ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

পূজামণ্ডপে ইসলামী গান পরিবেশন; প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩০:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রামের একটি পূজামণ্ডপে ইসলামী গান পরিবেশনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। সামাজিক মাধ্যমে চলছে বিতর্কের সুনামি। ইসলামী দলসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা কথা বলেছেন। সবচেয়ে গুরুতর বিষয়, গান পরিবেশনকারী দু’জন শিল্পীকে, যারা শিক্ষকও, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অশুভ উদ্দেশ্যে একটি মহল নানা কায়দায় একের পর এক চক্রান্ত করে চলেছে। এর অন্যতম হাতিয়ার সংখ্যালঘু ইস্যু। এসব কাজে পতিত স্বৈরাচারের মিত্র দেশটির প্রত্যক্ষ ইন্ধন আছে তা সবার জানা। দেশটির গণমাধ্যমও এ বিষয়ে অব্যাহতভাবে উদ্ভট অসত্য বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করেই চলেছে।
পূজামণ্ডপে ইসলামী গান পরিবেশনের ঘটনা আমরা ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছি। বিষয়টিকে বিতর্কিত করতে একটা মহলকে ঠাণ্ডা মাথায় প্রচার-প্রপাগান্ডা করতে দেখা গেছে সামাজিকমাধ্যমে। একটি সঙ্গীত সংগঠনের শিল্পীরা কোনো একটি প্রাকৃতিক পরিবেশে গান গেয়েছিলেন। সেই ছবি সম্পাদনা করে পেছনে পূজামণ্ডপের ছবি লাগিয়ে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। এমনভাবে ছবির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, যেন শিল্পীরা পূজার অনুষ্ঠানে গিয়ে গায়ের জোরে গান গাওয়ার সুযোগ নিয়েছেন। ছবিটির শত শত শেয়ার হয়েছে। ছবি সম্পাদনা করে এমন জঘন্য মিথ্যাচার নিঃসন্দেহে সাইবার অপরাধ। কিন্তু পূজামণ্ডপের সাথে জড়িয়ে এমন প্রচারণা সাধারণ অপরাধ নয়, এটি একই সাথে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অপরাধ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং দেশ ও জাতির স্থিতিশীলতা নষ্টের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। পুলিশ সেই অপরাধীদের একজনকেও গ্রেফতার বা চিহ্নিত করতে পারেনি। অথচ চট্টগ্রামে পূজা কমিটির নেতা সজল দত্তের অনুরোধে গান পরিবেশনকারী শিল্পীদের আটকের ক্ষেত্রে পারঙ্গমতা দেখিয়েছে। আমরা পরিবেশিত দু’টি গানের বাণী দেখেছি। শাহ আবদুল করিমের গানটি দেশের সর্বত্র সব অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়। এটির প্রসঙ্গ ধর্মীয় সম্প্রীতি, সহাবস্থান। কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর মনে আঘাত লাগার কোনো কারণ নেই। দ্বিতীয় গানটিতে ইসলামের সর্বজনীনতার কথা বলা হয়েছে। এই গান সর্ব ধর্মের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে পানি ঘোলা কি ঠিক? আমরা শিল্পীদের আটকের নিন্দা জানাই। দাবি জানাই, সজল দত্ত কাদের পরামর্শে, কী উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীদের মণ্ডপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানালেন তা খতিয়ে দেখতে। পূজা উদযাপন কমিটি কি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? শিল্পীরা কোন গান পরিবেশন করবেন সে বিষয়ে কি আলোচনা করেছিল? যদি কমিটির সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে তাহলে এখন বিতর্কের সময় তারা কেন মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে? তারা চুপ থাকলে মনে হতে পারে, তারা ইচ্ছা করে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছে। আমরা চাই, পুলিশ এ বিষয়ে পূজা কমিটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সত্য উদ্ঘাটন করবে।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের সরকার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ কোনো কিছু করতে বাকি রাখেনি। তারপরও যে দুয়েকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তাতে কারা গ্রেফতার হয়েছে সে সব খবর গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু তাতে ভারতীয় প্রচারণা অথবা সামাজিক মাধ্যমে কুচক্রী মহলের অপপ্রচার- কোনোটিই বন্ধ হয়নি। আমরা বলতে চাই, যারা সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়, সামাজিক মিডিয়ায় ছবি সম্পাদনা করে অপপ্রচার চালায় তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা সবচেয়ে বেশি জরুরি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পূজামণ্ডপে ইসলামী গান পরিবেশন; প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করুন

