ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

আলমডাঙ্গার আফসার উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ সেলিমের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ

ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ, কোটি টাকার ঘুস লেনদেন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে
  • বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারী ৮ জন
  • উপ-বৃত্তির টাকা আত্মসাতের জন্য ভুয়া শিক্ষার্থী তৈরি করে কাগজপত্র প্রেরণ
  • অধ্যক্ষ আ.লীগের নেতা হওয়ায় ভুয়া ভাউচার তৈরি করে কলেজের টাকা আত্মসাৎ
  • মোটা অংকের টাকা দিলেই মিলত কাগজপত্র জাল করে ব্যাকডেটে নিয়োগ
  • অভিযোগ তদন্তে জেলা শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আলমডাঙ্গা উপজেলার ডা. আফসার উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুল ইসলাম সেলিমের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঘুস নিয়ে নিয়োগ, নিয়োগ দিতে জাল কাগজপত্র তৈরি, ঘুসের মাধ্যমে লিয়াজু করে বেতন চালুকরণ, পছন্দসই মানুষকে টাকার বিনিময়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ, ভুয়া শিক্ষার্থী ভর্তি দেখানোসহ গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার এবং ভয়-ভীতি দেখানোরও অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে এক কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় অধ্যক্ষসহ কয়েকজনের নামে মামলাও হয়েছে। তবে এই অধ্যক্ষ বলছেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা।
জানা গেছে, ২০০০ সালে ডা. আফছার উদ্দিনের ছেলে মো. সেলিম জামান নিজের টাকায় জমি ক্রয় ও ৪ রুম ছাদ যুক্ত একটি বিল্ডিং নির্মাণ করে কলেজের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠাতা ২০০২ সালে মৌখিকভাবে কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব দেন মাহবুল ইসলাম সেলিমকে। পরবর্তীতে কলেজের প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠাতার সহযোগিতা থাকলেও অধ্যক্ষ সকল প্রকার আয়ের টাকা বিভিন্ন কৌশলে নিজের পকেটে তোলেন। কলেজটি দীর্ঘ ২০ বছর এমপিও না হলেও কলেজের শিক্ষার্থীদের আয়ের টাকা, সরকারি ও বেসরকারি অনুদান সবকিছুই নিজেই ভোগ করতেন। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করলে স্থানীয় প্রভাবশালী ফরিদের মাধ্যমে মারধর করতেন ও সর্বদা আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। অধ্যক্ষ নিজে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি।
এদিকে, ডা. আফসার উদ্দীন কলেজের নুরুজ্জামান নামে এক কর্মচারী চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ওই তদন্ত কমিটি সরেজমিনে কলেজে গিয়ে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করে।
জেলা প্রশাসক বরাবরে দেয়া অভিযোগে নুরুজ্জামান নামের ওই কর্মচারী অধ্যক্ষসহ কলেজের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। স্পষ্ট করে লিখিতভাবে তিনি অভিযোগে বলেছেন, ‘অনলাইনে এমপিও আবেদনের সময় ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানের জমির পরিমাণ দিতে হবে ০১ (এক) একর যা উপজেলা এসিল্যান্ড থেকে জমির কাগজ দেখিয়ে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে হয়। সরেজমিনে ডা. আফছার উদ্দিন কলেজের জমির পরিমাণ মাত্র ৩৩ শতক। তৎকালীন আলমডাঙ্গা উপজেলা এসিল্যান্ডের কাছে অধ্যক্ষ অধিক টাকা ঘুসের প্রস্তাব দিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র চেয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা এসিল্যান্ড সরাসরি প্রত্যয়ন দিতে অস্বীকার করেছিলেন। