ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণসমাবেশে যোগ দিতে ট্রেনে খুলনার পথে নেতা-কর্মীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৬:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ থেকে ভাড়ায় যাচ্ছে না কোনো গণপরিবহন ও মাইক্রোবাস

সমীকরণ প্রতিবেদন: সড়কে নানা বাধা ও হয়রানি পেরিয়ে বিএনপির খুলনার গণসমাবেশে ছুটছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। কোনো বাধায় তাঁরা মানছেন না। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলা থেকে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস-মিনিবাস চলাচল না করলেও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট ও ট্রেনযোগে মহাসমাবেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গা থেকে বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে ভাড়ায় বাস ও মাইক্রোবাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ফলে তাঁরা বাধ্য হয়ে ট্রেনে কিংবা বিকল্প ব্যবস্থায় গণসমাবেশের অভিমুখে ছুটছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ অভিযোগ করেন, চুয়াডাঙ্গায় অসংখ্য বাস ও মাইক্রোবাস থাকলেও বিএনপির খুলনার কর্মসূচির জন্য কোনো গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়নি। তবে দলীয় নেতাদের মালিকানাধীন ৬০টি মাইক্রোবাস ও ১২৫টি মোটরসাইকেলে করে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আলাদা আলাদাভাবে খুলনার পথে রওনা দিয়েছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক হাজার জন ইতঃমধ্যেই খুলনায় পৌঁছে গেছেন। যাঁদের প্রত্যেকের কাছে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার আছে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে সোহেল ও আরএ পরিবহনের চারটি বাস প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে ১৫ মিনিটি পরপর খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সাতক্ষীরার একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও তাঁর স্ত্রীর কর্মস্থল চুয়াডাঙ্গা থেকে সপ্তাহে এক দিন সকালে এসব পরিবহনে খুলনায় যান। গতকাল শুক্রবার সকালে খুলনায় যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে গেলে কাউন্টার মাস্টার সাজেদুল ইসলাম লাভলু তাঁকে জানিয়ে দেন যে বাস খুলনায় যাবে না। যশোর পর্যন্ত যেতে পারে। খুলনাগামী অন্য যাত্রীদেরও কাউন্টার মাস্টার একই কথা বলেন। খুলনায় বাস না যাওয়ার কারণ নিয়ে এই কাউন্টার মাস্টার পরিষ্কার করে কিছু না বললেও যাত্রীদের আলাপ-আলোচনায় চলে আসে খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশের কথা। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে টিকিট কেটে যশোরের উদ্দেশে রওনা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে ঢাকা-যশোর পথে চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত যান। যশোর থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁদের খুলনায় নেওয়া হচ্ছে। সকাল সোয়া নয়টায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনে দলীয় নেতা-কর্মীরা খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, জেলা থেকে অন্তত ২ হাজার ৫ শ নেতা-কর্মী খুলনায় শনিবারের গণসমাবেশে যোগ দেবেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সব প্রস্তুতি শেষে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ব্যানার ও জাতীয় পতাকা নিয়ে খুলনার পথে রওনা দিয়েছেন। তবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রধান ভরসা ট্রেন। বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ট্রেনে করে রওনা দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, দুই দিন ধরে খুলনাগামী ট্রেনে যাত্রীর চাপ অনেকটাই বেড়েছে।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফের নেতৃত্বে ১২০ সদস্যের নেতা-কর্মী ১০টি মাইক্রোবাসের একটি বহর নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনার পথে রওনা দেন। দুপুরে বহরটি যশোর শহরের পৌঁছায়। শরীফুজ্জামান বলেন, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকদের হয়রানির আশঙ্কায় গাড়ির বহর ভাগ হয়ে বিশেষ কৌশলে যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত যাবেন। গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গার একাডেমি মোড়ে মাইক্রোবাস ও কার স্ট্যান্ডে গিয়ে অসংখ্য মাইক্রোবাস দেখতে পাওয়া যায়। মাইক্রোবাসের অন্তত ২০ জন চালকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনা পর্যন্ত পথে পথে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও পুলিশের হয়রানির ভয়ে গণসমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ভাড়ায় যাবেন না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন মুক্তা বলেন, খুলনায় আজ ও আগামীকাল পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে। এ জন্য চুয়াডাঙ্গার পরিবহন মালিক-শ্রমিকের কেউই বাস খুলনায় পাঠাতে চান না। একই কথা বলেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন মণ্ডল।

