ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডালিম সৌদি পালালো কিভাবে?

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৩:০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহে সেনা সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ হত্যা মামলার মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ডালিম মণ্ডল গোপনে সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছেন বলে তার পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। ডালিম মণ্ডল সৌদি আরবের জেদ্দার একটি তেলপাম্পে কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। সে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভুলটিয়া গ্রামের সবোদ আলী মণ্ডলের ছেলে। গত বুধবার খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে সেনা সদস্য সাইফ হত্যা মামলায় ৮ জন আসামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই ৮ জন আসামীর মধ্যে ডালিম অন্যতম একজন। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামীর দেশ্য ত্যাগ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, রিনুয়্যাল পাসপোর্ট ছিল আসামী ডালিমের। ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট সেনাবাহিনীর ল্যান্স-কর্পোরাল সাইফুল ইসলাম হত্যা হলে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সাড়ে তিনমাস জেলে থাকার পর উচ্চআদালতের রায়ে তিনি ছাড়া পান। এরপর গোপনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান তিনি।

আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা যদি এসবি ও ডিএসবিকে আগেভাগেই তথ্য দিয়ে জানিয়ে রাখতেন, তবে আসামীর জন্য দেশ ত্যাগ সহজ হতো না। তারপরও আসামীকে দেশ ছাড়ার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছে। কিভাবে আসামী ডালিম পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেল তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।

সেনা সদস্য সাইফুলের পিতা হাফিজ উদ্দীন হাবু ও মা বুলবুলি খাতুন জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। সরকার ইচ্ছা করলে মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ডালিমকে ফিরিয়ে আনতে পারে। ইতিপূর্বে অনেক আসামীকে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে এনেছে। ডালিম ছাড়াও সেনা সদস্য সাইফুল হত্যা মামলার আরও দুই আসামী পলাতক রয়েছেন। এরা হলেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের মতিয়ার রহমান ফনে ও মোক্তার হোসেন। অন্য ৫ আসামী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের ফারুক হোসেন ওরফে ফারুনের ছেলে আকিমুল ইসলাম, একই উপজেলার বড়াই গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে মিজানুর রহমান, আসাননগর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে ফারুক হোসেন, একই গ্রামের নবীছদ্দিনের ছেলে আব্বাস উদ্দীন ও আবুল কাসেম কারাগারে আছেন।

আসামী ডালিমের দেশ ত্যাগের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিএসবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ হোসেন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি কর্মস্থলে নতুন যোগদান করেছেন। তাই কিভাবে ডালিম পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়েছেন তাও তিনি বলতে পারবেন না।

উল্লেখ ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট সন্ধ্যা রাতে ঝিনাইদহের বংকিরা পশ্চিমপাড়া এলাকার হাফিজ উদ্দীনের দুই ছেলে সাইফুল ইসলাম সাইফ (সেনাসদস্য) ও মনিরুল ইসলাম (নৌ সদস্য) মটরসাইকেলযোগে স্থানীয় বদরগঞ্জ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা বংকিরা গ্রামের হাওনঘানা নামক স্থানে পৌঁছালে রাস্তার ওপর গাছ ফেলে ডাকাতরা ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তারা মোটরসাইকেল থেকে নেমে চিৎকার করলে ডাকাত দলের একজন সেনা সদস্য সাইফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পরদিন নিহতের পিতা হাফিজুর রহমান হাবু অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৩০ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝিনাইদাহ থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. মহসীন হোসেন ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ২০ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত ৮ জনেরই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। নিহত সেনা সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সেনানিবাসের মেডিকেল কোরের ল্যান্স-কর্পোরাল হিসেবে চাকরিরত ছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ডালিম সৌদি পালালো কিভাবে?

আপলোড টাইম : ০৩:০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১

ঝিনাইদহে সেনা সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ হত্যা মামলার মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ডালিম মণ্ডল গোপনে সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছেন বলে তার পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। ডালিম মণ্ডল সৌদি আরবের জেদ্দার একটি তেলপাম্পে কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। সে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভুলটিয়া গ্রামের সবোদ আলী মণ্ডলের ছেলে। গত বুধবার খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে সেনা সদস্য সাইফ হত্যা মামলায় ৮ জন আসামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই ৮ জন আসামীর মধ্যে ডালিম অন্যতম একজন। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামীর দেশ্য ত্যাগ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, রিনুয়্যাল পাসপোর্ট ছিল আসামী ডালিমের। ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট সেনাবাহিনীর ল্যান্স-কর্পোরাল সাইফুল ইসলাম হত্যা হলে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সাড়ে তিনমাস জেলে থাকার পর উচ্চআদালতের রায়ে তিনি ছাড়া পান। এরপর গোপনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান তিনি।

আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা যদি এসবি ও ডিএসবিকে আগেভাগেই তথ্য দিয়ে জানিয়ে রাখতেন, তবে আসামীর জন্য দেশ ত্যাগ সহজ হতো না। তারপরও আসামীকে দেশ ছাড়ার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছে। কিভাবে আসামী ডালিম পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেল তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।

সেনা সদস্য সাইফুলের পিতা হাফিজ উদ্দীন হাবু ও মা বুলবুলি খাতুন জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। সরকার ইচ্ছা করলে মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ডালিমকে ফিরিয়ে আনতে পারে। ইতিপূর্বে অনেক আসামীকে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে এনেছে। ডালিম ছাড়াও সেনা সদস্য সাইফুল হত্যা মামলার আরও দুই আসামী পলাতক রয়েছেন। এরা হলেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের মতিয়ার রহমান ফনে ও মোক্তার হোসেন। অন্য ৫ আসামী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের ফারুক হোসেন ওরফে ফারুনের ছেলে আকিমুল ইসলাম, একই উপজেলার বড়াই গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে মিজানুর রহমান, আসাননগর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে ফারুক হোসেন, একই গ্রামের নবীছদ্দিনের ছেলে আব্বাস উদ্দীন ও আবুল কাসেম কারাগারে আছেন।

আসামী ডালিমের দেশ ত্যাগের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিএসবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ হোসেন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি কর্মস্থলে নতুন যোগদান করেছেন। তাই কিভাবে ডালিম পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়েছেন তাও তিনি বলতে পারবেন না।

উল্লেখ ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট সন্ধ্যা রাতে ঝিনাইদহের বংকিরা পশ্চিমপাড়া এলাকার হাফিজ উদ্দীনের দুই ছেলে সাইফুল ইসলাম সাইফ (সেনাসদস্য) ও মনিরুল ইসলাম (নৌ সদস্য) মটরসাইকেলযোগে স্থানীয় বদরগঞ্জ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা বংকিরা গ্রামের হাওনঘানা নামক স্থানে পৌঁছালে রাস্তার ওপর গাছ ফেলে ডাকাতরা ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তারা মোটরসাইকেল থেকে নেমে চিৎকার করলে ডাকাত দলের একজন সেনা সদস্য সাইফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পরদিন নিহতের পিতা হাফিজুর রহমান হাবু অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৩০ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝিনাইদাহ থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. মহসীন হোসেন ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ২০ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত ৮ জনেরই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। নিহত সেনা সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সেনানিবাসের মেডিকেল কোরের ল্যান্স-কর্পোরাল হিসেবে চাকরিরত ছিলেন।