ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তীব্র খরায় পুড়ছে মাঠের পর মাঠ ধানখেত, উৎপাদন ব্যহত হওয়ার শঙ্কা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: আষাঢ় গেল বৃষ্টিহীনতায়। চলে গেছে শ্রাবণও। বৃষ্টির দেখা মেলেনি ভাদ্র মাসের অর্ধেকেও। তীব্র খরা আর ভ্যাপসা গরমে মানুষের ত্রাহি দশা। তপ্ত রোদে ফেটে চৌচির হচ্ছে আমনের খেত। বৃষ্টির দেখা মেলেনি বর্ষা ঋতুর আড়াই মাসেও। মাঠের পর মাঠজুড়ে চলছে সেচযন্ত্র। তারপরও কৃষকের স্বস্তি নেই। সেচ দেওয়া পানিও জমিতে বেশিক্ষণ থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

গতকাল শুক্রবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিচু বা বিল এলাকার জমিতেও পানি নেই। পানির অভাবে উচু জমির ধান খেত ফেটে চৌচির। ধান গাছের গোড়ায় পানি না থাকায় পোকা-মাকড়ের উপদ্রুপ বেড়ে যাচ্ছে। সেচ আর কীটনাশক খরচ মেটাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদ হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার বাকি জমিতে পাট থাকার কারণে আবাদে দেরি হচ্ছে বলে জানায় জেলা কৃষি বিভাগ।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে ফসলের জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে অনেক জমির ধান মরে যাচ্ছে। অনেক কৃষক ধান বাঁচাতে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। আর প্রতিবার সেচ দিতে বিঘাপ্রতি গুনতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। উদয়পুর গ্রামের কৃষক আকাশ বলেন, পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির। ধান লাগানো প্রায় এক মাস হয়ে গেছে, এখনো কোনো উন্নতি নেই। আর জমিতে দেওয়ার জন্য সার তো পাওয়াই যাচ্ছে না। বাজারে সার আনতে গেলে বলছে সার নেই, আবার বেশি টাকা দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সাত বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। এখন সব ধান মরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ধানের জমি চাষ দিয়ে অন্য আবাদ করি।

হলিধানীর কৃষক আলম বলেন, ধান লাগানোর পরে পানির অভাবে সার দিতে পারিনি। ধানের জমি সব ফেটে গেছে। আর বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে ধানের আবাদ করলে তেমন লাভ হবে না। তারপরও বাধ্য হয়ে আমরা পানি সেচ দিচ্ছি। বংকিরা গ্রামের কৃষক বাবুল বিশ^াস জানান, এবছর উৎপাদন খরচ বেশি হবে। ধান চাষ করে দেনা দিতে দিতে কৃষক ফতুর হবে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল করিম বলেন, ঝিনাইদহে আমন ধান রোপণ প্রায় শেষ। এবছর আবহাওয়ার পরিবর্তন দৃশ্যমান। আষাঢ়-শ্রাবণ চলে গিয়ে ভাদ্র মাস চলছে, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। তিনি বলেন, কৃষকদের জমি ফেটে যাচ্ছে। তারা মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছে। সেচের সঙ্গে বৃষ্টির খুব প্রয়োজন। বৃষ্টি পেলে ধানের আবাদ ভালো হবে। তারপরও সেচের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব কীভাবে ধান উৎপাদন এগিয়ে নেওয়া যায়, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

তীব্র খরায় পুড়ছে মাঠের পর মাঠ ধানখেত, উৎপাদন ব্যহত হওয়ার শঙ্কা

আপলোড টাইম : ০৭:৫৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: আষাঢ় গেল বৃষ্টিহীনতায়। চলে গেছে শ্রাবণও। বৃষ্টির দেখা মেলেনি ভাদ্র মাসের অর্ধেকেও। তীব্র খরা আর ভ্যাপসা গরমে মানুষের ত্রাহি দশা। তপ্ত রোদে ফেটে চৌচির হচ্ছে আমনের খেত। বৃষ্টির দেখা মেলেনি বর্ষা ঋতুর আড়াই মাসেও। মাঠের পর মাঠজুড়ে চলছে সেচযন্ত্র। তারপরও কৃষকের স্বস্তি নেই। সেচ দেওয়া পানিও জমিতে বেশিক্ষণ থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

গতকাল শুক্রবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিচু বা বিল এলাকার জমিতেও পানি নেই। পানির অভাবে উচু জমির ধান খেত ফেটে চৌচির। ধান গাছের গোড়ায় পানি না থাকায় পোকা-মাকড়ের উপদ্রুপ বেড়ে যাচ্ছে। সেচ আর কীটনাশক খরচ মেটাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদ হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার বাকি জমিতে পাট থাকার কারণে আবাদে দেরি হচ্ছে বলে জানায় জেলা কৃষি বিভাগ।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে ফসলের জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে অনেক জমির ধান মরে যাচ্ছে। অনেক কৃষক ধান বাঁচাতে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। আর প্রতিবার সেচ দিতে বিঘাপ্রতি গুনতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। উদয়পুর গ্রামের কৃষক আকাশ বলেন, পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির। ধান লাগানো প্রায় এক মাস হয়ে গেছে, এখনো কোনো উন্নতি নেই। আর জমিতে দেওয়ার জন্য সার তো পাওয়াই যাচ্ছে না। বাজারে সার আনতে গেলে বলছে সার নেই, আবার বেশি টাকা দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সাত বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। এখন সব ধান মরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ধানের জমি চাষ দিয়ে অন্য আবাদ করি।

হলিধানীর কৃষক আলম বলেন, ধান লাগানোর পরে পানির অভাবে সার দিতে পারিনি। ধানের জমি সব ফেটে গেছে। আর বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে ধানের আবাদ করলে তেমন লাভ হবে না। তারপরও বাধ্য হয়ে আমরা পানি সেচ দিচ্ছি। বংকিরা গ্রামের কৃষক বাবুল বিশ^াস জানান, এবছর উৎপাদন খরচ বেশি হবে। ধান চাষ করে দেনা দিতে দিতে কৃষক ফতুর হবে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল করিম বলেন, ঝিনাইদহে আমন ধান রোপণ প্রায় শেষ। এবছর আবহাওয়ার পরিবর্তন দৃশ্যমান। আষাঢ়-শ্রাবণ চলে গিয়ে ভাদ্র মাস চলছে, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। তিনি বলেন, কৃষকদের জমি ফেটে যাচ্ছে। তারা মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছে। সেচের সঙ্গে বৃষ্টির খুব প্রয়োজন। বৃষ্টি পেলে ধানের আবাদ ভালো হবে। তারপরও সেচের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব কীভাবে ধান উৎপাদন এগিয়ে নেওয়া যায়, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।