ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘দোকান না ভেঙে আমাদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিন’

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, মেহেরপুর: একদিকে চলছে বুলডোজার, অন্যদিকে কান্নায় বুক চাপড়াচ্ছিলেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। বুলডোজার যেন তাঁদের বুকের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের আকুতি, ‘দোকান না ভেঙে আমাদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিন।’ পেট্রল দিয়ে দোকানী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে দিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে অনুরোধ করেন ভুক্তভোগীরা। মেহেরপুর কোর্ট মসজিদের সামনে দোকান উচ্ছেদ অভিযান চলে। এর প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেন। তাতেও মেলেনি কোনো সমাধান। অনড় অবস্থানে থাকা প্রশাসন পুলিশের সহায়তায় দোকানগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাইদের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি টিম কোর্ট মসজিদের সামনের দোকানপাট ভাঙা শুরু করে। এসময় দোকান মালিক ও তাদের পরিবারের লোকজন অনুরোধ করে সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের নির্দেশের কথা বলে ভাঙা শুরু করেন প্রশাসন। শত অনুরোধে যখন প্রশাসনের মন গলেনি, তখন গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন কয়েকজন দোকানী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এসময় অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাঁদেরকে আগুন দেওয়া থেকে নিবৃত্ত করেন। বুলডোজার চলতে থাকায় ব্যবসায়ীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সেই বিক্ষোভও নিবৃত্ত করে পুলিশ।

জানা গেছে, মেহেরপুর হোটেল বাজার এলাকায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অদূরে কোর্ট জামে মসজিদ। মসজিদের জায়গায় তৈরি করা ১৮টি দোকান মসজিদ কমিটির কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসা করছেন অনেকে। দরিদ্র পরিবারের এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উর্পাজনের একমাত্র পথ হচ্ছে এই দোকানগুলো।

মেহেরপুর হোটেল বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান জানান, কোর্ট মসজিদের সভাপতি হিসেবে পদাধিকার বলে দায়িত্বে থাকেন জেলা প্রশাসক। সামসুর রহমান যখন জেলা প্রশাসক ছিলেন, তখন মসজিদ কমিটির কাছ থেকে দোকানগুলো লিজ নেওয়া হয়। প্রতি মাসে নির্ধারিত ভাড়া মসজিদ কমিটিতে পরিশোধ করেন দোকানীরা। সামসুর রহমানের পরে আরও তিনজন জেলা প্রশাসকের সময়ে একইভাবে লিজ নবায়ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সম্প্রতি এই দোকানগুলো অবৈধ বলে উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেন দোকানীদের। দোকানগুলো উচ্ছেদ করলে দরিদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসবে তাই দোকানী ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জেলা প্রশাসককে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে অনুরোধ করে আসছিলেন। হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ইকবাল সিমন বলেন, একটি মাত্র নোটিশ দিয়ে মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়। আজকের এই দিনে ভাঙা হবে এমন কোনো সতকর্তা জারি করা হয়নি। জেলা প্রশাসকের সাথে ব্যবসায়ী সমিতির দেনদরবার চলছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দোকানগুলো বৈধভাবে লিজ নেওয়া হয়েছে। ভাঙতে যদি হয়, তাহলে সময় দিলে দোকানিরাই ভেঙে নিতো। এভাবে অন্যায়ভাবে দোকান ভেঙে ব্যবসায়ীদের পথে বসানো হয়েছে। এ কারণে হোটেল বাজারের সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে, কেন দোকান ভাঙা হচ্ছে এবং কীভাবে ভাঙা হচ্ছে, দোকান ভাঙার চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কি না, এমন সব প্রশ্ন এড়িয়ে সাংবাদিকদের জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন উচ্ছেদে নেতৃত্বে দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাইদ। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনছুর আলম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে এড়িয়ে যান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

‘দোকান না ভেঙে আমাদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিন’

আপলোড টাইম : ০৯:০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২

প্রতিবেদক, মেহেরপুর: একদিকে চলছে বুলডোজার, অন্যদিকে কান্নায় বুক চাপড়াচ্ছিলেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। বুলডোজার যেন তাঁদের বুকের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের আকুতি, ‘দোকান না ভেঙে আমাদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিন।’ পেট্রল দিয়ে দোকানী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে দিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে অনুরোধ করেন ভুক্তভোগীরা। মেহেরপুর কোর্ট মসজিদের সামনে দোকান উচ্ছেদ অভিযান চলে। এর প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেন। তাতেও মেলেনি কোনো সমাধান। অনড় অবস্থানে থাকা প্রশাসন পুলিশের সহায়তায় দোকানগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাইদের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি টিম কোর্ট মসজিদের সামনের দোকানপাট ভাঙা শুরু করে। এসময় দোকান মালিক ও তাদের পরিবারের লোকজন অনুরোধ করে সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের নির্দেশের কথা বলে ভাঙা শুরু করেন প্রশাসন। শত অনুরোধে যখন প্রশাসনের মন গলেনি, তখন গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন কয়েকজন দোকানী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এসময় অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাঁদেরকে আগুন দেওয়া থেকে নিবৃত্ত করেন। বুলডোজার চলতে থাকায় ব্যবসায়ীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সেই বিক্ষোভও নিবৃত্ত করে পুলিশ।

জানা গেছে, মেহেরপুর হোটেল বাজার এলাকায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অদূরে কোর্ট জামে মসজিদ। মসজিদের জায়গায় তৈরি করা ১৮টি দোকান মসজিদ কমিটির কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসা করছেন অনেকে। দরিদ্র পরিবারের এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উর্পাজনের একমাত্র পথ হচ্ছে এই দোকানগুলো।

মেহেরপুর হোটেল বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান জানান, কোর্ট মসজিদের সভাপতি হিসেবে পদাধিকার বলে দায়িত্বে থাকেন জেলা প্রশাসক। সামসুর রহমান যখন জেলা প্রশাসক ছিলেন, তখন মসজিদ কমিটির কাছ থেকে দোকানগুলো লিজ নেওয়া হয়। প্রতি মাসে নির্ধারিত ভাড়া মসজিদ কমিটিতে পরিশোধ করেন দোকানীরা। সামসুর রহমানের পরে আরও তিনজন জেলা প্রশাসকের সময়ে একইভাবে লিজ নবায়ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সম্প্রতি এই দোকানগুলো অবৈধ বলে উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেন দোকানীদের। দোকানগুলো উচ্ছেদ করলে দরিদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসবে তাই দোকানী ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জেলা প্রশাসককে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে অনুরোধ করে আসছিলেন। হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ইকবাল সিমন বলেন, একটি মাত্র নোটিশ দিয়ে মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়। আজকের এই দিনে ভাঙা হবে এমন কোনো সতকর্তা জারি করা হয়নি। জেলা প্রশাসকের সাথে ব্যবসায়ী সমিতির দেনদরবার চলছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দোকানগুলো বৈধভাবে লিজ নেওয়া হয়েছে। ভাঙতে যদি হয়, তাহলে সময় দিলে দোকানিরাই ভেঙে নিতো। এভাবে অন্যায়ভাবে দোকান ভেঙে ব্যবসায়ীদের পথে বসানো হয়েছে। এ কারণে হোটেল বাজারের সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে, কেন দোকান ভাঙা হচ্ছে এবং কীভাবে ভাঙা হচ্ছে, দোকান ভাঙার চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কি না, এমন সব প্রশ্ন এড়িয়ে সাংবাদিকদের জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন উচ্ছেদে নেতৃত্বে দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাইদ। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনছুর আলম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে এড়িয়ে যান।