ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাল সনদেই গণিতের শিক্ষক তিনি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, হরিণাকুণ্ডু:
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে আরজান আলী নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জাল করে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রাপ্তির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জোড়াদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। আরজান আলী ওই বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উপজেলার জোড়াদাহ গ্রামের সদরউদ্দিনের ছেলে।

জানা যায়, আরজান আলী (ইনডেক্স নম্বর- ক১০৫৪৫০১) ২০১০ সালে উপজেলার দরিবিন্নী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১২ সালে রয়েল ইউনিভার্সিটির সনদ জাল করে বিএড স্কেল প্রাপ্ত হন। এরপর থেকেই তিনি বিএড স্কেলের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে ওই শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি করলেও স্কুল সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এমপিওভুক্তির পর থেকে ১০ বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকার সরকারি বেতন-ভাতা অবৈধভাবে উত্তোলন করেছেন তিনি।
সর্বশেষ ২০২২ সালের মার্চ মাসে রয়েল ইউনিভার্সিটির ওই জাল সনদ দিয়েই তিনি জোড়াদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা বিএড সনদ যাচাই-বাছাই না করেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাঁকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। বিভিন্ন সময় অডিট হলেও তাঁর জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসেনি।

গত জুন মাসে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদে পরিবর্তন আসার পর আরজান আলীর জাল সনদের বিষয়টি ধরা পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, আরজান আলী কখনো রয়েল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হননি। তিনি টাকার মাধ্যমে ওই ইউনিভার্সিটির সনদ বানিয়ে নিয়েছেন। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসের এক অফিস সহকারী।

বিদ্যালয়ের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, আরজান আলী সম্প্রতি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর বিএড পাসের অনলাইন কপি প্রধান শিক্ষকের নিকট জমা দেন। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বিএড ১৯ ব্যাচের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ব্যাচের কৃতকার্যদের বিএড পাসের সনদ প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের দাবি, বৈধ বিএড সার্টিফিকেট প্রাপ্তির আগেই তাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, যা অবৈধ।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক আরজান আলী। তিনি বলেন, ‘আমি যেসব কাগজ জমা দিয়েছি, তার সবই বৈধ।’ রয়েল ইউনিভার্সিটির সনদ বৈধ হলে তিনি কেন আবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড করছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘আমার ক্যারিয়ারের জন্যই আমি ডাবল বিএড করছি।’ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি কামাল মিয়া বলেন, ‘শিক্ষক আরজান আলী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড পাস করেছেন যেটার সনদ এখনো আমরা পাইনি। তার রয়েল ইউনিভার্সিটির সনদটি ভুয়া বলে জানতে পেরেছি।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে জোড়াদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী জমির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করে তার বিএড সনদটি যাচাই করে দেখিনি। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি যদি জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি করেন, তবে সেটা খুবই দৃষ্টিকটূ। অবশ্যই এর শাস্তি হওয়া উচিত।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) শেখ মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সনদ জাল করে চাকরি করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জাল সনদেই গণিতের শিক্ষক তিনি!

আপলোড টাইম : ০৯:২১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২

প্রতিবেদক, হরিণাকুণ্ডু:
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে আরজান আলী নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জাল করে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রাপ্তির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জোড়াদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। আরজান আলী ওই বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উপজেলার জোড়াদাহ গ্রামের সদরউদ্দিনের ছেলে।

জানা যায়, আরজান আলী (ইনডেক্স নম্বর- ক১০৫৪৫০১) ২০১০ সালে উপজেলার দরিবিন্নী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১২ সালে রয়েল ইউনিভার্সিটির সনদ জাল করে বিএড স্কেল প্রাপ্ত হন। এরপর থেকেই তিনি বিএড স্কেলের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে ওই শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি করলেও স্কুল সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এমপিওভুক্তির পর থেকে ১০ বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকার সরকারি বেতন-ভাতা অবৈধভাবে উত্তোলন করেছেন তিনি।
সর্বশেষ ২০২২ সালের মার্চ মাসে রয়েল ইউনিভার্সিটির ওই জাল সনদ দিয়েই তিনি জোড়াদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা বিএড সনদ যাচাই-বাছাই না করেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাঁকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। বিভিন্ন সময় অডিট হলেও তাঁর জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসেনি।

গত জুন মাসে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদে পরিবর্তন আসার পর আরজান আলীর জাল সনদের বিষয়টি ধরা পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, আরজান আলী কখনো রয়েল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হননি। তিনি টাকার মাধ্যমে ওই ইউনিভার্সিটির সনদ বানিয়ে নিয়েছেন। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসের এক অফিস সহকারী।

বিদ্যালয়ের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, আরজান আলী সম্প্রতি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর বিএড পাসের অনলাইন কপি প্রধান শিক্ষকের নিকট জমা দেন। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বিএড ১৯ ব্যাচের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ব্যাচের কৃতকার্যদের বিএড পাসের সনদ প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের দাবি, বৈধ বিএড সার্টিফিকেট প্রাপ্তির আগেই তাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, যা অবৈধ।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক আরজান আলী। তিনি বলেন, ‘আমি যেসব কাগজ জমা দিয়েছি, তার সবই বৈধ।’ রয়েল ইউনিভার্সিটির সনদ বৈধ হলে তিনি কেন আবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড করছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘আমার ক্যারিয়ারের জন্যই আমি ডাবল বিএড করছি।’ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি কামাল মিয়া বলেন, ‘শিক্ষক আরজান আলী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড পাস করেছেন যেটার সনদ এখনো আমরা পাইনি। তার রয়েল ইউনিভার্সিটির সনদটি ভুয়া বলে জানতে পেরেছি।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে জোড়াদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী জমির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করে তার বিএড সনদটি যাচাই করে দেখিনি। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি যদি জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি করেন, তবে সেটা খুবই দৃষ্টিকটূ। অবশ্যই এর শাস্তি হওয়া উচিত।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) শেখ মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সনদ জাল করে চাকরি করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’