ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরু পালনে আলোক মোল্লার সাফল্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০২২
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

সোহরাব হোসেন: খামারে নয়, সনাতন নিয়মে গ্রামের মাঠে মাঠে গরু চরিয়ে সাফল্য পেয়েছেন আলোক হোসেন মোল্লা। মাত্র একটি গরু থেকে এখন তাঁর গোয়ালে ৭৯টি গরু। ঘর-বাড়ি, উঠান ও গোয়ালজুড়ে শুধু গরু আর গরু। প্রথমে দেখলে মনে হবে ছোটখাটো গরুর হাট। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের ইসারত মোল্লার ছেলে আলোক হোসেন মোল্লার দিন কাটে মাঠে মাঠে। গরুর যত্ম করতে গিয়ে ৪৭টি বসন্ত পার করেছেন, কিন্তু সংসার করতে পারেননি। সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাওয়ায়ে (বিচুলি, খড় ও মাঠে চরিয়ে) গরু লালন-পালন করেন আলোক। গরু পালন করে করেছেন সহায় সম্পত্তি ও ব্যবসা। গ্রামে তৈরি হয়েছে ফ্ল্যাট বাড়ি। বড় ভাই সলোক মোল্লা স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। আর ছোট ভাই পলক হোসেন মোল্লা করেন সারের ব্যবসা।

ছোট ভাই পলক হোসেন মোল্লা জানান, ছোট বেলায় তাঁদের বাড়িতে হালের গরু ছাড়া একটি মাত্র গাভী গরু ছিল। পিতার মৃত্যুর পর ২০০৪ সাল থেকে গরু পালন শুরু করেন। সেই যে যাত্রা শুরু, এখন তাঁদের বাড়িতে ৭৯টি গরুর বড় একটি পাল। বছর শেষে ১০-১২টি করে গরু বিক্রি হয়, যা থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আসে। তাছাড়া সারা বছর সংসারে দুধের যোগান হয় গরু থেকেই।

গরুর প্রধান প্রতিপালক আলোক হোসেন মোল্লার সঙ্গে কথা হয় হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার গোপিনাথপুর মাঠে। তাঁর ভাষ্যমতে, গরু তাঁদের সংসারে আশির্বাদ স্বরুপ। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে মাঠে ১৬ বিঘা জমি কিনেছেন। ছোট ভাইয়ের ব্যবসায় দিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। সংসারের বেশির ভাগ খরচ আসে গরু বিক্রি থেকে। তিনি জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি নিজ গ্রাম ছাড়াও আশপাশ গ্রামে গরু চরিয়ে বেড়ান। তার কোনো সহযোগী রাখাল নেই। ফলে গরু পালন করা এখন খুবই কষ্টকর। এই বিরাট গরু পালন রক্ষণাবেক্ষন করতে গিয়ে আর বিয়ে-সাদী করা হয়নি বলেও আলোক হোসেন জানান।

হরিশপুর গ্রামের কলেজছাত্র সজল হোসেন জানান, এতো বড় গরুর পাল তাঁদের এলাকায় নেই। আধুনিক সুযোগ সম্পন্ন খামার ব্যতীত মাঠে মাঠে গরু চরিয়ে ওই পরিবারটি এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু জানান, ‘আলোক হোসেন আমার বাল্য বন্ধু। তার আরেক ভাই সলোক ইউপি সদস্য। তারও ২০টি গরু আছে। দুই ভাই মিলে গরু পালন করে।’ তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বন্ধু আলোক হোসেন গরু পালন করে। সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাওয়ায়ে এতো বড় গরুর পাল গড়ে তুলেছে তারা। তিনি বলেন, প্রতিবছর পরিবারটি ৩০ লাখ টাকার গরু বিক্রির পরও কোটি টাকা মূল্যের গরু সবসময় মজুদ থাকে। বর্তমান ৩০টি গরু গাভি এবং দ্রুত বাঁচ্চা হবে বলেও চেয়ারম্যান জানান।

বিষয়টি হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জল কুমার কুণ্ডু জানান, ঘটনা জানার পর অফিস থেকে গরু প্রতিপালককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের অনেক সেমিনারে তারা অংশগ্রহণও করেন। অফিস থেকে গরুর কৃমিনাশক ট্যাবলেটসহ নানা উপকরণ দেওয়া হয়। তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে দুই ভাইকে সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এই পরিবারটি হরিণাকুণ্ডুর সম্পদ বলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জল কুমার কুণ্ডু উল্লেখ করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গরু পালনে আলোক মোল্লার সাফল্য

