ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাভজনক হওয়ায় ওল চাষে ঝুঁকেছেন মেহেরপুরের কৃষকরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৫২:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় দেশীয় জাতের ওল চাষে ঝুঁকেছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় সকল গ্রামেই ওল চাষ চোখে পড়ার মতো। জেলার আমঝুপি, মাইলমারী, কাজীপুর, হাড়াভাঙ্গা, হেমায়েতপুর, চেংগাড়া, জোড়পুকুরিয়া, করমদী, সহড়াতলা, নওপাড়া, সাহারবাটী, শ্যামপুর, নওদাপাড়া, বেতবাড়ীয়া, সোনাপুর, বারাদী, কেদারগঞ্জ, ভোমরদহ, রাজনগর, আজান, মনোহরপুর, হরিরামপুর, আমদহ, মহাজনপুর, নূরপুরসহ প্রায় সকল গ্রামের চাষিরা ওল চাষ করছেন। অধিকাংশ জমির কোনায় কেউ ২ কাঠা কেউ বা ৫ কাঠা জমিতে ওল চাষ করেছেন। এমনই একজন সফল ওল চাষির সাথে কথা হয়েছে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আমঝুপি মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর পাশে চায়ের দোকানী মফিজের সাথে। যিনি পতিত বেলে দো-আঁশ মাটিতে ওল চাষ করে সফল হয়েছেন।

ওল চাষি মফিজ জানান, গত ৪ বছর ধরে ওল চাষ করছি। নিজ বাড়ির আশপাশসহ আশপাশের গ্রামে বিভিন্ন বাড়ি থেকে দেশী জাতের ওল সংগ্রহ করেন। বৈশাখ মাসে ওলের বীজ রোপন করে প্রায় ১১ মাস পর প্রতিটি ওল গাছ থেকে ৪-৫ কেজি ওল পাওয়া যায় এবং প্রতি ১ বিঘা জমি থেকে প্রায় ১’শ মন ওল উৎপাদন হয়। যা বিক্রি করে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, ১০ কাঠা জমিতে দেশী জাতের লেবু বাগানের মধ্যেই ওল চাষ করা হয়েছে। চাষের শুরুতেই ৩ হাজর টাকার সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। তারপর আর সার, কীটনাশক ও সেচ কাজ ছাড়াই ভালো ফলন আশা করছেন। তিনার এ সাফল্য দেখে আমঝুপি গ্রামের আরও দুইজন চাষি আমের বাগানের মধ্যে ওল চাষ করছেন।

আরেক ওল চাষি মাইলমারী গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, আম বাগানের মধ্যে প্রায় ১০ কাঠা জমিতে ওল চাষ করেছি। বিঘা প্রতি জমিতে ওল চাষে সব মিলিয়ে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। বছর শেষে জমি থেকে প্রায় ১শ ২০ মন ওল তোলা সম্ভব। যা বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হতে পারে। প্রতি কাঠা জমিতে কমপক্ষে ৫ মন ওল উৎপাদন হয় বলেও তিনি জানান। পাইকারি বাজারে বছর শেষে প্রতি মন ওল ১২-১৬শ টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি ওল ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করে।

একই গ্রামের আব্দুল হান্নান বিশ্বাস জানান, আমার স্ত্রী বাড়ির আনাচে-কানাচে ওল লাগিয়ে থাকে। ইতিপূর্বে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সময়ের চাহিদায় তা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির সামনে ৫ কাঠা জমিতে ওল চাষ করা হয়েছে। সার, কীটনাশক ও সেচের তেমন একটা প্রয়োজন পড়েনা। বছর শেষে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই প্রতি কেজি ওল ৩৫-৪০ টাকায় কিনে নিয়ে যায়।
সোনাপুর গ্রামের শাহাবুদ্দীন জানান, আগের দিনে মায়েরা বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়ে ওল চাষ করে নিজেদের তরকারির চাহিদা মিটাতো। এখন সোনার দামে বিক্রি হচ্ছে ওল। বাজারে প্রতি কেজি ওল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। আগামীতে বানিজ্যিকভাবে ওল চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমান সুমন জানান, বাড়ির আশেপাশে কোনোরকম যত্ন ছাড়াই যে ওল উৎপাদন হয় তাতে পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মিটিয়েও আত্ত্বীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠানো হয়ে থাকে। আগামীতে অন্যান্য ফসল কমিয়ে ওল চাষে নজর দেবো। তবে বিঘা প্রতি জমিতে ওল চাষে যে বীজ প্রয়োজন হবে তা সংগ্রহ করা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করলে আরও সহজতর হবে।

গাঁড়াডোব গ্রামের শিক্ষিকা সোনিয়া সুলতানা জানান, দেশি জাতের ওল চাষে প্রতি গাছ থেকে ৬/৭ কেজি ওল পাওয়া সম্ভব। বাড়ির সামনে এমন ৫ কাঠা জমিতে ওল থাকলে অর্থনৈতিক ভাবে সাপোর্ট পাওয়া যায়। যে কারণে কৃষি জমিতে ওল চাষের পাশাপাশি বাড়ির আশেপাশেও ওল চাষে জোর দিয়েছেন মা-বোনেরা। ওল চাষে কৃষি অফিস থেকে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করা হলে সারাদেশের মা-বোনেরা ওল চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

