ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণকাণ্ডের বিচার করতে গিয়ে পাল্টা ধর্ষণের হুমকি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪৫:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: ধর্ষণকাণ্ডের বিচার করতে গিয়ে ধর্ষকের স্ত্রী, ভাবি, বোন ও মেয়েকে পাল্টা ধর্ষণের হুমকি দিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যান। গতকাল মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের এক মিনিট তিন সেকেন্ডের ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ঘটনাটি ঘটেছে কালীগঞ্জ উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামে। এই গ্রামের এক নারী ধর্ষণের শিকার হলে স্থানীয় সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদুর কাছে বিচার দাবি করেন। চেয়ারম্যান ওই নারীকে থানা পুলিশ বা আদালতে যাওয়ার পরামর্শ না দিয়ে ধর্ষণের মতো গুরুদণ্ডের বিচার করতে নিজেই শালিস ডাকেন। ওই শালিস বৈঠকে চেয়ারম্যান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মণ্টু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিখিল দত্তসহ অন্যরা।

ওই নারীর অভিযোগ, ছোট ভাটপাড়া গ্রামের ঝড়ু শেখের ছেলে নায়েব আলীর বাড়িতে তার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ কৃষি কাজ করে আসছিল। সেই সুবাদে নায়েব আলী বিভিন্ন সময় তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। গত ৭ সেপ্টেম্বর তার স্বামী গ্রাম পাহারার ডিউটিতে থাকায় রাত ১২টার দিকে লম্পট নায়েব আলী ওই নারীকে ধর্ষণ করে। এই ধর্ষণের বিচার চেয়ে ওই নারী ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত আবেদন করলে গত শনিবার বিকেলে চেয়ারম্যান ধর্ষক ও ভিকটিমের পরিবারদের শালিস বৈঠকে ডাকেন, কিন্তু ধর্ষক নায়েব আলীর পক্ষে কেউ আসেনি। তখণ ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, “এই ধর্ষণের ব্যাপারে যদি নায়েব আলীরা এখানে না আসে, নায়েব আলীর মা বাদে। নায়েব আলীর বউ, নায়েব আলীর ভাবি, নায়েব আলীর বোন, নায়েব আলীর মেয়ে এদেরকেও কিন্তু ধরে প্রতিপক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে।”

বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় তিনি ওই গ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় শালিস করেন। ধর্ষণের শিকার নারী অভিযোগ দেওয়ায় তিনি শালিস করতে গিয়েছিলেন। ধর্ষিত ওই নারী এখন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আছে। ভিডিও বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি আসলে শাসন করার জন্য এভাবে বলেছেন। ধর্ষণের বিচার তিনি করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিণ্টু বলেন, একজন চেয়ারম্যানের ধর্ষণের শালিস বা বিচার করার এখতিয়ার নেই। তিনি যদি করেন, তবে আদালত তাকে তলব করতে পারে।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম মোল্ল্যা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জানান, ধর্ষণের বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। তাছাড়া ধর্ষণের বিচার গ্রাম্য কোনো আদালতে হওয়ার বিধান নেই। উল্লেখ্য, গত ইউপি নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা ভোটে ওহিদুজ্জামান ওদু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিছুদিন আগে তিনি লোকজন দিয়ে টিসিবির পণ্য রাতের আঁধারে সরাতে গিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ধর্ষণকাণ্ডের বিচার করতে গিয়ে পাল্টা ধর্ষণের হুমকি!

আপলোড টাইম : ০৭:৪৫:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: ধর্ষণকাণ্ডের বিচার করতে গিয়ে ধর্ষকের স্ত্রী, ভাবি, বোন ও মেয়েকে পাল্টা ধর্ষণের হুমকি দিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যান। গতকাল মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের এক মিনিট তিন সেকেন্ডের ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ঘটনাটি ঘটেছে কালীগঞ্জ উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামে। এই গ্রামের এক নারী ধর্ষণের শিকার হলে স্থানীয় সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদুর কাছে বিচার দাবি করেন। চেয়ারম্যান ওই নারীকে থানা পুলিশ বা আদালতে যাওয়ার পরামর্শ না দিয়ে ধর্ষণের মতো গুরুদণ্ডের বিচার করতে নিজেই শালিস ডাকেন। ওই শালিস বৈঠকে চেয়ারম্যান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মণ্টু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিখিল দত্তসহ অন্যরা।

ওই নারীর অভিযোগ, ছোট ভাটপাড়া গ্রামের ঝড়ু শেখের ছেলে নায়েব আলীর বাড়িতে তার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ কৃষি কাজ করে আসছিল। সেই সুবাদে নায়েব আলী বিভিন্ন সময় তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। গত ৭ সেপ্টেম্বর তার স্বামী গ্রাম পাহারার ডিউটিতে থাকায় রাত ১২টার দিকে লম্পট নায়েব আলী ওই নারীকে ধর্ষণ করে। এই ধর্ষণের বিচার চেয়ে ওই নারী ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত আবেদন করলে গত শনিবার বিকেলে চেয়ারম্যান ধর্ষক ও ভিকটিমের পরিবারদের শালিস বৈঠকে ডাকেন, কিন্তু ধর্ষক নায়েব আলীর পক্ষে কেউ আসেনি। তখণ ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, “এই ধর্ষণের ব্যাপারে যদি নায়েব আলীরা এখানে না আসে, নায়েব আলীর মা বাদে। নায়েব আলীর বউ, নায়েব আলীর ভাবি, নায়েব আলীর বোন, নায়েব আলীর মেয়ে এদেরকেও কিন্তু ধরে প্রতিপক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে।”

বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় তিনি ওই গ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় শালিস করেন। ধর্ষণের শিকার নারী অভিযোগ দেওয়ায় তিনি শালিস করতে গিয়েছিলেন। ধর্ষিত ওই নারী এখন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আছে। ভিডিও বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি আসলে শাসন করার জন্য এভাবে বলেছেন। ধর্ষণের বিচার তিনি করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিণ্টু বলেন, একজন চেয়ারম্যানের ধর্ষণের শালিস বা বিচার করার এখতিয়ার নেই। তিনি যদি করেন, তবে আদালত তাকে তলব করতে পারে।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম মোল্ল্যা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জানান, ধর্ষণের বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। তাছাড়া ধর্ষণের বিচার গ্রাম্য কোনো আদালতে হওয়ার বিধান নেই। উল্লেখ্য, গত ইউপি নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা ভোটে ওহিদুজ্জামান ওদু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিছুদিন আগে তিনি লোকজন দিয়ে টিসিবির পণ্য রাতের আঁধারে সরাতে গিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন।