ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নষ্ট রাজনীতির শিকার মুরাদ তৌহিদুল ও সমরেশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:১৫:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশাবাড়িয়া গ্রামের বদিউজ্জামান বাদশা, তিন পুত্র সন্তানের জনক। মেধাবী তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে দুটি সন্তান শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। এরপরও বদিউজ্জামান বাদশা পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলা শহরে প্রাইভেট পড়িয়ে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর টিউশনিটাও করতে পারেন না। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সাদেক পড়ে গিয়ে মাজায় আঘাত পেয়ে আজ প্রায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সাদেক অতিকষ্টে বিএ পাশ করে সরকারি কেসি কলেজে মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। আর ১০ জন মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারেন না। তাই সংসারে চাকা ঘোরাতে বাড়িতে বসে দুই-একটা টিউশনি করেন। জন্ম থেকে এক পায়ে সমস্যা ছোট ছেলে মোক্তারের। এরপর ৫ বছর আগে সেই পা ভেঙে যায়। তারপর থেকে আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। এরপরও কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে প্রতিবন্ধী হিসেবে একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের মধ্যে আশার আলো ছিল সাইদুর রহমান মুরাদ। এই ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা আর স্বপ্ন ছিল পিতা বাদশা মোল্লার। লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি করবে বৃদ্ধ পিতা-মাতার পাশে দাঁড়াবে। বড় ভাইদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু নষ্ট রাজনীতির কবলে পড়ে নিভে গেছে প্রাণপ্রদীপ। নিথর দেহটা ময়নাতদন্ত শেষে যখন বাড়ির আঙিনায় পৌঁছায় তখন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন পিতা বদিউজ্জামান বাদশা!

অন্যদিকে তৌহিদুল ইসলাম ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বরপুর গ্রামে। পিতৃহারা তৌহিদুল ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করে জীবন সাজাতে চেয়েছিলেন। তারা দুই ভাই-বোন। বড় বোন মমতাজের বিয়ে হয়ে গেছে ৫ বছর আগে। তখন পিতা বেঁচে ছিল তার। হঠাৎ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পিতা গোলাম মোস্তফা দুই বছর আগে মারা যান। মা জাহানারা একমাত্র পুত্রসন্তানকে আগলে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। কিন্তু সে আশা দূরাশায় পরিণত হয়। নষ্ট রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে তৌহিদুল এখন ইতিহাস। দলীয় প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে তিনিও মুরাদের সহযাত্রী হন। তৌহিদুলের বাড়িতে এখনো শোকের ছায়া। একমাত্র পুত্র হারানো মা জাহানারা নির্বাক।

তৌহিদুলের চাচা মো. গোলাম সরোয়ার জানান, সন্তানেরা সুসন্তান হতে গিয়ে নষ্ট রাজনীতির বলি হয়েছেন। সমরেশ বিশ্বাসের পিতা রাখাল চন্দ্র বিশ্বাস একজন কৃষক। যশোরের পালদিয়া গ্রামে তার বাড়ি। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন সমরেশ। বড় বোন মিনাক্ষির বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটবোন অনিমা এইচএসসি পাশ করেছে। ছোট ভাই তনুশ্রী বিশ্বাস ৮ম শ্রেণির ছাত্র। ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। বুকভরা আশা ছিল সমরেশের। সরকারি চাকরি নিয়ে হাল ধরবেন সংসারের। কিন্তু না, গত শুক্রবার মুরাদ ও তৌহিদের সঙ্গে পরোপারে পাড়ি জমায় সমরেশ। সমরেশের চাচাতো ভাই চণ্ডিদাশ বললেন, নেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছাত্রদের নোংরা রজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, এটা হত্যাকাণ্ড।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

নষ্ট রাজনীতির শিকার মুরাদ তৌহিদুল ও সমরেশ

আপলোড টাইম : ১২:১৫:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশাবাড়িয়া গ্রামের বদিউজ্জামান বাদশা, তিন পুত্র সন্তানের জনক। মেধাবী তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে দুটি সন্তান শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। এরপরও বদিউজ্জামান বাদশা পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলা শহরে প্রাইভেট পড়িয়ে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর টিউশনিটাও করতে পারেন না। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সাদেক পড়ে গিয়ে মাজায় আঘাত পেয়ে আজ প্রায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সাদেক অতিকষ্টে বিএ পাশ করে সরকারি কেসি কলেজে মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। আর ১০ জন মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারেন না। তাই সংসারে চাকা ঘোরাতে বাড়িতে বসে দুই-একটা টিউশনি করেন। জন্ম থেকে এক পায়ে সমস্যা ছোট ছেলে মোক্তারের। এরপর ৫ বছর আগে সেই পা ভেঙে যায়। তারপর থেকে আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। এরপরও কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে প্রতিবন্ধী হিসেবে একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের মধ্যে আশার আলো ছিল সাইদুর রহমান মুরাদ। এই ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা আর স্বপ্ন ছিল পিতা বাদশা মোল্লার। লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি করবে বৃদ্ধ পিতা-মাতার পাশে দাঁড়াবে। বড় ভাইদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু নষ্ট রাজনীতির কবলে পড়ে নিভে গেছে প্রাণপ্রদীপ। নিথর দেহটা ময়নাতদন্ত শেষে যখন বাড়ির আঙিনায় পৌঁছায় তখন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন পিতা বদিউজ্জামান বাদশা!

অন্যদিকে তৌহিদুল ইসলাম ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বরপুর গ্রামে। পিতৃহারা তৌহিদুল ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করে জীবন সাজাতে চেয়েছিলেন। তারা দুই ভাই-বোন। বড় বোন মমতাজের বিয়ে হয়ে গেছে ৫ বছর আগে। তখন পিতা বেঁচে ছিল তার। হঠাৎ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পিতা গোলাম মোস্তফা দুই বছর আগে মারা যান। মা জাহানারা একমাত্র পুত্রসন্তানকে আগলে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। কিন্তু সে আশা দূরাশায় পরিণত হয়। নষ্ট রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে তৌহিদুল এখন ইতিহাস। দলীয় প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে তিনিও মুরাদের সহযাত্রী হন। তৌহিদুলের বাড়িতে এখনো শোকের ছায়া। একমাত্র পুত্র হারানো মা জাহানারা নির্বাক।

তৌহিদুলের চাচা মো. গোলাম সরোয়ার জানান, সন্তানেরা সুসন্তান হতে গিয়ে নষ্ট রাজনীতির বলি হয়েছেন। সমরেশ বিশ্বাসের পিতা রাখাল চন্দ্র বিশ্বাস একজন কৃষক। যশোরের পালদিয়া গ্রামে তার বাড়ি। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন সমরেশ। বড় বোন মিনাক্ষির বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটবোন অনিমা এইচএসসি পাশ করেছে। ছোট ভাই তনুশ্রী বিশ্বাস ৮ম শ্রেণির ছাত্র। ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। বুকভরা আশা ছিল সমরেশের। সরকারি চাকরি নিয়ে হাল ধরবেন সংসারের। কিন্তু না, গত শুক্রবার মুরাদ ও তৌহিদের সঙ্গে পরোপারে পাড়ি জমায় সমরেশ। সমরেশের চাচাতো ভাই চণ্ডিদাশ বললেন, নেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছাত্রদের নোংরা রজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, এটা হত্যাকাণ্ড।