ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, সরবরাহ কম দেখিয়ে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩০:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
মেহেরপুরে চলতি আমন মৌসুমে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। পটাশ সারের সরকার নির্ধারিত দাম ১৫ টাকা কেজি হলেও কিনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। কৃষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে তাদের দ্বিগুণেরও বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের উজলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিলেই পটাশ সার মিলছে। আগে ১৭ টাকা দিলে এক কেজি পটাশ সার পাওয়া যেত। বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দিয়ে এক কেজি পটাশ কিনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শুধু পটাশ নয় বাজারে সব সারেরই সংকট। বেঙ্গল মিশ্র সার আগে ১৮ টাকা দিলে এক কেজি পাওয়া যেত। বর্তমানে এ সার ২৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সালফার আগে এক কেজি ১৮ টাকায় পাওয়া যেত। বর্তমানে এই সালফার প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ৩২ টাকায়। কোনো সারের বাজারমূল্য ঠিক নেই। যে যেমন পারছে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে।
সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক হাসেম আলী বলেন, তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছেন। পটাশ সার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা দামে পাওয়া যাচ্ছে। সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আরেক কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, গত বছর নিজের চার বিঘা আর বন্ধক নিয়ে মোট আট বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছিলাম। এ বছর সারের সংকটসহ দাম অনেক বেশি। যার কারণে সবজি আবাদ পাঁচ বিঘা কমিয়ে তিন বিঘা জমিতে করছি। আমরা জমির ফসল বিক্রি করে সারের পাওনা পরিশোধ করি। কিন্তু এ বছর একদিকে সারের সংকট অপরদিকে সারের উচ্চমূল্য, যে কারণে আবাদ করে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না।
গাংনী উপজেলার শাহারবাটি গ্রামের কৃষক রওশন আলী বলেন, তীব্র খরা শেষে গত দুইদিন বৃষ্টি হয়েছে। এসময় জমিতে সার প্রয়োজন। কিন্তু পটাশ সারের দেখা মিলছে না। সার কিনতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না, বলে দাম বেশি। ৭৫০ টাকার পটাশ ১৮৫০ টাকা। সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, এবছর সারের দাম অনেক বেশি। যে পরিমাণ সার জমিতে দেওয়া প্রয়োজন দামের কারণে দিতে পারছি না। যে কারণে ফসলের ফলন বিপর্যয় ঘটবে। পিরোজপুর গ্রামের কৃষক আছিরুল ইসলাম বলেন, পটাশ সবচেয়ে বেশি দরকার হয় সবজি চাষের জন্য। আমাদের এদিকে বারো মাস বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়। তাই পটাশের চাহিদা বেশি। কিন্তু বাজারে কিনতে গেলে বলছে পটাশ নেই। পাওয়া গেলেও সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে এমওপি বা পটাশ সারের সংকট তৈরি হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সার এলেই এ সংকট কেটে যাবে। পটাশ সারের ঘাটতির কথা জানিয়ে গাংনী উপজেলার বামন্দীর সার ব্যবসায়ী আকিব হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে পটাশের জন্য টিটি করেছি। এখন পর্যন্ত সার আসেনি। পটাশের জন্য এই মাসে আবারও ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাবো। সময়মতো সার আসলে এ সংকট থাকবে না। পাশাপাশি কিছু কৃষক বাকিতে সার কেনেন। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছে।
গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বিসিআইসি ডিলার শওকত এন্টারপ্রাইজের মালিক শওকত হোসেন বলেন, আমাদের কাছে সারের কোনো সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এ অবস্থা তৈরি করেছে। আমার কাছে পর্যাপ্ত সারের মজুত আছে। যারা এ সংকটের জন্য দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি তার। সারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রামের কিছু ব্যবসায়ী সার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছে। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সামসুল আলম বলেন, এরই মধ্যে জেলায় সরকারনির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির দায়ে একাধিক ডিলার ও ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন। এখনো অভিযান চলমান। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি যেসব ডিলার পটাশ সারের জন্য টিটি করেছেন, সেসব সার আসতে শুরু করেছে। বাজারে সারের কোনো সংকট নেই। সূত্র-জাগোনিউজ

