ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

বাংলা নববর্ষ-ঈদ দুই উৎসব এক মাসে, তবুও বাজারে নেই বেচা-বিক্রি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:

মলিন মুখে বসে আছেন মেহেরপুরের প্রসিদ্ধ কাপড় বিপণন প্রতিষ্ঠান জামান গার্মেন্টসের মনিরুজ্জামান দিপু ও গাংনীর কাজল বস্ত্রালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান কাজল। সেই সাথে ৮-১০ জন কর্মচারীও পার করছেন অলস সময়। গত দুই বছর করোনাকালীন অন্তত ৪টি ঈদ গত হয়েছে। সে সময় ব্যবসা হয়নি। এবার কোনো বিধি-নিষেধ না থাকলেও ক্রেতা সাধারণের দেখা নেই। শুধু জামান আর কাজল বস্ত্রালয়ই নয়, এমন দশা মেহেরপুরের বিভিন্ন বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের। বিপণিবিতানে পুষ্পা-কাঁচাবাদামের মতো বাহারি নাম আর ডিজাইনের পোশাকের পসরা বসলেও নেই কাক্সিক্ষত ক্রেতা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সেইসঙ্গে কৃষকের মাঠের ফসল বিক্রি না হওয়ায় তারা বাজারমুখী হচ্ছেন না। আর যারা আসছেন তারাও বাজার যাচাই করেই ফিরে যাচ্ছেন। ফলে ক্রেতাশূন্য বিভিন্ন বিপণিবিতান। তবে হতাশ হয়নি ব্যবসায়ীরা। আরও কিছুদিন পর বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদী পোশাক ব্যবসায়ীরা। এ বছর রোজার মধ্যেই পহেলা বৈশাখ। দুটি উৎসবেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। এসময় তরুণ-তরুণী ও বয়স্করা উৎসব পালনের জন্য নানা অনুসঙ্গ কিনে থাকেন। এর মধ্যে বিশেষ করে পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ ও শাাড়ি। গত বছর পোশাকে ছিল বর্ষার ছাপ। নান্দনিক কারুকার্য খচিত বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি ও সালোয়ার কামিজ ছিল তরুণ-তরুণীদের একচেটিয়া পছন্দ। এবারও দোকানিরা গত বছরের টার্গেট নিয়ে আমদানি করেছেন বাহারি ডিজাইনের অনুষঙ্গ। কিন্তু জমে ওঠেনি কেনাকাটা। ক্রেতা-সাধারণের মতে চলতি বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খেতের ফসল বিক্রি করা না হওয়ায় কেনাকাটা করতে পারছেন না। আরও কিছুদিন পর বাজারমুখী হবেন ক্রেতারা।

ননদ লাভলী আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে গাংনী এস এম প্লাজায় এসেছিলেন ভাটপাড়া গ্রামের মৌসুমী খাতুন। বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও ডিজাইন ও সুতা পছন্দ না হওয়ার অজুহাতে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন। তাঁদের পছন্দ ভারতীয় নায়িকা পুষ্পার পোশাক। বাজারে আমদানিও বেশ। সামনে সপ্তাহে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে কেনাকাটা করবেন বলে জানান তিনি।

স্কুলছাত্রী নুসরাত জামান বলেন, পুষ্পার একটি ড্রেস পছন্দ হয়েছিল। অনেক বেশি দাম, তাই নেওয়া হচ্ছে না। নতুন পোশাক পাওয়া গেলেও দাম হাঁকছেন বেশি। অনেকেই কেনা দামের দ্বিগুন দাম চাইছেন। তাই ব্যবসায়ীদের ওপর আস্থা হারিয়ে গেছে। যা কিনব তা যাচাই করেই কিনব। গাড়াডোব গ্রামের স্কুলছাত্র তৌহিদুল বলেন, কাঁচা বাদাম প্যান্ট কিনব বলে বাজারে এসেছিলাম। অনেক দাম চাইছে। বাজারের একটি পোশাকের দোকানেও মূল্য তালিকা টাঙানো নেই। আমরা দামের ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ।

