ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে গ্রাম্য সালিশে যুবককে এক লাখ জরিমানা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: মেহেরপুরের গাংনীর বানিয়াপুকুর গ্রামে জুবায়ের হোসেন (৪০) নামের একজনকে বেদম মারপিট করে সালিশ বিচারে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সেই সাথে ৩ শ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় ওই গ্রামের এক মোড়লসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। জুবায়ের হোসেনের বাড়ি ষোলটাকা গ্রামে। তার পিতার নাম আয়ুব হোসেন।
জুবায়ের হোসেন জানান, তিনি গত সোমবার রাতে বানিয়াপুকুর গ্রামের পাশে নিজ পুকুর পাড়ে মাছ পাহারা দিচ্ছিলেন। এসময় গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আলাল, আচেল উদ্দীনের ছেলে রবিউল ও মোজাফের ছেলে আজাম্মেল ওই জুবায়ের হোসেনকে বেধড়ক মারপিট করে। এতে জুবায়ের হোসেনের দুই পা, হাত ও পিঠে জখম হয়। পরে তারা জুবায়েরকে প্রাইমারি স্কুলের একটি কক্ষে আটক রাখে। গত মঙ্গলবার সকালে সালিশ বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। সালিশে জুবায়েরকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ৩ শ টাকা মূল্যের নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নেওয়া হয়। সেই সাথে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। মারাত্মক আহত জুবায়েরকে তার পরিবারের লোকজন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

বানিয়াপুকুর গ্রামের প্রধান মোড়ল শরিয়ত জানান, গ্রামের লোকজন জুবায়েরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে বিচার সালিশ বসিয়েছে তাই সামাজিকভাবে তার বিচার করা হয়েছে। গ্রাম্য বিচারে আদায়কৃত টাকা কী কাজে ব্যবহার করা হবে জানতে চাইলে তিনি সামাজিক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি। সালিশে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

ষোলটাকা গ্রামের সাবেক মেম্বার ময়নাল হক জানান, তিনিসহ ষোলটাকা গ্রামের লোকজন জুবায়েরকে নিতে এসেছিল। কিন্তু বানিয়াপুকুর গ্রামের সমাজপতিরা জুবায়েরকে না দিয়ে জরিমানা করেছে এবং মুচলেকা লিখে নেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকার পরও কীভাবে সালিশের নামে প্রহসন করে, তা বোধগম্য নয়। সমাজপতিরা যে মোটা টাকা জরিমানা করেছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুবায়ের বাদী হয়ে ৮ জনকে নামীয় ও আরো ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে গাংনী থানায় মামলা করে। পুলিশ মোড়ল শরিয়তসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। অন্যান্য দুজন আসামি হচ্ছেন- শহিদুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম বিদ্যুত।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, জুবায়ের হোসেনের দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ইতঃমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদেরকে গতকাল বুধবার দুপুরে মেহেরপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে গ্রাম্য সালিশে যুবককে এক লাখ জরিমানা

আপলোড টাইম : ১১:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: মেহেরপুরের গাংনীর বানিয়াপুকুর গ্রামে জুবায়ের হোসেন (৪০) নামের একজনকে বেদম মারপিট করে সালিশ বিচারে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সেই সাথে ৩ শ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় ওই গ্রামের এক মোড়লসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। জুবায়ের হোসেনের বাড়ি ষোলটাকা গ্রামে। তার পিতার নাম আয়ুব হোসেন।
জুবায়ের হোসেন জানান, তিনি গত সোমবার রাতে বানিয়াপুকুর গ্রামের পাশে নিজ পুকুর পাড়ে মাছ পাহারা দিচ্ছিলেন। এসময় গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আলাল, আচেল উদ্দীনের ছেলে রবিউল ও মোজাফের ছেলে আজাম্মেল ওই জুবায়ের হোসেনকে বেধড়ক মারপিট করে। এতে জুবায়ের হোসেনের দুই পা, হাত ও পিঠে জখম হয়। পরে তারা জুবায়েরকে প্রাইমারি স্কুলের একটি কক্ষে আটক রাখে। গত মঙ্গলবার সকালে সালিশ বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। সালিশে জুবায়েরকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ৩ শ টাকা মূল্যের নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নেওয়া হয়। সেই সাথে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। মারাত্মক আহত জুবায়েরকে তার পরিবারের লোকজন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

বানিয়াপুকুর গ্রামের প্রধান মোড়ল শরিয়ত জানান, গ্রামের লোকজন জুবায়েরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে বিচার সালিশ বসিয়েছে তাই সামাজিকভাবে তার বিচার করা হয়েছে। গ্রাম্য বিচারে আদায়কৃত টাকা কী কাজে ব্যবহার করা হবে জানতে চাইলে তিনি সামাজিক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি। সালিশে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

ষোলটাকা গ্রামের সাবেক মেম্বার ময়নাল হক জানান, তিনিসহ ষোলটাকা গ্রামের লোকজন জুবায়েরকে নিতে এসেছিল। কিন্তু বানিয়াপুকুর গ্রামের সমাজপতিরা জুবায়েরকে না দিয়ে জরিমানা করেছে এবং মুচলেকা লিখে নেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকার পরও কীভাবে সালিশের নামে প্রহসন করে, তা বোধগম্য নয়। সমাজপতিরা যে মোটা টাকা জরিমানা করেছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুবায়ের বাদী হয়ে ৮ জনকে নামীয় ও আরো ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে গাংনী থানায় মামলা করে। পুলিশ মোড়ল শরিয়তসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। অন্যান্য দুজন আসামি হচ্ছেন- শহিদুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম বিদ্যুত।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, জুবায়ের হোসেনের দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ইতঃমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদেরকে গতকাল বুধবার দুপুরে মেহেরপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।