ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে চিকিৎসার নামে অভিনব প্রতারণা!

মাহবুব আলম/আল-আমিন:
  • আপলোড টাইম : ০৫:১৮:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

নাক, কান, গলা রোগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করেই চলেছেন মেহেরপুরের গাংনীর হিজলবাড়িয়া গ্রামের নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি। ডাক্তার না হয়েও বিনা অপারেশনে অর্শ্ব, নাকের পলিপাস চিকিৎসা ও ফিজিও থেরাপির নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তার চিকিৎসায় অশ্ব ও পলিপাসের রোগীরা কিছুদিন ভালো থাকলেও পরবর্তীতে একই সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে। এছাড়াও নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। তখন এই রোগীকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অন্য চিকিৎসকের কাছে।

নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি ইতোমধ্যে গাংনীর সীমান্ত ঘেষা হাটবোয়ালীয়া বাজারে এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে রোগীদের সাথে প্রতারণা করেই যাচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগ রয়েছে, নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে তার নিজ গ্রাম গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামে ওষুধের দোকান দেন। নামের আগে ডাক্তার লিখে বিভিন্ন রোগের পারদর্শী চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। সেখানে মেয়াদ উর্ত্তীন ও অবৈধ ওষুধ বিক্রয়ের অপরাধে গ্রামের লোকজন তাকে গ্রামে চিকিৎসা করা বন্ধও করে দেন। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির গুঞ্জনও রয়েছে। অশ্ব, পায়ু পথের রোগ গোপনীয় তাই অনেকেই গোপনে চিকিৎসা নেন। আর নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি এরই সুযোগ নিয়েছেন। নিয়মিত ওষুধ সেবন করে প্রতিনিয়ত মানুষ আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এক রোগ সারাতে গিয়ে তারা নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিপিটি সার্টিফিকেট না থাকলেও ফিজিও থেরাপি দিচ্ছে তিনি। মানুষের সাথে প্রতারণা করা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা এসব অসাধু ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তাই গ্রামের সাধারণ ভুক্তভোগীরাও অভিযোগ করার সাহস করে না। গ্রামের লোকজন তার এ অপকর্ম প্রচার করায় এ্যানি তার শশুরবাড়ি আমতৈল গ্রামের পাশে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়াতে এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাংনী উপজেলার বাদিয়াপাড়া গ্রামের এক পাইলস্ রোগী বলেন, আমার পাইলসের সমস্যা নিয়ে হাটবোয়ালিয়া বাজারের এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডা. নুরুন নবী ছামাদ এ্যানির কাছে গেলে তিনি ওষুধ দিয়ে অপারেশন ছাড়ায় সারিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। আমিও তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু পাইলস্ সমস্যা সারেনি বরং বেশি হয়েছে।’

আমতৈল গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পাইলসের জন্য চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। অপারেশন ছাড়ায় সুস্থ্য করে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর ওষুধ খেয়ে প্রথমে কিছুদিন ভালো ছিলাম তারপর আবারও একই সমস্যা। আমি ডাক্তারকে বলেছি তিনি বলেছেন আবারও চিকিৎসা করাবেন।’

 ভোলাডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধু স্বর্ণালী বলেন, ‘আমার মেয়ের পলিপাসের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ভালো হয়নি, প্রতিবেশি এক ভাইয়ের ছেলেরও সারেনি। এখন আমরা গাংনীতে চিকিৎসা করাবো। একই অভিযোগ আলমডাঙ্গা উপজেলার খোরদ গ্রামের মকলেছের স্ত্রী হিরা মনিরও।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি বলেন, ‘আমি সব ধরণের রোগীর জিবি প্র্যাক্টিস করি। আমি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। ডাক্তার লিখতে পারি না তার পরও পরিচিতির জন্য লিখি। সবধরনের রোগের চিকিৎসা করি তবে নিয়মের মধ্যে। অর্শ্ব ও পাইলসের চিকিৎসা করতে পারি না। গরীব লোকদের জন্য করতে হয়। আমার বিপিটি সার্টিফিকেট নেই, অন্য একজনকে দিয়ে থেরাপি দিই। শতভাগ নিয়ম মেনে কাজ করা সম্ভব হয় না। আর মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ষড়যন্ত্র করে কেউ এগুলো বলতে পারে। এটা সঠিক নয়।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিনি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তবে তিনি পলিপাস, অর্শ্ব চিকিৎসা করতে পারেন না। নামের আগে ডা. লিখতেও পারবেন না। এস এফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে আমি এটার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে চিকিৎসার নামে অভিনব প্রতারণা!

