ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহ পৌরসভায় ভিজিএফ কার্ড বিতরণে ঘাপলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ জুলাই ২০২২
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ পৌরসভায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া ভিজিএফের কার্ড বিতরণ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দুস্থরা কার্ড না পাওয়ায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ আর অসন্তোষ। কার্ড বিতরণে দলীয়করণের অভিযোগ করেছে দুস্থ হতদরিদ্ররা। তাদের ভাষ্য, পাড়া-মহল্লায় যারা সরকারি দল করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা ভিজিএফ কার্ড পেয়েছেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, দুই ঈদে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৪ হাজার ৬২১টি কার্ড বিতরণ করা হয়। এলাকার কাউন্সিলরা ভোটার আইডি সংগ্রহ করে হতদরিদ্রদের তালিকা প্রস্তুত করতেন। কিন্তু এবার পৌর পরিষদ না থাকায় কার্ড বিতরণে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়, দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। পৌরসভার ৯ কর্মকর্তা ৯টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিয়ে কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত হলেও তাদের দেওয়া হয় মাত্র এক’শ করে ভিজিএফ কার্ড। বাকি কার্ডে ভাগ বসান সরকারি দলের লোকজন।

পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন- নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ (১ নম্বর ওয়ার্ড), প্রকৌশলী মুন্সি আবু জাফর (২ নম্বর ওয়ার্ড), নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন (৩ নম্বর ওয়ার্ড), প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান কাজল (৪ নম্বর ওয়ার্ড), একাউন্টস অফিসার আব্দুল মজিদ (৫ নম্বর ওয়ার্ড), বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা বদরউদ্দীন কামরান (৬ নম্বর ওয়ার্ড), প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চাঁন (৭ নম্বর ওয়ার্ড), প্রকৌশলী ওবাইদুর রহমান (৮ নম্বর ওয়ার্ড) ও প্রকৌশলী বাবুল ইসলাম (৯ নম্বর ওয়ার্ড)। এসব কর্মকর্তারা জািনয়েছেন তাদেরকে ১০০টি করে কার্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রায় ৩৬’শ কার্ড দলীয়ভাবে বিতরণ করা হয়েছে। আর এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে।

পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চান জানান, ‘আমি ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পেয়েছি। এই ওয়ার্ডে ভোটার প্রায় ৯ হাজার। প্রতি ঈদে সেখানে ৫১৪টি করে কার্ড দেওয়া হতো। কিন্তু আমাকে মাত্র এক’শটি ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি কার্ডের কোনো হিসাব আমি জানি না।’

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভা থেকে নিযুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মাত্র এক’শ করে ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ৯’শ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৩ হাজার ৭১৪টি কার্ডের হিসাব কেউ বলতে পারেনি। সবার একই কথা ‘ওরা’ নিয়ে গেছে।

ঝিনাইদহ পৌরসভার অ্যাকাউন্টস অফিসার আব্দুল মজিদ ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বে আছেন। তিনি জানান, ‘আমাকে ৫১৪টি কার্ডের হিসাবে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। কার্ড কে কোথায় দিচ্ছে আমি বলতে পারব না।’ ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ জানান, ‘আমাকে মাত্র একশটি কার্ড দেওয়া হয়েছে, যা আমি ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিতরণ করেছি। বাকি কার্ডের হিসাব আমি জানি না।’ তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিকভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন জানান, পৌরসভার উপদেষ্টা স্থানীয় এমপি মহোদয়। তিনি তো কিছু কার্ড নিতেই পারেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরবকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসক ইয়ারুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহ পৌরসভায় ভিজিএফ কার্ড বিতরণে ঘাপলা

আপলোড টাইম : ০৮:৩৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ জুলাই ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ পৌরসভায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া ভিজিএফের কার্ড বিতরণ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দুস্থরা কার্ড না পাওয়ায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ আর অসন্তোষ। কার্ড বিতরণে দলীয়করণের অভিযোগ করেছে দুস্থ হতদরিদ্ররা। তাদের ভাষ্য, পাড়া-মহল্লায় যারা সরকারি দল করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা ভিজিএফ কার্ড পেয়েছেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, দুই ঈদে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৪ হাজার ৬২১টি কার্ড বিতরণ করা হয়। এলাকার কাউন্সিলরা ভোটার আইডি সংগ্রহ করে হতদরিদ্রদের তালিকা প্রস্তুত করতেন। কিন্তু এবার পৌর পরিষদ না থাকায় কার্ড বিতরণে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়, দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। পৌরসভার ৯ কর্মকর্তা ৯টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিয়ে কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত হলেও তাদের দেওয়া হয় মাত্র এক’শ করে ভিজিএফ কার্ড। বাকি কার্ডে ভাগ বসান সরকারি দলের লোকজন।

পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন- নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ (১ নম্বর ওয়ার্ড), প্রকৌশলী মুন্সি আবু জাফর (২ নম্বর ওয়ার্ড), নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন (৩ নম্বর ওয়ার্ড), প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান কাজল (৪ নম্বর ওয়ার্ড), একাউন্টস অফিসার আব্দুল মজিদ (৫ নম্বর ওয়ার্ড), বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা বদরউদ্দীন কামরান (৬ নম্বর ওয়ার্ড), প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চাঁন (৭ নম্বর ওয়ার্ড), প্রকৌশলী ওবাইদুর রহমান (৮ নম্বর ওয়ার্ড) ও প্রকৌশলী বাবুল ইসলাম (৯ নম্বর ওয়ার্ড)। এসব কর্মকর্তারা জািনয়েছেন তাদেরকে ১০০টি করে কার্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রায় ৩৬’শ কার্ড দলীয়ভাবে বিতরণ করা হয়েছে। আর এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে।

পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চান জানান, ‘আমি ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পেয়েছি। এই ওয়ার্ডে ভোটার প্রায় ৯ হাজার। প্রতি ঈদে সেখানে ৫১৪টি করে কার্ড দেওয়া হতো। কিন্তু আমাকে মাত্র এক’শটি ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি কার্ডের কোনো হিসাব আমি জানি না।’

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভা থেকে নিযুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মাত্র এক’শ করে ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ৯’শ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৩ হাজার ৭১৪টি কার্ডের হিসাব কেউ বলতে পারেনি। সবার একই কথা ‘ওরা’ নিয়ে গেছে।

ঝিনাইদহ পৌরসভার অ্যাকাউন্টস অফিসার আব্দুল মজিদ ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বে আছেন। তিনি জানান, ‘আমাকে ৫১৪টি কার্ডের হিসাবে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। কার্ড কে কোথায় দিচ্ছে আমি বলতে পারব না।’ ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ জানান, ‘আমাকে মাত্র একশটি কার্ড দেওয়া হয়েছে, যা আমি ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিতরণ করেছি। বাকি কার্ডের হিসাব আমি জানি না।’ তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিকভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন জানান, পৌরসভার উপদেষ্টা স্থানীয় এমপি মহোদয়। তিনি তো কিছু কার্ড নিতেই পারেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরবকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসক ইয়ারুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।