ঝিনাইদহ:
সড়কে নানা বাধা ও হয়রানি পেরিয়ে বিএনপির খুলনার গণসমাবেশে ছুটছেন নেতা-কর্মীরা। কোনো বাধায় তাঁরা মানছেন না। ঝিনাইদহ জেলা থেকে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস-মিনিবাস চলাচল না করলেও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট ও ট্রেনযোগে মহাসমাবেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ তথ্য জানান ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ। তিনি জানিয়েছেন, সরকার পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে কোনো বাধাই বিএনপি আর পরোয়া করবে না।
এদিকে, খুলনা বিভাগীয় বাস, মিনিবাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ২১-২২ অক্টোবর আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাস পরিবহন বন্ধের ডাক দেয়ায় ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস-মিনিবাস চলছে না। তবে খুলনা-কুষ্টিয়া রুটের প্রধান দুটি পরিহনের মধ্যে গড়াই ও রুপসা পরিবহন চলতে দেখা গিয়েছে। তবে ওই বাসগুলো যশোর পর্যন্ত যাচ্ছে এবং যশোর থেকে আবার ঝিনাইদহ হয়ে কুষ্টিয়া যাচ্ছে।

এদিকে বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, খুলনামুখী বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে নেতা-কর্মীরা মাইক্রো ও ট্রেনযোগে ২০ তারিখ থেকেই খুলনা রওনা হয়েছে। তবে খুব ভোরে যেমন খুলনামুখী বাস চলেনি, তেমনি বিএনপির নেতা-কর্মীবাহী মাইক্রোগুলোও কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে যশোর পর্যন্ত বাস চলাচল করেছে। এদিকে, ঢাকাগামী দূরপাল্লার পরিবহনসহ কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। মূলত ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সমস্ত খুলনা বিভাগে আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধের ডাক দেয়া হলেও বাসগুলো কেবল খুলনা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা জানান, তাঁরা ভোর পাঁচটায় ঝিনাইদহ থেকে মাইক্রোযোগে খুলনার উদ্দেশে রওনা হলে তারা পথে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। নেতা-কর্মীরা বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রো করে খুলনায় রওনা হলেও তাদের মধ্যে পথে বাধার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ জানিয়েছেন, বেলা বাড়ার পর নেতা-কর্মী খুলনা রওনা হয়েছিল। তাদের পথে নানামুখী বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, যশোরের চুড়ামনকাঠিতে তাদের নেতা-কর্মীবাহী মাইক্রোবাস ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পথে পথে পুলিশ মাইক্রোর কাগজপত্র পরীক্ষার নামে হয়রানি করছে। তবে তিনি দাবি করেন, এত বাধার পারও ঝিনাইদহ থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ইতঃমধ্যে খুলনা পৌঁছে গেছে এবং আগামীকাল পর্যন্ত সেটি অব্যাহত থাকবে।

ঝিনাইদহ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নেতা রোকনুজ্জামান রানু জানান, তাদেরকে খুলনা বিভাগীয় বাস, মিনিবাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ২১ ও ২২ তারিখ বাস-মিনিবাস চলাচল না করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা শুধু সেটাই পালন করছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাকিম আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের দল বা সরকার খুলনার বিএনপির সমাবেশ নিয়ে কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করছে না। তবে বাস-মিনিবিাস খুলনা বিভাগিয় মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ তাদের দাবি আদায়ে বাস চলাচলে যে ঘোষণা দিয়েছে, তার সাথে তাদের দলের কোনো যোগসূত্র নেই। ঝিনাইদহ জেলা ট্রফিকের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. গোলাম মোর্শেদ বলেন, তারা সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্ক করছেন। সমাবেশে যাওয়া কোনো গাড়িকে বাধাগ্রস্ত বা হয়রানি তারা করছেন না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গণসমাবেশে যোগ দিতে ট্রেনে খুলনার পথে নেতা-কর্মীরা

