ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০ বছর পর রোগীর পেটে মিলল কাঁচি

প্রতিবেদক, গাংনী:
  • আপলোড টাইম : ০৩:২৯:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

সহায়-সম্বল বিক্রি করে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করিয়েছিলেন বাচেনা খাতুন। কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি। পেটের ব্যথা নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় বছরের পর বছর ডাক্তারের কাছে ছুটেছেন তিনি। খুইয়েছেন অর্থ-সম্পদ সবকিছু। অবশেষে ২০ বছর পর তাঁর পেটে মিলল অপারেশনকালে ডাক্তারের রেখে দেওয়া কাঁচি। অপারেশনের সময় পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের আবদুল হামিদের স্ত্রী। অপারেশনের সময় চিকিৎসকের রেখে দেওয়া সেই কাঁচি অসুস্থ বাচেনা খাতুনকে করে তুলেছে আরও অসুস্থ। হতে হয়েছে নিঃস্ব। চিকিৎসকের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে দীর্ঘ ২০ বছর। তাঁকে চিকিৎসা প্রদানসহ ক্ষতিপূরণের দাবি পরিবারের।

জানা গেছে, ২০০২ সালে মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসেন বাচেনা খাতুন। রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজার শরাণাপন্ন হলে তিনি বাচেনা খাতুনকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করার পরামর্শ দেন। ওষুধপত্র ও অপারেশন ফি বাবদ ২০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা। স্ত্রীর অপারেশনের জন্য একমাত্র সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করেন আবদুল হামিদ। ২০০২ সালের ২৫ মার্চ বাচেনা খাতুনের অপারেশন করেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তাঁর সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেসথেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

তবে অপারেশনের পর বাচেনা খাতুনের অসুস্থতা দিন দিন বাড়তেই থাকে। পুনরায় ডা. রাজার শরণাপন্ন হলে তিনি ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফেরত পাঠান। চিকিৎসকের কাছে পাত্তা না পেয়ে বাচেনার পেটের যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। পরে আবার ডা. রাজার সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে সুস্থ হতে বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন বাচেনা খাতুন। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিতে বিক্রি করতে হয় শেষ সম্বল দুটি গরু।

পেটের তীব্র যন্ত্রণায় বাচেনার আর্তচিৎকারে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। প্রতিবেশীরাও অনেক সয়য় বাচেনার বাড়িতে ছুটে আসেন। কয়েকদিন আগে স্থানীয়দের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিমের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে বাচেনা খাতুনকে এক্স-রে করানো হয়। এক্স-রে রিপোর্টে পেটের মধ্যে ৪-৫ ইঞ্চির একটি কাঁচির সন্ধান মেলে। ২০ বছর পর পেটের মধ্যে কাঁচির সন্ধান পাওয়ার খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাচেনা খাতুন। এমন খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই বিষয়টি দেখতে বাচেনা খাতুনের বাড়িতে ভিড় জমায় এলাকার মানুষ। ছুটে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাচেনা খাতুন বলেন, ‘আমি ২০ বছর আগে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করি। অপারেশনের পর দুটি পাথর আমাদের হাতে দিয়েছিলেন ডাক্তার রাজা। অপরেশনের পর সুস্থ হওয়ার কথা বলেছিলেন ডাক্তার। কিন্তু আমার পেটের যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তেই থাকে। কয়েকবার আমার সমস্যার কথা জানাতে গিয়েও প্রতিকার পাইনি। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী প্রতিবন্ধী। অন্যের জমিতে কাজ করে যে টাকা রোজগার করে, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। আমার চিকিৎসার টাকা ছিল না। মাত্র ১০ কাঠা জমি ছিল, তাও বিক্রি করে দিয়েছি। পরে দুটি গরু বিক্রি করেও আমার জন্য খরচ করতে হয়েছে। তীব্র যন্ত্রণায় আমি ছটফট করি। আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরাও ছুটে আসে। গত শনিবার রাজশাহীতে গিয়ে আমার পেটের মধ্যে একটি কাঁচি আছে বলে ছবিতে দেখতে পাই। যারা আমার অপারেশনের সময় ভুল করেছে, আমি ক্ষতিপূরণসহ তাদের বিচার চাই।’

বাচেনার স্বামী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি একজন প্রতিবন্ধী। আমার একটি পা অচল। কেউ আমাকে কাজে নেই না। আমি এখন কী করব, তা ভেবে রাতে ঘুমাতে পারছি না। গত শনিবার আমার স্ত্রীকে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে স্ত্রীর পেটের মধ্যে কাঁচি মিলেছে। আমি আবার কী দিয়ে তার অপারেশন করাব। আমার আর কিছুই নাই। কার কাছে গেলে সহযোগিতা পাব তাও জানি না। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

