ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

হাটবোয়ালিয়া হাইস্কুলের ষাটোর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মিলনমেলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

খ. হামিদুল আজম:
আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষাটোর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এক মনোমুগ্ধকর মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯২৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যারা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে পড়েছে, সেই সব প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এক অভূতপূর্ণ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হলো। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় হাটবোয়ালিয়া স্কুল প্রাঙ্গনে এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রাক্তন ছাত্র যাদের কারো বয়স ৮০ বছরেরও ঊর্ধ্বে ছিল। দীর্ঘ তিন মাসের নিরলস প্রচেষ্টায় যাদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল, তাদের প্রায় সকলেই এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া ঢাকাসহ নানা দূর-দূরান্তে যারা অবস্থান করেন তারাও ছুটে এসেছিলেন প্রাণের টানে আবেগ তাড়িত হয়ে। সঞ্চালক হিসেবে অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও প্রাক্তন শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম।
বহুদিন পর বন্ধুদের কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে সে কি উচ্ছ্বাস। চোখের কোণে চিকচিক করছিল আনন্দ অশ্রু। সকাল নয়টার মধ্যেই প্রায় দুই শতাধিক বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীর পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল বিদ্যালয়ের আঙিনায় মেহগনি গাছের ছায়াতল। কে বলে তারা বৃদ্ধ। ফেলে আসা দূরন্ত কৈশরের খুনশুটিতে যে মাতামাতি, তাতে মনেই হয়নি তারা বৃদ্ধ হয়েছে। ৮০ বছর বয়সী এক ছাত্র তো বলেই ফেললেন, এখান থেকে যে চার্জ নিয়ে গেলাম, জীবনের বাকি সময়টুকু এই সুখ-স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিতে পারব। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, এখানে গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতা তেমন ছিল না। প্রথমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী না ফেরার দেশে চলে গেছে, তাদের জন্য দোয়া এবং প্রত্যেকের পরিচিতি পর্ব। এ পরিচয় পর্বে অনেকে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর পুরানো বন্ধুকে।

অনূভুতি প্রকাশ করতে যেয়ে গাংনীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলামের আবেগঘন প্রকাশ সকলকে মুগ্ধ করে। সাথে ছিলেন আজিজুর রহমান রানু, প্রধান শিক্ষক সৈয়দ জাকির হোসেন ও করমদি কলেজের প্রভাষক আবু সায়েম পল্টু। অন্যান্য পর্যবেক্ষকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাংবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ, সেবাবাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন ও হাটবোয়ালিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি জিনারুল ইসলাম বিশ্বাস।
পরিচয় পর্ব শেষে যখন ঘোষণা দেওয়া হলো আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, চেয়ারটি হাতে নিয়ে মেহগনি গাছের ছায়াতলে আপন আপন বন্ধুদের সাথে আনন্দ উপভোগ করুন। বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোল হয়ে বসে গেল আড্ডা দিতে। এই সময়টুকুই ছিল অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ, চম্বুক অংশ। সবচেয়ে বিষাদময় সংবাদ ছিল বিদ্যালয়ের ১৯৬৯ সালের এসএসসি ব্যাচের ছাত্র মীর মাহবুবার রহমান উপলের মৃত্যুর সংবাদ। যা উপস্থিত সকলের মধ্যে বিষাদের এক করুণ আবহাওয়া সৃষ্টি হয়। স্ত্রী, পুত্র, বোনসহ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।

তারপর খাওয়া-দাওয়া, কিছু স্মৃতিচারণ, উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কিছু কথা, তাদের সৌজন্য উপহার তুলে দেওয়াসহ সব মিলিয়ে আর কিছুটা সময় পার করা। প্রফেসর আক্তার হোসেনের আবেগঘন মানপত্র পাঠে সবাই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে। অনুষ্ঠানে ছিল না কোনো সভাপতি, প্রধান অতিথি অথবা বিশেষ অতিথি। এ যেন আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে। কারোর নামই সংযোজন করা হয়নি। কলেবর বৃদ্ধি আর কারো নাম উল্লেখ না করার যে অপরাধবোধ তা থেকে মুক্ত থাকার জন্য। তবুও আদ্যোপান্ত এ অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য যারা নিরলসভাবে শ্রম আর মেধা দিয়ে সহায়তা করেছেন, তাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, যিনি একজন প্রাক্তন চৌকস সেনা সদস্য। এছাড়া অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুস সাত্তার যিনি সবসময় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, চৌকস যাত্রাশিল্পী চাঁদপুরের ডাক্তার শরিফুদ্দিন ঠান্ডু, সরোয়ার হোসেন সণ্টু, মোড়ভাঙ্গার হাজী রফিকুল ইসলাম, শেখপাড়ার বিল্লাল হোসেন, হাটবোয়ালিয়া বাজারের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী হাজী হবিবর রহমান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রেজিস্ট্রেশনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সামসুল হক, মনিরুজ্জামান, সানবিব আক্তার অপু, স্কুলের ছাত্র ভাংবাড়ীয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মামুন রেজাসহ আরো যারা সহায়তা করেছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
সর্বোপরি অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. শামীমা নাসরিন, সভাপতি নাহিদ হাসনাত সোহাগ সার্বিক সহায়তাসহ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠান করার অনুমতি প্রদান করায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। প্রফেসর আখতার হোসেন, যিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করেছেন এবং মানপত্র পাঠ ও অনুষ্ঠানের দিন নিরলস শারীরিক ও মানসিক সহায়তা প্রদান করেছেন। আর্থিক সহায়তা দিয়ে যারা সহায়তা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

