ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে ইজিপিপি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩১:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুন ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নে ইজিপিপি প্রকল্পে নানা অনিয়মসহ অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তাঁর অনুগতদের কাজ না করিয়ে হাজিরা প্রদান করছেন তিনি। অন্যদিকে কাজ করেও পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অর্ধশত শ্রমিক। তবে যারা টাকা পাননি, অন্য শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদেরকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান আলম হুসাইন।

গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি (ইজিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে গাংনীর কাজিপুর ইউনিয়নে। প্রথম ধাপে ৩৩৫ জন শ্রমিক নিয়ে ৪০ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এ কাজে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ, স্বচ্ছল ব্যক্তিদের কাজে অর্ন্তভুক্তির ব্যাপারে নিষেধ রয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ শেষে অত্র অফিসে প্রকল্প প্রদান সাপেক্ষে কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী ৫টি প্রকল্পে ৫জন ইউপি সদস্যকে প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান আলম হুসাইন প্রকল্প প্রদান ও শ্রমিক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি তাঁর অধীনস্থ গ্রাম পুলিশকেও শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও অন্তত ৫০ জন শ্রমিক রয়েছেন তাঁর অনুগত ও নিকট আত্মীয়। এরা কাজ না করলেও তাঁদের হাজিরা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে অন্তত অর্ধশত শ্রমিক কাজ করলেও তাঁদের মজুরি আসেনি এখনও। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেধে উঠেছে।

সরেজমিনে কাজিপুর ইউনিয়নের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ। আলাপকালে শ্রমিকরা তাঁদের দূর্দশার কথা জানালেন। শ্রমিক সরদার আরিফুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান সাহেবের লোকজন শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এ থেকে তিনিও রেহায় পাননি। প্রথমে ইউপি সদস্যরা ভেবেছিলেন এই টাকা তাঁদেরকে দেওয়া হবে। কিন্তু পরে কাউকে না দিয়ে চেয়ারম্যান সবটাই নিজের পকেটস্থ করেছেন। একজন নারী জানান, তাঁর স্বামীর জন্য তিনি প্রথমে ১৬ শ টাকা চেয়ারম্যানের লোক হিসেবে পরিচিত হান্নানকে পরিশোধ করেন। পরে আরও ৪শ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। টাকা না দিলে নাম কেটে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিলে আরও ৪ শ টাকা দেওয়া হয়। শ্রমিকদের অনেকেই জানান, এভাবে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চেয়াম্যানের অনুগত শ্রমিক যাদের মজুরি আসেনি, তাঁদের দেওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। এছাড়াও অনেকেই দিনভর কাজ করে যে মজুরি পান, চেয়ারম্যানের লোকজন কাজ না করেও সেই মজুরি পান। অন্যদিকে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক প্রথম ধাপের কাজের মজুরি পায়নি। তারা চেয়ারম্যানের অনুগত নয় বলে মজুরি বঞ্চিত বলে মন্তব্য অনেকের।

প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের হাজিরা করা হচ্ছে না এবং কারো কাছে জবকার্ড নেই। আবার চেয়াম্যানেরও পরিদর্শন নেই। উপরন্ত শ্রমিকরা যেখানে কাজ করছেন, সেখানে কাজের ধরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি। এবারে দ্বিতীয় ধাপে ৮০ দিনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পে নির্ধারিত স্থান ছাড়াও ইচ্ছামতো বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় মাটি ভরাট করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। অথচ প্রকল্পে এই স্থানে মাটি ভরাটের নিদের্শনা নেই।

এ ব্যাপারে প্রকল্প চেয়ারম্যান আজিজুল হক জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই তিনি এখানে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। তবে চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলছেন তিনি এ বিষয়ে জানেন না। এ ব্যাপারে কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হুসাইন টাকা নেওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যারা মজুরি পায়নি, তাঁদেরকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রাম পুলিশকে কেন শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তার জবাব মেলেনি। এদিকে, এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকার্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে ইজিপিপি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৮:৩১:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুন ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদক: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নে ইজিপিপি প্রকল্পে নানা অনিয়মসহ অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তাঁর অনুগতদের কাজ না করিয়ে হাজিরা প্রদান করছেন তিনি। অন্যদিকে কাজ করেও পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অর্ধশত শ্রমিক। তবে যারা টাকা পাননি, অন্য শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদেরকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান আলম হুসাইন।

গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি (ইজিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে গাংনীর কাজিপুর ইউনিয়নে। প্রথম ধাপে ৩৩৫ জন শ্রমিক নিয়ে ৪০ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এ কাজে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ, স্বচ্ছল ব্যক্তিদের কাজে অর্ন্তভুক্তির ব্যাপারে নিষেধ রয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ শেষে অত্র অফিসে প্রকল্প প্রদান সাপেক্ষে কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী ৫টি প্রকল্পে ৫জন ইউপি সদস্যকে প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান আলম হুসাইন প্রকল্প প্রদান ও শ্রমিক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি তাঁর অধীনস্থ গ্রাম পুলিশকেও শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও অন্তত ৫০ জন শ্রমিক রয়েছেন তাঁর অনুগত ও নিকট আত্মীয়। এরা কাজ না করলেও তাঁদের হাজিরা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে অন্তত অর্ধশত শ্রমিক কাজ করলেও তাঁদের মজুরি আসেনি এখনও। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেধে উঠেছে।

সরেজমিনে কাজিপুর ইউনিয়নের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ। আলাপকালে শ্রমিকরা তাঁদের দূর্দশার কথা জানালেন। শ্রমিক সরদার আরিফুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান সাহেবের লোকজন শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এ থেকে তিনিও রেহায় পাননি। প্রথমে ইউপি সদস্যরা ভেবেছিলেন এই টাকা তাঁদেরকে দেওয়া হবে। কিন্তু পরে কাউকে না দিয়ে চেয়ারম্যান সবটাই নিজের পকেটস্থ করেছেন। একজন নারী জানান, তাঁর স্বামীর জন্য তিনি প্রথমে ১৬ শ টাকা চেয়ারম্যানের লোক হিসেবে পরিচিত হান্নানকে পরিশোধ করেন। পরে আরও ৪শ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। টাকা না দিলে নাম কেটে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিলে আরও ৪ শ টাকা দেওয়া হয়। শ্রমিকদের অনেকেই জানান, এভাবে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চেয়াম্যানের অনুগত শ্রমিক যাদের মজুরি আসেনি, তাঁদের দেওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। এছাড়াও অনেকেই দিনভর কাজ করে যে মজুরি পান, চেয়ারম্যানের লোকজন কাজ না করেও সেই মজুরি পান। অন্যদিকে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক প্রথম ধাপের কাজের মজুরি পায়নি। তারা চেয়ারম্যানের অনুগত নয় বলে মজুরি বঞ্চিত বলে মন্তব্য অনেকের।

প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের হাজিরা করা হচ্ছে না এবং কারো কাছে জবকার্ড নেই। আবার চেয়াম্যানেরও পরিদর্শন নেই। উপরন্ত শ্রমিকরা যেখানে কাজ করছেন, সেখানে কাজের ধরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি। এবারে দ্বিতীয় ধাপে ৮০ দিনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পে নির্ধারিত স্থান ছাড়াও ইচ্ছামতো বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় মাটি ভরাট করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। অথচ প্রকল্পে এই স্থানে মাটি ভরাটের নিদের্শনা নেই।

এ ব্যাপারে প্রকল্প চেয়ারম্যান আজিজুল হক জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই তিনি এখানে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। তবে চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলছেন তিনি এ বিষয়ে জানেন না। এ ব্যাপারে কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হুসাইন টাকা নেওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যারা মজুরি পায়নি, তাঁদেরকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রাম পুলিশকে কেন শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তার জবাব মেলেনি। এদিকে, এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকার্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী।