ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌকায় ভোট দিয়ে ওরা গ্রামছাড়া!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

প্রথমে দেখলে মনে হবে কোন শরণার্থী শিবির বা নতুন বছর উপলক্ষে পিকনিকের আয়োজন। কিন্তু না। নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তারা বাড়িছাড়া হয়েছেন। নিজ গৃহে ফিরতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় শতাধিক পুরুষ ও শিশু, শনিবার সকাল থেকে শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রামের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেই তারা রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করছেন। বাড়িতে থাকলে মারধর করা হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ করেন। গ্রামছাড়া এই শতাধীক মানুষ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, গত ২৬ ডিসেম্বর হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুমের পক্ষে ভোট করেন তারা। হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুজ্জামান ফরিদ নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অত্যাচার শুরু হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

বাড়ি ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা নবের আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করার পর পালিয়ে থাকতে হবে তা ভাবতেও পারিনি। আমি প্রথম থেকেই নৌকাকে সমর্থন করি। নৌকার ভোট করায় ছিল আমার অপরাধ। এখন নির্জন মাঠে পালিয়ে খেচুড়ি রান্না করে কলার পাতায় খেতে হচ্ছে।

হরিশংকরপুর ইউনিয়নে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য বদরুল ইসলাম লালুও ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। তিনিও শৈলকুপার আশুরহাট গ্রামের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েও ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, তাদের একমাত্র অপরাধ হচ্ছে নৌকায় ভোট দেওয়া। হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর আমিন মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে যদি তারা বাড়ি ফিরতে না পারেন তবে এক সময় আমাদের নেত্রীও ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। দুইজন সাবেক সেনা সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি। বাড়িতে নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। শিশুরা পর্যন্ত বাড়ি থাকতে পারছেন না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করা হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। নুর আমিন মিয়া আরও বলেন, হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নের প্রায় ২২টি গ্রাম থেকে কমবেশি মানুষ বাড়ি ছাড়া হয়েছেন।

নৌকার প্রার্থী মাসুম বলেন, ‘সুষ্ঠ নির্বাচন করতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের হাত পা বেধে ফেলেছেন। তার সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। মাঠে যেতে দিচ্ছে না। দোকান পাট বন্ধ করে দিয়েছে। ঘরের মধ্যে কার্ফ্যু জারি করা হয়েছে। কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না কেউ।

বিষয়টি নিয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এসব লোকজন বাড়ি ছেড়েছে। ওরা মিডিয়ার সামনে যা বলছে সবই মিথ্যা। যারা বাড়ি ছেড়ে মাঠে আছেন তার আত্মভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। তাদেরকে কেউ মারধর বা অত্যাচার করেনি।

তিনি আরও বলেন, আমার কোন লোক তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ও মারধর করছে তারা প্রকাশ করুক। যদি করতে পারে তবে আমি নিজেই শাস্তি দেব। নৌকায় যারা ভোট দিয়েছেন তারা তো সবাই বাড়িতে, ওরা কেন বাইরে প্রশ্ন তোলেন ফরিদ।

মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তার ছেলে ভোটের আগে ন্যাংটা হয়ে আমার বিরুদ্ধে ভোট করেছে। এ করণে আত্মভয়ে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন। তাকে কেউ ভয় ভীতি দেখায়নি।’

এবিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, যারা বাড়ি ছেড়েছেন তারা এক রকম ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। আমরা তাদের বলেছি বাড়ি আসতে। কেউ তাদের উপর জুলুম বা নির্যাতন করলে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু তারা বাড়ি ছেড়ে এখানে ওখানে বসবাস করছেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

নৌকায় ভোট দিয়ে ওরা গ্রামছাড়া!

আপলোড টাইম : ০৫:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২

প্রথমে দেখলে মনে হবে কোন শরণার্থী শিবির বা নতুন বছর উপলক্ষে পিকনিকের আয়োজন। কিন্তু না। নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তারা বাড়িছাড়া হয়েছেন। নিজ গৃহে ফিরতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় শতাধিক পুরুষ ও শিশু, শনিবার সকাল থেকে শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রামের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেই তারা রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করছেন। বাড়িতে থাকলে মারধর করা হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ করেন। গ্রামছাড়া এই শতাধীক মানুষ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, গত ২৬ ডিসেম্বর হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুমের পক্ষে ভোট করেন তারা। হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুজ্জামান ফরিদ নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অত্যাচার শুরু হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

বাড়ি ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা নবের আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করার পর পালিয়ে থাকতে হবে তা ভাবতেও পারিনি। আমি প্রথম থেকেই নৌকাকে সমর্থন করি। নৌকার ভোট করায় ছিল আমার অপরাধ। এখন নির্জন মাঠে পালিয়ে খেচুড়ি রান্না করে কলার পাতায় খেতে হচ্ছে।

হরিশংকরপুর ইউনিয়নে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য বদরুল ইসলাম লালুও ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। তিনিও শৈলকুপার আশুরহাট গ্রামের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েও ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, তাদের একমাত্র অপরাধ হচ্ছে নৌকায় ভোট দেওয়া। হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর আমিন মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে যদি তারা বাড়ি ফিরতে না পারেন তবে এক সময় আমাদের নেত্রীও ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। দুইজন সাবেক সেনা সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি। বাড়িতে নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। শিশুরা পর্যন্ত বাড়ি থাকতে পারছেন না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করা হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। নুর আমিন মিয়া আরও বলেন, হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নের প্রায় ২২টি গ্রাম থেকে কমবেশি মানুষ বাড়ি ছাড়া হয়েছেন।

নৌকার প্রার্থী মাসুম বলেন, ‘সুষ্ঠ নির্বাচন করতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের হাত পা বেধে ফেলেছেন। তার সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। মাঠে যেতে দিচ্ছে না। দোকান পাট বন্ধ করে দিয়েছে। ঘরের মধ্যে কার্ফ্যু জারি করা হয়েছে। কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না কেউ।

বিষয়টি নিয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এসব লোকজন বাড়ি ছেড়েছে। ওরা মিডিয়ার সামনে যা বলছে সবই মিথ্যা। যারা বাড়ি ছেড়ে মাঠে আছেন তার আত্মভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। তাদেরকে কেউ মারধর বা অত্যাচার করেনি।

তিনি আরও বলেন, আমার কোন লোক তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ও মারধর করছে তারা প্রকাশ করুক। যদি করতে পারে তবে আমি নিজেই শাস্তি দেব। নৌকায় যারা ভোট দিয়েছেন তারা তো সবাই বাড়িতে, ওরা কেন বাইরে প্রশ্ন তোলেন ফরিদ।

মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তার ছেলে ভোটের আগে ন্যাংটা হয়ে আমার বিরুদ্ধে ভোট করেছে। এ করণে আত্মভয়ে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন। তাকে কেউ ভয় ভীতি দেখায়নি।’

এবিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, যারা বাড়ি ছেড়েছেন তারা এক রকম ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। আমরা তাদের বলেছি বাড়ি আসতে। কেউ তাদের উপর জুলুম বা নির্যাতন করলে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু তারা বাড়ি ছেড়ে এখানে ওখানে বসবাস করছেন।’