রকি গার্মেন্টেসের মালিক রকি জানান, মেয়েদের পুষ্পা আর ছেলেদের কাঁচা বাদাম পছন্দ। সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভারতের ভুবন বাদ্যকরের গায়ে থাকা পোশাকের আদলে তৈরি করা হয়েছে পোশাক। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাঁচা বাদাম’। অনেকেই এ পোশাক নেওয়ার জন্য দোকানিদের কাছে আগেই বায়না দিয়েছেন। তবে বাঙালি নারীদের চিরায়িত পোশাক শাড়ির চাহিদা আগের মতোই। গাংনীর জামান গার্মেন্টেসের মালিক জামান জানান, রোজা শুরুর আগের সপ্তাহে বেচা-বিক্রির একটি ঝুল তোড় গেছে। রোজার দশ দিন হলো বাজারে ক্রেতা নেই। যারা আসছেন, তারা পরে কিনবেন বলে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই গ্রামের দোকান থেকেও কেনাকাটা সারছেন।

গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি স্বপন জানান, দীর্ঘদিনের বিধি-নিষেধের পর এবার মাহে রমজান শুরু হয়েছে মাত্র ১০ দিন হয়েছে। এখনো অনেক সময় সামনে। রমজানের মাঝামাঝিতে বাজার জমে উঠবে। ব্যবসায়ীরা এখন অলস সময় পার করলেও কয়েকদিন পর দোকানে দাঁড়ানো যাবে না। তবে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি মূল্য না নিতে পারে, সে ব্যাপারে সকলকেই অবহিত করা হয়েছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম বলেন, প্রচ- গরমে দিনের বেলায় ক্রেতা না থাকলেও সন্ধ্যার পর পোশাকের দোকানে ভিড় হয়। ক্রেতা সাধারণ ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে বিশেষ নজরদারি করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা পোশাকের দাম বেশি চাইলে আমার কাছে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই বাজার মনিটরিং কার্যক্রম শুরু হবে। সূত্র- ঢাকাপোস্ট

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বাংলা নববর্ষ-ঈদ দুই উৎসব এক মাসে, তবুও বাজারে নেই বেচা-বিক্রি

আপলোড টাইম : ১০:০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন:

মলিন মুখে বসে আছেন মেহেরপুরের প্রসিদ্ধ কাপড় বিপণন প্রতিষ্ঠান জামান গার্মেন্টসের মনিরুজ্জামান দিপু ও গাংনীর কাজল বস্ত্রালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান কাজল। সেই সাথে ৮-১০ জন কর্মচারীও পার করছেন অলস সময়। গত দুই বছর করোনাকালীন অন্তত ৪টি ঈদ গত হয়েছে। সে সময় ব্যবসা হয়নি। এবার কোনো বিধি-নিষেধ না থাকলেও ক্রেতা সাধারণের দেখা নেই। শুধু জামান আর কাজল বস্ত্রালয়ই নয়, এমন দশা মেহেরপুরের বিভিন্ন বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের। বিপণিবিতানে পুষ্পা-কাঁচাবাদামের মতো বাহারি নাম আর ডিজাইনের পোশাকের পসরা বসলেও নেই কাক্সিক্ষত ক্রেতা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সেইসঙ্গে কৃষকের মাঠের ফসল বিক্রি না হওয়ায় তারা বাজারমুখী হচ্ছেন না। আর যারা আসছেন তারাও বাজার যাচাই করেই ফিরে যাচ্ছেন। ফলে ক্রেতাশূন্য বিভিন্ন বিপণিবিতান। তবে হতাশ হয়নি ব্যবসায়ীরা। আরও কিছুদিন পর বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদী পোশাক ব্যবসায়ীরা। এ বছর রোজার মধ্যেই পহেলা বৈশাখ। দুটি উৎসবেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। এসময় তরুণ-তরুণী ও বয়স্করা উৎসব পালনের জন্য নানা অনুসঙ্গ কিনে থাকেন। এর মধ্যে বিশেষ করে পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ ও শাাড়ি। গত বছর পোশাকে ছিল বর্ষার ছাপ। নান্দনিক কারুকার্য খচিত বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি ও সালোয়ার কামিজ ছিল তরুণ-তরুণীদের একচেটিয়া পছন্দ। এবারও দোকানিরা গত বছরের টার্গেট নিয়ে আমদানি করেছেন বাহারি ডিজাইনের অনুষঙ্গ। কিন্তু জমে ওঠেনি কেনাকাটা। ক্রেতা-সাধারণের মতে চলতি বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খেতের ফসল বিক্রি করা না হওয়ায় কেনাকাটা করতে পারছেন না। আরও কিছুদিন পর বাজারমুখী হবেন ক্রেতারা।