আপলোড টাইম : ০৯:৩৬:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ থেকে ভাড়ায় যাচ্ছে না কোনো গণপরিবহন ও মাইক্রোবাস

সমীকরণ প্রতিবেদন: সড়কে নানা বাধা ও হয়রানি পেরিয়ে বিএনপির খুলনার গণসমাবেশে ছুটছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। কোনো বাধায় তাঁরা মানছেন না। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলা থেকে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস-মিনিবাস চলাচল না করলেও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট ও ট্রেনযোগে মহাসমাবেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গা থেকে বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে ভাড়ায় বাস ও মাইক্রোবাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ফলে তাঁরা বাধ্য হয়ে ট্রেনে কিংবা বিকল্প ব্যবস্থায় গণসমাবেশের অভিমুখে ছুটছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ অভিযোগ করেন, চুয়াডাঙ্গায় অসংখ্য বাস ও মাইক্রোবাস থাকলেও বিএনপির খুলনার কর্মসূচির জন্য কোনো গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়নি। তবে দলীয় নেতাদের মালিকানাধীন ৬০টি মাইক্রোবাস ও ১২৫টি মোটরসাইকেলে করে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আলাদা আলাদাভাবে খুলনার পথে রওনা দিয়েছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক হাজার জন ইতঃমধ্যেই খুলনায় পৌঁছে গেছেন। যাঁদের প্রত্যেকের কাছে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার আছে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে সোহেল ও আরএ পরিবহনের চারটি বাস প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে ১৫ মিনিটি পরপর খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সাতক্ষীরার একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও তাঁর স্ত্রীর কর্মস্থল চুয়াডাঙ্গা থেকে সপ্তাহে এক দিন সকালে এসব পরিবহনে খুলনায় যান। গতকাল শুক্রবার সকালে খুলনায় যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে গেলে কাউন্টার মাস্টার সাজেদুল ইসলাম লাভলু তাঁকে জানিয়ে দেন যে বাস খুলনায় যাবে না। যশোর পর্যন্ত যেতে পারে। খুলনাগামী অন্য যাত্রীদেরও কাউন্টার মাস্টার একই কথা বলেন। খুলনায় বাস না যাওয়ার কারণ নিয়ে এই কাউন্টার মাস্টার পরিষ্কার করে কিছু না বললেও যাত্রীদের আলাপ-আলোচনায় চলে আসে খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশের কথা। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে টিকিট কেটে যশোরের উদ্দেশে রওনা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে ঢাকা-যশোর পথে চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত যান। যশোর থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁদের খুলনায় নেওয়া হচ্ছে। সকাল সোয়া নয়টায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনে দলীয় নেতা-কর্মীরা খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, জেলা থেকে অন্তত ২ হাজার ৫ শ নেতা-কর্মী খুলনায় শনিবারের গণসমাবেশে যোগ দেবেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সব প্রস্তুতি শেষে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ব্যানার ও জাতীয় পতাকা নিয়ে খুলনার পথে রওনা দিয়েছেন। তবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রধান ভরসা ট্রেন। বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ট্রেনে করে রওনা দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, দুই দিন ধরে খুলনাগামী ট্রেনে যাত্রীর চাপ অনেকটাই বেড়েছে।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফের নেতৃত্বে ১২০ সদস্যের নেতা-কর্মী ১০টি মাইক্রোবাসের একটি বহর নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনার পথে রওনা দেন। দুপুরে বহরটি যশোর শহরের পৌঁছায়। শরীফুজ্জামান বলেন, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকদের হয়রানির আশঙ্কায় গাড়ির বহর ভাগ হয়ে বিশেষ কৌশলে যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত যাবেন। গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গার একাডেমি মোড়ে মাইক্রোবাস ও কার স্ট্যান্ডে গিয়ে অসংখ্য মাইক্রোবাস দেখতে পাওয়া যায়। মাইক্রোবাসের অন্তত ২০ জন চালকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনা পর্যন্ত পথে পথে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও পুলিশের হয়রানির ভয়ে গণসমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ভাড়ায় যাবেন না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন মুক্তা বলেন, খুলনায় আজ ও আগামীকাল পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে। এ জন্য চুয়াডাঙ্গার পরিবহন মালিক-শ্রমিকের কেউই বাস খুলনায় পাঠাতে চান না। একই কথা বলেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন মণ্ডল।

