ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

মারা গেছে দি লায়ন সার্কাসের হাতি ‘শিশির বাবু’

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা পুরাতন স্টেডিয়ামের বিসিক শিল্প-পণ্য মেলায় আগত দি লায়ন সার্কাসের সেই হাতিটি মারা গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় হাতিটি মারা যায়। গতকাল শুক্রবার সকালে মর্নিং ওয়াকে বেরানো পথচারীরা হাতির নিথর দেহটি দেখে হাতির মাউথকে খবর দেয়। হাতির মৃত্যু সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা এক নজর হাতিটির মরদেহ দেখতে ভিড় জমায়।

জান যায, গত মে মাসে চুয়াডাঙ্গা পুরাতন স্টেডিয়ামে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিসিক মেলা শুরু হয়ে ঈদুল আজহার দু’দিন আগে শেষ হয়। তবে মেলার দোকানপাট সব চলে গেলেও সার্কাসের মালামাল, গাধা, জীব-জন্তসহ হাতিটিও রয়ে গিয়েছিল। হাতির মাউথ মজিবার রহমান জানান, ‘গত কয়েকদিন আগেই আমাদের পরবর্তী সার্কাসের জায়গা নির্ধারণ হয়েছে বরগুনায়। আগামী রোববার আমরা সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে চলে যেতাম। কিন্তু তার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে হাতিটি স্ট্রোক করে মারা গেল।’

এদিকে হাতিটি মারা যাওয়ার বিষয়ে উৎসুক জনতা ও স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, হাতিটি অযত্ন, অবহেলায়, নিয়মিত খাদ্যের অভাব ও চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। আবার অনেকে বলেছেন, হাতিটিকে সময়-অসময়ে মাউথ মজিবর বেদম মারধর করত। হাতি দিয়ে টাকা আদায় করা হতো। কিন্তু তাকে ভালোমতো খাবার দেওয়া হতো না।

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহাজান আলী বলেন, ‘আমি নিয়মিত চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম দিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটি। তাই প্রতিদিনই দেখতাম হাতিটি স্টেশন সংলগ্ন পরিত্যক্ত জঙ্গলে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে বাঁধা থাকে। নিয়মিত দেওয়া হতো না পুষ্টিকর খাবার। শুধু দেখতাম কলাগাছ দেওয়া আছে হাতির সামনে। আবার কখনো কখনো দেখতাম তার মাউথ লোহার পিন দিয়ে বানানো ছড়ির দ্বারা বেদম মারধর করছে। হাতির একটি দাঁত ভাঙা ছিল। সেখানে পচে নাকি পোকা হয়ে গিয়েছিল। এতে নিশ্চয় হাতিটি অসুস্থ হয়েছিল। কিন্তু তাকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় পশু হাসপাতাল বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীদের নিকট থেকে কোনো পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।’

স্থানীয় একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে দেখলাম হাতি দিয়ে কলাগাছ সরানো হচ্ছে। মাউথ হাতির মাথায় ছড়ি দিয়ে আঘাত করে একবারে ৮-১০টি কলাগাছ নিতে নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু হাতি একবারে নিতে পারছিল না। সে সময় হাতির পিঠে বসে থাকা লোকটি দু-হাত তুলে হাতির মাথায় সপাং সপাং করে লোহার ছড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। হাতিটি দু-বার জোরে করে ডেকে উঠে প্রসাব ফিরে ফেলে। তবুও তাকে কলাগাছ সরানো থেকে রেহায় দেওয়া হয়নি।’
পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকায় বসবাসকারী একজন মহিলা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে হাতিটিকে ওরা খাবার দিয়ে গেল। রাত ১০টার দিকে হাতিটি দু-বার শব্দ করে ডেকে উঠে শুয়ে পড়ল। কিন্তু এর আগে হাতি গভীর রাতে শুয়ে পড়ত। যেদিন মারা গেল হাতিটি, সেদিন রাতে তার শুয়ে পড়া দেখে আমার মনে খটকা লেগেছিল। এত সকালে তো হাতি অন্যদিন শুয়ে পড়ে না।’

হাতির মৃত্যুর বিষয়ে মাউথ মজিবর ও তাঁর সহকারী জুয়েল বলেন, হাতিটি অসুস্থ ছিল না। হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, হাতির অসুস্থতা বোঝা যায় তার চোখ দেখে ও হাটা দেখে। হাতি অসুস্থ হলে নাকি তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরে। আর হাঁটার সময় কিছুটা পা ছেচড়িয়ে হাঁটে। গত ১৫-২০ দিন থেকে নাকি হাতিটির চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিল ও হাঁটার সময় পা ছেচড়িয়ে হাঁটছিল। কিন্ত হাতিটির বিষয়ে পশু হাসপাতাল বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীদের নিকট কোনো পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে হাতির মাউথ মজিবর রহমান বলেন, হাতির মৃত্যুর বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এবং পশু চিকিৎসক দিয়ে দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে হাতিট স্ট্রোক করে মারা গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাতিটি যে জায়গায় বাঁধা অবস্থায় মারা গিয়েছিল, চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের সেই পরিত্যাক্ত জায়গায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তবে রেলওয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। হাতির মাউথ মজিবর রহমান বলেন, হাতিটি দি লায়ন সার্কাসের মালিক ঢাকার নবাবগঞ্জের নিরঞ্জন বাবুর। হাতির বয়স ২৮ বছর। হাতিটির নাম রাখা হয়েছিল ‘শিশির বাবু’।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মারা গেছে দি লায়ন সার্কাসের হাতি ‘শিশির বাবু’