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ এসিল্যান্ডের স্বাক্ষর স্ক্যান করে জমির জাল খারিজ ও জাল দলিল তৈরি করে ১০৩ শতক জমির হিসাব দাখিল করেন। বর্তমানে এখনো কলেজের নাম দিয়ে অনলাইনে সার্চ দিলে প্রকৃত সত্য ঘটনা জানা যাবে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এমপিওভুক্তির শর্ত মোতাবেক প্রত্যেক বিভাগে কমপক্ষে ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হবে। কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে কোনো ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয় না। দু-একজনের মার্কশিট অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের মার্কশিট যোগাড় করে ওই মার্কশিটের কপি স্ক্যান করে যশোর বোর্ডের আওতায় জেনারেল শাখায় ভর্তি দেখানো হয়েছে। কারণ কারিগরি ও সাধারণ বোর্ড আলাদা ওয়েবসাইট হওয়ায় একই ছাত্র দুই জায়গায় ভর্তি হলে জেনারেল বোর্ড বুঝতে পারবে না।
কলেজে বিজ্ঞান শাখার প্রতি বছরের বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট শিট দেখলে বুঝা যাবে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কতজন। বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থী বা ছাত্র-ছাত্রী না থাকায় যশোর বোর্ড ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করে। কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী ও একাডেমিক স্বীকৃতি কিছুই নেই। কলেজের অধ্যক্ষ জাল একাডেমিক স্বীকৃতি তৈরি করে খুলনা ডিডি অফিসের সাবেক কর্মচারী মনির ও ডিডি হারুনের মাধ্যমে বিশাল অংকের টাকা ঘুস দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের চারজন প্রভাষক, একজন প্রদর্শক, তিনজন ল্যাব অ্যাসিসটেন্টসহ মোট ৮ জনের বেতন অনুমোদন করেন। অথচ বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা শূন্য।
কলেজের অধ্যক্ষের জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতি মাসে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা বসে বসে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকগণ বেতন উত্তোলন করছেন। বাণিজ্য শাখায় ৩-৪ জনের অধিক কোনো বছরই ভর্তি হয় না। মানবিক বা অন্য বিভাগ থেকে আগত যে কেউ বাণিজ্য শাখায় ভর্তি হতে পারে। কিন্তু অধ্যক্ষ অত্র কলেজে বিএম শাখায় ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের গত বছর ও চলমান বছরে ৫০-৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বেআইনিভাবে বাণিজ্য শাখায় ভর্তি করেন। অনলাইনে যশোর বোর্ডের ছাত্র পোর্টাল ও কারিগর বোর্ডের ছাত্র পোর্টালে গেলে উল্লেখিত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে। একই ছাত্র দুই জায়গায় ভর্তি আছে। ভুয়াভাবে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সময় নিজেদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের জন্য কিছু ভুয়া ছাত্র-ছাত্রীর বৃত্তি প্রদানের জন্য কাগজ পাঠান।
ওই বৃত্তির টাকা নিজের মোবাইলে এনে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন। উচ্চমাধ্যমিক কলেজের নীতিমালা অনুসারে অধ্যক্ষ হতে হলে ১২ বছরের প্রভাষক পদে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অত্র কলেজের অধ্যক্ষ ফার্সিতে অনার্স হওয়ায় কলেজ প্রতিষ্ঠাতা তাকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেন। অধ্যক্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় প্রতিষ্ঠাতাকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে নিজের পছন্দ মতো সভাপতি বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এমপিও হওয়ার পরে অনেক ভুয়া নিয়োগ তৈরি করেন। কোনো বোর্ড না বসিয়ে ডিজির প্রতিনিধি ও তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে খুলনা ডিডি অফিস থেকে বেতন অনুমোদন করে আত্মসাৎ করে আসছেন।
