ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে নবজাতককে গলাটিপে হত্যর ঘটনায় অবশেষে মামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৬:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২২
  • / ৫১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে সদ্য ভুমিষ্ঠ এক ছেলে শিশুকে গলাটিপে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই রিফাত হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছে- নবজাতকের মা নুরুন্নাহার খাতুন, নানী কমলা খাতুন ও মায়ের কথিত প্রেমিকা আলিফ আবেদীন গুঞ্জন।

ঝিনাইদহ সদর থানার (ওসি, অপারেশন) হরিদাশ রায় জানান, পিতৃত্ব নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে মা ও নানীর যৌথ ষড়যন্ত্রে শিশুটিকে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে। তিনি বলেন, গত সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে যখন প্রসব বেদনা নিয়ে নুরুন্নহার হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেন। অভিভাবক হিসেবে মা বলে এক নাম মেয়ে বলে আরেক নাম। এতে হাসপাতালের নার্সদের মাঝে সন্দেহ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে, বাঁচ্চাটি জন্ম নেওয়ার পর মা নুরুন্নাহার ও নানী কমলা খাতুন যুক্তি করে নবজাতককে হাসপাতালের একটি গলির মধ্যে নিয়ে হত্যা করে। প্রথমে শিশুটির অণ্ডকোষ টিপে ধরে গলায় গামছা জাতীয় কিছু পেঁচিয়ে হত্যা করে আবার হাসপাতাল বেডে আনা হয়। বেডে আনার পর দেখে নবজাতকের সারা শরীরে আঁচড়ের দাগ। পুরুষাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছে। গলায় দাগ। খবরটি দ্রুত হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম গতকাল বুধবার বিকেলে জানান, নার্সদের কাছ থেকে এমন নির্মম খবরটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারসহ ঘটনার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা ক্লু ও মোটিভ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। নবজাতকের মা নুরুন্নাহারের ভাষ্য, বাঁচ্চা জন্মদানের ১৫ দিন আগে কালীগঞ্জের আড়পাড়ায় তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তিনি যে গর্ভবতী ছিলেন, তা গোপন রাখা হয়। এর আগে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নে নুরুন্নাহারের বিয়ে হলে তিন বছর পর স্বামী তাকে তালাক দেয়। নুরুন্নাহার পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকার করেন এই নবজাতকের পিতা হচ্ছে ব্যাপারীপাড়ার তারেক আবদীনের ছেলে আলিফ আবেদীন গুঞ্জন। এক বছর ধরে গুঞ্জনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। গুঞ্জন সম্পর্কে তার চাচাতো ভগ্নিপতি বলে নুরুন্নাহার দাবি করেন।

নুরুন্নাহার আরও জানিয়েছেন, তাঁর পিতা হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হামিরহাটি গ্রামের আকতার হোসেন মৃত্যুবরণ করলে তার মা কমেলা খাতুনের সঙ্গে নানা বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল গ্রামে চলে আসেন। কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়ায় নুরুন্নাহারের বিয়ে হলে তারা শহরে নদীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। এদিকে, মামলা রেকের্ড হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহলে রানা জানান, নবজাতক হত্যার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামিরা সবাই কারাগারে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে নবজাতককে গলাটিপে হত্যর ঘটনায় অবশেষে মামলা

আপলোড টাইম : ০৯:৪৬:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে সদ্য ভুমিষ্ঠ এক ছেলে শিশুকে গলাটিপে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই রিফাত হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছে- নবজাতকের মা নুরুন্নাহার খাতুন, নানী কমলা খাতুন ও মায়ের কথিত প্রেমিকা আলিফ আবেদীন গুঞ্জন।

ঝিনাইদহ সদর থানার (ওসি, অপারেশন) হরিদাশ রায় জানান, পিতৃত্ব নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে মা ও নানীর যৌথ ষড়যন্ত্রে শিশুটিকে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে। তিনি বলেন, গত সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে যখন প্রসব বেদনা নিয়ে নুরুন্নহার হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেন। অভিভাবক হিসেবে মা বলে এক নাম মেয়ে বলে আরেক নাম। এতে হাসপাতালের নার্সদের মাঝে সন্দেহ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে, বাঁচ্চাটি জন্ম নেওয়ার পর মা নুরুন্নাহার ও নানী কমলা খাতুন যুক্তি করে নবজাতককে হাসপাতালের একটি গলির মধ্যে নিয়ে হত্যা করে। প্রথমে শিশুটির অণ্ডকোষ টিপে ধরে গলায় গামছা জাতীয় কিছু পেঁচিয়ে হত্যা করে আবার হাসপাতাল বেডে আনা হয়। বেডে আনার পর দেখে নবজাতকের সারা শরীরে আঁচড়ের দাগ। পুরুষাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছে। গলায় দাগ। খবরটি দ্রুত হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম গতকাল বুধবার বিকেলে জানান, নার্সদের কাছ থেকে এমন নির্মম খবরটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারসহ ঘটনার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা ক্লু ও মোটিভ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। নবজাতকের মা নুরুন্নাহারের ভাষ্য, বাঁচ্চা জন্মদানের ১৫ দিন আগে কালীগঞ্জের আড়পাড়ায় তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তিনি যে গর্ভবতী ছিলেন, তা গোপন রাখা হয়। এর আগে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নে নুরুন্নাহারের বিয়ে হলে তিন বছর পর স্বামী তাকে তালাক দেয়। নুরুন্নাহার পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকার করেন এই নবজাতকের পিতা হচ্ছে ব্যাপারীপাড়ার তারেক আবদীনের ছেলে আলিফ আবেদীন গুঞ্জন। এক বছর ধরে গুঞ্জনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। গুঞ্জন সম্পর্কে তার চাচাতো ভগ্নিপতি বলে নুরুন্নাহার দাবি করেন।

নুরুন্নাহার আরও জানিয়েছেন, তাঁর পিতা হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হামিরহাটি গ্রামের আকতার হোসেন মৃত্যুবরণ করলে তার মা কমেলা খাতুনের সঙ্গে নানা বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল গ্রামে চলে আসেন। কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়ায় নুরুন্নাহারের বিয়ে হলে তারা শহরে নদীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। এদিকে, মামলা রেকের্ড হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহলে রানা জানান, নবজাতক হত্যার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামিরা সবাই কারাগারে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।