আপলোড টাইম : ০৮:২৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা পুরাতন স্টেডিয়ামের বিসিক শিল্প-পণ্য মেলায় আগত দি লায়ন সার্কাসের সেই হাতিটি মারা গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় হাতিটি মারা যায়। গতকাল শুক্রবার সকালে মর্নিং ওয়াকে বেরানো পথচারীরা হাতির নিথর দেহটি দেখে হাতির মাউথকে খবর দেয়। হাতির মৃত্যু সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা এক নজর হাতিটির মরদেহ দেখতে ভিড় জমায়।

জান যায, গত মে মাসে চুয়াডাঙ্গা পুরাতন স্টেডিয়ামে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিসিক মেলা শুরু হয়ে ঈদুল আজহার দু’দিন আগে শেষ হয়। তবে মেলার দোকানপাট সব চলে গেলেও সার্কাসের মালামাল, গাধা, জীব-জন্তসহ হাতিটিও রয়ে গিয়েছিল। হাতির মাউথ মজিবার রহমান জানান, ‘গত কয়েকদিন আগেই আমাদের পরবর্তী সার্কাসের জায়গা নির্ধারণ হয়েছে বরগুনায়। আগামী রোববার আমরা সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে চলে যেতাম। কিন্তু তার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে হাতিটি স্ট্রোক করে মারা গেল।’

এদিকে হাতিটি মারা যাওয়ার বিষয়ে উৎসুক জনতা ও স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, হাতিটি অযত্ন, অবহেলায়, নিয়মিত খাদ্যের অভাব ও চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। আবার অনেকে বলেছেন, হাতিটিকে সময়-অসময়ে মাউথ মজিবর বেদম মারধর করত। হাতি দিয়ে টাকা আদায় করা হতো। কিন্তু তাকে ভালোমতো খাবার দেওয়া হতো না।

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহাজান আলী বলেন, ‘আমি নিয়মিত চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম দিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটি। তাই প্রতিদিনই দেখতাম হাতিটি স্টেশন সংলগ্ন পরিত্যক্ত জঙ্গলে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে বাঁধা থাকে। নিয়মিত দেওয়া হতো না পুষ্টিকর খাবার। শুধু দেখতাম কলাগাছ দেওয়া আছে হাতির সামনে। আবার কখনো কখনো দেখতাম তার মাউথ লোহার পিন দিয়ে বানানো ছড়ির দ্বারা বেদম মারধর করছে। হাতির একটি দাঁত ভাঙা ছিল। সেখানে পচে নাকি পোকা হয়ে গিয়েছিল। এতে নিশ্চয় হাতিটি অসুস্থ হয়েছিল। কিন্তু তাকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় পশু হাসপাতাল বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীদের নিকট থেকে কোনো পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।’

স্থানীয় একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে দেখলাম হাতি দিয়ে কলাগাছ সরানো হচ্ছে। মাউথ হাতির মাথায় ছড়ি দিয়ে আঘাত করে একবারে ৮-১০টি কলাগাছ নিতে নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু হাতি একবারে নিতে পারছিল না। সে সময় হাতির পিঠে বসে থাকা লোকটি দু-হাত তুলে হাতির মাথায় সপাং সপাং করে লোহার ছড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। হাতিটি দু-বার জোরে করে ডেকে উঠে প্রসাব ফিরে ফেলে। তবুও তাকে কলাগাছ সরানো থেকে রেহায় দেওয়া হয়নি।’
পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকায় বসবাসকারী একজন মহিলা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে হাতিটিকে ওরা খাবার দিয়ে গেল। রাত ১০টার দিকে হাতিটি দু-বার শব্দ করে ডেকে উঠে শুয়ে পড়ল। কিন্তু এর আগে হাতি গভীর রাতে শুয়ে পড়ত। যেদিন মারা গেল হাতিটি, সেদিন রাতে তার শুয়ে পড়া দেখে আমার মনে খটকা লেগেছিল। এত সকালে তো হাতি অন্যদিন শুয়ে পড়ে না।’

হাতির মৃত্যুর বিষয়ে মাউথ মজিবর ও তাঁর সহকারী জুয়েল বলেন, হাতিটি অসুস্থ ছিল না। হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, হাতির অসুস্থতা বোঝা যায় তার চোখ দেখে ও হাটা দেখে। হাতি অসুস্থ হলে নাকি তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরে। আর হাঁটার সময় কিছুটা পা ছেচড়িয়ে হাঁটে। গত ১৫-২০ দিন থেকে নাকি হাতিটির চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিল ও হাঁটার সময় পা ছেচড়িয়ে হাঁটছিল। কিন্ত হাতিটির বিষয়ে পশু হাসপাতাল বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীদের নিকট কোনো পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে হাতির মাউথ মজিবর রহমান বলেন, হাতির মৃত্যুর বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এবং পশু চিকিৎসক দিয়ে দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে হাতিট স্ট্রোক করে মারা গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাতিটি যে জায়গায় বাঁধা অবস্থায় মারা গিয়েছিল, চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের সেই পরিত্যাক্ত জায়গায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তবে রেলওয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। হাতির মাউথ মজিবর রহমান বলেন, হাতিটি দি লায়ন সার্কাসের মালিক ঢাকার নবাবগঞ্জের নিরঞ্জন বাবুর। হাতির বয়স ২৮ বছর। হাতিটির নাম রাখা হয়েছিল ‘শিশির বাবু’।