ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক এমপি ‘উন্নয়নের কারিগর’ খ্যাত মশিউর রহমান আর নেই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর হমান আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের নির্জন বাসার দরজা ভেঙে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পরীক্ষার জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ছোঁয়া ইসরাইল স্বজনদের জানান, অনেক আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে মশিউর রহমানের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তান রেখে গেছেন।

দুপুর ১২টার দিকে সাবেক এই সাংসদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকে স্তদ্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ শহর। লাশ দেখতে দল-মত নির্বিশেষে মানুষ ছুটতে থাকেন তাঁর ক্যাসেল ব্রিজ সংলগ্ন নতুন বাড়িতে। এসময় পুলিশ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাযা ও জোহর বাদ মরহুমের গ্রামের বাড়ি হরিণাকণ্ডু উপজেলার কন্যাদহ গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।

সাবেক এমপির গাড়ি চালক নাজমুল হাসান বাঁধন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে মশিউর রহমান তাঁর অসুস্থতার কথা জানিয়ে দ্রুত বাসায় আসতে বলেন। বাঁধন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের বাসায় এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। এরপর তিনি ঢাকায় তাঁর স্ত্রী মাহবুবা রহমান শেখার কাছে ফোন করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মশিউর রহমানের ছোট ভাই আসাদুজ্জামান, প্রতিবেশী ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শেখর, পাপপু সাহা ও ম্যানেজার বকুল হোসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘরের দরজা ভেঙে দেখেন সোফার ওপর মশিউর রহমানের নিথর দেহ পড়ে আছে। এসময় ইজিবাইকযোগে তাঁকে দ্রুত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতলে নেওয়া হয়। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ছোঁয়া ইসরাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বে তাঁর মৃত্যু হয়।


মসিউর রহমানের ঘনিষ্ট ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুল আলীম জানান, বিএনপির খুলনা মহাসমাবেশের পর থেকে তিনি সাংগঠনিক কাজে ঝিনাইদহে অবস্থান করছিলেন। গত সোমবারও তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, মশিউর রহমান ঝিনাইদহের উন্নয়নের আইকন। তাঁর মৃত্যুতে দেশবাসী একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিককে হারালো। এদিকে, বর্ণাঢ্য এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু, সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

রাজনৈতিক জীবন:
মশিউর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে উইকিপিডয়া সূত্রে জানা গেছে, তিনি ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কন্যাদহ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মশিউর রহমান ৭ম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়া থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। পরবর্তী শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠা করা বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে অল্প বয়সে তিনি হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকায় ৭ মাস কারাভোগ করেন।

১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য পদে লড়াই করে করে পরাজিত হন। সারাদেশে বিএনপির তিন’শ আসনের প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী। মশিউর রহমান ১৯৯১, ১৯৯৬, এবং ২০০১ সালে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় তিনি বিরোধী দলীয় হুইপ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।

মশিউর রহমান ১৯৭০ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গেপ্তার হন এবং কয়েক মাস কারাবরণ করেন। ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরে হরিণাকুণ্ডু থানা কমাণ্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মশিউর রহমান ঝিনাইদহ, হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নেওয়ার জন্যে ঝিনাইদহ আনসার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন ও সরকারিভাবে মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করেন। তিনি উক্ত ক্যাম্পের কমান্ডার নিযুক্ত হন। স্বাধীনতা পরবর্তী ঝিনাইদহে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠন করেন এবং উক্ত সংসদের দায়িত্ব পালন করেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় প্রথম বিসিএস নার্স ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেন। এছাড়া তিনি ঝিনাইদহ শহরে নার্সিং ইনস্টিটিউট, সরকারি শিশু হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ম্যাটস, হেলথ টেকনোলজি, খাবার স্যালাইন ফ্যাক্টরি, ভেটেরিনারি কলেজ, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত, করোনারি কেয়ার ইউনিট, বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপন করে নজির স্থাপন করেন। মশিউর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও তার রনাঙ্গনের বন্ধু মো. আব্দুল হাই ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মকবুল হোসেন মৃতদেহ দেখতে ছুটে আসেন। হাজারো দলীয় নেতা-কর্মী ও শুভান্যুধায়ী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মশিউর রহমানের মৃতদেহ এক নজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সাবেক এমপি ‘উন্নয়নের কারিগর’ খ্যাত মশিউর রহমান আর নেই