আপলোড টাইম : ০৮:৩০:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

চট্টগ্রামের একটি পূজামণ্ডপে ইসলামী গান পরিবেশনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। সামাজিক মাধ্যমে চলছে বিতর্কের সুনামি। ইসলামী দলসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা কথা বলেছেন। সবচেয়ে গুরুতর বিষয়, গান পরিবেশনকারী দু’জন শিল্পীকে, যারা শিক্ষকও, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অশুভ উদ্দেশ্যে একটি মহল নানা কায়দায় একের পর এক চক্রান্ত করে চলেছে। এর অন্যতম হাতিয়ার সংখ্যালঘু ইস্যু। এসব কাজে পতিত স্বৈরাচারের মিত্র দেশটির প্রত্যক্ষ ইন্ধন আছে তা সবার জানা। দেশটির গণমাধ্যমও এ বিষয়ে অব্যাহতভাবে উদ্ভট অসত্য বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করেই চলেছে।
পূজামণ্ডপে ইসলামী গান পরিবেশনের ঘটনা আমরা ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছি। বিষয়টিকে বিতর্কিত করতে একটা মহলকে ঠাণ্ডা মাথায় প্রচার-প্রপাগান্ডা করতে দেখা গেছে সামাজিকমাধ্যমে। একটি সঙ্গীত সংগঠনের শিল্পীরা কোনো একটি প্রাকৃতিক পরিবেশে গান গেয়েছিলেন। সেই ছবি সম্পাদনা করে পেছনে পূজামণ্ডপের ছবি লাগিয়ে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। এমনভাবে ছবির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, যেন শিল্পীরা পূজার অনুষ্ঠানে গিয়ে গায়ের জোরে গান গাওয়ার সুযোগ নিয়েছেন। ছবিটির শত শত শেয়ার হয়েছে। ছবি সম্পাদনা করে এমন জঘন্য মিথ্যাচার নিঃসন্দেহে সাইবার অপরাধ। কিন্তু পূজামণ্ডপের সাথে জড়িয়ে এমন প্রচারণা সাধারণ অপরাধ নয়, এটি একই সাথে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অপরাধ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং দেশ ও জাতির স্থিতিশীলতা নষ্টের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। পুলিশ সেই অপরাধীদের একজনকেও গ্রেফতার বা চিহ্নিত করতে পারেনি। অথচ চট্টগ্রামে পূজা কমিটির নেতা সজল দত্তের অনুরোধে গান পরিবেশনকারী শিল্পীদের আটকের ক্ষেত্রে পারঙ্গমতা দেখিয়েছে। আমরা পরিবেশিত দু’টি গানের বাণী দেখেছি। শাহ আবদুল করিমের গানটি দেশের সর্বত্র সব অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়। এটির প্রসঙ্গ ধর্মীয় সম্প্রীতি, সহাবস্থান। কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর মনে আঘাত লাগার কোনো কারণ নেই। দ্বিতীয় গানটিতে ইসলামের সর্বজনীনতার কথা বলা হয়েছে। এই গান সর্ব ধর্মের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে পানি ঘোলা কি ঠিক? আমরা শিল্পীদের আটকের নিন্দা জানাই। দাবি জানাই, সজল দত্ত কাদের পরামর্শে, কী উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীদের মণ্ডপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানালেন তা খতিয়ে দেখতে। পূজা উদযাপন কমিটি কি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? শিল্পীরা কোন গান পরিবেশন করবেন সে বিষয়ে কি আলোচনা করেছিল? যদি কমিটির সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে তাহলে এখন বিতর্কের সময় তারা কেন মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে? তারা চুপ থাকলে মনে হতে পারে, তারা ইচ্ছা করে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছে। আমরা চাই, পুলিশ এ বিষয়ে পূজা কমিটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সত্য উদ্ঘাটন করবে।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের সরকার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ কোনো কিছু করতে বাকি রাখেনি। তারপরও যে দুয়েকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তাতে কারা গ্রেফতার হয়েছে সে সব খবর গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু তাতে ভারতীয় প্রচারণা অথবা সামাজিক মাধ্যমে কুচক্রী মহলের অপপ্রচার- কোনোটিই বন্ধ হয়নি। আমরা বলতে চাই, যারা সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়, সামাজিক মিডিয়ায় ছবি সম্পাদনা করে অপপ্রচার চালায় তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা সবচেয়ে বেশি জরুরি।