ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন, ধান তোলা নিয়ে উৎকণ্ঠা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে খেতের পাকা ধানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম হতাশায় পড়েছেন কৃষকরা। এক দিকে শ্রমিক সঙ্কট, অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়া যেন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেতে কেটে রাখা ধান ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরি আবহাওয়া ও ভারী বৃষ্টির কারণে চাষিরা পড়েছেন উৎকণ্ঠায়। এছাড়া শ্রমিক সঙ্কটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
দর্শনা:
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টিপাতে দামুড়হুদা উপজেলায় উঠতি বোরো ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। দামুড়হুদা উপজেলায় চলতি বোরো ধান উৎপাদন মৌসুমে ৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে দামুড়হুদা উপজেলায় বর্তমানে রবি মৌসুমে উঠতি বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে ধান, পাট, পেঁেপ, ঝাল খেত, সবজি ফসলসহ প্রায় সব ধরণের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরাণপুর গ্রামের কৃষক লালু মিয়া, হায়দার আলী, আলাউদ্দিন ও সাঈদ হাসান জানান, ‘আমরা গত সোমবার মাঠে ধান কেটে জমিতে ফেলে রাখি। পরদিন থেকে লাগাতার বৃষ্টির ফলে মাঠে প্রায় দেড়ফুট পানি জমে খেতের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। পানিতে এসব জমির ধান ভেসে আছে। এছাড়া নিচু এলাকার জমি ধান, পাট, পেঁেপ, ঝাল খেত, সবজি ফসলসহ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।


গাংনী:
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ভারী বর্ষণে মেহেরপুরের কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় সকল এলাকায় আধাপাকা ও পাকা জমির ধান তলিয়ে যায়। এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
জানা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন থেকে দুদিন বৃষ্টির পর প্রচণ্ড গরম অনুভূত হলেও বিরতি দিয়ে গত সোমবার থেকে আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যায়। একইসাথে অধিকাংশ এলাকায় থেমে থেমে টিপটাপ বৃষ্টি হতে থাকে। গতকাল সকাল থেকেও পুরো জেলার আকাশজুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটার পর দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। ভারী বর্ষণে মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সদর উপজেলা পরিষদ, স্টেডিয়াম সড়ক, শহীদ শামসুজ্জোহা পার্ক, গাংনী হাইস্কুল ফুটবল মাঠ ও বামুন্দী-নিশীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁটু পানি জমে যায়। এছাড়াও সকল নিচু এলাকাসহ খাদখন্দের বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করে। ছোট-বড় পুকুরগুলো ও খালবিলে পানি বৃদ্ধি পায়। মাঠের প্রায় সকল জমির কাঁচাপাকা ধান পানিতে ডুবুডুবু অবস্থায় দেখতে পাওয়া গেছে। তবে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টি হলেও ঝড় বা বজ্রপাতের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারী বর্ষণে জমির ধান ডুবে যাওয়াই কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে সকল ধরণের ফসলের ক্ষতি সামলে উঠতে না উঠতেই আবারও ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ঘণ্টাব্যাপী ভারী বর্ষণে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে তচনচ হয়ে যায়।
বৃষ্টির পর মেহেরপুর সদর উপজেলার দিঘিরপাড়া, আলমপুর, টেংরামারি, রামনগর, মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, কালিগাংনী, উত্তর শালিকা, সোনাপুর, কাঁঠালপোতা, মুজিবনগর উপজেলার নূরপুর, মহাজনপুর, আমদহ, গাংনী উপজেলার গাড়াডোব, পুড়াপাড়া, বাঁশ বাড়ীয়া, চিৎলা, রায়পুর, হেমায়েতপুর, সাহারবাটী, জোড়পুকুরিয়া, হিজলবাড়ীয়া, ভাটপাড়া, নওপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, রংমহল, খাসমহল, পলাশীপাড়া, সহড়াতলা, ধলার মাঠসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাঠের পর মাঠ জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যেতে দেখা যায়। অনেক জমির ধান কর্তন করার পর সেগুলো পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ধান কর্তনের পর পালা দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলেও সেগুলোর নিচে প্রায় ১ ফুট পানিতে ডুবে ছিল। ধানের অধিকাংশই পেকে যাওয়ায় সকলে ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, অনেকেই কেটে ফেলেছেন ঠিক এমন সময় হঠাৎ অশনির প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকার কৃষকরা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে আরও কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে এ ভয়ে অনেককে জমি থেকে বৃষ্টিতে ভিজেই তা সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। অনেকে পালা দেওয়া মাঠের মধ্যে ধানের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছেন কি করা যায়। ভারী বর্ষণে তলিয়ে যাবার ভয়ে অনেকেই যাদের জমির পাকা ধান সামান্য ডুবেছে তারা তা পুরোটা ডুবে যাওয়ার থেকে বাঁচাতে কর্তন করে জমি থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। তবে বোঝা যাবে আরও কয়েকদিন পর ঘূর্ণিঝড় অশনি কতটা অশনি সংকেত নিয়ে এসেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন, ধান তোলা নিয়ে উৎকণ্ঠা!