ননদ লাভলী আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে গাংনী এস এম প্লাজায় এসেছিলেন ভাটপাড়া গ্রামের মৌসুমী খাতুন। বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও ডিজাইন ও সুতা পছন্দ না হওয়ার অজুহাতে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন। তাঁদের পছন্দ ভারতীয় নায়িকা পুষ্পার পোশাক। বাজারে আমদানিও বেশ। সামনে সপ্তাহে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে কেনাকাটা করবেন বলে জানান তিনি।

স্কুলছাত্রী নুসরাত জামান বলেন, পুষ্পার একটি ড্রেস পছন্দ হয়েছিল। অনেক বেশি দাম, তাই নেওয়া হচ্ছে না। নতুন পোশাক পাওয়া গেলেও দাম হাঁকছেন বেশি। অনেকেই কেনা দামের দ্বিগুন দাম চাইছেন। তাই ব্যবসায়ীদের ওপর আস্থা হারিয়ে গেছে। যা কিনব তা যাচাই করেই কিনব। গাড়াডোব গ্রামের স্কুলছাত্র তৌহিদুল বলেন, কাঁচা বাদাম প্যান্ট কিনব বলে বাজারে এসেছিলাম। অনেক দাম চাইছে। বাজারের একটি পোশাকের দোকানেও মূল্য তালিকা টাঙানো নেই। আমরা দামের ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ।

রকি গার্মেন্টেসের মালিক রকি জানান, মেয়েদের পুষ্পা আর ছেলেদের কাঁচা বাদাম পছন্দ। সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভারতের ভুবন বাদ্যকরের গায়ে থাকা পোশাকের আদলে তৈরি করা হয়েছে পোশাক। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাঁচা বাদাম’। অনেকেই এ পোশাক নেওয়ার জন্য দোকানিদের কাছে আগেই বায়না দিয়েছেন। তবে বাঙালি নারীদের চিরায়িত পোশাক শাড়ির চাহিদা আগের মতোই। গাংনীর জামান গার্মেন্টেসের মালিক জামান জানান, রোজা শুরুর আগের সপ্তাহে বেচা-বিক্রির একটি ঝুল তোড় গেছে। রোজার দশ দিন হলো বাজারে ক্রেতা নেই। যারা আসছেন, তারা পরে কিনবেন বলে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই গ্রামের দোকান থেকেও কেনাকাটা সারছেন।

গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি স্বপন জানান, দীর্ঘদিনের বিধি-নিষেধের পর এবার মাহে রমজান শুরু হয়েছে মাত্র ১০ দিন হয়েছে। এখনো অনেক সময় সামনে। রমজানের মাঝামাঝিতে বাজার জমে উঠবে। ব্যবসায়ীরা এখন অলস সময় পার করলেও কয়েকদিন পর দোকানে দাঁড়ানো যাবে না। তবে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি মূল্য না নিতে পারে, সে ব্যাপারে সকলকেই অবহিত করা হয়েছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম বলেন, প্রচ- গরমে দিনের বেলায় ক্রেতা না থাকলেও সন্ধ্যার পর পোশাকের দোকানে ভিড় হয়। ক্রেতা সাধারণ ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে বিশেষ নজরদারি করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা পোশাকের দাম বেশি চাইলে আমার কাছে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই বাজার মনিটরিং কার্যক্রম শুরু হবে। সূত্র- ঢাকাপোস্ট