ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘গরু-রাখাল থেকে শৈলকুপার শিশির এখন জঙ্গি’

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৪১:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২২
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: বান্দরবানে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় আটক ৭ জঙ্গির মধ্যে কাওছার আহমেদ ওরফে শিশিরের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপার দিগনগর ইউনিয়নের হারুন্দিয়া গ্রামে। দুই বছর আগে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশের পর পরিবারের সদস্যদের ধারণা ছিল সে আর বেঁচে নেই। আটকের পর গণমাধ্যমকর্মীরা তার বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে সে বেঁচে আছে। এর আগে নিরুদ্দেশের পর স্থানীয় থানায় জিডি করতে গেলে তার কোনো ছবি না থাকায় থানায় জিডি হয়নি বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সী কাওছার ওরফে শিশির বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশের আগে গরু পালন করতেন। কাওছার হারুন্দিয়া গ্রামের গ্রাম্য চিকিৎসক মৃত গোলাম কিবরিয়ার ছেলে।
আটক জঙ্গি শিশিরের ভাই কেরামত আলী জানান, তারা ৩ ভাই ও ৫ বোন। কাওছার সবার বড়। সে প্রথমে হাফেজি পড়া শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। এছাড়া ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় সে। এরপর ঢাকাতে পোশাক কারখানায় চাকরি নেয় কাওছার। সেখানে বেশ কিছুদিন চাকরি করার পর বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে সে গরু পালন ও কৃষিকাজ শুরু করে। এরপর স্থানীয় গাড়াগঞ্জ বাজারে কিছুদিন লেপ তোশকের দোকান দিয়েছিল কাওছার ওরফে শিশির। সেই ব্যবসায়ও মন না বসলে ঝিনাইদহ শহরের এক আত্মীয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। এরপর ২০২০ সালের দিকে বাড়ির সাথে তার আর কোনো যোগাযোগ থাকে না। অনেক খোঁজাখুজির পর তাকে আর না পওয়া গেলে তাদের ধারণা সে কোথাও মারা গেছে।

কাওছারের মা ঝরনা খাতুন বলেন, ‘গত দুই বছর তার বড় ছেলে কাওছারের কোন খোঁজ নেই। থানায় জিডি করতে গেলে ছবি না দিতে পারায় জিডি করতে পারেননি বলে জানান। তবে তার ধারনা ছিল তার ছেলে আর বেঁচে নেই বলে।’
প্রতিবেশী আব্দুল মালেক জানান, ছোট থেকে কাওছার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো এবং ধর্মভিরু ছিল। তার আচার আচরণ ছিল খুব ভালো। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান কাওছারের পিতা ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সে প্রথমে পাশ^বর্তী গ্রাম হড়রাতে বিয়ে করেন। তার সে স্ত্রী একলেমশিয়া হয়ে মারা গেলে চট্রগ্রামে বিয়ে করেন। বোনরা সবাই বিবাহিতা। ছোট ভাই কেরামত আলী গাড়ীর ড্রাইভার ও সবার ছোট ভাই সোহরাব হোসেন কোরআনের হাফেজ।

এদিকে, অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, কাওছার গাড়াগঞ্জ বাজারে দোকানদারী করার সময় একবার জঙ্গি সন্দেহে র‌্যাবের হাতে আটক হয়। এর আগে ২০১৭ সালে সে খুলনাতে আটক হয়েছিল। এরপর সে জেল থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়। স্থানীয়দের ধারণা ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম সাজাপ্রাপ্ত আসামী জঙ্গি বুলবুলের বাড়ি গাড়াগঞ্জ এলাকায়। গাড়াগঞ্জে দোকান করা অবস্থায় বুলবুলের রেখে যাওয়া জঙ্গি নেটওয়ার্কের সাথে পরিচয় সূত্রে সে জঙ্গি খাতায় নাম লিখাতে পারে বলে ধারণা করছে তার পরিবার।

সূত্রে আরো জানা যায়, শৈলকুপা এলাকার অন্তত ৭-৮ জন যুবক দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বিপিএম পিপিএম (বার) বলেন, ‘পুলিশ জানতে পেরেছে বান্দরবানের পাহাড়ী এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে আটক জামাতুল আনছার ফিল হিন্দাল শারকীয়ার সদস্য কাওছার ওরফে শিশিরের বাড়ি শৈলকুপার হারুন্দিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশের বিশেষ শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

‘গরু-রাখাল থেকে শৈলকুপার শিশির এখন জঙ্গি’

আপলোড টাইম : ০৫:৪১:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: বান্দরবানে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় আটক ৭ জঙ্গির মধ্যে কাওছার আহমেদ ওরফে শিশিরের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপার দিগনগর ইউনিয়নের হারুন্দিয়া গ্রামে। দুই বছর আগে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশের পর পরিবারের সদস্যদের ধারণা ছিল সে আর বেঁচে নেই। আটকের পর গণমাধ্যমকর্মীরা তার বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে সে বেঁচে আছে। এর আগে নিরুদ্দেশের পর স্থানীয় থানায় জিডি করতে গেলে তার কোনো ছবি না থাকায় থানায় জিডি হয়নি বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সী কাওছার ওরফে শিশির বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশের আগে গরু পালন করতেন। কাওছার হারুন্দিয়া গ্রামের গ্রাম্য চিকিৎসক মৃত গোলাম কিবরিয়ার ছেলে।
আটক জঙ্গি শিশিরের ভাই কেরামত আলী জানান, তারা ৩ ভাই ও ৫ বোন। কাওছার সবার বড়। সে প্রথমে হাফেজি পড়া শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। এছাড়া ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় সে। এরপর ঢাকাতে পোশাক কারখানায় চাকরি নেয় কাওছার। সেখানে বেশ কিছুদিন চাকরি করার পর বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে সে গরু পালন ও কৃষিকাজ শুরু করে। এরপর স্থানীয় গাড়াগঞ্জ বাজারে কিছুদিন লেপ তোশকের দোকান দিয়েছিল কাওছার ওরফে শিশির। সেই ব্যবসায়ও মন না বসলে ঝিনাইদহ শহরের এক আত্মীয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। এরপর ২০২০ সালের দিকে বাড়ির সাথে তার আর কোনো যোগাযোগ থাকে না। অনেক খোঁজাখুজির পর তাকে আর না পওয়া গেলে তাদের ধারণা সে কোথাও মারা গেছে।

কাওছারের মা ঝরনা খাতুন বলেন, ‘গত দুই বছর তার বড় ছেলে কাওছারের কোন খোঁজ নেই। থানায় জিডি করতে গেলে ছবি না দিতে পারায় জিডি করতে পারেননি বলে জানান। তবে তার ধারনা ছিল তার ছেলে আর বেঁচে নেই বলে।’
প্রতিবেশী আব্দুল মালেক জানান, ছোট থেকে কাওছার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো এবং ধর্মভিরু ছিল। তার আচার আচরণ ছিল খুব ভালো। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান কাওছারের পিতা ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সে প্রথমে পাশ^বর্তী গ্রাম হড়রাতে বিয়ে করেন। তার সে স্ত্রী একলেমশিয়া হয়ে মারা গেলে চট্রগ্রামে বিয়ে করেন। বোনরা সবাই বিবাহিতা। ছোট ভাই কেরামত আলী গাড়ীর ড্রাইভার ও সবার ছোট ভাই সোহরাব হোসেন কোরআনের হাফেজ।

এদিকে, অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, কাওছার গাড়াগঞ্জ বাজারে দোকানদারী করার সময় একবার জঙ্গি সন্দেহে র‌্যাবের হাতে আটক হয়। এর আগে ২০১৭ সালে সে খুলনাতে আটক হয়েছিল। এরপর সে জেল থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়। স্থানীয়দের ধারণা ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম সাজাপ্রাপ্ত আসামী জঙ্গি বুলবুলের বাড়ি গাড়াগঞ্জ এলাকায়। গাড়াগঞ্জে দোকান করা অবস্থায় বুলবুলের রেখে যাওয়া জঙ্গি নেটওয়ার্কের সাথে পরিচয় সূত্রে সে জঙ্গি খাতায় নাম লিখাতে পারে বলে ধারণা করছে তার পরিবার।

সূত্রে আরো জানা যায়, শৈলকুপা এলাকার অন্তত ৭-৮ জন যুবক দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বিপিএম পিপিএম (বার) বলেন, ‘পুলিশ জানতে পেরেছে বান্দরবানের পাহাড়ী এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে আটক জামাতুল আনছার ফিল হিন্দাল শারকীয়ার সদস্য কাওছার ওরফে শিশিরের বাড়ি শৈলকুপার হারুন্দিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশের বিশেষ শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন।’