অভিযোগে নুরুজ্জামান বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখিতভাবে অভিযোগে নিয়োগ নিয়ে বলেছেন, কলেজ প্রতিষ্ঠার পরে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে সাহানারা নামে একজনকে যুক্তিবিদ্যা প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে সাহানারার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি হলে তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। পদটি অনেক দিন শূন্য থাকার পরে অধ্যক্ষ অনেক টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে কামরুজ্জামানকে নিয়োগ দেন। কোনো নিয়োগ বোর্ড গঠন না করে জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে বেতনের জন্য আবেদন করলে যোগদানের সময় প্রদত্ত সনদের সাথে মিল না থাকায় পুনরায় আবার ইএমআইএস এ ভুয়া এনটিআরসিএ কাগজ তৈরি করে খুলনা অফিসে তৎকালীন হিসাবরক্ষক মনিরের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা ঘুস দিয়ে বেতন অনুমোদন করেন।
ইএমআইএস পোর্টালে ডা. আফছার উদ্দিন কলেজের আবেদনের শিট দেখলে উল্লেখিত ভুয়া সনদপত্রের প্রমাণ পাওয়া যাবে। বাণিজ্য শাখায় দুজন ছাত্রের জন্য ৫ জন শিক্ষক। তরিকুল ইসলাম কার্পাসডাঙ্গা মহাবিদ্যালয়ের ডিগ্রি পর্যায়ের নিয়মিত শিক্ষক। এখনো কার্পাসডাঙ্গা কলেজের শিক্ষক পোর্টাল ও বেনবেস পোর্টালে তার নাম আছে। কার্পাসডাঙ্গা কলেজে তার এখনো বেতন হয়নি। ডা. আফসার উদ্দীন কলেজ এমপিওভুক্ত হবার পর অধ্যক্ষ ১৫ লাখ টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে ১৫ বছর ব্যাকডেটে জাল কাগজ ও জাল নিয়োগের ভুয়া সিলসহ সব জাল কাগজ তৈরি করে পুরাতন হাজিরা খাতা সরিয়ে নতুন জাল হাজিরা খাতা তৈরি করে সকলকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করান।
উক্ত শিক্ষক নতুনভাবে নিয়োগ হলেও বিগত বছরগুলোতে বেনবেজে নাম না থাকায় খুলনা ডিডি অফিসে ‘মনিরের মাধ্যমে’ অধিক টাকা ঘুস দিয়ে বেতন অনুমোদন করে আনেন। উচ্চ মাধ্যমিক নীতিমালা অনুসারে ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক হতে হলে ইংরেজিতে অনার্স অথবা ইংরেজিতে মাস্টার্স থাকতে হবে। ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স করতে হলে ডিগ্রি পর্যায়ে ৩০০ মার্কের ইংরেজি থাকতে হবে। যদিও মারুফের ডিগ্রিতে ইংরেজি বিষয় ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে যে কেউ যে কোনো বিষয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স করতে পারে। তিনি ইংরেজিতে সান্ধ্যকালীন কোর্স করেছেন যা নীতিমালার বহির্ভুত।
ভুয়া মার্কশিট ও জাল এবং নিবন্ধন সার্টিফিকেট অধ্যক্ষের বানানো জাল নিয়োগপত্র ও নীতিমালা বহির্ভূতভাবে অধিক টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে বেতন অনুমোদন করেন। রেজাউল করিম ডা. আফসার উদ্দীন কলেজে পৌরনীতির প্রভাষক ছিলেন। তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেলে তার স্থলে এনটিআরসিএ নিয়োগ না দিলেও ব্যাকডেটে প্রচুর টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে মাহবুলকে নিয়োগ দেন। তিনি দামুড়হুদা বালিকা বিদ্যালয়ে ইন্সট্রাক্টর ছিলেন। এমপিও হবার পর সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ব্যাকডেটে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। মোস্তফা কামাল (ল্যাব এসিটেন্ট) ভি জে স্কুলে চাকরি করতেন। ভুয়া কাগজ তৈরি করে কলেজ এমপিও হবার পর ভুয়া নিয়োগ পান। যেখানে অধিক টাকা ঘুস বাণিজ্য হয়েছে।