প্রতিবেশী আফরোজা খাতুন বলেন, ‘প্রতি রাতে বাচেনার চিৎকারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে যাই। অনেক সময় তাঁর কান্নায় আমাদেরও চোখে পানি আসে। অনেক টাকা খরচ করেও যদি ডাক্তার এমন ভুল করেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব? এই নিঃস্ব বাচেনার চিকিৎসার সব দায়িত্ব ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজন আলী বলেন, সহায়-সম্বল বিক্রি করেও যখন হয়নি, তখন বাচেনার চিকিৎসার জন্য গ্রামের অনেক মানুষ তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে। গতকাল জানতে পারলাম বাচেনার পেটের মধ্যে একটি কাাঁচি রেখেই সেলাই দিয়েছে ডাক্তার। ডাক্তারের এমন ভুলে বাচেনার পরিবার শুধু নিঃস্বই হয়নি জীবনও বিপণ্ন হতে চলেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে ডাক্তারের কাছে আমি বিষয়টি জানাব, যদি তিনি এর ক্ষতিপূরণ না দেন, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, ‘আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। আমিও ওই অপারেশনের সময় সহকারী হিসেবে ছিলাম। ভুল হতে পারে। ডা. মিজানুর রহমান একজন সার্জারি বিভাগের ভালো চিকিৎসক। তিনি ওই সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চাকরি করতেন। তখন আমার ক্লিনিকে সব অপারেশন তিনিই করতেন। তিনিই ভুলটা করতে পারেন। তবে তার পরিচয় জানি না। মেহেরপুরে চাকরির সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। হয়তোবা এটি তার অনাকাঙ্খিত ভুল। তবুও ২০ বছর বাচেনাকে কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি এখন জানতে পারলাম ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সব দায়িত্ব আমি নিব।’

অভিযুক্ত চিকিৎসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তিনি ২০০১ সালে মেহেরপুর জেনারেল হাসাপাতালে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি অবসর নিয়ে নিজ এলাকা খুলনায় আছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. জওয়াহেরুল ইসলাম বলেন, অনেক আগেই বিষয়টি খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের। রোগী ও রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকে কয়েকবার বিষয়টি জানানোর পর আবারও পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল। ক্লিনিক মালিক সেটি করেননি। আমি বিষয়টি শুনলাম। রোগীর লোকজন লিখিত অভিযোগ দিলে আমি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

২০ বছর পর রোগীর পেটে মিলল কাঁচি

আপলোড টাইম : ০৩:২৯:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২

সহায়-সম্বল বিক্রি করে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করিয়েছিলেন বাচেনা খাতুন। কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি। পেটের ব্যথা নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় বছরের পর বছর ডাক্তারের কাছে ছুটেছেন তিনি। খুইয়েছেন অর্থ-সম্পদ সবকিছু। অবশেষে ২০ বছর পর তাঁর পেটে মিলল অপারেশনকালে ডাক্তারের রেখে দেওয়া কাঁচি। অপারেশনের সময় পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের আবদুল হামিদের স্ত্রী। অপারেশনের সময় চিকিৎসকের রেখে দেওয়া সেই কাঁচি অসুস্থ বাচেনা খাতুনকে করে তুলেছে আরও অসুস্থ। হতে হয়েছে নিঃস্ব। চিকিৎসকের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে দীর্ঘ ২০ বছর। তাঁকে চিকিৎসা প্রদানসহ ক্ষতিপূরণের দাবি পরিবারের।

জানা গেছে, ২০০২ সালে মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসেন বাচেনা খাতুন। রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজার শরাণাপন্ন হলে তিনি বাচেনা খাতুনকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করার পরামর্শ দেন। ওষুধপত্র ও অপারেশন ফি বাবদ ২০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা। স্ত্রীর অপারেশনের জন্য একমাত্র সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করেন আবদুল হামিদ। ২০০২ সালের ২৫ মার্চ বাচেনা খাতুনের অপারেশন করেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তাঁর সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেসথেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

তবে অপারেশনের পর বাচেনা খাতুনের অসুস্থতা দিন দিন বাড়তেই থাকে। পুনরায় ডা. রাজার শরণাপন্ন হলে তিনি ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফেরত পাঠান। চিকিৎসকের কাছে পাত্তা না পেয়ে বাচেনার পেটের যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। পরে আবার ডা. রাজার সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে সুস্থ হতে বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন বাচেনা খাতুন। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিতে বিক্রি করতে হয় শেষ সম্বল দুটি গরু।