ঝিনাইদহ:
সড়কে নানা বাধা ও হয়রানি পেরিয়ে বিএনপির খুলনার গণসমাবেশে ছুটছেন নেতা-কর্মীরা। কোনো বাধায় তাঁরা মানছেন না। ঝিনাইদহ জেলা থেকে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস-মিনিবাস চলাচল না করলেও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট ও ট্রেনযোগে মহাসমাবেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ তথ্য জানান ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ। তিনি জানিয়েছেন, সরকার পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে কোনো বাধাই বিএনপি আর পরোয়া করবে না।
এদিকে, খুলনা বিভাগীয় বাস, মিনিবাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ২১-২২ অক্টোবর আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাস পরিবহন বন্ধের ডাক দেয়ায় ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস-মিনিবাস চলছে না। তবে খুলনা-কুষ্টিয়া রুটের প্রধান দুটি পরিহনের মধ্যে গড়াই ও রুপসা পরিবহন চলতে দেখা গিয়েছে। তবে ওই বাসগুলো যশোর পর্যন্ত যাচ্ছে এবং যশোর থেকে আবার ঝিনাইদহ হয়ে কুষ্টিয়া যাচ্ছে।

এদিকে বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, খুলনামুখী বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে নেতা-কর্মীরা মাইক্রো ও ট্রেনযোগে ২০ তারিখ থেকেই খুলনা রওনা হয়েছে। তবে খুব ভোরে যেমন খুলনামুখী বাস চলেনি, তেমনি বিএনপির নেতা-কর্মীবাহী মাইক্রোগুলোও কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে যশোর পর্যন্ত বাস চলাচল করেছে। এদিকে, ঢাকাগামী দূরপাল্লার পরিবহনসহ কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। মূলত ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সমস্ত খুলনা বিভাগে আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধের ডাক দেয়া হলেও বাসগুলো কেবল খুলনা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা জানান, তাঁরা ভোর পাঁচটায় ঝিনাইদহ থেকে মাইক্রোযোগে খুলনার উদ্দেশে রওনা হলে তারা পথে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। নেতা-কর্মীরা বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রো করে খুলনায় রওনা হলেও তাদের মধ্যে পথে বাধার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ জানিয়েছেন, বেলা বাড়ার পর নেতা-কর্মী খুলনা রওনা হয়েছিল। তাদের পথে নানামুখী বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, যশোরের চুড়ামনকাঠিতে তাদের নেতা-কর্মীবাহী মাইক্রোবাস ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পথে পথে পুলিশ মাইক্রোর কাগজপত্র পরীক্ষার নামে হয়রানি করছে। তবে তিনি দাবি করেন, এত বাধার পারও ঝিনাইদহ থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ইতঃমধ্যে খুলনা পৌঁছে গেছে এবং আগামীকাল পর্যন্ত সেটি অব্যাহত থাকবে।

ঝিনাইদহ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নেতা রোকনুজ্জামান রানু জানান, তাদেরকে খুলনা বিভাগীয় বাস, মিনিবাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ২১ ও ২২ তারিখ বাস-মিনিবাস চলাচল না করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা শুধু সেটাই পালন করছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাকিম আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের দল বা সরকার খুলনার বিএনপির সমাবেশ নিয়ে কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করছে না। তবে বাস-মিনিবিাস খুলনা বিভাগিয় মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ তাদের দাবি আদায়ে বাস চলাচলে যে ঘোষণা দিয়েছে, তার সাথে তাদের দলের কোনো যোগসূত্র নেই। ঝিনাইদহ জেলা ট্রফিকের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. গোলাম মোর্শেদ বলেন, তারা সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্ক করছেন। সমাবেশে যাওয়া কোনো গাড়িকে বাধাগ্রস্ত বা হয়রানি তারা করছেন না।