হাটবোয়ালিয়া হাইস্কুলের ষাটোর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মিলনমেলা

আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২

খ. হামিদুল আজম:
আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষাটোর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এক মনোমুগ্ধকর মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯২৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যারা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে পড়েছে, সেই সব প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এক অভূতপূর্ণ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হলো। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় হাটবোয়ালিয়া স্কুল প্রাঙ্গনে এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রাক্তন ছাত্র যাদের কারো বয়স ৮০ বছরেরও ঊর্ধ্বে ছিল। দীর্ঘ তিন মাসের নিরলস প্রচেষ্টায় যাদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল, তাদের প্রায় সকলেই এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া ঢাকাসহ নানা দূর-দূরান্তে যারা অবস্থান করেন তারাও ছুটে এসেছিলেন প্রাণের টানে আবেগ তাড়িত হয়ে। সঞ্চালক হিসেবে অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও প্রাক্তন শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম।
বহুদিন পর বন্ধুদের কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে সে কি উচ্ছ্বাস। চোখের কোণে চিকচিক করছিল আনন্দ অশ্রু। সকাল নয়টার মধ্যেই প্রায় দুই শতাধিক বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীর পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল বিদ্যালয়ের আঙিনায় মেহগনি গাছের ছায়াতল। কে বলে তারা বৃদ্ধ। ফেলে আসা দূরন্ত কৈশরের খুনশুটিতে যে মাতামাতি, তাতে মনেই হয়নি তারা বৃদ্ধ হয়েছে। ৮০ বছর বয়সী এক ছাত্র তো বলেই ফেললেন, এখান থেকে যে চার্জ নিয়ে গেলাম, জীবনের বাকি সময়টুকু এই সুখ-স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিতে পারব। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, এখানে গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতা তেমন ছিল না। প্রথমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী না ফেরার দেশে চলে গেছে, তাদের জন্য দোয়া এবং প্রত্যেকের পরিচিতি পর্ব। এ পরিচয় পর্বে অনেকে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর পুরানো বন্ধুকে।

অনূভুতি প্রকাশ করতে যেয়ে গাংনীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলামের আবেগঘন প্রকাশ সকলকে মুগ্ধ করে। সাথে ছিলেন আজিজুর রহমান রানু, প্রধান শিক্ষক সৈয়দ জাকির হোসেন ও করমদি কলেজের প্রভাষক আবু সায়েম পল্টু। অন্যান্য পর্যবেক্ষকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাংবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ, সেবাবাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন ও হাটবোয়ালিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি জিনারুল ইসলাম বিশ্বাস।
পরিচয় পর্ব শেষে যখন ঘোষণা দেওয়া হলো আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, চেয়ারটি হাতে নিয়ে মেহগনি গাছের ছায়াতলে আপন আপন বন্ধুদের সাথে আনন্দ উপভোগ করুন। বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোল হয়ে বসে গেল আড্ডা দিতে। এই সময়টুকুই ছিল অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ, চম্বুক অংশ। সবচেয়ে বিষাদময় সংবাদ ছিল বিদ্যালয়ের ১৯৬৯ সালের এসএসসি ব্যাচের ছাত্র মীর মাহবুবার রহমান উপলের মৃত্যুর সংবাদ। যা উপস্থিত সকলের মধ্যে বিষাদের এক করুণ আবহাওয়া সৃষ্টি হয়। স্ত্রী, পুত্র, বোনসহ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।

তারপর খাওয়া-দাওয়া, কিছু স্মৃতিচারণ, উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কিছু কথা, তাদের সৌজন্য উপহার তুলে দেওয়াসহ সব মিলিয়ে আর কিছুটা সময় পার করা। প্রফেসর আক্তার হোসেনের আবেগঘন মানপত্র পাঠে সবাই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে। অনুষ্ঠানে ছিল না কোনো সভাপতি, প্রধান অতিথি অথবা বিশেষ অতিথি। এ যেন আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে। কারোর নামই সংযোজন করা হয়নি। কলেবর বৃদ্ধি আর কারো নাম উল্লেখ না করার যে অপরাধবোধ তা থেকে মুক্ত থাকার জন্য। তবুও আদ্যোপান্ত এ অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য যারা নিরলসভাবে শ্রম আর মেধা দিয়ে সহায়তা করেছেন, তাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, যিনি একজন প্রাক্তন চৌকস সেনা সদস্য। এছাড়া অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুস সাত্তার যিনি সবসময় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, চৌকস যাত্রাশিল্পী চাঁদপুরের ডাক্তার শরিফুদ্দিন ঠান্ডু, সরোয়ার হোসেন সণ্টু, মোড়ভাঙ্গার হাজী রফিকুল ইসলাম, শেখপাড়ার বিল্লাল হোসেন, হাটবোয়ালিয়া বাজারের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী হাজী হবিবর রহমান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রেজিস্ট্রেশনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সামসুল হক, মনিরুজ্জামান, সানবিব আক্তার অপু, স্কুলের ছাত্র ভাংবাড়ীয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মামুন রেজাসহ আরো যারা সহায়তা করেছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
সর্বোপরি অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. শামীমা নাসরিন, সভাপতি নাহিদ হাসনাত সোহাগ সার্বিক সহায়তাসহ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠান করার অনুমতি প্রদান করায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। প্রফেসর আখতার হোসেন, যিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করেছেন এবং মানপত্র পাঠ ও অনুষ্ঠানের দিন নিরলস শারীরিক ও মানসিক সহায়তা প্রদান করেছেন। আর্থিক সহায়তা দিয়ে যারা সহায়তা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।