ফারজানা আক্তার (ল্যাব এসিটেন্ট) এমপিও হবার পর অধিক টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। হাসিবুল (ল্যাব এসিটেন্ট) এমপিও হবার পর জাল নিয়োগে অধিক টাকা লেনদেন হয়েছে। রুমা খাতুন (আয়া) এমপিও হবার পর নিয়োগ, অধিক টাকা লেনদেন হয়েছে। হাসান আহম্মেদ (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর) কম্পিউটার সার্টিফিকেট জাল দিয়ে বেতন অনুমোদন করেন। হাসানুজ্জামান (অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার) কম্পিউটার সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। কম্পিউটারের জাল সনদ দিয়ে বেতন অনুমোদন করেন। অধ্যক্ষের সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়ে যাচাই করলে আরও প্রকাশ পাবে। কয়েক কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করতে কলেজের সাবেক সভাপতি ফরিদ সাহায্য করেন। অধ্যক্ষের নিয়োগসহ পরবর্তী অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগের জন্য কোনো বোর্ড তৈরি না করে ডিজি ও প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতির সিল কাগজপত্র জাল করতে সহায়তা করেছেন কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের কাছে সকল প্রকার নকল সিল ও স্ক্যান করা নকল ডকুমেন্ট লুকায়িত আছে।
অভিযোগকারী মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকেও মারধর করা হয়েছে। আমি আলমডাঙ্গা থানায় এ বিষয়ে একটি মামলাও দায়ের করেছি। পরিদর্শকের সামনে সত্য কথা বলায় কলেজের সিসি ক্যামেরার সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করে অধ্যক্ষের কক্ষে আমাকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছিল। পদত্যাগপত্রে বাদীর স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য খুনের হুমকিও দেন। তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।’
এ বিষয়ে ডা. আফসার উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি আজ সরেজমিনে তদন্ত করেছে। তদন্ত শেষ হলে সব মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। শেষ না হলে এটি নিয়ে বলা ঠিক নয়। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত কার্যক্রম চলমান।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গার আফসার উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ সেলিমের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ

ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ, কোটি টাকার ঘুস লেনদেন

আপলোড টাইম : ১০:৩৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারী ৮ জন
  • উপ-বৃত্তির টাকা আত্মসাতের জন্য ভুয়া শিক্ষার্থী তৈরি করে কাগজপত্র প্রেরণ
  • অধ্যক্ষ আ.লীগের নেতা হওয়ায় ভুয়া ভাউচার তৈরি করে কলেজের টাকা আত্মসাৎ
  • মোটা অংকের টাকা দিলেই মিলত কাগজপত্র জাল করে ব্যাকডেটে নিয়োগ
  • অভিযোগ তদন্তে জেলা শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আলমডাঙ্গা উপজেলার ডা. আফসার উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুল ইসলাম সেলিমের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঘুস নিয়ে নিয়োগ, নিয়োগ দিতে জাল কাগজপত্র তৈরি, ঘুসের মাধ্যমে লিয়াজু করে বেতন চালুকরণ, পছন্দসই মানুষকে টাকার বিনিময়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ, ভুয়া শিক্ষার্থী ভর্তি দেখানোসহ গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার এবং ভয়-ভীতি দেখানোরও অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে এক কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় অধ্যক্ষসহ কয়েকজনের নামে মামলাও হয়েছে। তবে এই অধ্যক্ষ বলছেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা।
