বেঙ্গল পালনে অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে সরকারের দেওয়া পাঠা গেল কোথায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পিডি শরিফুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আগেই সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন প্রকল্প নিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট না করে পজিটিভ রিপোর্ট করেন। মাঠে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তি তাহলে পজিটিভ রিপোর্ট কীভাবে করব এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন যাতে মানুষ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে। ১৯৪টি উপজেলায় ৪৭ কোটি টাকা বাজেট রয়েছে। তাহলে প্রথম পর্যায়ে সরকারি এই ৪৭ কোটি টাকার কী ফলাফল পাওয়া গেল এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ উপকৃত হয়েছে। ছাগল পালনের ঘর বানিয়ে দেয় হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের যে উদ্দেশ্য ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালনকে সম্প্রসারিত করা এটার অগ্রগতি কতটুকু হলো এ প্রশ্নটিই তিনি এড়িয়ে যান। বিএলআরআই এর ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্পের পিডি সাদিক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চাইলে, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজি হননি।