পেটের তীব্র যন্ত্রণায় বাচেনার আর্তচিৎকারে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। প্রতিবেশীরাও অনেক সয়য় বাচেনার বাড়িতে ছুটে আসেন। কয়েকদিন আগে স্থানীয়দের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিমের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে বাচেনা খাতুনকে এক্স-রে করানো হয়। এক্স-রে রিপোর্টে পেটের মধ্যে ৪-৫ ইঞ্চির একটি কাঁচির সন্ধান মেলে। ২০ বছর পর পেটের মধ্যে কাঁচির সন্ধান পাওয়ার খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাচেনা খাতুন। এমন খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই বিষয়টি দেখতে বাচেনা খাতুনের বাড়িতে ভিড় জমায় এলাকার মানুষ। ছুটে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাচেনা খাতুন বলেন, ‘আমি ২০ বছর আগে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করি। অপারেশনের পর দুটি পাথর আমাদের হাতে দিয়েছিলেন ডাক্তার রাজা। অপরেশনের পর সুস্থ হওয়ার কথা বলেছিলেন ডাক্তার। কিন্তু আমার পেটের যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তেই থাকে। কয়েকবার আমার সমস্যার কথা জানাতে গিয়েও প্রতিকার পাইনি। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী প্রতিবন্ধী। অন্যের জমিতে কাজ করে যে টাকা রোজগার করে, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। আমার চিকিৎসার টাকা ছিল না। মাত্র ১০ কাঠা জমি ছিল, তাও বিক্রি করে দিয়েছি। পরে দুটি গরু বিক্রি করেও আমার জন্য খরচ করতে হয়েছে। তীব্র যন্ত্রণায় আমি ছটফট করি। আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরাও ছুটে আসে। গত শনিবার রাজশাহীতে গিয়ে আমার পেটের মধ্যে একটি কাঁচি আছে বলে ছবিতে দেখতে পাই। যারা আমার অপারেশনের সময় ভুল করেছে, আমি ক্ষতিপূরণসহ তাদের বিচার চাই।’

বাচেনার স্বামী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি একজন প্রতিবন্ধী। আমার একটি পা অচল। কেউ আমাকে কাজে নেই না। আমি এখন কী করব, তা ভেবে রাতে ঘুমাতে পারছি না। গত শনিবার আমার স্ত্রীকে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে স্ত্রীর পেটের মধ্যে কাঁচি মিলেছে। আমি আবার কী দিয়ে তার অপারেশন করাব। আমার আর কিছুই নাই। কার কাছে গেলে সহযোগিতা পাব তাও জানি না। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

প্রতিবেশী আফরোজা খাতুন বলেন, ‘প্রতি রাতে বাচেনার চিৎকারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে যাই। অনেক সময় তাঁর কান্নায় আমাদেরও চোখে পানি আসে। অনেক টাকা খরচ করেও যদি ডাক্তার এমন ভুল করেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব? এই নিঃস্ব বাচেনার চিকিৎসার সব দায়িত্ব ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজন আলী বলেন, সহায়-সম্বল বিক্রি করেও যখন হয়নি, তখন বাচেনার চিকিৎসার জন্য গ্রামের অনেক মানুষ তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে। গতকাল জানতে পারলাম বাচেনার পেটের মধ্যে একটি কাাঁচি রেখেই সেলাই দিয়েছে ডাক্তার। ডাক্তারের এমন ভুলে বাচেনার পরিবার শুধু নিঃস্বই হয়নি জীবনও বিপণ্ন হতে চলেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে ডাক্তারের কাছে আমি বিষয়টি জানাব, যদি তিনি এর ক্ষতিপূরণ না দেন, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, ‘আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। আমিও ওই অপারেশনের সময় সহকারী হিসেবে ছিলাম। ভুল হতে পারে। ডা. মিজানুর রহমান একজন সার্জারি বিভাগের ভালো চিকিৎসক। তিনি ওই সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চাকরি করতেন। তখন আমার ক্লিনিকে সব অপারেশন তিনিই করতেন। তিনিই ভুলটা করতে পারেন। তবে তার পরিচয় জানি না। মেহেরপুরে চাকরির সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। হয়তোবা এটি তার অনাকাঙ্খিত ভুল। তবুও ২০ বছর বাচেনাকে কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি এখন জানতে পারলাম ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সব দায়িত্ব আমি নিব।’

অভিযুক্ত চিকিৎসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তিনি ২০০১ সালে মেহেরপুর জেনারেল হাসাপাতালে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি অবসর নিয়ে নিজ এলাকা খুলনায় আছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. জওয়াহেরুল ইসলাম বলেন, অনেক আগেই বিষয়টি খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের। রোগী ও রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকে কয়েকবার বিষয়টি জানানোর পর আবারও পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল। ক্লিনিক মালিক সেটি করেননি। আমি বিষয়টি শুনলাম। রোগীর লোকজন লিখিত অভিযোগ দিলে আমি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।