ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪০:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিন রোগী প্রতি ১৭৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও নিম্নমানের ও সরবরাহকৃত খাবারের তালিকার চেয়ে কম খাবার দেওয়া হচ্ছে। খাবার কম দেবার কথা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, খাবার কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও, ঠিকাদার সকলেই অকপটে স্বীকার করে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করেছেন। এ বিষয়ে রোগীসহ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ বরে বলেন, সরকার নির্ধারিত বরাদ্দে প্রতিটি রোগীর জন্য সকালে ও দুপুরে যে ধরনের খাবার ও যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার কথা, রোগীরা সে পরিমাণ খাবার পাচ্ছেন না। প্রতিদিন পোল্ট্রি মুরগীর মাংস কিংবা সিলভার কার্প জাতীয় মাছসহ নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। যা অনেকে খেতে পারেন না। এসব খাবারের পুষ্টিমান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রান্নাঘরে যেয়ে দেখা যায় ৫০ জন রোগীর জন্য সলিড (নারিভুড়ি বাদে) ১৩ কেজি মাছের বরাদ্দ থাকলেও আস্ত (নাড়িভুড়িসহ) ৮ কেজি মাছ মাছ পাওয়া গিয়েছে। ১ কেজি ডালের জায়গায় পাওয়া গিয়েছে ৩০০ গ্রাম ডাল, আলু ও সবজি মিলিয়ে ২৪ কেজির বরাদ্দ থাকলেও ৪ কেজি সবজির দেখা মেলেনি। নিয়মানুযায়ী প্রতিদিনের খাবার তৈরির জন্য ঠিকাদারের লোকজন যা সরবরাহ করবে তার পরিমাপ ও মান পরীক্ষা করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে সময়ের অভাবে নিয়মিত খাবার বুঝে নেওয়া সম্ভব নয়।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রান্নাঘরে বাবুর্চি শেফালী খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদার যা দেন তাই এক বেলায় রান্না করেন। সেই রান্না দুই বেলা রোগীদের দেওয়া হয়। হাসপাতালের কেউ কখনো এখানে এসে বুঝে নেননি। তিনি আরও বলেন, এখানে বয়লার মুরগীর মাংস হিসেবে দেওয়া হয়।

এ দিকে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে ৩ সদস্যর একটি খাবার কমিটি রয়েছে যার সভাপতি আরএমও, নার্সিং সুপারভাইজার ও পরিসংখ্যানবিদের সদস্য। এদের যেকোনো একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে খাবার বুঝে নেবে। এছাড়া আরএমও প্রতিদিন দুপুরে হাসপাতালের খাবার খাবেন এবং এর মান পরীক্ষা করবেন। ওনার জন্য একটি বিশেষ প্লেটও রয়েছে। তবে এখানে খাবারের মান পরীক্ষা হয় না।’

হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভাত রানী বলেন, ‘বিষয়টি দেখার জন্য নির্র্দিষ্ট কমিটি রয়েছে। এটা আমার দেখার দায়িত্ব নয়। তারপরও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেব।’ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ বলেন, ‘বর্তমানের জিনিসপত্রের দাম অনেক। কিন্তু সেভাবে রোগীদের বরাদ্দ নেই। তাই খাবারের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে সামাঞ্জস্য করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কাজের চাপে প্রতিদিন খাবার দেখে নেওয়া বা মান পরীক্ষা করা সম্ভাব হয় না।’

হাসপাতালের ঠিকাদার ইমরান হাবিব খাবার কমের কথা স্বীকার করে বলেন, নতুন বাজেট পাশ হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় খাবারের গড়মিল হচ্ছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা থাকবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৮:৪০:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিন রোগী প্রতি ১৭৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও নিম্নমানের ও সরবরাহকৃত খাবারের তালিকার চেয়ে কম খাবার দেওয়া হচ্ছে। খাবার কম দেবার কথা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, খাবার কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও, ঠিকাদার সকলেই অকপটে স্বীকার করে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করেছেন। এ বিষয়ে রোগীসহ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ বরে বলেন, সরকার নির্ধারিত বরাদ্দে প্রতিটি রোগীর জন্য সকালে ও দুপুরে যে ধরনের খাবার ও যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার কথা, রোগীরা সে পরিমাণ খাবার পাচ্ছেন না। প্রতিদিন পোল্ট্রি মুরগীর মাংস কিংবা সিলভার কার্প জাতীয় মাছসহ নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। যা অনেকে খেতে পারেন না। এসব খাবারের পুষ্টিমান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রান্নাঘরে যেয়ে দেখা যায় ৫০ জন রোগীর জন্য সলিড (নারিভুড়ি বাদে) ১৩ কেজি মাছের বরাদ্দ থাকলেও আস্ত (নাড়িভুড়িসহ) ৮ কেজি মাছ মাছ পাওয়া গিয়েছে। ১ কেজি ডালের জায়গায় পাওয়া গিয়েছে ৩০০ গ্রাম ডাল, আলু ও সবজি মিলিয়ে ২৪ কেজির বরাদ্দ থাকলেও ৪ কেজি সবজির দেখা মেলেনি। নিয়মানুযায়ী প্রতিদিনের খাবার তৈরির জন্য ঠিকাদারের লোকজন যা সরবরাহ করবে তার পরিমাপ ও মান পরীক্ষা করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে সময়ের অভাবে নিয়মিত খাবার বুঝে নেওয়া সম্ভব নয়।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রান্নাঘরে বাবুর্চি শেফালী খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদার যা দেন তাই এক বেলায় রান্না করেন। সেই রান্না দুই বেলা রোগীদের দেওয়া হয়। হাসপাতালের কেউ কখনো এখানে এসে বুঝে নেননি। তিনি আরও বলেন, এখানে বয়লার মুরগীর মাংস হিসেবে দেওয়া হয়।

এ দিকে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে ৩ সদস্যর একটি খাবার কমিটি রয়েছে যার সভাপতি আরএমও, নার্সিং সুপারভাইজার ও পরিসংখ্যানবিদের সদস্য। এদের যেকোনো একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে খাবার বুঝে নেবে। এছাড়া আরএমও প্রতিদিন দুপুরে হাসপাতালের খাবার খাবেন এবং এর মান পরীক্ষা করবেন। ওনার জন্য একটি বিশেষ প্লেটও রয়েছে। তবে এখানে খাবারের মান পরীক্ষা হয় না।’

হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভাত রানী বলেন, ‘বিষয়টি দেখার জন্য নির্র্দিষ্ট কমিটি রয়েছে। এটা আমার দেখার দায়িত্ব নয়। তারপরও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেব।’ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ বলেন, ‘বর্তমানের জিনিসপত্রের দাম অনেক। কিন্তু সেভাবে রোগীদের বরাদ্দ নেই। তাই খাবারের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে সামাঞ্জস্য করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কাজের চাপে প্রতিদিন খাবার দেখে নেওয়া বা মান পরীক্ষা করা সম্ভাব হয় না।’

হাসপাতালের ঠিকাদার ইমরান হাবিব খাবার কমের কথা স্বীকার করে বলেন, নতুন বাজেট পাশ হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় খাবারের গড়মিল হচ্ছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা থাকবে না।