জানা গেছে, ২০০০ সালে ডা. আফছার উদ্দিনের ছেলে মো. সেলিম জামান নিজের টাকায় জমি ক্রয় ও ৪ রুম ছাদ যুক্ত একটি বিল্ডিং নির্মাণ করে কলেজের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠাতা ২০০২ সালে মৌখিকভাবে কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব দেন মাহবুল ইসলাম সেলিমকে। পরবর্তীতে কলেজের প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠাতার সহযোগিতা থাকলেও অধ্যক্ষ সকল প্রকার আয়ের টাকা বিভিন্ন কৌশলে নিজের পকেটে তোলেন। কলেজটি দীর্ঘ ২০ বছর এমপিও না হলেও কলেজের শিক্ষার্থীদের আয়ের টাকা, সরকারি ও বেসরকারি অনুদান সবকিছুই নিজেই ভোগ করতেন। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করলে স্থানীয় প্রভাবশালী ফরিদের মাধ্যমে মারধর করতেন ও সর্বদা আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। অধ্যক্ষ নিজে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি।
এদিকে, ডা. আফসার উদ্দীন কলেজের নুরুজ্জামান নামে এক কর্মচারী চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ওই তদন্ত কমিটি সরেজমিনে কলেজে গিয়ে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করে।
জেলা প্রশাসক বরাবরে দেয়া অভিযোগে নুরুজ্জামান নামের ওই কর্মচারী অধ্যক্ষসহ কলেজের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। স্পষ্ট করে লিখিতভাবে তিনি অভিযোগে বলেছেন, ‘অনলাইনে এমপিও আবেদনের সময় ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানের জমির পরিমাণ দিতে হবে ০১ (এক) একর যা উপজেলা এসিল্যান্ড থেকে জমির কাগজ দেখিয়ে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে হয়। সরেজমিনে ডা. আফছার উদ্দিন কলেজের জমির পরিমাণ মাত্র ৩৩ শতক। তৎকালীন আলমডাঙ্গা উপজেলা এসিল্যান্ডের কাছে অধ্যক্ষ অধিক টাকা ঘুসের প্রস্তাব দিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র চেয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা এসিল্যান্ড সরাসরি প্রত্যয়ন দিতে অস্বীকার করেছিলেন। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ এসিল্যান্ডের স্বাক্ষর স্ক্যান করে জমির জাল খারিজ ও জাল দলিল তৈরি করে ১০৩ শতক জমির হিসাব দাখিল করেন। বর্তমানে এখনো কলেজের নাম দিয়ে অনলাইনে সার্চ দিলে প্রকৃত সত্য ঘটনা জানা যাবে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এমপিওভুক্তির শর্ত মোতাবেক প্রত্যেক বিভাগে কমপক্ষে ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হবে। কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে কোনো ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয় না। দু-একজনের মার্কশিট অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের মার্কশিট যোগাড় করে ওই মার্কশিটের কপি স্ক্যান করে যশোর বোর্ডের আওতায় জেনারেল শাখায় ভর্তি দেখানো হয়েছে। কারণ কারিগরি ও সাধারণ বোর্ড আলাদা ওয়েবসাইট হওয়ায় একই ছাত্র দুই জায়গায় ভর্তি হলে জেনারেল বোর্ড বুঝতে পারবে না।
কলেজে বিজ্ঞান শাখার প্রতি বছরের বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট শিট দেখলে বুঝা যাবে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কতজন। বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থী বা ছাত্র-ছাত্রী না থাকায় যশোর বোর্ড ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করে। কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী ও একাডেমিক স্বীকৃতি কিছুই নেই। কলেজের অধ্যক্ষ জাল একাডেমিক স্বীকৃতি তৈরি করে খুলনা ডিডি অফিসের সাবেক কর্মচারী মনির ও ডিডি হারুনের মাধ্যমে বিশাল অংকের টাকা ঘুস দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের চারজন প্রভাষক, একজন প্রদর্শক, তিনজন ল্যাব অ্যাসিসটেন্টসহ মোট ৮ জনের বেতন অনুমোদন করেন। অথচ বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা শূন্য।