আপলোড টাইম : ০৮:৩১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর হমান আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের নির্জন বাসার দরজা ভেঙে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পরীক্ষার জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ছোঁয়া ইসরাইল স্বজনদের জানান, অনেক আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে মশিউর রহমানের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তান রেখে গেছেন।

দুপুর ১২টার দিকে সাবেক এই সাংসদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকে স্তদ্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ শহর। লাশ দেখতে দল-মত নির্বিশেষে মানুষ ছুটতে থাকেন তাঁর ক্যাসেল ব্রিজ সংলগ্ন নতুন বাড়িতে। এসময় পুলিশ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাযা ও জোহর বাদ মরহুমের গ্রামের বাড়ি হরিণাকণ্ডু উপজেলার কন্যাদহ গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।

সাবেক এমপির গাড়ি চালক নাজমুল হাসান বাঁধন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে মশিউর রহমান তাঁর অসুস্থতার কথা জানিয়ে দ্রুত বাসায় আসতে বলেন। বাঁধন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের বাসায় এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। এরপর তিনি ঢাকায় তাঁর স্ত্রী মাহবুবা রহমান শেখার কাছে ফোন করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মশিউর রহমানের ছোট ভাই আসাদুজ্জামান, প্রতিবেশী ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শেখর, পাপপু সাহা ও ম্যানেজার বকুল হোসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘরের দরজা ভেঙে দেখেন সোফার ওপর মশিউর রহমানের নিথর দেহ পড়ে আছে। এসময় ইজিবাইকযোগে তাঁকে দ্রুত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতলে নেওয়া হয়। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ছোঁয়া ইসরাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বে তাঁর মৃত্যু হয়।


মসিউর রহমানের ঘনিষ্ট ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুল আলীম জানান, বিএনপির খুলনা মহাসমাবেশের পর থেকে তিনি সাংগঠনিক কাজে ঝিনাইদহে অবস্থান করছিলেন। গত সোমবারও তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, মশিউর রহমান ঝিনাইদহের উন্নয়নের আইকন। তাঁর মৃত্যুতে দেশবাসী একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিককে হারালো। এদিকে, বর্ণাঢ্য এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু, সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

রাজনৈতিক জীবন:
মশিউর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে উইকিপিডয়া সূত্রে জানা গেছে, তিনি ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কন্যাদহ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মশিউর রহমান ৭ম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়া থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। পরবর্তী শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠা করা বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে অল্প বয়সে তিনি হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকায় ৭ মাস কারাভোগ করেন।

১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য পদে লড়াই করে করে পরাজিত হন। সারাদেশে বিএনপির তিন’শ আসনের প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী। মশিউর রহমান ১৯৯১, ১৯৯৬, এবং ২০০১ সালে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় তিনি বিরোধী দলীয় হুইপ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।

মশিউর রহমান ১৯৭০ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গেপ্তার হন এবং কয়েক মাস কারাবরণ করেন। ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরে হরিণাকুণ্ডু থানা কমাণ্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মশিউর রহমান ঝিনাইদহ, হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নেওয়ার জন্যে ঝিনাইদহ আনসার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন ও সরকারিভাবে মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করেন। তিনি উক্ত ক্যাম্পের কমান্ডার নিযুক্ত হন। স্বাধীনতা পরবর্তী ঝিনাইদহে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠন করেন এবং উক্ত সংসদের দায়িত্ব পালন করেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় প্রথম বিসিএস নার্স ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেন। এছাড়া তিনি ঝিনাইদহ শহরে নার্সিং ইনস্টিটিউট, সরকারি শিশু হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ম্যাটস, হেলথ টেকনোলজি, খাবার স্যালাইন ফ্যাক্টরি, ভেটেরিনারি কলেজ, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত, করোনারি কেয়ার ইউনিট, বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপন করে নজির স্থাপন করেন। মশিউর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও তার রনাঙ্গনের বন্ধু মো. আব্দুল হাই ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মকবুল হোসেন মৃতদেহ দেখতে ছুটে আসেন। হাজারো দলীয় নেতা-কর্মী ও শুভান্যুধায়ী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মশিউর রহমানের মৃতদেহ এক নজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করেন।