আপলোড টাইম : ০৫:১৮:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২

নাক, কান, গলা রোগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করেই চলেছেন মেহেরপুরের গাংনীর হিজলবাড়িয়া গ্রামের নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি। ডাক্তার না হয়েও বিনা অপারেশনে অর্শ্ব, নাকের পলিপাস চিকিৎসা ও ফিজিও থেরাপির নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তার চিকিৎসায় অশ্ব ও পলিপাসের রোগীরা কিছুদিন ভালো থাকলেও পরবর্তীতে একই সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে। এছাড়াও নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। তখন এই রোগীকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অন্য চিকিৎসকের কাছে।

নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি ইতোমধ্যে গাংনীর সীমান্ত ঘেষা হাটবোয়ালীয়া বাজারে এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে রোগীদের সাথে প্রতারণা করেই যাচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগ রয়েছে, নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে তার নিজ গ্রাম গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামে ওষুধের দোকান দেন। নামের আগে ডাক্তার লিখে বিভিন্ন রোগের পারদর্শী চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। সেখানে মেয়াদ উর্ত্তীন ও অবৈধ ওষুধ বিক্রয়ের অপরাধে গ্রামের লোকজন তাকে গ্রামে চিকিৎসা করা বন্ধও করে দেন। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির গুঞ্জনও রয়েছে। অশ্ব, পায়ু পথের রোগ গোপনীয় তাই অনেকেই গোপনে চিকিৎসা নেন। আর নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি এরই সুযোগ নিয়েছেন। নিয়মিত ওষুধ সেবন করে প্রতিনিয়ত মানুষ আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এক রোগ সারাতে গিয়ে তারা নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিপিটি সার্টিফিকেট না থাকলেও ফিজিও থেরাপি দিচ্ছে তিনি। মানুষের সাথে প্রতারণা করা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা এসব অসাধু ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তাই গ্রামের সাধারণ ভুক্তভোগীরাও অভিযোগ করার সাহস করে না। গ্রামের লোকজন তার এ অপকর্ম প্রচার করায় এ্যানি তার শশুরবাড়ি আমতৈল গ্রামের পাশে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়াতে এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাংনী উপজেলার বাদিয়াপাড়া গ্রামের এক পাইলস্ রোগী বলেন, আমার পাইলসের সমস্যা নিয়ে হাটবোয়ালিয়া বাজারের এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডা. নুরুন নবী ছামাদ এ্যানির কাছে গেলে তিনি ওষুধ দিয়ে অপারেশন ছাড়ায় সারিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। আমিও তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু পাইলস্ সমস্যা সারেনি বরং বেশি হয়েছে।’

আমতৈল গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পাইলসের জন্য চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। অপারেশন ছাড়ায় সুস্থ্য করে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর ওষুধ খেয়ে প্রথমে কিছুদিন ভালো ছিলাম তারপর আবারও একই সমস্যা। আমি ডাক্তারকে বলেছি তিনি বলেছেন আবারও চিকিৎসা করাবেন।’

 ভোলাডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধু স্বর্ণালী বলেন, ‘আমার মেয়ের পলিপাসের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ভালো হয়নি, প্রতিবেশি এক ভাইয়ের ছেলেরও সারেনি। এখন আমরা গাংনীতে চিকিৎসা করাবো। একই অভিযোগ আলমডাঙ্গা উপজেলার খোরদ গ্রামের মকলেছের স্ত্রী হিরা মনিরও।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি বলেন, ‘আমি সব ধরণের রোগীর জিবি প্র্যাক্টিস করি। আমি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। ডাক্তার লিখতে পারি না তার পরও পরিচিতির জন্য লিখি। সবধরনের রোগের চিকিৎসা করি তবে নিয়মের মধ্যে। অর্শ্ব ও পাইলসের চিকিৎসা করতে পারি না। গরীব লোকদের জন্য করতে হয়। আমার বিপিটি সার্টিফিকেট নেই, অন্য একজনকে দিয়ে থেরাপি দিই। শতভাগ নিয়ম মেনে কাজ করা সম্ভব হয় না। আর মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ষড়যন্ত্র করে কেউ এগুলো বলতে পারে। এটা সঠিক নয়।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিনি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তবে তিনি পলিপাস, অর্শ্ব চিকিৎসা করতে পারেন না। নামের আগে ডা. লিখতেও পারবেন না। এস এফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে আমি এটার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’