কলেজের অধ্যক্ষের জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতি মাসে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা বসে বসে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকগণ বেতন উত্তোলন করছেন। বাণিজ্য শাখায় ৩-৪ জনের অধিক কোনো বছরই ভর্তি হয় না। মানবিক বা অন্য বিভাগ থেকে আগত যে কেউ বাণিজ্য শাখায় ভর্তি হতে পারে। কিন্তু অধ্যক্ষ অত্র কলেজে বিএম শাখায় ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের গত বছর ও চলমান বছরে ৫০-৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বেআইনিভাবে বাণিজ্য শাখায় ভর্তি করেন। অনলাইনে যশোর বোর্ডের ছাত্র পোর্টাল ও কারিগর বোর্ডের ছাত্র পোর্টালে গেলে উল্লেখিত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে। একই ছাত্র দুই জায়গায় ভর্তি আছে। ভুয়াভাবে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সময় নিজেদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের জন্য কিছু ভুয়া ছাত্র-ছাত্রীর বৃত্তি প্রদানের জন্য কাগজ পাঠান।
ওই বৃত্তির টাকা নিজের মোবাইলে এনে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন। উচ্চমাধ্যমিক কলেজের নীতিমালা অনুসারে অধ্যক্ষ হতে হলে ১২ বছরের প্রভাষক পদে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অত্র কলেজের অধ্যক্ষ ফার্সিতে অনার্স হওয়ায় কলেজ প্রতিষ্ঠাতা তাকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেন। অধ্যক্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় প্রতিষ্ঠাতাকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে নিজের পছন্দ মতো সভাপতি বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এমপিও হওয়ার পরে অনেক ভুয়া নিয়োগ তৈরি করেন। কোনো বোর্ড না বসিয়ে ডিজির প্রতিনিধি ও তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে খুলনা ডিডি অফিস থেকে বেতন অনুমোদন করে আত্মসাৎ করে আসছেন।
অভিযোগে নুরুজ্জামান বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখিতভাবে অভিযোগে নিয়োগ নিয়ে বলেছেন, কলেজ প্রতিষ্ঠার পরে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে সাহানারা নামে একজনকে যুক্তিবিদ্যা প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে সাহানারার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি হলে তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। পদটি অনেক দিন শূন্য থাকার পরে অধ্যক্ষ অনেক টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে কামরুজ্জামানকে নিয়োগ দেন। কোনো নিয়োগ বোর্ড গঠন না করে জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে বেতনের জন্য আবেদন করলে যোগদানের সময় প্রদত্ত সনদের সাথে মিল না থাকায় পুনরায় আবার ইএমআইএস এ ভুয়া এনটিআরসিএ কাগজ তৈরি করে খুলনা অফিসে তৎকালীন হিসাবরক্ষক মনিরের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা ঘুস দিয়ে বেতন অনুমোদন করেন।
ইএমআইএস পোর্টালে ডা. আফছার উদ্দিন কলেজের আবেদনের শিট দেখলে উল্লেখিত ভুয়া সনদপত্রের প্রমাণ পাওয়া যাবে। বাণিজ্য শাখায় দুজন ছাত্রের জন্য ৫ জন শিক্ষক। তরিকুল ইসলাম কার্পাসডাঙ্গা মহাবিদ্যালয়ের ডিগ্রি পর্যায়ের নিয়মিত শিক্ষক। এখনো কার্পাসডাঙ্গা কলেজের শিক্ষক পোর্টাল ও বেনবেস পোর্টালে তার নাম আছে। কার্পাসডাঙ্গা কলেজে তার এখনো বেতন হয়নি। ডা. আফসার উদ্দীন কলেজ এমপিওভুক্ত হবার পর অধ্যক্ষ ১৫ লাখ টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে ১৫ বছর ব্যাকডেটে জাল কাগজ ও জাল নিয়োগের ভুয়া সিলসহ সব জাল কাগজ তৈরি করে পুরাতন হাজিরা খাতা সরিয়ে নতুন জাল হাজিরা খাতা তৈরি করে সকলকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করান।
