ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে অর্জিত হয়নি রোপা আমন ধানর চাষের লক্ষ্যমাত্রা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৫১:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ অগাস্ট ২০২২
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গুড়দাহ গ্রামের বড় চাষি ছমির উদ্দীন বিশ্বাস ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করে এখন হতাশ। রোপা আমন ছাড়াও মাঠে তার ১৫ বিঘা জমিতে আউস ধান রয়েছে। ভরা আষাঢ় ও শ্রাবণে বৃষ্টি না হওয়ায় খেতে টানা সেচ দিতে হচ্ছে। তারপর বেড়েছে সারের দাম। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অচল হয়ে পড়েছে পানির মোটর। এতে তার লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। একই গ্রামের জামাল উদ্দীন বিশ্বাস তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলছেন, তেলের দাম না কমালে চাষে লোকসান হবে। অর্জিত হবে না লক্ষ্যমাত্র।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মজনুর রহমান এ বছর সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। প্রতিবছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করতেন। কিন্তু এবছর তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। তার ওপর নেই বৃষ্টি। খরায় পুড়ছে ঝিনাইদহসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল। ফলে কৃষকরা ডিজেল চালিত যন্ত্রের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর এতে বাড়ছে খরচ। ফলে ঝিনাইদহে কৃষিতে বিপর্যয় ও উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষক ছমির উদ্দীন জানান, রোপা আমন বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি নেই। ফলে বিঘা প্রতি সেচ বাবদ অতিরিক্ত ১২ শ টাকা গুনতে হবে। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। হরিণাকুণ্ডুর শীতলি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ধান নিড়ানো, ধান কাটা, ধান লাগানো ও ধান মাড়াই করা সবকাজেই জোন (কামলা) লাগছে। কিন্তু জোনের দামও বেড়ে গেছে। তারপরও রয়েছে ডিজেল চালিত পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে জমি চাষ, ধান বাড়িতে আনা ও ধান মাড়াই।

রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের কৃষক সাকেদ আলী জানান, কৃষি নির্ভর এই দেশে সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে এক সময় কৃষকরা চাষ ছেড়ে দিবে। তিনি জানান, কৃষকদের এখন বড় সমস্যা হচ্ছে সেচ ও সার। এই দুটোর দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে মানুষ নিজে খাওয়ার জন্য ছাড়া বিক্রির জন্য ধান চাষ করতে আগ্রহ হারাবে।

শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের কৃষক গোলাম নবি ও আতিয়ার রহমান জানান, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমার মতো উপজেলার কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।’ অনেক কৃষক ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ঠিকমত সেচ দিতে পারছে না। যে কারণে শৈলকুপা এলাকায় রোপা আমন ও সবজি চাষে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। সাধুহাটির কৃষক বাবলুর রহমান জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেচসহ অন্যান্য খরচ দ্বিগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে এবার লোকসান গুনতে হবে। অনেক কৃষক তেলের দাম কমানো বা যারা প্রকৃত কৃষক তাদের কৃষি কার্ডের মাধ্যমে কম মূল্যে ডিজেল সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, ঝিনাইদহ জেলায় রোপা আমন এক লাখ চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গতকাল বুধবার পর্যন্ত (১০ আগস্ট) পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৫৩ হাজার ২৬২ হেক্টর। এছাড়া ২ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি আবাদ হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলায় দুই লাখ কৃষক পরিবার আছে। কৃষকরা পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় এখনো পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আমরা রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। গ্রামের কৃষকদের দাবি, সার ও তেলের দাম বাড়ার কারণে তাদের এবছর উৎপাদন মূল্য বেড়ে যাবে, সেই সাথে ক্ষতির মধ্যে পড়বে কৃষকরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে অর্জিত হয়নি রোপা আমন ধানর চাষের লক্ষ্যমাত্রা

আপলোড টাইম : ০৪:৫১:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ অগাস্ট ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গুড়দাহ গ্রামের বড় চাষি ছমির উদ্দীন বিশ্বাস ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করে এখন হতাশ। রোপা আমন ছাড়াও মাঠে তার ১৫ বিঘা জমিতে আউস ধান রয়েছে। ভরা আষাঢ় ও শ্রাবণে বৃষ্টি না হওয়ায় খেতে টানা সেচ দিতে হচ্ছে। তারপর বেড়েছে সারের দাম। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অচল হয়ে পড়েছে পানির মোটর। এতে তার লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। একই গ্রামের জামাল উদ্দীন বিশ্বাস তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলছেন, তেলের দাম না কমালে চাষে লোকসান হবে। অর্জিত হবে না লক্ষ্যমাত্র।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মজনুর রহমান এ বছর সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। প্রতিবছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করতেন। কিন্তু এবছর তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। তার ওপর নেই বৃষ্টি। খরায় পুড়ছে ঝিনাইদহসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল। ফলে কৃষকরা ডিজেল চালিত যন্ত্রের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর এতে বাড়ছে খরচ। ফলে ঝিনাইদহে কৃষিতে বিপর্যয় ও উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষক ছমির উদ্দীন জানান, রোপা আমন বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি নেই। ফলে বিঘা প্রতি সেচ বাবদ অতিরিক্ত ১২ শ টাকা গুনতে হবে। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। হরিণাকুণ্ডুর শীতলি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ধান নিড়ানো, ধান কাটা, ধান লাগানো ও ধান মাড়াই করা সবকাজেই জোন (কামলা) লাগছে। কিন্তু জোনের দামও বেড়ে গেছে। তারপরও রয়েছে ডিজেল চালিত পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে জমি চাষ, ধান বাড়িতে আনা ও ধান মাড়াই।

রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের কৃষক সাকেদ আলী জানান, কৃষি নির্ভর এই দেশে সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে এক সময় কৃষকরা চাষ ছেড়ে দিবে। তিনি জানান, কৃষকদের এখন বড় সমস্যা হচ্ছে সেচ ও সার। এই দুটোর দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে মানুষ নিজে খাওয়ার জন্য ছাড়া বিক্রির জন্য ধান চাষ করতে আগ্রহ হারাবে।

শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের কৃষক গোলাম নবি ও আতিয়ার রহমান জানান, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমার মতো উপজেলার কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।’ অনেক কৃষক ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ঠিকমত সেচ দিতে পারছে না। যে কারণে শৈলকুপা এলাকায় রোপা আমন ও সবজি চাষে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। সাধুহাটির কৃষক বাবলুর রহমান জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেচসহ অন্যান্য খরচ দ্বিগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে এবার লোকসান গুনতে হবে। অনেক কৃষক তেলের দাম কমানো বা যারা প্রকৃত কৃষক তাদের কৃষি কার্ডের মাধ্যমে কম মূল্যে ডিজেল সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, ঝিনাইদহ জেলায় রোপা আমন এক লাখ চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গতকাল বুধবার পর্যন্ত (১০ আগস্ট) পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৫৩ হাজার ২৬২ হেক্টর। এছাড়া ২ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি আবাদ হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলায় দুই লাখ কৃষক পরিবার আছে। কৃষকরা পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় এখনো পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আমরা রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। গ্রামের কৃষকদের দাবি, সার ও তেলের দাম বাড়ার কারণে তাদের এবছর উৎপাদন মূল্য বেড়ে যাবে, সেই সাথে ক্ষতির মধ্যে পড়বে কৃষকরা।