ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলার মাটিতে শেখ হাসিনার বিচার একদিন হবেই: জেলা বিএনপির সমাবেশে নিতাই রায় চৌধুরী

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৬:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বাবু নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জনতার সাগরে ঢেউ জেগেছে। এই উত্তাল ঢেউয়ে শেখ হাসিনা ও তার দুর্নীতিবাজ সরকার বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা জোয়ার দেখেছে, কিন্তু ভাটা দেখেনি। ভাটার টান শুরু হয়েছে। এই টানে শেখ হাসিনা সাগরে নিক্ষিপ্ত হবেন। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান অতিথি নিতাই রায় চৌধুরী আরো বলেন, ‘দেশে আজ কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। গণতন্ত্র, শিক্ষা, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী সব কিছুই এ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসন দিয়ে গুম-খুন করিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। বাংলার মাটিতে শেখ হাসিনার বিচার একদিন হবেই। সেই দিন আর বেশি দুরে নয়।’

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। তারা ভারতের ট্রেনিং ক্যাম্পে বসে বসে রেশন খেয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার পিতা কোনোদিন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেননি। তাদের শাসন আমল তার প্রমাণ বহন করে। সিরাজ শিকদার বিভিন্ন মতের হলেও তার দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। অথচ তাকে হত্যা করে সংসদে দম্ভক্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। যারা অসুস্থ খালেদা জিয়াকে নিয়ে ভীত, তারা সুস্থ বিএনপির লাখো নেতাকর্মীকে কি ভাবে সামলাবেন?।’

সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য মসিউর রহমান বলেন, ‘রক্তের অপর নাম কিন্তু মুক্তি। ১৯৭১ সালে রক্ত দিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। শেখ হাসিনার এ কথা মনে রাখা দরকার।’ মসিউর আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতের মোদি সরকারের সঙ্গে অনেক পিরিত করেছিলেন, কিন্তু এখন সেই মোদি সরকারই জো বাইডেনের সঙ্গে মিশে শেখ হাসিনাকে ছুড়ে ফেলেছেন। শেখ হাসিনার জন্য পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে।’ মসিউর শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘ওবাইদুল কাদের ও হাসান মাহমুদকে দিয়ে অর্নগল মিথ্যা বলিয়েও আপনার শেষ রক্ষা হবে না। মানুষ জেগেছে। পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেবে দেশের জনগণ।’

সমাবেশে বিএনপির মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা তো ডাম্পিং পোস্টিং নিয়ে ঝিনাইদহে এসেছেন। এখানে কেন আপনারা দলীয় ক্যাডারদের মতো আচরণ করেন? আপনাদের দিয়ে ৬০১ জনকে গুম করা হয়েছে। তিন হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করানো হয়েছে। ৩৬ লাখ বিএনপি নেতাকমর্েিদর নামে মামলা করানো হয়েছে। এখানেই থামুন, নইলে পস্তাতে হবে।’

খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আইনমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ‘বিনা ভোটের সরকারের আইনী যুক্তি দেখতে দেখতে মানুষ আজ বিরক্ত।’ তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘কুইক রেন্টালে হাজার হাজার কোটি লুট হয়, কাঁটাতারে ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকে, ব্যাংক ঋণের নামে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়। তখন কোথায় থাকে আপনাদের আইন?’ তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এটা ঊনবিংশ বা বিংশ শতাব্দী নয়, এটা একাবিংশ শতাব্দী। তরুণদের সাথে প্রবীণরা যুক্ত হয়ে যদি প্রতিবাদের বিস্ফোরণ ঘটায় তখন আপনারা পালানোর পথ পাবেন না।’ অমিত আরো বলেন, ‘সরকার যদি আইন দিয়ে দেশ চালাতো, তবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেতেন। যেমন জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার সময় কোনো আইন লাগেনি। যাহোক এ সরকারের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা পালানোর পথ খুঁজছে। আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মালদ্বীপের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। আসলে এই চুক্তি হচ্ছে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়লে তারা মালদ্বীপে পালিয়ে যেতে চাই।’ অনিন্দ্য ইসলাম অমিত  আরো বলেন, ‘বিএনপিকে এখন কোনো বাধায় আর ঠেকাতে পারবে না। জেলা উপজেলা থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে অচিরেই তার ঢেউ আছড়ে পড়বে রাজধানী ঢাকায়।’

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে সুচিকৎসার দাবিতে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী মাঠে জেলা বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. এসএম মশিয়ূর রহমান। অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য মসিউর রহমান, খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আসাদুজ্জামান, কেন্দ্রীয় নেতা বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান বেল্টু, আব্দুল ওহাব, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অ্যাড. এমএ মজিদ, মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, আব্দুল আলীম ও আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আশপাশ জেলা থেকে বিএনপির অর্ধশত নেতা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বাংলার মাটিতে শেখ হাসিনার বিচার একদিন হবেই: জেলা বিএনপির সমাবেশে নিতাই রায় চৌধুরী