আপলোড টাইম : ০২:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে খেতের পাকা ধানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম হতাশায় পড়েছেন কৃষকরা। এক দিকে শ্রমিক সঙ্কট, অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়া যেন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেতে কেটে রাখা ধান ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরি আবহাওয়া ও ভারী বৃষ্টির কারণে চাষিরা পড়েছেন উৎকণ্ঠায়। এছাড়া শ্রমিক সঙ্কটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
দর্শনা:
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টিপাতে দামুড়হুদা উপজেলায় উঠতি বোরো ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। দামুড়হুদা উপজেলায় চলতি বোরো ধান উৎপাদন মৌসুমে ৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে দামুড়হুদা উপজেলায় বর্তমানে রবি মৌসুমে উঠতি বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে ধান, পাট, পেঁেপ, ঝাল খেত, সবজি ফসলসহ প্রায় সব ধরণের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরাণপুর গ্রামের কৃষক লালু মিয়া, হায়দার আলী, আলাউদ্দিন ও সাঈদ হাসান জানান, ‘আমরা গত সোমবার মাঠে ধান কেটে জমিতে ফেলে রাখি। পরদিন থেকে লাগাতার বৃষ্টির ফলে মাঠে প্রায় দেড়ফুট পানি জমে খেতের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। পানিতে এসব জমির ধান ভেসে আছে। এছাড়া নিচু এলাকার জমি ধান, পাট, পেঁেপ, ঝাল খেত, সবজি ফসলসহ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।


গাংনী:
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ভারী বর্ষণে মেহেরপুরের কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় সকল এলাকায় আধাপাকা ও পাকা জমির ধান তলিয়ে যায়। এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
জানা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন থেকে দুদিন বৃষ্টির পর প্রচণ্ড গরম অনুভূত হলেও বিরতি দিয়ে গত সোমবার থেকে আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যায়। একইসাথে অধিকাংশ এলাকায় থেমে থেমে টিপটাপ বৃষ্টি হতে থাকে। গতকাল সকাল থেকেও পুরো জেলার আকাশজুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটার পর দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। ভারী বর্ষণে মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সদর উপজেলা পরিষদ, স্টেডিয়াম সড়ক, শহীদ শামসুজ্জোহা পার্ক, গাংনী হাইস্কুল ফুটবল মাঠ ও বামুন্দী-নিশীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁটু পানি জমে যায়। এছাড়াও সকল নিচু এলাকাসহ খাদখন্দের বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করে। ছোট-বড় পুকুরগুলো ও খালবিলে পানি বৃদ্ধি পায়। মাঠের প্রায় সকল জমির কাঁচাপাকা ধান পানিতে ডুবুডুবু অবস্থায় দেখতে পাওয়া গেছে। তবে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টি হলেও ঝড় বা বজ্রপাতের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারী বর্ষণে জমির ধান ডুবে যাওয়াই কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে সকল ধরণের ফসলের ক্ষতি সামলে উঠতে না উঠতেই আবারও ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ঘণ্টাব্যাপী ভারী বর্ষণে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে তচনচ হয়ে যায়।
বৃষ্টির পর মেহেরপুর সদর উপজেলার দিঘিরপাড়া, আলমপুর, টেংরামারি, রামনগর, মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, কালিগাংনী, উত্তর শালিকা, সোনাপুর, কাঁঠালপোতা, মুজিবনগর উপজেলার নূরপুর, মহাজনপুর, আমদহ, গাংনী উপজেলার গাড়াডোব, পুড়াপাড়া, বাঁশ বাড়ীয়া, চিৎলা, রায়পুর, হেমায়েতপুর, সাহারবাটী, জোড়পুকুরিয়া, হিজলবাড়ীয়া, ভাটপাড়া, নওপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, রংমহল, খাসমহল, পলাশীপাড়া, সহড়াতলা, ধলার মাঠসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাঠের পর মাঠ জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যেতে দেখা যায়। অনেক জমির ধান কর্তন করার পর সেগুলো পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ধান কর্তনের পর পালা দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলেও সেগুলোর নিচে প্রায় ১ ফুট পানিতে ডুবে ছিল। ধানের অধিকাংশই পেকে যাওয়ায় সকলে ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, অনেকেই কেটে ফেলেছেন ঠিক এমন সময় হঠাৎ অশনির প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকার কৃষকরা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে আরও কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে এ ভয়ে অনেককে জমি থেকে বৃষ্টিতে ভিজেই তা সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। অনেকে পালা দেওয়া মাঠের মধ্যে ধানের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছেন কি করা যায়। ভারী বর্ষণে তলিয়ে যাবার ভয়ে অনেকেই যাদের জমির পাকা ধান সামান্য ডুবেছে তারা তা পুরোটা ডুবে যাওয়ার থেকে বাঁচাতে কর্তন করে জমি থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। তবে বোঝা যাবে আরও কয়েকদিন পর ঘূর্ণিঝড় অশনি কতটা অশনি সংকেত নিয়ে এসেছে।