উক্ত শিক্ষক নতুনভাবে নিয়োগ হলেও বিগত বছরগুলোতে বেনবেজে নাম না থাকায় খুলনা ডিডি অফিসে ‘মনিরের মাধ্যমে’ অধিক টাকা ঘুস দিয়ে বেতন অনুমোদন করে আনেন। উচ্চ মাধ্যমিক নীতিমালা অনুসারে ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক হতে হলে ইংরেজিতে অনার্স অথবা ইংরেজিতে মাস্টার্স থাকতে হবে। ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স করতে হলে ডিগ্রি পর্যায়ে ৩০০ মার্কের ইংরেজি থাকতে হবে। যদিও মারুফের ডিগ্রিতে ইংরেজি বিষয় ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে যে কেউ যে কোনো বিষয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স করতে পারে। তিনি ইংরেজিতে সান্ধ্যকালীন কোর্স করেছেন যা নীতিমালার বহির্ভুত।
ভুয়া মার্কশিট ও জাল এবং নিবন্ধন সার্টিফিকেট অধ্যক্ষের বানানো জাল নিয়োগপত্র ও নীতিমালা বহির্ভূতভাবে অধিক টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে বেতন অনুমোদন করেন। রেজাউল করিম ডা. আফসার উদ্দীন কলেজে পৌরনীতির প্রভাষক ছিলেন। তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেলে তার স্থলে এনটিআরসিএ নিয়োগ না দিলেও ব্যাকডেটে প্রচুর টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে মাহবুলকে নিয়োগ দেন। তিনি দামুড়হুদা বালিকা বিদ্যালয়ে ইন্সট্রাক্টর ছিলেন। এমপিও হবার পর সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ব্যাকডেটে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। মোস্তফা কামাল (ল্যাব এসিটেন্ট) ভি জে স্কুলে চাকরি করতেন। ভুয়া কাগজ তৈরি করে কলেজ এমপিও হবার পর ভুয়া নিয়োগ পান। যেখানে অধিক টাকা ঘুস বাণিজ্য হয়েছে।
ফারজানা আক্তার (ল্যাব এসিটেন্ট) এমপিও হবার পর অধিক টাকা ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। হাসিবুল (ল্যাব এসিটেন্ট) এমপিও হবার পর জাল নিয়োগে অধিক টাকা লেনদেন হয়েছে। রুমা খাতুন (আয়া) এমপিও হবার পর নিয়োগ, অধিক টাকা লেনদেন হয়েছে। হাসান আহম্মেদ (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর) কম্পিউটার সার্টিফিকেট জাল দিয়ে বেতন অনুমোদন করেন। হাসানুজ্জামান (অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার) কম্পিউটার সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। কম্পিউটারের জাল সনদ দিয়ে বেতন অনুমোদন করেন। অধ্যক্ষের সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়ে যাচাই করলে আরও প্রকাশ পাবে। কয়েক কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করতে কলেজের সাবেক সভাপতি ফরিদ সাহায্য করেন। অধ্যক্ষের নিয়োগসহ পরবর্তী অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগের জন্য কোনো বোর্ড তৈরি না করে ডিজি ও প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতির সিল কাগজপত্র জাল করতে সহায়তা করেছেন কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের কাছে সকল প্রকার নকল সিল ও স্ক্যান করা নকল ডকুমেন্ট লুকায়িত আছে।
অভিযোগকারী মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকেও মারধর করা হয়েছে। আমি আলমডাঙ্গা থানায় এ বিষয়ে একটি মামলাও দায়ের করেছি। পরিদর্শকের সামনে সত্য কথা বলায় কলেজের সিসি ক্যামেরার সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করে অধ্যক্ষের কক্ষে আমাকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছিল। পদত্যাগপত্রে বাদীর স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য খুনের হুমকিও দেন। তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।’
এ বিষয়ে ডা. আফসার উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি আজ সরেজমিনে তদন্ত করেছে। তদন্ত শেষ হলে সব মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। শেষ না হলে এটি নিয়ে বলা ঠিক নয়। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত কার্যক্রম চলমান।’