ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরে আশঙ্কাজনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৯:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

হাসপাতালে সরবরাহ নেই কলেরা স্যালাইন, অতিরিক্ত রোগীর চাপে শয্যা সঙ্কট

 

প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরে আশঙ্কাজনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন থাকলেও সংকট দেখা দিয়েছে কলেরা স্যালাইনে। অভিযোগ রয়েছে, গত এক মাস ধরে ওষুধ সংকট থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী হাসপাতালে তা সরবরাহ করা হয়নি। ফলে বাইরে থেকে রোগীদের ওষুধ কিনতে হচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৩ জন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। একই সময়ে আউটডোর থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শতাধিক রোগী। আক্রান্তদের সিংহভাগই শিশু।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে দেখা যায়, ‘হাসপাতালের ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। শয্যা সঙ্কটে রোগীদের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। অতিরিক্ত এই রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও নার্সদের। মেহেরপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর একাধিক স্বজনেরা জানান, ‘হাসপাতাল থেকে খাবার স্যালাইন দেওয়া হলেও বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় শয্যা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে শিশু রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কলেরা স্যালাইনের সংকট রয়েছে। বারবার চাহিদা দিলেও কর্তৃপক্ষ স্যালাইন সরবরাহ করেনি বলে জানান স্টোরকিপার দবির উদ্দীন। তিনি আরও জানান, দুইশটি কলেরা স্যালাইন মজুদ ছিল জরুরি সেবার জন্য। সেগুলো ওয়ার্ডে দেওয়ার পর আর কোনো স্যালাইন অবশিষ্ট নেই।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন জান্নাতুল মাওয়া নামের এক শিশুর বাবা সাবাদুল বলেন, ‘গত শনিবার ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে খাবার স্যালাইন দেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন না থাকায় বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এখানের চিকিৎসকরাও রোগিদের প্রতি যত্নবান না। নার্সদের নিকট থেকেও ভালো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
চৌগাছা গ্রামের দুই বছর বয়সী শিশু মাসুমা ভর্তি রয়েছে গত শুক্রবার থেকে। তার বাবা আমানুর রহমান বলেন, ‘ভর্তির পর খাবার স্যালাইন হাতে ধরিয়ে দিয়েই যেন হাসপাতালের দায়িত্ব শেষ। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হাতে স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নার্সরা রোগীর খোঁজখবর নিলেও ডাক্তারদের দেখা মিলছে না। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত সেবিকারা জানান, রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। খাবার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তবে কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় রোগীদের স্বজনকে বাইরে থেকে কিনতে বলা হচ্ছে। বয়ষ্করা খাবার স্যালাইন খেতে পারছে, তাই তাদের বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কেনা লাগছে না। কিন্তু শিশুরা খাবার স্যালাইন খেতে অনীহা করে। বাধ্য হয়েই কলেরা স্যালাইন কিনতে বলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী বলেন, তীব্র শীতে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, কয়েক মাস যাবত কলেরা স্যালাইন সংকট রয়েছে। চাহিদা দেয়ার পরও কোনো জবাব মেলেনি। তবে ডাক্তারদের অবহেলার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেক সময় সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটছে। তবে চিকিৎসক ও সেবিকারা সাধ্য মতো কাজ করে যাচ্ছেন।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী জানান, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও কুয়াশার কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত খাবার ও কলেরা স্যালাইন রয়েছে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন কলেরা স্যালাইন নেই তা দেখা হচ্ছে। রোগীদের স্বাস্থ্য সেবায় ডাক্তারদের কোনো অবহেলা নেই। তবে কোথাও কোথাও ডাক্তার সংকটের কারণে সেবা দেওয়াটা একটু কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরে আশঙ্কাজনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া

আপলোড টাইম : ১১:৩৯:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

হাসপাতালে সরবরাহ নেই কলেরা স্যালাইন, অতিরিক্ত রোগীর চাপে শয্যা সঙ্কট

 

প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরে আশঙ্কাজনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন থাকলেও সংকট দেখা দিয়েছে কলেরা স্যালাইনে। অভিযোগ রয়েছে, গত এক মাস ধরে ওষুধ সংকট থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী হাসপাতালে তা সরবরাহ করা হয়নি। ফলে বাইরে থেকে রোগীদের ওষুধ কিনতে হচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৩ জন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। একই সময়ে আউটডোর থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শতাধিক রোগী। আক্রান্তদের সিংহভাগই শিশু।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে দেখা যায়, ‘হাসপাতালের ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। শয্যা সঙ্কটে রোগীদের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। অতিরিক্ত এই রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও নার্সদের। মেহেরপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর একাধিক স্বজনেরা জানান, ‘হাসপাতাল থেকে খাবার স্যালাইন দেওয়া হলেও বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় শয্যা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে শিশু রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কলেরা স্যালাইনের সংকট রয়েছে। বারবার চাহিদা দিলেও কর্তৃপক্ষ স্যালাইন সরবরাহ করেনি বলে জানান স্টোরকিপার দবির উদ্দীন। তিনি আরও জানান, দুইশটি কলেরা স্যালাইন মজুদ ছিল জরুরি সেবার জন্য। সেগুলো ওয়ার্ডে দেওয়ার পর আর কোনো স্যালাইন অবশিষ্ট নেই।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন জান্নাতুল মাওয়া নামের এক শিশুর বাবা সাবাদুল বলেন, ‘গত শনিবার ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে খাবার স্যালাইন দেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন না থাকায় বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এখানের চিকিৎসকরাও রোগিদের প্রতি যত্নবান না। নার্সদের নিকট থেকেও ভালো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
চৌগাছা গ্রামের দুই বছর বয়সী শিশু মাসুমা ভর্তি রয়েছে গত শুক্রবার থেকে। তার বাবা আমানুর রহমান বলেন, ‘ভর্তির পর খাবার স্যালাইন হাতে ধরিয়ে দিয়েই যেন হাসপাতালের দায়িত্ব শেষ। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হাতে স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নার্সরা রোগীর খোঁজখবর নিলেও ডাক্তারদের দেখা মিলছে না। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত সেবিকারা জানান, রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। খাবার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তবে কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় রোগীদের স্বজনকে বাইরে থেকে কিনতে বলা হচ্ছে। বয়ষ্করা খাবার স্যালাইন খেতে পারছে, তাই তাদের বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কেনা লাগছে না। কিন্তু শিশুরা খাবার স্যালাইন খেতে অনীহা করে। বাধ্য হয়েই কলেরা স্যালাইন কিনতে বলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী বলেন, তীব্র শীতে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, কয়েক মাস যাবত কলেরা স্যালাইন সংকট রয়েছে। চাহিদা দেয়ার পরও কোনো জবাব মেলেনি। তবে ডাক্তারদের অবহেলার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেক সময় সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটছে। তবে চিকিৎসক ও সেবিকারা সাধ্য মতো কাজ করে যাচ্ছেন।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী জানান, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও কুয়াশার কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত খাবার ও কলেরা স্যালাইন রয়েছে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন কলেরা স্যালাইন নেই তা দেখা হচ্ছে। রোগীদের স্বাস্থ্য সেবায় ডাক্তারদের কোনো অবহেলা নেই। তবে কোথাও কোথাও ডাক্তার সংকটের কারণে সেবা দেওয়াটা একটু কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।