আপলোড টাইম : ০৫:০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০২২

সোহরাব হোসেন: খামারে নয়, সনাতন নিয়মে গ্রামের মাঠে মাঠে গরু চরিয়ে সাফল্য পেয়েছেন আলোক হোসেন মোল্লা। মাত্র একটি গরু থেকে এখন তাঁর গোয়ালে ৭৯টি গরু। ঘর-বাড়ি, উঠান ও গোয়ালজুড়ে শুধু গরু আর গরু। প্রথমে দেখলে মনে হবে ছোটখাটো গরুর হাট। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের ইসারত মোল্লার ছেলে আলোক হোসেন মোল্লার দিন কাটে মাঠে মাঠে। গরুর যত্ম করতে গিয়ে ৪৭টি বসন্ত পার করেছেন, কিন্তু সংসার করতে পারেননি। সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাওয়ায়ে (বিচুলি, খড় ও মাঠে চরিয়ে) গরু লালন-পালন করেন আলোক। গরু পালন করে করেছেন সহায় সম্পত্তি ও ব্যবসা। গ্রামে তৈরি হয়েছে ফ্ল্যাট বাড়ি। বড় ভাই সলোক মোল্লা স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। আর ছোট ভাই পলক হোসেন মোল্লা করেন সারের ব্যবসা।

ছোট ভাই পলক হোসেন মোল্লা জানান, ছোট বেলায় তাঁদের বাড়িতে হালের গরু ছাড়া একটি মাত্র গাভী গরু ছিল। পিতার মৃত্যুর পর ২০০৪ সাল থেকে গরু পালন শুরু করেন। সেই যে যাত্রা শুরু, এখন তাঁদের বাড়িতে ৭৯টি গরুর বড় একটি পাল। বছর শেষে ১০-১২টি করে গরু বিক্রি হয়, যা থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আসে। তাছাড়া সারা বছর সংসারে দুধের যোগান হয় গরু থেকেই।

গরুর প্রধান প্রতিপালক আলোক হোসেন মোল্লার সঙ্গে কথা হয় হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার গোপিনাথপুর মাঠে। তাঁর ভাষ্যমতে, গরু তাঁদের সংসারে আশির্বাদ স্বরুপ। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে মাঠে ১৬ বিঘা জমি কিনেছেন। ছোট ভাইয়ের ব্যবসায় দিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। সংসারের বেশির ভাগ খরচ আসে গরু বিক্রি থেকে। তিনি জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি নিজ গ্রাম ছাড়াও আশপাশ গ্রামে গরু চরিয়ে বেড়ান। তার কোনো সহযোগী রাখাল নেই। ফলে গরু পালন করা এখন খুবই কষ্টকর। এই বিরাট গরু পালন রক্ষণাবেক্ষন করতে গিয়ে আর বিয়ে-সাদী করা হয়নি বলেও আলোক হোসেন জানান।

হরিশপুর গ্রামের কলেজছাত্র সজল হোসেন জানান, এতো বড় গরুর পাল তাঁদের এলাকায় নেই। আধুনিক সুযোগ সম্পন্ন খামার ব্যতীত মাঠে মাঠে গরু চরিয়ে ওই পরিবারটি এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু জানান, ‘আলোক হোসেন আমার বাল্য বন্ধু। তার আরেক ভাই সলোক ইউপি সদস্য। তারও ২০টি গরু আছে। দুই ভাই মিলে গরু পালন করে।’ তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বন্ধু আলোক হোসেন গরু পালন করে। সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাওয়ায়ে এতো বড় গরুর পাল গড়ে তুলেছে তারা। তিনি বলেন, প্রতিবছর পরিবারটি ৩০ লাখ টাকার গরু বিক্রির পরও কোটি টাকা মূল্যের গরু সবসময় মজুদ থাকে। বর্তমান ৩০টি গরু গাভি এবং দ্রুত বাঁচ্চা হবে বলেও চেয়ারম্যান জানান।

বিষয়টি হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জল কুমার কুণ্ডু জানান, ঘটনা জানার পর অফিস থেকে গরু প্রতিপালককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের অনেক সেমিনারে তারা অংশগ্রহণও করেন। অফিস থেকে গরুর কৃমিনাশক ট্যাবলেটসহ নানা উপকরণ দেওয়া হয়। তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে দুই ভাইকে সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এই পরিবারটি হরিণাকুণ্ডুর সম্পদ বলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জল কুমার কুণ্ডু উল্লেখ করেন।