আপলোড টাইম : ০৯:২৬:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বাবু নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জনতার সাগরে ঢেউ জেগেছে। এই উত্তাল ঢেউয়ে শেখ হাসিনা ও তার দুর্নীতিবাজ সরকার বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা জোয়ার দেখেছে, কিন্তু ভাটা দেখেনি। ভাটার টান শুরু হয়েছে। এই টানে শেখ হাসিনা সাগরে নিক্ষিপ্ত হবেন। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান অতিথি নিতাই রায় চৌধুরী আরো বলেন, ‘দেশে আজ কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। গণতন্ত্র, শিক্ষা, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী সব কিছুই এ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসন দিয়ে গুম-খুন করিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। বাংলার মাটিতে শেখ হাসিনার বিচার একদিন হবেই। সেই দিন আর বেশি দুরে নয়।’

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। তারা ভারতের ট্রেনিং ক্যাম্পে বসে বসে রেশন খেয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার পিতা কোনোদিন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেননি। তাদের শাসন আমল তার প্রমাণ বহন করে। সিরাজ শিকদার বিভিন্ন মতের হলেও তার দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। অথচ তাকে হত্যা করে সংসদে দম্ভক্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। যারা অসুস্থ খালেদা জিয়াকে নিয়ে ভীত, তারা সুস্থ বিএনপির লাখো নেতাকর্মীকে কি ভাবে সামলাবেন?।’

সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য মসিউর রহমান বলেন, ‘রক্তের অপর নাম কিন্তু মুক্তি। ১৯৭১ সালে রক্ত দিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। শেখ হাসিনার এ কথা মনে রাখা দরকার।’ মসিউর আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতের মোদি সরকারের সঙ্গে অনেক পিরিত করেছিলেন, কিন্তু এখন সেই মোদি সরকারই জো বাইডেনের সঙ্গে মিশে শেখ হাসিনাকে ছুড়ে ফেলেছেন। শেখ হাসিনার জন্য পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে।’ মসিউর শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘ওবাইদুল কাদের ও হাসান মাহমুদকে দিয়ে অর্নগল মিথ্যা বলিয়েও আপনার শেষ রক্ষা হবে না। মানুষ জেগেছে। পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেবে দেশের জনগণ।’

সমাবেশে বিএনপির মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা তো ডাম্পিং পোস্টিং নিয়ে ঝিনাইদহে এসেছেন। এখানে কেন আপনারা দলীয় ক্যাডারদের মতো আচরণ করেন? আপনাদের দিয়ে ৬০১ জনকে গুম করা হয়েছে। তিন হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করানো হয়েছে। ৩৬ লাখ বিএনপি নেতাকমর্েিদর নামে মামলা করানো হয়েছে। এখানেই থামুন, নইলে পস্তাতে হবে।’

খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আইনমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ‘বিনা ভোটের সরকারের আইনী যুক্তি দেখতে দেখতে মানুষ আজ বিরক্ত।’ তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘কুইক রেন্টালে হাজার হাজার কোটি লুট হয়, কাঁটাতারে ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকে, ব্যাংক ঋণের নামে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়। তখন কোথায় থাকে আপনাদের আইন?’ তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এটা ঊনবিংশ বা বিংশ শতাব্দী নয়, এটা একাবিংশ শতাব্দী। তরুণদের সাথে প্রবীণরা যুক্ত হয়ে যদি প্রতিবাদের বিস্ফোরণ ঘটায় তখন আপনারা পালানোর পথ পাবেন না।’ অমিত আরো বলেন, ‘সরকার যদি আইন দিয়ে দেশ চালাতো, তবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেতেন। যেমন জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার সময় কোনো আইন লাগেনি। যাহোক এ সরকারের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা পালানোর পথ খুঁজছে। আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মালদ্বীপের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। আসলে এই চুক্তি হচ্ছে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়লে তারা মালদ্বীপে পালিয়ে যেতে চাই।’ অনিন্দ্য ইসলাম অমিত  আরো বলেন, ‘বিএনপিকে এখন কোনো বাধায় আর ঠেকাতে পারবে না। জেলা উপজেলা থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে অচিরেই তার ঢেউ আছড়ে পড়বে রাজধানী ঢাকায়।’

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে সুচিকৎসার দাবিতে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী মাঠে জেলা বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. এসএম মশিয়ূর রহমান। অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য মসিউর রহমান, খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আসাদুজ্জামান, কেন্দ্রীয় নেতা বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান বেল্টু, আব্দুল ওহাব, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অ্যাড. এমএ মজিদ, মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, আব্দুল আলীম ও আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আশপাশ জেলা থেকে বিএনপির অর্ধশত নেতা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।