লাভজনক হওয়ায় ওল চাষে ঝুঁকেছেন মেহেরপুরের কৃষকরা

আপলোড টাইম : ০৫:৫২:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় দেশীয় জাতের ওল চাষে ঝুঁকেছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় সকল গ্রামেই ওল চাষ চোখে পড়ার মতো। জেলার আমঝুপি, মাইলমারী, কাজীপুর, হাড়াভাঙ্গা, হেমায়েতপুর, চেংগাড়া, জোড়পুকুরিয়া, করমদী, সহড়াতলা, নওপাড়া, সাহারবাটী, শ্যামপুর, নওদাপাড়া, বেতবাড়ীয়া, সোনাপুর, বারাদী, কেদারগঞ্জ, ভোমরদহ, রাজনগর, আজান, মনোহরপুর, হরিরামপুর, আমদহ, মহাজনপুর, নূরপুরসহ প্রায় সকল গ্রামের চাষিরা ওল চাষ করছেন। অধিকাংশ জমির কোনায় কেউ ২ কাঠা কেউ বা ৫ কাঠা জমিতে ওল চাষ করেছেন। এমনই একজন সফল ওল চাষির সাথে কথা হয়েছে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আমঝুপি মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর পাশে চায়ের দোকানী মফিজের সাথে। যিনি পতিত বেলে দো-আঁশ মাটিতে ওল চাষ করে সফল হয়েছেন।

ওল চাষি মফিজ জানান, গত ৪ বছর ধরে ওল চাষ করছি। নিজ বাড়ির আশপাশসহ আশপাশের গ্রামে বিভিন্ন বাড়ি থেকে দেশী জাতের ওল সংগ্রহ করেন। বৈশাখ মাসে ওলের বীজ রোপন করে প্রায় ১১ মাস পর প্রতিটি ওল গাছ থেকে ৪-৫ কেজি ওল পাওয়া যায় এবং প্রতি ১ বিঘা জমি থেকে প্রায় ১’শ মন ওল উৎপাদন হয়। যা বিক্রি করে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, ১০ কাঠা জমিতে দেশী জাতের লেবু বাগানের মধ্যেই ওল চাষ করা হয়েছে। চাষের শুরুতেই ৩ হাজর টাকার সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। তারপর আর সার, কীটনাশক ও সেচ কাজ ছাড়াই ভালো ফলন আশা করছেন। তিনার এ সাফল্য দেখে আমঝুপি গ্রামের আরও দুইজন চাষি আমের বাগানের মধ্যে ওল চাষ করছেন।

আরেক ওল চাষি মাইলমারী গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, আম বাগানের মধ্যে প্রায় ১০ কাঠা জমিতে ওল চাষ করেছি। বিঘা প্রতি জমিতে ওল চাষে সব মিলিয়ে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। বছর শেষে জমি থেকে প্রায় ১শ ২০ মন ওল তোলা সম্ভব। যা বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হতে পারে। প্রতি কাঠা জমিতে কমপক্ষে ৫ মন ওল উৎপাদন হয় বলেও তিনি জানান। পাইকারি বাজারে বছর শেষে প্রতি মন ওল ১২-১৬শ টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি ওল ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করে।

একই গ্রামের আব্দুল হান্নান বিশ্বাস জানান, আমার স্ত্রী বাড়ির আনাচে-কানাচে ওল লাগিয়ে থাকে। ইতিপূর্বে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সময়ের চাহিদায় তা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির সামনে ৫ কাঠা জমিতে ওল চাষ করা হয়েছে। সার, কীটনাশক ও সেচের তেমন একটা প্রয়োজন পড়েনা। বছর শেষে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই প্রতি কেজি ওল ৩৫-৪০ টাকায় কিনে নিয়ে যায়।
সোনাপুর গ্রামের শাহাবুদ্দীন জানান, আগের দিনে মায়েরা বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়ে ওল চাষ করে নিজেদের তরকারির চাহিদা মিটাতো। এখন সোনার দামে বিক্রি হচ্ছে ওল। বাজারে প্রতি কেজি ওল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। আগামীতে বানিজ্যিকভাবে ওল চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমান সুমন জানান, বাড়ির আশেপাশে কোনোরকম যত্ন ছাড়াই যে ওল উৎপাদন হয় তাতে পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মিটিয়েও আত্ত্বীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠানো হয়ে থাকে। আগামীতে অন্যান্য ফসল কমিয়ে ওল চাষে নজর দেবো। তবে বিঘা প্রতি জমিতে ওল চাষে যে বীজ প্রয়োজন হবে তা সংগ্রহ করা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করলে আরও সহজতর হবে।

গাঁড়াডোব গ্রামের শিক্ষিকা সোনিয়া সুলতানা জানান, দেশি জাতের ওল চাষে প্রতি গাছ থেকে ৬/৭ কেজি ওল পাওয়া সম্ভব। বাড়ির সামনে এমন ৫ কাঠা জমিতে ওল থাকলে অর্থনৈতিক ভাবে সাপোর্ট পাওয়া যায়। যে কারণে কৃষি জমিতে ওল চাষের পাশাপাশি বাড়ির আশেপাশেও ওল চাষে জোর দিয়েছেন মা-বোনেরা। ওল চাষে কৃষি অফিস থেকে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করা হলে সারাদেশের মা-বোনেরা ওল চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে।