ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

বিলুপ্তির পথে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪৮:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক: পৃথিবীতে এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উপায়ে মডিফায়েড মিলে প্রায় ৩ শ’র মতো জাতের ছাগল আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্থানীয় জাতের কালো ছাগল বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলকে অন্যতম সেরা জাতের ছাগল বলা হয়। বাংলাদেশের ছাগলের মধ্যে মেহেরপুরের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস গুনে ও চামড়ায় বিশ^সেরা। মেহেরপুরের এই ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প হাত নিয়েছে। একটি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প অপরটি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্প। দুটি প্রকল্পে কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতির কারণে বিলুপ্তির পথে বিশ^বিখ্যাত ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগল জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষষা প্রকল্প (বিএলআরআই)-এর তত্ত্বাবধায়নে মেহেরপুর সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামে ৩০ জন ছাগল খামারি নিয়ে চলমান প্রকল্পে কোনো খামারির কাছে নেয় ব্লাক বেঙ্গল ছাগল। প্রকল্প থেকে কিছু পাঠা বিনামূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো খামারি পাঠা পায়নি। উপরন্ত খামারিদের বরাদ্দের পাঠা খামারিদের দিয়ে উত্তোলন করে খামারি বাড়ি থেকে পাঠা নিয়ে বেচে দিয়েছেন প্রকল্প রিচার্স অ্যাসোসিয়েট মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না বলে অভিযোগ রয়েছে। খামারি পাঠা কিনতে চাইলে সরকারি মূল্য ১২০০ টাকা থাকলেও খামারির কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ২০০০ হাজার টাকা। প্রকল্পের পক্ষ থেকে খামারিদের খাবার ও ওষুধ দেওযার কথা থাকলেও খামারিরা নাম মাত্র ২ বার খাবার পেয়েছে তাও একবার ধানের তুস।

বেঙ্গল ছাগল জাত উন্নয়ন, সম্প্রসারণ প্রকল্প প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে মেহেরপুরে প্রতি উপজেলায় ১০ জন সিজিএফ ও ২জন ব্যাককিপার খামারি নিয়ে প্রকল্পে সময় শেষ হলেও বরাদ্দকৃত প্রণোদনা পায়নি খামারিরা। খাবার ওষুধ ঘর দুধ বাবদ সিজিএফ খামারিদের ৫৮ হাজার ৮ শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পের ২ বছরে শুধুমাত্র ঘর পেছে মাত্র ৬ জন খামারি। বাকি ৪ জনের কাজ চলমান। ব্যাককিপার খামারির জন্য ৩৮ হাজার ৮ শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মেহেরপুরের রাফি পেয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা জেলায় বাকি ৫ জন খামারিকে নামমাত্র কিছু খাবার দেওয়া হয়েছে।

ব্যাককিপার খামারি সুকেন মণ্ডল বলেন, ‘আমাকে খাবারের বস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে নেয়। তারপর শুধুমাত্র একটি ছাগল ঘরের পলাস্টিকের মাচা আর কিছুমাত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে খাবারে বস্তা নিয়ে চলে যায়। তারপর আর কোনো যোগাযোগ নেয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল মেলায় যাদের এই জাতের ছাগল আছে, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের পুরস্কার দেওয়া হয়। আবার পশু হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গেলেও এই জাতের ছাগল পালন করতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

গবেষণা প্রকল্পে কোনো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল নেয় কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে রিচার্স অ্যাসোসিয়েট মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না বলেন, ‘খামারির তালিকা আমি করিনি। তালিকাভুক্ত খামারির কাছে পূর্বে হয়ত এই জাতের ছাগল ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অল্প বেতনে চাকরি করি, তাই পাঠা বিক্রিসহ মাঠে কিছু অনিয়ম করেছি। এই নিয়ে নিউজ করেন না।’

মেহরপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘গবেষণা প্রকল্পে কিছু মিশ্রন ছাগল আছে। মেহেরপুরে এই জাতের ছাগল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রোকেয়া খাতুনের ক্রস ছাগলের চারটি বাচ্চা হয়েছে তাই পুরস্কার দিয়েছি।’ এই পুরস্কার শুধুমাত্র ব্লাক বেঙ্গল পালনকারী খামারীদের জন্য আপনি রোকেয়া খাতুনকে কীভাবে দিলেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্লাক বেঙ্গল পালনকারী খামারী না পেলে আমি কী করব।’ মেহেরপুর ব্লাক বেঙ্গল পালনকারী খামারী নেয়, তাহলে আপনাদের প্রকল্প কীসের ওপর চলছে, এই প্রশ্নের তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।

গবেষণা প্রকল্পে কোনো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল নেয় কেন প্রশ্নের জবাবে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্পের পিডি সাদেক আহম্মেদ বলেন, ‘আমি মিটিং আছি, মেহেরপুর গেলে আপনাদের সাথে সাক্ষাতে কথা হবে।’ বেঙ্গল ছাগল জাত উন্নয়ন, সম্প্রসারণ প্রকল্পের পিডি শরিফুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্প শেষ তাহলে খামারীরা সরকারের দেওয়া বরাদ্দ কেন পেল না, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে জানাবো।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বিলুপ্তির পথে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল

আপলোড টাইম : ০৭:৪৮:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদক: পৃথিবীতে এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উপায়ে মডিফায়েড মিলে প্রায় ৩ শ’র মতো জাতের ছাগল আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্থানীয় জাতের কালো ছাগল বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলকে অন্যতম সেরা জাতের ছাগল বলা হয়। বাংলাদেশের ছাগলের মধ্যে মেহেরপুরের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস গুনে ও চামড়ায় বিশ^সেরা। মেহেরপুরের এই ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প হাত নিয়েছে। একটি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প অপরটি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্প। দুটি প্রকল্পে কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতির কারণে বিলুপ্তির পথে বিশ^বিখ্যাত ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগল জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষষা প্রকল্প (বিএলআরআই)-এর তত্ত্বাবধায়নে মেহেরপুর সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামে ৩০ জন ছাগল খামারি নিয়ে চলমান প্রকল্পে কোনো খামারির কাছে নেয় ব্লাক বেঙ্গল ছাগল। প্রকল্প থেকে কিছু পাঠা বিনামূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো খামারি পাঠা পায়নি। উপরন্ত খামারিদের বরাদ্দের পাঠা খামারিদের দিয়ে উত্তোলন করে খামারি বাড়ি থেকে পাঠা নিয়ে বেচে দিয়েছেন প্রকল্প রিচার্স অ্যাসোসিয়েট মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না বলে অভিযোগ রয়েছে। খামারি পাঠা কিনতে চাইলে সরকারি মূল্য ১২০০ টাকা থাকলেও খামারির কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ২০০০ হাজার টাকা। প্রকল্পের পক্ষ থেকে খামারিদের খাবার ও ওষুধ দেওযার কথা থাকলেও খামারিরা নাম মাত্র ২ বার খাবার পেয়েছে তাও একবার ধানের তুস।

বেঙ্গল ছাগল জাত উন্নয়ন, সম্প্রসারণ প্রকল্প প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে মেহেরপুরে প্রতি উপজেলায় ১০ জন সিজিএফ ও ২জন ব্যাককিপার খামারি নিয়ে প্রকল্পে সময় শেষ হলেও বরাদ্দকৃত প্রণোদনা পায়নি খামারিরা। খাবার ওষুধ ঘর দুধ বাবদ সিজিএফ খামারিদের ৫৮ হাজার ৮ শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পের ২ বছরে শুধুমাত্র ঘর পেছে মাত্র ৬ জন খামারি। বাকি ৪ জনের কাজ চলমান। ব্যাককিপার খামারির জন্য ৩৮ হাজার ৮ শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মেহেরপুরের রাফি পেয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা জেলায় বাকি ৫ জন খামারিকে নামমাত্র কিছু খাবার দেওয়া হয়েছে।

ব্যাককিপার খামারি সুকেন মণ্ডল বলেন, ‘আমাকে খাবারের বস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে নেয়। তারপর শুধুমাত্র একটি ছাগল ঘরের পলাস্টিকের মাচা আর কিছুমাত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে খাবারে বস্তা নিয়ে চলে যায়। তারপর আর কোনো যোগাযোগ নেয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল মেলায় যাদের এই জাতের ছাগল আছে, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের পুরস্কার দেওয়া হয়। আবার পশু হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গেলেও এই জাতের ছাগল পালন করতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

গবেষণা প্রকল্পে কোনো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল নেয় কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে রিচার্স অ্যাসোসিয়েট মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না বলেন, ‘খামারির তালিকা আমি করিনি। তালিকাভুক্ত খামারির কাছে পূর্বে হয়ত এই জাতের ছাগল ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অল্প বেতনে চাকরি করি, তাই পাঠা বিক্রিসহ মাঠে কিছু অনিয়ম করেছি। এই নিয়ে নিউজ করেন না।’

মেহরপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘গবেষণা প্রকল্পে কিছু মিশ্রন ছাগল আছে। মেহেরপুরে এই জাতের ছাগল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রোকেয়া খাতুনের ক্রস ছাগলের চারটি বাচ্চা হয়েছে তাই পুরস্কার দিয়েছি।’ এই পুরস্কার শুধুমাত্র ব্লাক বেঙ্গল পালনকারী খামারীদের জন্য আপনি রোকেয়া খাতুনকে কীভাবে দিলেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্লাক বেঙ্গল পালনকারী খামারী না পেলে আমি কী করব।’ মেহেরপুর ব্লাক বেঙ্গল পালনকারী খামারী নেয়, তাহলে আপনাদের প্রকল্প কীসের ওপর চলছে, এই প্রশ্নের তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।

গবেষণা প্রকল্পে কোনো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল নেয় কেন প্রশ্নের জবাবে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্পের পিডি সাদেক আহম্মেদ বলেন, ‘আমি মিটিং আছি, মেহেরপুর গেলে আপনাদের সাথে সাক্ষাতে কথা হবে।’ বেঙ্গল ছাগল জাত উন্নয়ন, সম্প্রসারণ প্রকল্পের পিডি শরিফুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্প শেষ তাহলে খামারীরা সরকারের দেওয়া বরাদ্দ কেন পেল না, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে জানাবো।’