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুরে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, সরবরাহ কম দেখিয়ে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি

আপলোড টাইম : ১০:৩০:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন:
মেহেরপুরে চলতি আমন মৌসুমে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। পটাশ সারের সরকার নির্ধারিত দাম ১৫ টাকা কেজি হলেও কিনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। কৃষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে তাদের দ্বিগুণেরও বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের উজলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিলেই পটাশ সার মিলছে। আগে ১৭ টাকা দিলে এক কেজি পটাশ সার পাওয়া যেত। বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দিয়ে এক কেজি পটাশ কিনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শুধু পটাশ নয় বাজারে সব সারেরই সংকট। বেঙ্গল মিশ্র সার আগে ১৮ টাকা দিলে এক কেজি পাওয়া যেত। বর্তমানে এ সার ২৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সালফার আগে এক কেজি ১৮ টাকায় পাওয়া যেত। বর্তমানে এই সালফার প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ৩২ টাকায়। কোনো সারের বাজারমূল্য ঠিক নেই। যে যেমন পারছে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে।
সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক হাসেম আলী বলেন, তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছেন। পটাশ সার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা দামে পাওয়া যাচ্ছে। সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আরেক কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, গত বছর নিজের চার বিঘা আর বন্ধক নিয়ে মোট আট বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছিলাম। এ বছর সারের সংকটসহ দাম অনেক বেশি। যার কারণে সবজি আবাদ পাঁচ বিঘা কমিয়ে তিন বিঘা জমিতে করছি। আমরা জমির ফসল বিক্রি করে সারের পাওনা পরিশোধ করি। কিন্তু এ বছর একদিকে সারের সংকট অপরদিকে সারের উচ্চমূল্য, যে কারণে আবাদ করে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না।
গাংনী উপজেলার শাহারবাটি গ্রামের কৃষক রওশন আলী বলেন, তীব্র খরা শেষে গত দুইদিন বৃষ্টি হয়েছে। এসময় জমিতে সার প্রয়োজন। কিন্তু পটাশ সারের দেখা মিলছে না। সার কিনতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না, বলে দাম বেশি। ৭৫০ টাকার পটাশ ১৮৫০ টাকা। সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, এবছর সারের দাম অনেক বেশি। যে পরিমাণ সার জমিতে দেওয়া প্রয়োজন দামের কারণে দিতে পারছি না। যে কারণে ফসলের ফলন বিপর্যয় ঘটবে। পিরোজপুর গ্রামের কৃষক আছিরুল ইসলাম বলেন, পটাশ সবচেয়ে বেশি দরকার হয় সবজি চাষের জন্য। আমাদের এদিকে বারো মাস বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়। তাই পটাশের চাহিদা বেশি। কিন্তু বাজারে কিনতে গেলে বলছে পটাশ নেই। পাওয়া গেলেও সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে এমওপি বা পটাশ সারের সংকট তৈরি হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সার এলেই এ সংকট কেটে যাবে। পটাশ সারের ঘাটতির কথা জানিয়ে গাংনী উপজেলার বামন্দীর সার ব্যবসায়ী আকিব হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে পটাশের জন্য টিটি করেছি। এখন পর্যন্ত সার আসেনি। পটাশের জন্য এই মাসে আবারও ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাবো। সময়মতো সার আসলে এ সংকট থাকবে না। পাশাপাশি কিছু কৃষক বাকিতে সার কেনেন। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছে।
গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বিসিআইসি ডিলার শওকত এন্টারপ্রাইজের মালিক শওকত হোসেন বলেন, আমাদের কাছে সারের কোনো সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এ অবস্থা তৈরি করেছে। আমার কাছে পর্যাপ্ত সারের মজুত আছে। যারা এ সংকটের জন্য দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি তার। সারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রামের কিছু ব্যবসায়ী সার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছে। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সামসুল আলম বলেন, এরই মধ্যে জেলায় সরকারনির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির দায়ে একাধিক ডিলার ও ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন। এখনো অভিযান চলমান। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি যেসব ডিলার পটাশ সারের জন্য টিটি করেছেন, সেসব সার আসতে শুরু করেছে। বাজারে সারের কোনো সংকট নেই। সূত্র-জাগোনিউজ